১/১১ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
১/১১ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

জরুরি অবস্থা নয়, সামরিক শাসন জারি করতে চেয়েছিলেন জেনারেল মইন : সাক্ষাৎকারে মোখলেসুর রহমান চৌধুরী

বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরীকে প্রধান উপদেস্টা করতে মূল বাধা হয়েছিলেন হারিছ চৌধুরী ; ৪ উপদেস্টার পদত্যাগ ছিল মইনের পক্ষে ক্ষেত্র তৈরি করার কৌশল। বুঝতে পারার পর ২ জন ফেরত আসতে চেয়েছিলেন ; রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব বঙ্গভবনে জেনারেল মইনসহ ৩ জনকে ৩টি পিস্তল দিলেন ; ইন্ডিয়া ছিল মইনের পক্ষে ; ৪ দলীয় জোট সরকারের বিদায়ের দিনই জরুরি অবস্থার মোড়কে ক্ষমতা নেয়ার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছিলেন মইন

অলিউল্লাহ নোমান


তারেক রহমানকে নির্যাতন প্রসঙ্গে দুই জেনারেলের বাকযুদ্ধ


moyeenগত ১২ জুন, ২০১৪ আমেরিকায় বহুল প্রচারিত বাংলা সাপ্তাহিক ‘ঠিকানায়’ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ১/১১-এর কারিগর সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন আহমেদ বলেছেন, ‘তারেক রহমানকে নির্যাতন করেছেন এক লেফটেন্যান্ট কর্নেল। তারেক রহমানকে ধরে আনা হয়েছে এটা আমাকে জানানো হয়নি। পরে যখন জানতে পারলাম তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাকে আনার পর টর্চার করা হয়েছে-এমন একটা খবর আমার কাছে এলো। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ডেকে পাঠালাম, কেন তাকে মারা হয়েছে তা জানার জন্য। তিনি তাকে (তারেক রহমান) মারা হয়নি বলে জানালেন। এও বললেন যে, তিনি ভালো আছেন। টিভিতে

জেনারেল মঈন ও জেনারেল মতিনের বাকযুদ্ধ, মাঝখানে শুভঙ্করের ফাঁক: মোবায়েদুর রহমান

mobayedবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ নিউইয়র্কের বহুল প্রচারিত বাংলা সাপ্তাহিক ‘ঠিকানাকে’ একটি ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন। এই ইন্টারভিউ ছাপা হয়েছিল গত ১৮ জুন। এ সম্পর্কে আমি একটি কলাম লিখেছিলাম। কলামটি ছাপা হয়েছে দৈনিক ‘ইনকিলাবে’, গত ২৪ জুন। জেনারেল মঈনের সমস্ত তথ্য এবং বক্তব্যের সাথে একমত হতে পারেননি মেজর জেনারেল (অব.) এমএ মতিন। তিনি এ সম্পর্কে তার বক্তব্য দিয়েছেন দৈনিক ইনকিলাবে। সেটি ছাপা হয়েছে গত ২৬ জুন। জেনারেল মতিনের লেখাটিও আমি মনযোগের সাথে পড়েছি। দুই জেনারেলের বক্তব্যের মাঝেই কিছু শুভঙ্করের ফাঁক রয়েছে। মঈন ইউ আহমেদের লেখার ওপর আমার বিশ্লেষণ ও মন্তব্য আমার ঐ কলামে বিধৃত রয়েছে। আজ আমি দুই জেনারেলের বক্তব্য নিয়েই আলোচনা করব। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, জেনারেল মতিন সেনা নিয়ন্ত্রিত কেয়ারটেকার সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। ১/১১’র আমলে দুর্নীতি দমন অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। উপদেষ্টা থাকা কালে জেনারেল মতিন ছিলেন এই কমিটির চেয়ারম্যান এবং সেই সময়ে নবম ডিভিশনের অধিনায়ক লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন প্রধান সমন্বয়ক।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ১/১১’র সময় দেশের দুই প্রধান নেত্রী

সত্যকে বিকৃত করে প্রকাশ করার প্রবণতা জেনারেল মইনের আছে : মেজর জেনারেল এম এ মতিন, বীর প্রতীক (অব.)

গত ১২ জুন ২০১৪ ‘এনজেবিডি নিউজ’ মাধ্যমে ‘আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাইনি’ শিরোনামে এবং ১৯ জুন ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় ‘জেনারেল মইন কবুল করলেন তারেক রহমানকে নির্যাতন করেছেন এক লেফটেন্যান্ট কর্নেল’ শিরোনামে প্রকাশিত জেনারেল মইন উ আহমেদ কর্তৃক তার নিউইয়র্কের বাসায় বসে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারের প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। বর্ণিত সাক্ষাৎকারে কিছু কিছু ব্যাপারে তিনি অসত্যের আশ্রয় নিয়েছেন এবং উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা চালিয়েছেন। সেগুলোর উল্লেখপূর্বক প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরার মানসেই আমার অদ্যকার এ প্রয়াস।
দুই নেত্রীকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে : প্রথমেই ধরা যাক, দু’নেত্রীকে গ্রেফতার

মইন কবুল করলেন তারেককে নির্যাতন করেছেন একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেলই

ওয়ান ইলেভেনে সেনা সমর্থিত সরকারের সময় আটক তারেক রহমানকে নির্যাতন করেছে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল। নিউইয়র্কে বাসরত সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ সে সময়ের ঘটনাবলী নিয়ে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তারেক রহমানকে টর্চার করেছে একজন লেফটেন্যান্ট। এ খবর জানার পর সংশ্লিষ্ট অফিসারকে সরিয়ে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১২ই জুন নিউইয়র্কের বাসায় দেয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক এই জেনারেল মইন নির্বাচনকালীন সমঝোতা, দুর্নীতি বিরোধী

খালেদা বিশ্বাস করেননি, হাসিনা জানতেন ১২ জানুয়ারীর মধ্যে মার্শাল ল’ হবে


 রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদের সাবেক উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক। বাংলাদেশের বৈদেশিক সাংবাদিক সংস্থা ওকাব-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট জনাব মোখলেস চৌধুরী ১/১১-এর জ্বলন্ত সাক্ষী। 

যে ক’জন মানুষ ১/১১’র ঘটনা ঘটার সময় উপস্থিত ছিলেন তার মধ্যে মোখলেস চৌধুরী অন্যতম। তিনি সব কিছু খুব কাছে থেকে দেখেছেন। ১/১১ কার ইঙ্গিতে হয়েছে, কীভাবে হয়েছে সব কিছুই নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি নিশ্চিতভাবে ১/১১’র ইতিহাসের একটি অংশ। বঙ্গভবন থেকে বের হবার পর তিনি এই প্রথম বারের মত কোন মিডিয়ার মুখোমুখি হলেন। 
তিনি সম্প্রতি আমেরিকায় বেড়াতে এসেছিলেন। আমেরিকায় অবস্থানকালে ঠিকানাকে দেয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাতকালে অনেক চাঞ্চল্যকর, শিহরণ জাগানো কথা বলেছেন। বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১/১১ এর ঘটনার কথা বিশ্বাস করতে চাননি, আর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা জানতেন ১২ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে মার্শাল ল’ জারি করা হচ্ছে। এই সাক্ষাতকারে জনাব চৌধুরী ১/১১ এর সমস্ত ঘটনা তুলেছেন যা পাঠকদের দীর্ঘদিনের সুপ্ত কৌতুহল মেটাবে। 
এখানে পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি প্রশ্নোত্তরাকারে তুলে ধরা হলো- 

ফিরে দেখা ...১/১১ ; হাসিনা-খালদার জন্য শাড়ি ফুল মিষ্টি নিয়ে যাওয়া হয় সমঝোতা করতে


আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে সেনাবাহিনীর দুই জেনারেল ছাড়া সবাই বলেছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব তাদরেকে ছেড়ে দিতে হবে। না হলে আমরা সমর্থন প্রত্যাহার করে নেব। আর তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষনায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন পেছনে থাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি। কারণ ওই সময়ে আর এ নিয়ে কোনো সমঝোতায় যাওয়ার সুযোগ ছিল না। জেনারেলদের চাপ ছাড়াও দুই নেত্রীকে ছেড়ে দিতে দেশ বিদেশ থেকে চাপ আসতে থাকে। ওয়ান ইলেভেনের সময় বিদেশি যারা সমর্থন দিয়েছিলেন তারাও অবস্থান বদল করেন। তারা বুঝতে পারেন, যে লক্ষ্য নিয়ে সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, তা পূরণ হচ্ছে না। ফলে আস্তে আস্তে তারা সরে যেতে থাকেন। দেশের প্রেক্ষাপটও বদলে যায়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। 

ফিরে দেখা ...১/১১; ইয়াজউদ্দিনকে ব্ল্যাকমেইল করে কাজ করানো হত


সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমদকে বারবার ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছিল। কোনো কাজ না করতে চাইলে স্ত্রী ও ছেলের দুর্নীতির কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। ওয়ান ইলেভেনের সময়ে তিনি প্রথমে জরুরি অবস্থা জারি করতে চাননি। জরুরি অবস্থা জারির আগে তিন বাহিনী প্রধানদের বসিয়ে রেখেই একটু সময় চেয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলার জন্য। কিন্তু সে সময় তাকে দেওয়া হয়নি। যারা জরুরি অবস্থা জারি করানোর জন্য বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন তারা এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করতে চাননি। জানতেন, সময় নষ্ট করলে তাদের জন্যও ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এ কারণে তারা বঙ্গভবনে যাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব ইয়াজউদ্দিনকে জরুরি অবস্থা জারি করাতে বাধ্য করেন। একপর্যায়ে তাকে ভয়ও দেখানো হয়।

ফিরে দেখা ...১/১১; ম্যাডাম বিদেশ যাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে তারেককেও পাঠানো হবে



ওয়ান ইলেভেনপরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মাইনাস টু ফর্মুলা হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ‘ম্যাডাম আগে বিদেশে যাবেন, ছয় মাসের মধ্যে মেডিকেল গ্রাউন্ডে তারেক রহমানকে কারাগার থেকে বিদেশে পাঠানো হবে। কোকোকে পাঠানো হবে আরো পরে। আপনার পরিবারের কারো কোনো সমস্যা হবে না। আপনি আপনার সঙ্গে যাদেরকে নিতে চান নিতে পারবেন। এমনকি তারেক রহমানের স্ত্রী, কন্যা, কোকোর স্ত্রী কন্যাকেও নিয়ে যেতে পারেন।’ তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের নির্দেশে ওই সময়ে ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাদিক হাসান রুমি খালেদা জিয়ার বাসায় এই প্রস্তাব নিয়ে যান। এ নিয়ে তিনি বার বার তার সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেননি। 

ফিরে দেখা ...১/১১; প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন পূরণে গঠন করা হয়েছিল কিংস পার্টি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দেশে ফিরতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ১ জন শীর্ষ কর্মকর্তা। এজন্য চিঠিও লেখেন। বিভিন্ন দিক থেকে শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে দেওয়ার চাপ তৈরি হওয়ার পর বাধ্য হয়ে ২৪ ঘণ্টা সময় চেয়ে নেন অপর ১ সেনা কর্মকর্তা। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার সব ব্যবস্থা করেন। যিনি হাসিনাকে দেশে আসতে বাধা দেন তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন পূরণে বিভোর ছিলেন। এজন্য গঠন করেন কিংস পার্টি। সবুজ কলমে লিখে দেন পার্টি আর পার্টি প্রধানের নাম। সে অনুযায়ী গঠন করা হয় রাজনৈতিক দল।

১/১১, রক্তের বেইমানী আর আজো বন্দী খালেদা জিয়া তারেক রহমানের কিছু কথা

দূর্ভাগ্যজনক নিউজের শেষ কোথায়?? ১/১১ এর জন্মদাতা মইন নয়। ১/১১ এর পরবর্তী সুবিধাভোগী মইন। খালেদা জিয়ার রক্ত যদি বেইমানী না করতো ১/১১ জন্ম হতো না। তারেক রহমানের সাথে ডান্ডি ডায়িং, রহমান নেভীগেশন সহ বিভিন্ন কারনে তার মামা সাইদ ইসকান্দারের সম্পর্ক তেমন ভালো ছিলনা। লে.জে. মাসুদ সাইদ ইসকান্দারের ভায়রা। মইনকে সাইদ ইসকান্দারের পছন্দে সেনা প্রধান করায় তারেক রহমানের মনপূত হয়নি। পরবর্তী সেনা প্রধান করার জন্য তারেকের পছন্দ হয় দলের, জিয়া পরিবারের বিশ্বস্ত রেজ্জাকুল। রেজ্জাকুলের নিকট থেকে মাসুদের ঔদত্ত সম্পর্কে যথাযথ রির্পোট করা হয়। রেজ্জাকুলকে চীফ(লে.জে.) প্রোমশন দিয়ে প্রেসিডেন্টের অনুমোদন হয়।

সেনা অভ্যুত্থান ২০০৭ অনেক না জানা ঘটনা প্রবাহের চাক্ষুস বর্ণনা-২

২০০৭ সালের ১১ ই জানুয়ারি!সবার চোখ ছিল বঙ্গভবনের দিকে।কী ঘটেছিল সেদিন?কিভাবে জারি হলো জরুরি অবস্থা?নিজের চোখে দেখা সেই ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতির তৎকালীন উপদেষ্টা মোখলেসুর রহমান চৌধুরী  

১/১১র ঘটনা যেদিন ঘটেছে সে দিন এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। অনেক আগে থেকেই এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিলো। দুই নেত্রীকে আমি একাধিকবার আমার আশংকার কথাও ব্যক্ত করেছিলাম। তাদের দুই জনকে এক সাথে বসাতে চেয়েছিলাম। বেগম খালেদা জিয়া বসতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা বসতে চাননি। কারণ বিএনপির ওপর শেখ হাসিনার ক্ষোভ ছিলো। 

সেনা অভ্যুত্থান ২০০৭ অনেক না জানা ঘটনা প্রবাহের চাক্ষুস বর্ণনা-১

২০০৭ সালের ১১ ই জানুয়ারি!সবার চোখ ছিল বঙ্গভবনের দিকে।কী ঘটেছিল সেদিন?কিভাবে জারি হলো জরুরি অবস্থা?নিজের চোখে দেখা সেই ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা দিয়েছেন মোখলেসুর রহমান চৌধুরী 

লেখক পরিচিতিঃ বিশিষ্ট সাংবাদিক মোখ্লেসুর রহমান চৌধুরী ২০০৬-০৭ মেয়াদকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের উপদেষ্টা ছিলেন। এর আগে তিনি ২০০৪ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ইতোপূর্বে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশের বৈদেশিক সাংবাদিক সংস্থা ওকাব-এর প্রেসিডেন্ট এবং কমনওলেথ জার্নালিস্টস্ এসোসিয়েনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। তিনি এখন যুক্তরাজ্যে পি এইচ ডি করছেন গভার্নেন্স নিয়ে। 

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী আমি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড: ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। সেদিনের বঙ্গভবনের ঘটনা সহ আগে পরের অনেক ঘটনাই আমার প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেক পত্রিকা ও গণমাধ্যমে আমি ১১ জানুয়ারী ও তার পূর্ববর্তী ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। 

১/১১, রক্তের বেইমানী

দূর্ভাগ্যজনক নিউজের শেষ কোথায়?? ১/১১ এর জন্মদাতা মইন নয়। ১/১১ এর পরবর্তী সুবিধাভোগী মইন। খালেদা জিয়ার রক্ত যদি বেইমানী না করতো ১/১১ জন্ম হতো না। তারেক রহমানের সাথে ডান্ডি ডায়িং, রহমান নেভীগেশন সহ বিভিন্ন কারনে তার মামা সাইদ ইসকান্দারের সম্পর্ক তেমন ভালো ছিলনা। লে.জে. মাসুদ সাইদ ইসকান্দারের ভায়রা। মইনকে সাইদ ইসকান্দারের পছন্দে সেনা প্রধান করায় তারেক রহমানের মনপূত হয়নি। পরবর্তী সেনা প্রধান করার জন্য তারেকের পছন্দ হয় দলের, জিয়া পরিবারের বিশ্বস্ত রেজ্জাকুল। রেজ্জাকুলের নিকট থেকে মাসুদের ঔদত্ত সম্পর্কে যথাযথ রির্পোট করা হয়। রেজ্জাকুলকে চীফ(লে.জে.) প্রোমশন দিয়ে প্রেসিডেন্টের অনুমোদন হয়। রেজ্জাকুলের ফাইল অনুমোদনের খবর মাসুদকে জানিয়ে দেয় তার ভায়রা সাইদ ইসকান্দার। জানায় যে মাসুদ তুমি চীফ(লে.জে.) হচ্ছো না। রেজ্জাকুলের ফাইল অনুমোদন হয়ে গেছে। শুরু হয় ক্যু এর প্রচেষ্টা। যে কোন ঝাটিকা আক্রমনের জন্য নবম ডিভিশন যথেষ্ট। সেনা প্রধানের সরাসরি কমান্ডে কোন অপারেশন শুরু হয়না প্রায়শ। কারন সরকার সহ তার দিকে সবার দৃষ্টি, সন্দেহ থাকে। মাসুদ দ্রুততার সাথে বঙ্গভবন আক্রমন করে বসলেন। তার আগে পিজিআর প্রধান হাত করা হলো। প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব মইন পক্ষ নিলো। মাসুদ সরসরি অস্ত্র নিয়ে বঙ্গভবন দখল করে রেজ্জাকুলের ফাইল ছেড়ালেন। মার খেল মোখলেস। শুরু হলো দানব সরকারের পদযাত্রা যার নিকৃষ্ট না ১/১১। দ্রুত আক্রোমনে হতচকিত সকলে । কোন বাধা দেয়া হলোনা কারন রক্তপাত হবে। রেজ্জাকুলকে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল তিনি সাময়িকভাবে পালিয়ে বেচেছেন। পরবর্তীতে বাধ্যতামূলক অবসরে যেতে বাধ্য করা হয়। সাইদ ইসকান্দার সহায়তা না করলে ১/১১ হতোনা। মাসুদকে ১/১১ ঘটানোর সুযোগ করে দেয়ার পুরস্কার হিসাবে দূনীর্তির সাথে জড়িত থাকার সন্দেহ থাকলেত্ত সাইদ ইসকান্দারের নামে কিছু হলো না। মাসুদের খায়েস জাগলো সে হবে সেনাপ্রধান আর তার ভায়রা সাইদ ইসকান্দার হবে অনুগত খন্ডিত সেনা সমর্থিত বিএনপির প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়া তারেক রহমানকে জেলে নিয়ে চাপ দেয়া হলো সাইদ ইসকান্দারকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদ দিয়ে দেয়ার নইলে তারেককে রাম ধোলাই দেয়া হবে। তারেক রহমানের দৃঢ়তা সাইদ ইসকান্দার খায়েস পুরো হলোনা। কিংস পার্টি বাধ্যহয়ে ধর্না দিলেন লীগের দিকে। পরবর্তী ফলাফল সবার জানা। শামীম ইসকান্দারকে ধরা হলো ধরা হলো ডিউককে দেশান্তরি সাইফুল ইসলাম। সাইদ ইসকান্দার আজো অম্লান কিছু হয়নি তার। খালেদা জিয়া তারেক রহমান হাত পা খোলা থেকেত্ত আজো বন্দি তার চারপাশে ঘেরা মির জাফর, রায় দূর্লভ, রাজ বল্লভ, ঘসেটি বেগমের কারাগারে। পলাশীর পর ঘসেটি বেগম কে তার জবাব যার যা খুশি মিলিয়ে নিতে পারে। তবে খালেদা জিয়াকে বাড়ী ছাড়া করা দলকে ধংস্ব করা শেখ হাসিনা বা খায়রুলে ক্রেডিট বা ক্রিয়েটিভিটি নয়। ক্রেডিট বিএনপির ভেতরে বসবাস করা তথা কথিত কিছু স্টান্ডিং কমিটি মেম্বার, ব্যক্তিগত সহকারী সহ কতিপয় গুরুত্বপূর্ন পদধারী মিরজাফর, উমিচাদ, রায় দূর্লভ ঘসেটি বেগমদের। বাংলাদেশের জনগন আর বিএনপির দূঃখ করা আহ বলা ছাড়া কিছু করার নেই। কারন কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়ার চেয়ে মিরজাফর বেইমান দ্বারা বন্দী খালেদা জিয়া বেশী অসহায়। খালেদা জিয়ার কিছু করার নেই। কারন সিরাজ জানতো মিরজাফররা ষড়যন্ত্র করতেছে তবু সিরাজের কিছু করার ছিল না কারন সে তাদের উপর নির্ভরশীল ছিল। বন্দি খালেদা জিয়া পর্যন্ত কোন তথ্য পৌছায় না। সকল তথ্য পাচার হয়ে যায়। প্রসাদ ষরড়ন্ত্র, দলীয় মিরজাফরদের অবস্থান খালেদা জিয়ার পরিবারে, স্টান্ডিং কমিটিতে, ব্যক্তিগত সহকারী সহ গুরুত্বপূর্ন পদে, দলের শিরায় শিরায় রন্দ্রে রন্দ্রে। শারীরিক ভাবে মুক্ত থেকেও মিরজাফরদের বৃত্তে বন্দি খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের জন্য দোয়া করা ছাড়া কিছুই করার নেই। কারন মিরজাফরা, ঘসেটি বেগমরা যে তাদের চরম খাস লোক হিসাবে অবস্থান করে আছে।
জিয়ার কোন আত্নীয় রাজনীতিতে জড়ায়নি। অথচ খালেদা জিয়ার পরিবারের কিছু অযোগ্য লোক রাজনীতিকে কুলশীতই করেনি কেউ দুলাভাইয়ের প্রাইভেট প্রোপাটি, খালুর প্রাইভেট প্রোপাটি বানিয়ে ফেলেছে। আর চেষ্টা করেছে আয় দেস্তরা গনিমাতের মাল পেয়েছি বিএনপি, লুটেপুটে খাই। তার সাথে যোগ হয়েছে কিছু চামচা মামুন, অপু, আসিক, কালু, আলু, লালু পালূ---- কতো লু ওয়ালারা। তাদের দাপটে আজীবন বিএনপি করা লোক গুলো তটস্ত। ভাবতে হবে কাদের তান্ডবে, বেয়াদবিতে এলডিপর জন্ম হলো। কাদের উৎপাতে মানুষ তার দীর্ঘদিনের চেনা দল ছাড়তে বাধ্য হয়ে অচেনা পথে পা বাড়ায়, বিএনপি ভাগ হয়ে যায়। কোন কারন ছাড়া কেউ নিজ সরকারী দল, নিজ এমপিত্ব ছাড়েন। শুধু তাদের দোষ দিয়ে লাভ কি? দলের ভূলের কথাও ভাবতে হবে। যারা দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে তারা আর যাই হোক লীগান নয়। আর্মিতে সাইদ ইসকান্দার, ডিউকের অজাচিত হস্তক্ষেপ বিএনপি বান্ধব আর্মিকে বিএনপি বিরোধী আর্মিতে পরিনত করেছে। তাদের কর্মের ফসল ভোগ করেছে তারেক রহমান। মাঝখান থেকে রাম ধোলাই খেয়েছে। বিএনপি ধংস্বস্তুপ। সাইদ ইসকান্দার তো কোন দূর্নীতির নোটিশ পায়নি। অথচ হাজত খাটে শামীম ইসকান্দার। কেন?? কেউ যদি মনে করেন যে খালেদা জিয়া দেশে আছেন বলে বন্দী আছেন তারেক রহমান লন্ডনে আছেন বলে মুক্ত আছেন তাও ভূল। তারেক রহমান যখন লন্ডন যায় তার সাথে একই প্লেনে বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন চৌকস অফিসার যায় তারেক রহমানকে পর্যবেক্ষন করার জন্য। তাদের বিশেষ মিশন শেষ হয়নি। কারন বর্তমান সরকার দানব সরকারের পদক্ষেপগুলো চলমান রেখেছে রাজনৈতিক স্বার্থে। বরং তাদের কর্মকান্ড আরো প্রসারিত করেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগ হয়েছে আওয়ামী তৎপরতা। তারেকের ঘনষ্ট লোক হিসাবে সেট করে দেয়া হয়েছে লন্ডনেও। আজো সরকার অঢেল টাকা, পাউন্ড, ডলার খরচ করছে তারেকের প্রতিটা বিষয়ে নজরদারী করতে। তারেক খালেদা বৃত্তের মধ্যে থাকলে শুধু নাম মাত্র বিরোধী দল সরকারের জন্য কোন ক্ষতিকর হবে না। তারেক রহমান বা খালেদা জিয়া বন্দীত্বের বৃত্ত সহসা ভাঙ্গতে পারবে বলে মনে হয়না। খালেদা জিয়া আজো বন্দী ব্যক্তিগত সহকারী নামক গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট, নব্য বিএনপিওয়ালাদের দ্বারা। তারা নির্ধারন করে দেয় কে কি পদে থাকবে। খালেদা জিয়ার নিজেস্ব চিন্তা কর্মকান্ড বন্দী। বিএনপির প্রতিটি কথা ফাস হয়ে যায়, পাচার হয়ে যায় সরকারের কাছে। ১/১১ এর জন্মদাতা সাইদ ইসকান্দার নামক মামা যেন সেই নবাব সিরাজের আপন রক্তের ঘসেটি খালা।(তথ্যগুলো সহ অতি দীর্ঘ, করুন কাহিনীর সংক্ষেপে বর্ননা করা হলো)

ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া নানা জানা-অজানা ও এক্সক্লুসিভ বিষয়ের বর্ণনা -১৫তম পর্ব

নির্বাচন কমিশন: বিতর্ক , পুনর্গঠন ও পরিচালিত কর্মকান্ড 


রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন নিয়ে তথ্য উপদেষ্টার ব্রিফিং 
রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কাটাতে ২২ নভেম্বর ২০০৬ রাতে উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বৈঠক বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে দেশের বিদ্যমান সঙ্কট ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য অভিযান পরিচালনার বিষয় নিয়েও উপদেষ্টাদের বৈঠকে আলোচনা হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত সোয়া ৮টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে বঙ্গভবনের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তথ্য উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় আলোচনার জন্য আমরা বৈঠকে মিলিত হয়েছিলাম। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা করণীয় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে মৌখিকভাবে ছুটির কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া আরো দুজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়েও আমরা কথা বলেছি। রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এসব বিষয়ে সবিস্তার অবহিত করবেন। তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী, সঙ্কট খুব শিগগির কেটে যাবে। কাদের নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হবে জানতে চাইলে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এ ব্যাপারে আমি অবহিত নই। তিনি সবাইকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের জন্য ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দেন।
মাহবুবুল আলম বলেন, প্রত্যেকটি বিষয়ের একেকটি স্তর আছে। স্টেপ বাই স্টেপ এগোতে হয়। কখনো কাজে গতিহীনতা মনে হলেও দেখা যায়, এরপর দ্রুত একের পর এক সমাধান হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রেও তেমন হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ সময় উপদেষ্টা আজিজুল হক ও সুলতানা কামাল চক্রবর্তীও উপস্থিত ছিলেন।


বিচারপতি মাহফুজের ভারপ্রাপ্ত সিইসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ
ভারপ্রাপ্ত সিইসির দায়িত্ব নেন নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মাহফুজুর রহমান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এম এ আজিজ তিন মাসের ছুটিতে যাওয়ায় তিনি ২৩ নভেম্বর ২০০৬ এ দায়িত্ব নেন। নির্বাচন কমিশনের এক বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এক ব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত সিইসি বলেন, পুরো কমিশন গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করবে। নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্নের লক্ষ্যে তিনি সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চান। একই সঙ্গে নভেম্বর ২০০৬ এর মধ্যেই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।
আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের অবরোধ কর্মসূচির মুখে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সিইসি বিচারপতি এম এ আজিজ ২২ নভেম্বর ২০০৬ ছুটিতে যান। এ জন্য ওই দিন সকালে অফিসে না গিয়ে সারাদিন বাসায় অবস্থান করেন তিনি। বিকেলে ইসি সচিব আবদুর রশীদ সরকার রাষ্ট্রপতির কাছে তার ছুটির দরখাস্ত পৌঁছে দেন। সিইসি ছুটিতে যাচ্ছেন¬ এমন গুঞ্জন দিনভর থাকলেও ওই দিন মধ্যরাতে রাষ্ট্রপতির ভাষণে বিষয়টি পরিস্কার হয়। এক দিন সিইসি ছাড়াই ছিল নির্বাচন কমিশন। এ কারণে ২৩ নভেম্বর ২০০৬ বেলা ১১টার দিকে তিন কমিশনার¬ বিচারপতি মাহফুজুর রহমান, স ম জাকারিয়া ও মাহমুদ হাসান মনসুর বৈঠকে বসেন। ভারপ্রাপ্ত সিইসি ঠিক করতে আয়োজিত ওই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে ইসি সচিব আবদুর রশীদ সরকার ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জকরিয়া অংশ নেন। কমিশন সূত্র জানায়, বৈঠকে একজন নির্বাচন কমিশনার ভারপ্রাপ্ত সিইসি হিসেবে বিচারপতি মাহফুজুর রহমানের নাম প্রস্তাব করেন। অন্য কমিশনার তাতে সমর্থন করলে বিচারপতি মাহফুজুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণে সম্মতি দেন। জ্যেষ্ঠতার বিবেচনায় কমিশন এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান। তিনি আরো জানান, বিচারপতি এম এ আজিজের ছুটিকালীন ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব পিপলস অর্ডারের (আরপিও) ৪ ধারা’ অনুযায়ী বিচারপতি মাহফুজুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আরপিওর সেকশন ৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কমিশন তার চেয়ারম্যান অথবা কোনো সদস্য অথবা কোনো কর্মকর্তাকে’ এ আইনের অধীনে সকল বা কোনো ক্ষমতা প্রয়োগ বা কার্যসম্পাদনের দায়িত্ব অর্পণ করতে পারে। বৈঠকে এ বিষয় ছাড়াও নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ও স্থান পায়।
২৩ নভেম্বর বেলা ১২টা ২০ মিনিটের সময় ইসি সচিবালয়ে নিজ কক্ষে ভারপ্রাপ্ত সিইসি ব্রিফিংকালে বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরই সিইসির ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বৈঠকটি বসে। কমিশনের আইনানুযায়ী বয়োজ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তারা (অন্য কমিশনাররা) আমাকে ভারপ্রাপ্ত সিইসি করার প্রস্তাব করলেন। আমি তাতে সম্মতি দিই। এখন আমার কাজ ভারপ্রাপ্ত সিইসি হিসেবে কমিশনের কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া।
আপনার সামনে চ্যালেঞ্জ কী? সাংবাদিকদের এরকম প্রশ্নে বিচারপতি মাহফুজ বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। সবাই সহযোগিতা করলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো অন্তরায় আছে কি না জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, কোনো অন্তরায় নেই। সব প্রস্তুতিই আমাদের রয়েছে। চলতি মাসেই তফসিল ঘোষণা করা হবে। ১৪ দল আপনাকে ভারপ্রাপ্ত সিইসি হিসেবে মানবে কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কেউ মানতে পারে, আবার কেউ নাও মানতে পারে। এটা তাদের বিষয়, আমার নয়। তবে নির্বাচন কমিশনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবেন কি না? জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত সিইসি বলেন, এটা ভবিষ্যতের বিষয়। তবে এখন এমন একটা সময় এসে দাঁড়িয়েছে যে, এগুলোর সময় নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এর আগে ভোটার তালিকার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশন বসেছিল। ছোট দলগুলো তাতে সাড়া দিলেও বড় সব দলের কাছ থেকে তেমন সাড়া মেলেনি। রাষ্ট্রপতি যে দুজন নতুন কমিশনার নিয়োগ করবেন তাদের মধ্য থেকে কাউকে ভারপ্রাপ্ত সিইসি করার প্রস্তাব এলে মেনে নেবেন কি না? সাংবাদিকদের এ ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, না, অন্তত আমি মেনে নেব না। বিচারপতি হিসেবে ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ অনুযায়ী আমার অবস্থান অনেক ওপরে। তা ছাড়া ‘সিনিয়র মোস্ট’ আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ভোটার তালিকার ভুল সংশোধন করতে কী পদক্ষেপ নেবেন জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত সিইসি বলেন, ‘ভোটার তালিকায় কোথায় ভুল আছে আপনারা দেখান। তালিকা ঠিকই আছে। তবে কিছুটা এদিক-ওদিক হতে পারে। তাই ওই ভুলভ্রান্তি চিণ্হিত করতে সবার সহযোগিতা চাচ্ছি। তালিকা সংশোধন চলমান প্রক্রিয়া। দেশের থানা পর্যায় পর্যন্ত যেহেতু নির্বাচন অফিস আছে সেহেতু তালিকা সংশোধন করা সহজেই সম্ভব হবে।
সিইসি বিচারপতি এম এ আজিজের কাছে টেলিফোনে ‘কার্টিসি কল’ করবেন বলে তিনি জানান। তবে বিতর্ক এড়াতে তার বাসায় যাবেন না বলে জানান তিনি।

ভারপ্রাপ্ত সিইসি নিয়ে আইনজ্ঞদের অভিমত
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অনুপস্থিতিতে তার দায়িত্ব পালনের জন্য অন্য কোনো কমিশনারকে দায়িত্ব প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের কোনো প্রয়োজন নেই। তাই সিইসি ছুটিতে যাওয়ায় কমিশনার বিচারপতি মাহফুজুর রহমানের সিইসির দায়িত্ব গ্রহণ আইনের বিরোধী হয়নি। অন্যদিকে বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া তার দায়িত্ব গ্রহণ করাটা ঠিক হয়নি। যেহেতু প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদটি সর্বোচ্চ পদ সেহেতু তার অনুপস্থিতিতে সেখানকার দু-তিনজন বসেই তার দায়িত্ব পালন কে করবে ঠিক করে ফেলাটা ঠিক হয়নি। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে ভারপ্রাপ্ত সিইসি হওয়া উচিত ছিল।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সংবিধান এবং ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধত্ব আদেশ অনুযায়ী সিইসির অনুপস্থিতিতে তার দায়িত্ব অন্য কাউকে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের দরকার নেই। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বর্তমান তিনজন কমিশনার তাদের মধ্য থেকে একজনকে সিইসির দায়িত্ব পালনের জন্য নির্ধারণ করতে পারেন। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, সিইসি ছুটিতে যাওয়ার পর কাউকে না কাউকে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। না হয় তার কাজ কে করবে? এ দায়িত্ব প্রদান বা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। কারণ যিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি তো সিইসির অনুপস্থিতিতে মাত্র তার দায়িত্ব পালন করবেন, সিইসি নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন না। আর এ ক্ষেত্রে অন্য ১০ জন উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা বা তাদের জানিয়ে করারও কোনো ব্যাপার নেই। কারণ সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা রয়েছে শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ প্রদান পর্যন্তই। কমিশনের ভেতরের সব কিছু নির্বাচন কমিশনই করবে। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, পত্রপত্রিকায় বলা হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত সিইসি। ভারপ্রাপ্ত সিইসির বিধানও আইনের কোথাও নেই। আইনে আছে সিইসির কার্যনির্বাহের কথা। সুতরাং কাউকে ভারপ্রাপ্ত সিইসি হিসেবে নিয়োগ প্রদানেরও কোনো সুযোগ নেই।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী তো নির্বাচন কমিশনের একজন সহকারী সচিবকেও প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেয়া অবৈধ হবে না। তার মানে একজন সহকারী সচিবকে সিইসির দায়িত্ব পালন করার সিদ্ধান্ত দেয়া হবে? এখানে নীতির প্রশ্ন রয়েছে। শুধু আইনের ব্যাখ্যা হলেই হবে না। সেই ব্যাখা অস্বাভাবিক হলে তো হবে না। আমরা একটি গাড়িতে চারজন চড়লাম। এক পর্যায়ে ড্রাইভার ছুটিতে গেল। আর আমরা বাকি তিনজন মিলে আমাদের মধ্য থেকে একজনকে ড্রাইভিং সিটে বসিয়ে দিলাম। এখন বিষয়টা এমন দাঁড়াল। আমি মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সিইসির বিষয়টি আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে হওয়া উচিত ছিল। এটাই সবচেয়ে ভালো ও সুন্দর হতো।

সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা
তফসিল ঘোষণা হয় ২১ জানুয়ারি ২০০৭ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১০ ডিসেম্বর ২০০৬। মনোনয়নপত্র বাছাই ১১ ডিসেম্বর ২০০৬। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৯ ডিসেম্বর ২০০৬। ২৭ নভেম্বর ২০০৬ তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন এসব তারিখ ঠিক করে। সকাল ১০টার দিকে এ ব্যাপারে জারি করা হয় এক প্রজ্ঞাপন। এর আগে সোয়া ৯টার দিকে কমিশন বৈঠকে বসে। দুপুরে নির্বাচন কমিশন সচিব আব্দুর রশীদ সরকার প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর দিন সকালেই এ তফসিল ঘোষণা করা হয়। ইসি সচিব বঙ্গভবনে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। তফসিল ঘোষণা নিয়ে প্রধান দুটি রাজনৈতিক পক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মুখে এ সম্পর্কে কমিশন সচিবালয়ে বলা হয়, সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসায় কয়েক দিন হাতে রেখেই তফসিল ঘোষণা করতে হয়। তা ছাড়া এবার ভোটার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তা-ই ভোট গ্রহণে এবার কমিশনকে গতবারের তুলনায় অনেক বেশি ব্যালট পেপার ছাপতে হবে। কোনো প্রকার চাপের মুখে কমিশন তফসিল ঘোষণা করেনি বলেন ইসি সচিব।
ঘোষিত তফসিলের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘যেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের দফা (১)-এর বিধান অনুসারে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে এবং সংবিধানের ১২৩-এর দফা (৩)-এর বিধানমতে মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রয়োজন, সেহেতু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ১১ অনুচ্ছেদের দফা (১) অনুসারে ইসি জাতীয় সংসদ গঠন করার উদ্দেশ্যে প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকা থেকে একজন সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এ তফসিল ঘোষণা করেছে।’
বেলা ২টায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব তফসিল ঘোষণার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে দেশবাসীর প্রতি আগামী ২১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি পুনঃ তফসিল ঘোষণার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আশা করি সব রাজনৈতিক দল ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেবে।
তফসিল ঘোষণা করতে তড়িঘড়ি করা হয়েছে এ ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, তফসিল ঘোষণা করতে কমিশন কোনোরকম তড়িঘড়ি করেনি। শুরু থেকেই কমিশন বলে আসছিল ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই কমিশনকে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। কারণ ২৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে কমিশনের হাতে খুব বেশি সময় নেই। সময় অত্যন্ত কম। তা ছাড়া ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সাপ্তাহিক ছুটির বাইরেও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, ২৫ ডিসেম্বর বড় দিন এবং জানুয়ারিতে ঈদুল আজহার জন্য চার-পাঁচ দিন ছুটিসহ বেশ কয়েকটা দিন সরকারি ছুটি থাকবে। তা ছাড়া ভোট গ্রহণে এবার কমিশনকে গতবারের তুলনায় অনেক বেশি ব্যালট পেপার ছাপতে হবে। কারণ এবার ভোটার সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। ব্যালট পেপার ছাপতে বিজি প্রেস এবার কমিশনের কাছে এক মাসের সময় চেয়েছে।
তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিনের মধ্যে অন্যবার সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের ফারাক থাকে। এবার তা ৫৪ দিন হলো কেন? এ মর্মে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবেও তিনি একই কথা বলেন। ভোটার তালিকা প্রকাশ করার আগেই কেন তফসিল ঘোষণা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভোটার তালিকা চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। আপনাদের মনে রাখতে হবে হালনাগাদ ভোটার তালিকা কোনো নতুন তালিকা নয়। ২০০০ সালের বিদ্যমান তালিকাকে মূল ধরে এবার হালনাগাদ ভোটার তালিকা করা হয়েছে। তা ছাড়া ভোটার তালিকা একটি চলমান প্রক্রিয়া হওয়ায় ভোটারযোগ্য যেকোনো নাগরিক নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত কমিশনে যোগাযোগ করে ভোটার হতে পারবেন।
সাংবাদিকরা আব্দুর রশীদ সরকারকে প্রশ্ন করেন¬ অন্যান্য বছর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তফসিল ঘোষণা করা হতো, এবার অন্যথা হলো কেন? জবাবে বলেন, নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অথবা তাদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তফসিল ঘোষণা করতে হবে¬ এমন কোনো কথা নেই। তা ছাড়া সময় স্বল্পতার কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা যায়নি। তবে পরে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। ঘোষিত তফসিল ১৪ দল মেনে না নিলে কমিশন কী পদক্ষেপ নেবে। এ প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, রাজনৈতিক দল না মানলে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে ১৪ দলের পক্ষ থেকে তফসিল প্রত্যাখ্যান করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ দলকে কি পুনরায় রাস্তায় ঠেলে দেয়া হলো কি না এবং রাজনৈতিক ময়দানে সংঘাত-সংঘর্ষ হলে তার দায়-দায়িত্ব কি কমিশনের কাঁধে বর্তাবে? উত্তরে তিনি বলেন, দেখা যাক কী হয়। আমি মনে করি না তাদের রাস্তায় ঠেলে দেয়া হয়েছে। কমিশনের হাতে পুনঃ তফসিল ঘোষণা করার সুযোগ আছে কি না¬ এ মর্মে আরেক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, পুনঃ তফসিল ঘোষণার সুযোগ কমিশনের হাতে আছে। আমাদের কাছে বিষয়টি এলে তখন দেখা যাবে।
কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ভোটার তালিকা সংশোধনের দাবি করে আসছিলো। এ অবস্থায় তফসিল ঘোষণা করায় এখানে একটা সন্দেহের সৃষ্টি হয় না? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখানে সন্দেহের কোনো বিষয় নেই। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধনের বিষয়টি সব সময় বলে আসছে। আমরা আগেও বলেছি, নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগের দিন পর্যন্ত ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করা যায়। ভোটার তালিকায় ১ কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটার রয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠছে তার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো পক্ষের কাছ কমিশনের কাছে ভুয়া ভোটারের তালিকা আসেনি বলে তিনি জানান।
ভোটার তালিকা সংশোধনের আগে যেন কমিশন তফসিল ঘোষণা না করে এ বিষয়ে হাইকোর্ট একটি রিট হয়েছে। শুনানি চলা অবস্থায় কমিশন কোনো রকম অপেক্ষা না করেই কেন তফসিল ঘোষণা করল? প্রশাসনে রদবদলের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক আছে কি না? এমন সব প্রশ্নের উত্তর দেন ইসি সচিব। তিনি বলেন, মামলা ভিন্ন জিনিস। আদালত থেকে যেভাবে রায় আসবে সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর সঙ্গে শিডিউল ঘোষণার কোনো সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া শিডিউল ঘোষণার সঙ্গে প্রশাসনে রদবদলের কোনো সম্পর্কও নেই।
বঙ্গভবনে যাওয়ায় কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনী প্রস্ত–তি বিষয়ে অবহিত করা এবং দুজন নতুন কমিশনার বিষয়ে সবিনয় অনুরোধ করার প্রয়োজন ছিল। তাই গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে যাইনি। মোট তিনবার রাষ্ট্রপতিকে কমিশনের প্রস্তুতি বিষয়ে অবহিত করেছেন বলে তিনি জানান। অন্যান্যবার তফসিল ঘোষণা করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। এবার ব্যতিক্রম কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, সব সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভাষণ দেন না। একবার দিয়েছেন। সেটা গতবার। সাংবাদিকরা সচিবের কাছে জানতে চান, উপদেষ্টারা বলে আসছিলেন একটা লেভেল ফিল্ড না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা করা ঠিক হবে না। তাহলে কেন তফসিল হলো¬ এ প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, শিডিউল ঘোষণার সঙ্গে উপদেষ্টাদের অবশ্যই সম্পর্ক আছে। কিন্ত– শিডিউল ঘোষণার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। কমিশন সেটিই করেছে। একই সঙ্গে তফসিল মেনে নিয়ে সব নির্বাচনে অংশ নেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সম্প্রতি গুলশানে ইসি সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে কোন কর্মকর্তা ওই বৈঠকে গিয়েছেন তার নাম পেলে তদন্ত করে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সচিব সবাইকে আশ্বস্ত করেন।
উল্লেখ্য, তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন পর্যন্ত ৫৪ দিন সময় হাতে রাখা হয়। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় ১৯ আগস্ট ২০০১, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ২৯ আগস্ট, বাছাই ৩০ আগস্ট, প্রত্যাহার ৬ নভেম্বর এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১ অক্টোবর। সেবার তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন পর্যন্ত সময় ছিল ৪১ দিন। এবার ভোটার সংখ্যা বেশি বলে ভোটার তালিকা ছাপতে সময়ও বেশি লাগবে। তাই বেশি সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করা হয় বলে কমিশনের বক্তব্য।


তথ্য সূত্র: তৎকালীন জাতীয় দৈনিক সমূহ 

ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া নানা জানা-অজানা ও এক্সক্লুসিভ বিষয়ের বর্ণনা - ১৪তম পর্ব

নির্বাচন কমিশন: বিতর্ক , পুনর্গঠন ও পরিচালিত কর্মকান্ড


ভোটার তালিকা মুদ্রণ বন্ধ না করেই নির্ভুল তালিকা তৈরির নির্দেশ

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নতুন ভোটার তালিকা মুদ্রণের কাজ যখন পুরোদমে চলে তখন নির্বাচন কমিশন সচিবকে বঙ্গভবনে তলব করা হয়। সচিবকে ভোটার তালিকা মুদ্রণ বন্ধ নয়, নির্ভুল তালিকা করার তাগিদ দেন রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। ৫ নভেম্বর ২০০৬ নির্বাচন কমিশন সচিব আব্দুর রশীদ সরকারকে বঙ্গভবনে ডেকে নিয়ে তার কাছ থেকে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্ভুল ভোটার তালিকা কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে তিনি কমিশনের মত জানতে চান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে ধারণা নেন। রাষ্ট্রপতিকে সচিব জানান, ২৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই হাতে যে সময় রয়েছে তার মধ্যে কোনোভাবেই চলমান তালিকা বাতিল করে নতুন করে তালিকা করা সম্ভব নয়। সচিব তালিকার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে আরো জানান, ভোটার তালিকা একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ তালিকায় সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ থাকে। তাই ২০০০ সালের মতো এবারও ভোটার তালিকা ‘আপগ্রেডিং’ করা হয়েছে। তালিকায় কারো নাম না উঠলে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভুয়া নামের খবর পেলে তা বাদ দেয়া হবে। একইভাবে কোনো ভুলত্রুটি থাকলে তাও সংশোধন করা যাবে বলে সচিব জানান। ইসি সচিব রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ থেকে ফিরে সরাসরি সিইসির সঙ্গে দেখা করেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্পর্কে তাকে জানান। এর আগে সকালে সিইসি অন্য কমিশনার ও ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে ভোটার তালিকা ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার বিষয় সম্পর্কে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। বৈঠকে ইসি সচিবকে এ ব্যাপারে কমিশন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে। নতুন করে তালিকা করা কি সম্ভব, না বিদ্যমান ভোটার তালিকাকে নির্ভুল করা সম্ভব- সে বিষয়ে কমিশনের মত জানতে রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান ইসি সচিবকে ডেকে পাঠান। সচিব বঙ্গভবনে গেলে তার কাছে ভোটার তালিকা নিয়ে ১৪ দলের দাবির প্রসঙ্গ তুলে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব কি না জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। সে অনুযায়ী কমিশনের বক্তব্য জানাতে সচিব আবারও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন।
পরে ইসি সচিব সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন, চলতি মাসের মধ্যেই ভোটার তালিকা মুদ্রণের কাজ শেষ হবে বলে তিনি রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন। তালিকা মুদ্রণের জন্য তখন কম্পোজের কাজ চলে। তিনি আরো বলেন, ২৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এর ৮-১০ দিন আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারলে ভালো। সময় স্বল্পতার জন্য তাই চলমান ভোটার তালিকার কাজ শেষ না করে বিকল্প কোনো পথ নেই। তবে তালিকায় অতিরিক্ত কারো নাম থাকলে অথবা দ্বৈত ভোটার থাকলে তাদের বাদ দেয়া এবং বাদ পড়ে যাওয়াদের নাম পাওয়া গেলে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে বলে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানকে জানিয়েছিলেন। উল্লেখিত বৈঠক চলাকালে রাষ্ট্রপতিকে ইসি সচিব আরো জানান, দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন সচিবকে ভোটার তালিকার ভুল সংশোধনে ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন বলে সচিব সাংবাদিকদের জানিলেছিলেন। ব্রিফিংকালে সাংবাদিকরা কমিশন সচিবালয়ের সভাকক্ষে টাঙ্গানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছবির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সচিব এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে তাৎক্ষণিকভাবে ছবি নামিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই ওই ছবি নামিয়ে ফেলা হয়। এ সময় সচিব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলে উঠেন, কমিশনের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করতেই এটা নামনো হয়নি।

সাংবিধানিক কারণ দেখিয়ে নিজ পদে অনড় থাকেন সিইসি 
৫ নভেম্বর পর্যন্ত সিইসি বিচারপতি এম এ আজিজের কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো অনুরোধ যায়নি। অবশ্য অনানুষ্ঠানিক অনুরোধ এলেও সিইসি তাতে সাড়া দেননি। বরং তিনি সাংবিধানিক এই পদে থাকার ব্যাপারে থাকেন অনড় অবস্থানে। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যেও তা ফুটে উঠে। ৫ নভেম্বর ২০০৮ ইইউ-এর আট রাষ্ট্রদূত রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তাদের বলেন, সংবিধানের বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। ইসি সচিবের ব্রিফিংয়েও একই আভাস মেলে। সিইসি পদত্যাগ করছেন কি না অথবা তাকে কেউ পদত্যাগের অনুরোধ করেছেন কি না এ প্রশ্নের জবাব দেননি সচিব। ১৪ দল থেকে উত্থাপিত বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিতর্ক তো অনেক কিছু নিয়েই থাকতে পারে। তবে সবাইকে সংবিধান মেনে চলতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী কমিশন কাজ করছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাহী বিভাগকে কমিশনকে সহায়তা দিতে হবে। আর নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন ভোটার তালিকা।

দিনভর পদত্যাগের গুজব
৫ নভেম্বর ২০০৬ দিনভর ছিল সিইসির পদত্যাগের গুজব। ইসি সচিব বঙ্গভবনে যাওয়ার পর এ গুজব আরো ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছ থেকে সিইসির কাছে আনুষ্ঠানিক পদত্যাগের অনুরোধ করা হবে। এক বা দুইজন উপদেষ্টাকে দিয়ে অনুরোধ জানানো হবে। তবে ৫নভেম্বর পর্যন্ত এ অনুরোধ যায়নি। অনানুষ্ঠানিক অনুরোধের জবাবে সিইসি তার অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানোর চিন্তা বাদ দেয় বলে ধারণা করা হয়। অন্যদিকে, ইসি সচিব বঙ্গভবন থেকে ফিরে এসে ব্রিফিং করলে সিইসি যে তার পদ থেকে সরছেন না তা সাংবাদিকদের কাছে পরিস্কার হয়ে যায়।

সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা
সিইসি বিচারপতি এম এ আজিজ ৫ নভেম্বর সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে অফিসে যান আগের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা নিয়ে তিনি সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। ১ নভেম্বর থেকেই তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়। সিইসি প্রবেশের পর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। সিইসির দেহরক্ষী গেটে কর্তব্যরত কর্মচারীকে সাংবাদিক প্রবেশে সিইসির নিষেধের কথা জানিয়ে দেন। বেলা ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা গেটের সামনে জড়ো হলেও তারা কেউ ভেতরে ঢুকতে পারেননি। এ সময় নির্বাচন কমিশনার স ম জাকারিয়া বাইরে সাংবাদিকদের অপেক্ষা করতে দেখে তাদের ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা করেন। সিইসির নির্দেশে সাংবাদিকদের ভেতরে প্রবেশ করতে না দেয়া হলেও বিএনপির দুই সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও মোশাররফ হোসেন মঙ্গু কমিশন সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। তারা নিজ এলাকার বিষয় নিয়ে কথা বলতে কমিশন সচিবালয়ে আসেন বলে জানানো হয়। এ ছাড়া এশিয়া ফাউন্ডেশনের তিন কর্মকর্তা সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এদিকে একই দিন অর্থাৎ ৫ নভেম্বর ২০০৬ ফরিদপুরের জেলা জজ আজিজুল হক নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে যুগ্ম সচিব পদে যোগদান কনে।


বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু সিইসি
দেশের রাজনৈতিক বিতর্কে কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি এম এ আজিজ। তার পদত্যাগ দাবি করে ১৪ দল এবং এর সহযোগী বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। অন্যদিকে চারদলীয় ঐক্যজোট ও সহযোগী পেশাজীবী সংগঠনগুলো সিইসির পদত্যাগের বিরোধিতা করে বলে, সংবিধান অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পদত্যাগ করতে অনুরোধ জানানোর সুযোগই নেই। একসময় আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন বিচারপতি কে এম হাসান। বলা হয়েছিল তার জন্যই দেশে এত হানাহানি, অশান্তি। দায়িত্ব গ্রহণে বিচারপতি হাসান অপারগতা জ্ঞাপন করার পর সেই ইস্যুর সমাপ্তি ঘটে। এরপর রাজনৈতিক সঙ্কটের নতুন কেন্দ্রবিন্দু হন সিইসি বিচারপতি এম এ আজিজ। একপর্যায়ে ১৪ দলের দাবি করা তুলনামূলকভাবে অনালোচিত আরেকটি ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব হস্তান্তর। সিইসির পদত্যাগ ইস্যু শেষ হলে রাষ্ট্রপতির প্রধান তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়টি নতুন ইস্যুতে পরিণত হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। ড. কামাল হোসেন এ দাবি জানানোর পর ১৪ দল নেত্রী শেখ হাসিনা এটাকে গ্রহণ করে নেন।
সিইসি বিচারপতি এম এ আজিজের পদত্যাগ দাবির পেছনে একটি প্রধান যুক্তি হলো¬ তিনি হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করেন। পরে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের এ আদেশ বহাল রাখেন। উচ্চতর আদালতের এই নির্দেশ অমান্য করায় তার এ পদে থাকার অধিকার নেই বলে দাবি করা হয়।
সিইসি আজিজের পক্ষে বলা হয়, ভোটার তালিকাসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি যে, নতুন ভোটার তালিকা করা যাবে না। অথবা নতুন ভোটার তালিকার চলমান কার্যক্রমে স্থগিতাদেশও দেয়া হয়নি। পরে আপিল বিভাগ সুনির্দিষ্টভাবে আদেশ দেয়ার পর নতুন ভোটার তালিকার কার্যক্রম বন্ধ করে হালনাগাদ ভোটার তালিকার কাজ শুরু হয়। এছাড়া সিইসির বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতের আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগ সঠিক নয় বলে বলা হয়।
সিইসির পদত্যাগের পক্ষে বলা হয়, গোটা জাতি বিচারপতি এম এ আজিজের মুহূর্তের মধ্যে পদত্যাগ চায়। চার দল ক্ষমতায় থাকাকালে কয়েকজন মন্ত্রীও সিইসির বিপক্ষে কথা বলেন। সুতরাং এই জাতীয় দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে তার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত।
এ বক্তব্যের বিপক্ষে বলা হয়, ১৪ দল এবং এর সহযোগী সংগঠন মানে গোটা জাতি নয়। বিগত সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ আসনের অধিকারী চারদলীয় জোট সিইসির পদত্যাগের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় সিইসির পদত্যাগের দাবি বড়জোর জাতির একাংশের বক্তব্য হতে পারে। গোটা জাতির বক্তব্য কোনভাবেই নয়।
সিইসির পদত্যাগের পক্ষে আরো বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা তাকে পদত্যাগের অনুরোধ জানানোর কথা অঙ্গীকার করে বিচারপতি আজিজ অসত্য কথা বলেন। উপদেষ্টা হাসান মশহুদ বলেছিলেন, তিনি সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তিনি অসত্য বলেন না। বিচারপতি আজিজ মিথ্যা বলে অসদাচরণ করেছেন এবং সিইসি পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সিইসির পদত্যাগের বিরোধীদের বক্তব্য হলো¬ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষ পদত্যাগের অনুরোধ আসেনি বলে উল্লেখ করেছিলেন বিচারপতি আজিজ। উপদেষ্টার সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ ছিল গোপন ও অনানুষ্ঠানিক। আনুষ্ঠানিক অনুরোধ আর গোপন অনুরোধ এক নয়। বরং গোপনীয়তা ফাঁস করে সংশি¬ষ্ট উপদেষ্টাই অসদাচরণ করেছেন।
বিচারপতি আজিজের পদত্যাগের ব্যাপারে একজন উপদেষ্টা বলেন, খেলোয়াড়রা না চাইলে রেফারির থাকা উচিত নয়। যারা খেলবেন তারা না চাইলে রেফারি খেলা পরিচালনা করবেন কিভাবে?
সিইসির পক্ষের লোকজন বলেন, খেলা খেলোয়াড়ের ইচ্ছায় চলে না, চলে রেফারির ইচ্ছায়। খেলোয়াড়রা রেফারি নির্ধারণ করলে সে খেলা চালানো সম্ভব হবে কি না সন্দেহ রয়েছে।
দেশের শীর্ষ পর্যায়ের আইনজ্ঞদের কেউ কেউ বলেন, সিইসির পদটি হলো একটি প্রশাসনিক পদ। সংবিধান অনুসারে কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের পর এ ধরনের লাভজনক পদে বসতে পারেন না। যেদিন বিচারপতি অবসর নিয়েছেন সেদিন থেকে তিনি সিইসি হিসেবে অবৈধ হয়ে গেছেন। এখন রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
এর বিপরীত পক্ষের মত হলো¬ নির্বাচন কমিশন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদ দুটিই আধা বিচার বিভাগীয় এবং অলাভজনক পদ। সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদে কিছু পদাধিকারীর পারিশ্রমিক সম্পর্কে উলে¬খিত প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদের বাইরে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টা, স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী বা উপদেষ্টা, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্মকমিশনের সদস্যদের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনারদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর বাইরে বিভিন্ন আইনে নির্বাচন কমিশনকে আধা বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে উলে¬খ করা হয়। ফলে সিইসির অবৈধ হয়ে যাবার যুক্তি ভিত্তিহীন।
১৪ দল ও সহযোগী সংগঠনের বক্তব্য অনুযায়ী তৎকালীন রাজনৈতিক সঙ্কটের একমাত্র সমাধান সিইসির পদ থেকে বিচারপতি আজিজের পদত্যাগ। তিনি পদত্যাগ করলে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য একজন সিইসি নির্বাচন সম্ভব । এতে জনগণের ভোটাধিকার এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনও নিশ্চিত করা সম্ভব ।
চারদলীয় জোট এবং এর সমর্থকদের বক্তব্য অনুযায়ী সিইসির পদত্যাগে রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান তো হবেই না, বরং একটি জটিল রাজনৈতিক সঙ্কটের সৃষ্টি হবে বলে মত দেন। বিচারপতি কে এম হাসান অপারগতা জানানোর পর সব দল গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচিত করতে পারেননি বলেই রাষ্ট্রপতিকে সর্বশেষ বিকল্প অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। সবার গ্রহণযোগ্য সিইসি নির্বাচন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তখন নির্বাচন অনুষ্ঠানই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে বলে তারা যুক্তি দেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দু পক্ষের কোনো পক্ষই অপর পক্ষের মত গ্রহণ বা ছাড় দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়।

তিন কমিশনারও সিইসির মতো পদত্যাগে অসম্মতি জ্ঞাপন
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি এম এ আজিজের মতো অন্য তিন কমিশনারও পদত্যাগে অসম্মতি জানান। তিন কমিশনার বিচারপতি মাহফুজুর রহমান, স ম জাকারিয়া ও মাহমুদ হাসান মনসুর ১৫ নভেম্বর এ কথাই জানান। কমিশনাররা সকালে ইসি সচিব আব্দুর রশীদ সরকারের কাছে তাদের মনোভাব ব্যক্ত করেন। কয়েকটি দৈনিক ও ইলেকট্রোনিক মিডিয়ায় ‘নির্বাচন কমিশনার ও সচিবরা তাদের দায়িত্ব পালনে আগ্রহী নন’ ¬এ ধরনের প্রকাশিত খবর প্রসঙ্গে কমিশনারদের এ মনোভাবের কথা ইসি সচিব সাংবাদিকদের কাছে জানান। কমিশনাররাও পৃথকভাবে সাংবাদিকদের কাছে একই অভিমত ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে দেয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংবাদটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন করা হয়।
ইসি সচিবালয়ে বিকেলে ব্রিফিংকালে সচিব সাংবাদিকদের বলেন, তাকে উদ্ধৃত করে পদত্যাগ প্রসঙ্গে কোনো কোনো পত্রিকায় লেখা হয়েছে, আমি নিজেই নাকি ইসির সচিব পদে থাকতে রাজি নই। কিন্তু এটা ঠিক নয়। এ পদে থাকতে আমার কোনো আপত্তিও নেই। সরকার বদলি করলে যেতে হবে। তবে তার মানে এই নয় যে, আমি সরকারকে বদলির জন্য বলছি। তাকে নিয়ে এলডিপির বক্তব্য সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, আমাকে সৎ লোক উল্লেখ করে যে প্রশংসা করা হয়েছে তার জন্য তাদের ধন্যবাদ। তবে একই সঙ্গে এটা মনে রাখা দরকার, কেউ সৎ হলে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারেন না। বরং যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা যে আদেশ-নির্দেশ দেবে তা-ই মেনে চলতে হবে। তাই পদত্যাগ করার মতো কিছু ঘটেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আহ্বান
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা (এমইপিএস) রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রতি নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠনের আহ্বান জানান, যাতে করে কমিশন সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে। তারা বলেন,এমইপিএস ‘একটি শক্তিশালী ও কার্যকর তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ দেখতে আগ্রহী। ১৬ নভেম্বর ২০০৬ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে স্ট্রেট্রসবার্গে অনুষ্ঠিত এক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে গৃহীত এক প্রস্তাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানানো হয়। এমইপিএস বলেন, সরকারের উচিত ‘এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা, যে পরিবেশে ভোটাররা সত্যিকার স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।’ তারা ‘নির্বাচনী প্রচারণাকালে গণমাধ্যমের ভারসাম্যপূর্ণ সংবাদ পরিবেশনের নিশ্চয়তাও’ চান।
তারা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হয়রানি সৃষ্টিকারীদের বিচারের সম্মুখীন করার এবং অপরাধীদের অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির অবসান ঘটানোর জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।তারা দেশী ও বিদেশীদের সহায়তায় সঠিকভাবে ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্যও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।এমইপিএস রাজনৈতিক সহিংসতা পরিহার করার জন্য সব বিরোধপূর্ণ নির্বাচনী ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ে সিইসির বাসভবনের সামনে শত শত মানুষ
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ আজিজের বাসভবনের সামনে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে খাদ্যসামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ে হাজির হন কয়েক শত মানুষ। যত দিন লাগে তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে খাদ্যসামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করে যাবেন বলে অঙ্গীকার করেন। ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহের এই সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ আজিজ তার পদ থেকে সরে না গেলে ১৯ নভেম্বর ২০০৬ থেকে কোনো দোকান মালিক এম এ আজিজের কাছে কোনো দ্রব্য বিক্রি করবে না। দোকান মালিক সমিতির এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঐদিন সকাল থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্য নিয়ে কাকরাইলস্থ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বাসভবনের সামনে হাজির হন শত শত মানুষ। তাদের কারো হাতে চাল, কারো হাতে ডাল, মাছ, গোশত, সবজি, কলা, তেল, লবণ, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ বা অন্যকিছু। দ্রব্যসামগ্রীর সঙ্গে লিখে এনেছেন বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্লাকার্ড। ঢাকা, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন পেশার লোকজন এই দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে ঢাকায় আসেন। তারা জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে কাউকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রি করতে হবে না। যত দিন লাগে বিনা পয়সায় তারাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করে যাবেন। শুধু নিত্যপ্রযোজনীয় দ্রব্যই নয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের যা কিছু প্রয়োজন হবে তার সব কিছুই তারা সরবরাহ করবেন বলে জানান। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ আজিজের প্রতি অনুরোধ জানান, কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করে তিনি যেন পদত্যাগ না করেন।
বিকেলের দিকে এক মহিলা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বাসা থেকে বের হয়ে উপস্থিতি সবাইকে বলেন, তাদের এই কর্মকাণ্ডে প্রধান নির্বাচন কমিশনার খুশি, তবে বাসায় পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে বিধায় এ মুহূর্তে কোনো খাবারের প্রয়োজন হচ্ছে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে ওই মহিলা উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং তাদের জন্য নিয়ে আসা খাদ্যসামগ্রী কোনো এতিমখানায় দান করার অনুরোধ জানান।

৯ উপদেষ্টা একমত হয়ে যান সুপ্রিম জুডিশিয়াল প্রস্তাবে কিন্তু...
বিরাজমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে উপদেষ্টা পরিষদ অনেক বিকল্পের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এম এ আজিজকে অপসারণের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউ›িসলে পাঠানোর প্রস্তাবও বিবেচনায় নেন। এক পর্যায়ে একমত হন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ৯ উপদেষ্টা। একজন শুধু এর সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করেন।
১৪ দলের দাবি অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অপসারণ করতে সংবিধানে কী কী উপায় রয়েছে বিষয়টি উত্থাপিত হয় ১৮ নভেম্বর ২০০৬ উপদেষ্টা পরিষদের সভায়। এতে বলা হয়, সিইসি নিজে থেকে চলে যেতে রাজি না হলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করাই একমাত্র উপায়। এতে বিষয়টি নিস্পত্তি করতে সময় লাগত ছয় মাস। ফলে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার কারনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ বাড়তে পারার বিষয়টিও তারা অনুধাবন করতে পারেন। বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের ব্যাপারে ৯ উপদেষ্টা ইতিবাচক মতামত দেন।
কিন্তু কিভাবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হবে এবং সাংবিধানিকভাবে সেটা সম্ভব কি না রাষ্ট্রপতি সে বিষয়ে জানতে চাইলে তখন উপদেষ্টাদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। সংবিধান অনুসারে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের মতো যথেষ্ট কারণ থাকা, উচ্চ আদালতের অনুমতির প্রয়োজন এবং তিনি এ নিয়ে আদালতে গেলে কী পরিস্থিতি হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয় এবং সর্ব শেষ এই সিদ্ধান্ত নেয়াটা সঠিক হবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইসি
ইউরোপীয় কমিশন নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক টিম পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের হবে এবং তা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে আরো সুসংহত করবে।’
ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) সদস্য বেনিটা ফেরেরো ওয়াল্ডনার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দীন আহমেদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয় এ চিঠিতে।
বেনিটা ফেরেরো ওয়াল্ডনার তার চিঠিতে নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণক্রমে সেপ্টেম্বর ২০০৬ এ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবেশ যাচাই মিশনের বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, মিশনের সুপারিশক্রমে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই পর্যবেক্ষক মিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং একজন উচ্চ পর্যায়ের প্রধান পর্যবেক্ষকের নেতৃত্বে এ টিম পাঠানোর কথা বলা হয় । দু-এক সপ্তাহের মধ্যে পর্যবেক্ষক দলের নেতার মনোনয়ন ঘোষণা করার কথাও উল্লেখ করা হয়।
ইউরোপীয় কমিশনের সদস্য উল্লেখ করেন নির্বাচন পরিবেশ পর্যবেক্ষণ মিশন নির্বাচন সংক্রান্ত যেসব উদ্বেগজনক বিষয় চিহিপ্তত করে তাতে পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত খুব সহজ ছিল না। এসব উদ্বেগজনক বিষয়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থার ঘাটতি, ভোটার তালিকার যথার্থতার ব্যাপারে প্রশ্ন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত স্বচ্ছতার অভাব (বিশেষত সব পর্যায়ে ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ) এবং অভিযোগ ও আপিল কাঠামোর প্রতি আস্থার অভাব উল্লেখযোগ্য। এছাড়া প্রাক নির্বাচন ও নির্বাচনোত্তর সহিংসতার ঝুঁকির ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা হয়।
ইউরোপীয় কমিশন সদস্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের কাছে লেখা এ চিঠিতে বলেন,‘ আমরা নির্বাচনী সংস্কার ইস্যুতে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সীমিত ম্যান্ডেট সম্পর্কে সচেতন। আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি, ওপরে যে উদ্বেগ ও ঝুঁকির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তা নিরসনে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রধান রাজনৈতিক পক্ষগুলো সচেষ্ট হবে। এ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর পালন করার মতো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি, সঙ্কটের সাধারণ সমাধান এবং একটি অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের উন্নত পরিবেশ সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট সবাই সম্মিলিতভাবে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে।’
বাংলাদেশকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা প্রসঙ্গে ইসি সদস্য বলেন,‘ আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইউরোপীয় পর্যবেক্ষক দল নির্বাচনে আস্থা সৃষ্টির ব্যাপারে ভালো ভূমিকা পালন করবে এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক মান অনুসারে নির্বাচন সম্পর্কে একটি বিস্তৃত, বিশ্বাসযোগ্য ও গঠনমূলক প্রতিবেদন দিতে পারবে। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রাথমিক বিবৃতি প্রকাশ করবেন এবং পরে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন- যার মধ্যে ভবিষ্যতের জন্য বিস্তারিত সুপারিশও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী ইসিতে যাবেন এই সংবাদ পেয়ে ১৯ নভেম্বর সকালে ইসিতে গিয়েই সাংবাদিকরা এই নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হন। এ কারণে সাংবাদিকরা দিনভর ইসি ভবনের গাড়ি বারান্দায় অবস্থান করে তাদের দায়িত¦ পালন করেন। কেন সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয় এ বিষয়ে ইসি থেকে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া থেকে বিরত থাকা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি এম এ আজিজ ও তিন কমিশনারের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য ইসি ভবনের প্রধান ফটকের দায়িত্বে নিয়োজিত ইসির নিজস্ব লোকদের সরিয়ে নেয়া হয়। তাদের স্থলে স্পেশাল ব্রাঞ্চের দুই কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
সেদিন সকাল ১০টায় বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও দৈনিকের সাংবাদিক ইসি ভবনে প্রবেশ করতে চাইলে ফটকের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত স্পেশাল ব্রাঞ্চের দুই কর্মকর্তা বাধা দেন। তারা জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া যাবে না। তবে সারাদিনই ইসিতে আগত সাধারণ লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঢুকতে দেয়া হয়।
এর আগে ইসি সচিব আবদুর রশীদ সরকার সাংবাদিকদের জানান, সরকার ইসিতে নাশকতার আশঙ্কা করায় কারণে ইসি এবং সংশ্লিষ্ট চত্বর ও এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তিনি ইসিতে যেসব সাংবাদিক কাজ করেন তাদের জন্য প্রবেশপত্র সরবরাহের প্রস্তাব করেন। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে একাধিক সাংবাদিক ইসি কাভার করায় সাংবাদিকদের তরফ থেকে সচিবের প্রস্তাব নাকচ করা হয়। বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে সচিব বলেন, সেক্ষেত্রে সাংবাদিকদের দেহ তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেয়া হবে। সচিবের এই প্রস্তাবের সঙ্গে সাংবাদিকরা একমত পোষণ করেন। কিন্তু ১৯ নভেম্বর সকালে কমিশনে গেলে সাংবাদিকরা বাধার মুখে পড়েন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ রয়েছে উল্লেখ করে তাদের সচিবালয়ের অভ্যন্তরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তবে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সিইসির সঙ্গে দেখা করতে এলে সচিবালয় থেকে শুধু টিভি মিডিয়ার ক্যামেরা ক্রুদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। কমিশন সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে এসে জানান, সিইসি শুধু টিভি মিডিয়ার ক্যামেরা ক্রুদের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তারা সর্বোচ্চ ৫ মিনিট ভেতরে অবস্থান করতে পারবেন বলেও তিনি জানান। কিন্তু ক্যামেরা ক্রুরা অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বৈঠকের চিত্র গ্রহণ করতে ভেতরে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানান।

সিইসিকে ছুটি নেয়ার প্রস্তাব দেন উপদেষ্টা পরিষদ
সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। উপদেষ্টা পরিষদের আগের সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০ নভেম্বর ২০০৬ তিন উপদেষ্টা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এম এ আজিজের সঙ্গে পৌনে ১ ঘন্টা ধরে বৈঠক করেন। উপদেষ্টারা সিইসির সঙ্গে আলোচনার ফলাফল অবহিত করতে ছুটে যান বঙ্গভবনে। সন্ধ্যায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক বসে। বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
অন্যদিকে চারদলীয় জোট নির্বাচন কমিশন প্রশ্নে সংবিধানের বাইরে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। ১৪ দল তৃতীয় দফা অবরোধের প্রথম দিন বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা আবারও জানিয়ে দিয়। তত্ত¦াবধায়ক সরকারের একাধিক উপদেষ্টা উভয় রাজনৈতিক পক্ষের অবস্থানের মধ্যে সমন্বয় সাধনের আভাস দেন। এই সমন্বয়ের প্রস্তাবটি কী হবে সে সম্পর্কে উপদেষ্টারা স্পষ্টভাবে কিছু বলা থেকে বিরত থাকেন।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নয়:
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের দাবি ছিল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে বিচারপতি এম এ আজিজ ইস্তফা না দিলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তাকে অপসারণ করা। এ দাবি নিয়ে কয়েক দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারা আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে সিইসির দায়িত্ব পালন ও অব্যাহতিদানের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এর বিভিন্ন দিক কমিশনারের ক্ষেত্রে না ঘটায় এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনারের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ না আসায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ব্যাপারে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের কোনো সুযোগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়।
সংবিধানের ব্যবস্থা অনুসারে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের প্রবীণতম দুই বিচারপতিকে নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে পাঠালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়। সার্বিক বিবেচনায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের ধারণা গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়নি।

স্বেচ্ছায় ছুটি গ্রহণ
প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ছুটি গ্রহণ বা প্রদানের বিধিবিধান সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের মতো। বিচারপতিরা নিজেরা ছুটি গ্রহণ করতে পারেন কিন্তু তাদের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়ার রেওয়াজ নেই। গত রোববার রাতে বঙ্গভবনে দীর্ঘ ২ ঘন্টা ধরে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টাদের বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সেই বৈঠকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে কয়েক মাস স্বেচ্ছায় ছুটিতে থাকার প্রস্তাব পেশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

নির্বাচন কমিশনে তিন উপদেষ্টা 
এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩ উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম, আজিজুল হক ও সুলতানা কামাল তাদের প্রস্তাব পেশ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এম এ আজিজের কাছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে দেয়া এ প্রস্তাবটি বিবেচনার আশ্বাস দেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার আলোচনাও করেন। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা স্বাস্থ্যগত চেকআপের লক্ষ্যে এ ধরনের ছুটি নিয়ে কয়েক মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মোশতাক আহমেদ চৌধুরী। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এম এ আজিজ ওই দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে স্বেচ্ছায় কয়েক মাসের ছুটি নেয়ার বিষয় বিবেচনা করেন। অবশ্য তিনি এ ব্যাপারে আইনের খুঁটিনাটি বিষয় যাচাই-বাছাই করে দেখেন।
রাষ্ট্রপতির প্রস্তাব নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে তিন উপদেষ্টা কথা বলতে যান বেলা পৌনে ১১টার দিকে। উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম, এম আজিজুল হক ও সুলতানা কামালের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের উচ্চতর এই প্রতিনিধি দল সিইসি প্রশ্নে ১৪ দলের দাবি নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রায় ১ ঘন্টার আলোচনা শেষে তথ্য, পানিসম্পদ ও ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম কমিশন সচিবালয়ের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, সঙ্কট নিরসনে যা যা করা দরকার তার সবই করার চেষ্টা চলছে। বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে আমরা বৈঠকে এসেছি। সিইসির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের ফলাফল আগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হবে। আজই উপদেষ্টা কমিটি পুনরায় বৈঠকে বসবে। ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সব কিছু জানানো হবে।
সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম ও এম আজিজুল হক গাড়িতে সিইসিতে পৌঁছেন। অপর উপদেষ্টা সুলতানা কামালও একই সময় আসেন। তিন উপদেষ্টা সিইসি বিচারপতি এম এ আজিজের সঙ্গে বৈঠক করেন বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত। উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠককালে সিইসির সঙ্গে উপস্থিত থাকেন তিন নির্বাচন কমিশনার¬ বিচারপতি মাহফুজুর রহমান, স ম জাকারিয়া ও মাহমুদ হাসান মনসুর, নির্বাচন কমিশন সচিব আবদুর রশিদ সরকার ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জকরিয়া। বৈঠকের এক পর্যায়ে তিন উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতির প্রস্তাব নিয়ে সিইসির সঙ্গে একান্তে কথা বলেন।
উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম ব্রিফিংকালে জানান, সিইসি তাদের চা-পানের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তাই রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে তারা এসেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সঙ্কটে দেশবাসীর মতো আমরাও উৎকণ্ঠিত। সাংবাদিকরা বৈঠকের বিষয়বস্তু ও ফলাফল সম্পর্কে জানতে তাকে বিভিন্নভাবে প্রশ্ন করলেও উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম কৌশলে পাশ কাটিয়ে যান। আলোচনার বিষয়বস্তু ও ফলাফল স¤পর্কে তিনি কিছুই বলেননি। তবে এসব প্রশ্নের জবাবে তিনি পরিস্কারভাবে বলেন, রাষ্ট্রপতি আমাদের পাঠিয়েছেন। তাই সিইসির কাছে কী প্রস্তাব দিয়েছি বা কী আলোচনা হয়েছে সে সব বিষয়ে আগে সাংবাদিকদের বললে রাষ্ট্রপতিকে আর কিছু বলার থাকে না। এজন্য রাষ্ট্রপতির কাছেই আগে রিপোর্ট পেশ করব। ‘আশাব্যঞ্জক কিছু হয়েছে কি-না’¬ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা পদক্ষেপ একটা আশা নিয়েই হয়। আশা না থাকলে কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয় না।’ উদ্যোগ ব্যর্থ হলে কী করা হবে¬ এ প্রশ্নের উত্তরে মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এটা হাইপোথেটিক্যাল।’ এর কোনো জবাব হয় না।
ওদিকে, তিন উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক সম্পর্কে নিরব থাকেন সিইসি। ২০ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে অফিস শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সালামের উত্তর দেন তিনি। তবে বৈঠকের ফলাফল স¤পর্কে জানতে চাইলে কোনো জবাব না দিয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়েন। এ সময় তাকে কিছুটা বিমর্ষ দেখায়

কূটনীতিকদের তৎপরতা ও সমঝোতায় ছুটি নেন সিইসি - দুই কমিশনার নিয়োগ 
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের তীব্র আন্দোলন ও চরম বিশৃঙ্খলার মুখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এম এ আজিজের তিন মাসের ছুটি গ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কটের নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে বিচারপতি আজিজ তিন মাস ছুটি গ্রহণের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নতুন দুজন কমিশনার নিয়োগ করেন। এর আগে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে সঙ্কটের অবসান ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত হওয়ার ব্যাপারে ঢাকার কূটনীতিকরা বিশেষ উদ্যোগ নেন। তারা দুপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থানগত দূরত্ব কমানোর ব্যাপারে ভূমিকা রাখেন। রাষ্ট্রপতি সঙ্কট নিরসনের পদক্ষেপ নেয়ার আগে দুই রাজনৈতিক পক্ষের সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত না হলে চলমান সঙ্কটের অবসান ঘটবে না মর্মে কূটনীতিকরা অভিমত প্রকাশ করেন। তাদের অভিমতের সঙ্গে একমত হয়ে বঙ্গভবন থেকে উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। উভয় পক্ষের মতামত সম্পর্কে জানার পরই রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে পুরো প্যাকেজ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন।
রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের ব্যাপারে বঙ্গভবন ও উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে নানা তৎপরতা চালানো হয়। একই সঙ্গে তৎপর হয়ে ওঠেন ঢাকার প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরাও। তাদের তৎপরতার অংশ হিসেবে ২২ নভেম্বর ২০০৬ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের সঙ্গে চার কূটনীতিকের বৈঠক হয়। এ বৈঠকে চলমান সঙ্কট নিয়ে আওয়ামী লীগের সুনির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে বঙ্গভবন থেকেও উপদেষ্টা পরিষদের কোনো কোনো সদস্যের মাধ্যমে ১৪ দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
অন্যদিকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে থাকা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এম এ আজিজ ২২ নভেম্বর ২০০৬ নির্বাচন কমিশনে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন। বিকেলে নির্বাচন কমিশনের সচিব আবদুর রশীদ সরকার যান বঙ্গভবনে। সšধ্যায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এম এ আজিজের তিন মাসের ছুটি গ্রহণের বিষয়টি মৌখিকভাবে রাষ্ট্রপতি অবহিত করেন। 

ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া নানা জানা-অজানা ও এক্সক্লুসিভ বিষয়ের বর্ণনা -১৩তম পর্ব

ড. ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন সরকার

ফখরুদ্দীন সরকারের সাংবিধানিক ভিত্তি
ফখরুদ্দীন সরকারের সাংবিধানিক ভিত্তি সমন্ধে আইনবিশারদদের মধ্যে মতভেদ আছে। প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ এবং সামরিক বাহিনীর প্রধান মইন উ আহমেদ এই সরকারকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলে অভিহিত করেন। কিন্ত– ফখরুদ্দীন সরকার সংবিধানের ৫৮ ধারা (যে ধারায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্ণনা আছে) মতে নিযুক্ত হননি।
সংবিধানের ৫৮(গ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: ‘রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে যিনি সবশেষে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছেন যিনি এই অনুচ্ছেদের উপদেষ্টা নিযুক্ত হওয়ার যোগ্য তাকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে যদি উক্তরূপ অবসরপ্রাপ্ত বিচারক না পাওয়া যায় অথবা তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণে অসম্মত হন তা হলে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সর্বশেষ আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের মধ্যে যিনি সবশেষে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং যিনি অনুচ্ছেদের উপদেষ্টা নিযুক্ত হওয়ার যোগ্য তাকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন।
যদি আপিল বিভাগের কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে না পাওয়া যায় অথবা তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণে অসম্মত হন তা হলে রাষ্ট্রপতি যতদূর সম্ভব প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনাক্রমে বাংলাদেশের যেসব নাগরিক এই অনুচ্ছেদের অধীনে উপদেষ্টা নিযুক্ত হওয়ার যোগ্য তাদের মধ্য থেকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন।’


ফখরুদ্দীন আহমদ স্পষ্টত সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হননি। তাকে নিযুক্ত করার আগে রাষ্ট্রপতি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করেননি।
তাই ফখরুদ্দীন সরকারকে আমাদের সংবিধানে বর্ণিত ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলা যায় না।’
তবে ফখরুদ্দীন সরকারের একটি তত্ত্বগত ভিত্তি আছে। সেটা হলো ‘রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন তত্ত্ব’ অনুযায়ী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার কারণে কোনো অসাংবিধানিক সরকারকেও মেনে নেয়া যায়। এই তত্ত্ব অনুযায়ী বিচারপতি মুনীর পাকিস্তানের গণপরিষদ গভর্নর জেনারেল কর্তৃক ভেঙে দেয়া সমর্থন করেছিলেন। তার এক ঐতিহাসিক রায় ছিল এটি। ১১ জানুয়ারির আগে বাংলাদেশে যে সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল তাতে ফখরুদ্দীন সরকারের মতো একটি সরকারের প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশের তিন সামরিক বাহিনী প্রধানদের সম্মতিতে রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দীন সরকারকে মনোনয়ন দেন। এই পদক্ষেপে কয়েকটি বিদেশী রাষ্ট্র ও জাতিসঙ্ঘের সম্মতি ছিল বলে মনে করা হয়। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া নানা জানা-অজানা ও এক্সক্লুসিভ বিষয়ের বর্ণনা - ১২ম পর্ব

নির্বাচন কমিশন: বিতর্ক , পুনর্গঠন ও পরিচালিত কর্মকান্ড-১

প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বিতর্ক ও বাস্তবতা


রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নির্বাচন কেন্দ্রীক অনেক বিষয়ে বিতর্ক উঠে। তার মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আজিজও ছিলেন এ বিতর্কের একটি অংশ জুড়ে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি এম এ আজিজকে নিয়ে বিতর্ক বাংলাদেশকে এক সংঘাতময় সাংবিধানিক সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেয়। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক থাকার সময়ে তিনি সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান। সে সময় বিরোধী দল তার নিয়োগের বিরোধিতা করে। কোনোরূপ বিতর্ক এবং কোনো অভিযোগ ছাড়াই তাকে বিতর্কিত ব্যক্তিতে পরিণত করা হয়। দুজন নির্বাচন কমিশনারের মতামত না নিয়ে ভোটার তালিকা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। তাদের আনীত অভিযোগের সত্যতা যথেষ্ট প্রশ্নের মুখোমুখি হয়। প্রকৃত সত্য হলো, ২০০১ সালে প্রণীত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ১ কোটি অবৈধ ভোটার বাতিল করার জন্য নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অপর দুজন কমিশনারের স¤মতিক্রমেই এ নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেন। অবশ্য পরে অপর দুজন কমিশনার এ নতুন তালিকা প্রণয়নের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। পরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এ সংক্রান্ত এক রিট পিটিশনের জবাবে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ নতুন প্রণীত ভোটার তালিকার বিপক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সিইসি এম এ আজিজ আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। আপিল বিভাগ ২০০১ সালে প্রণীত ভোটার তালিকাকে মূল হিসেবে ধরে হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত দেয়। আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকাকে হালনাগাদ করে। সর্বোচ্চ আদালতের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সিইসি এম এ আজিজ ও অন্য কমিশনাররা তাদের ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত¦ যথাযথভাবে পালন করেন। কিন্ত– আওয়ামী লীগের নেতুত্বাধীন জোটের আন্দোলন ও কিছু সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদন সিইসি এম এ আজিজ ও নির্বাচন কমিশনের মান-মর্যাদাকে টেনেহিঁচড়ে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। কিছু পত্রপত্রিকার বিকৃত তথ্য পরিবেশনের কারণ হিসেবে যে বিষয়টি জানা যায়, তা হলো বিচারক হিসেবে দায়িত¦ পালনকালে সিইসি এম এ আজিজ মানহানিকর সংবাদ পরিবেশনের জন্য চারটি প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকার স¤পাদকের বিরুদ্ধে মামলার বিচার করেন। ওই সব সম্পাদক ও তাদের মিত্র স¤পাদকদের পত্রিকায় বিচারপতি এম এ আজিজকে হেয় ও কটাক্ষ করে ধারাবাহিকভাবে নানা প্রচারনা চালানো হয়।
দেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে সংবিধান। আর এ সংবিধানকে সর্বতোভাবে সমুন্নত রাখার প্রচেষ্টা চালানো দেশের সব নাগরিকের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব। সংবিধানকে অবজ্ঞা করে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়া কিংবা সংবিধানকে উপেক্ষা করে কিছু করার প্রবণতা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। বিচারপতি এম এ আজিজ সব সাংবিধানিক নিয়মকানুন মেনেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার হন। কিন্ত– সেই পবিত্র সংবিধানকে অবজ্ঞা করে পেশিশক্তির জোরে এম এ আজিজকে সিইসির পদ থেকে হটিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলে। সিইসির পদত্যাগের দাবি নিয়ে লাঠি-লগি-বৈঠা নিয়ে প্রকাশ্য রাজপথে নেমে আসে চৌদ্দ দলীয় জোট সমর্থকরা। সিইসির গ্রহণযোগ্যতা ও তাকে নিয়ে বিতর্কে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ সমর্থক কিছু আইনজীবী । তারা সিইসির অপসারনের পক্ষে নানা সাংবিধানিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। অনেক চিন্তাশীল লেখক এ নিয়ে কলম ধরেন যাদের অনেকের কলমের খোঁচাই ছিল সিইসিকে নিয়ে অত্যন্ত তাচ্ছিল্লকর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দীন খান বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবেই সিইসির অপসারণ সম্ভব’ শিরোনামে এক লেখায় সংবিধানের ৯৯, ১১৯ অনুচ্ছেদ ও ১৯৭২ সালের জনপ্রতিনিধিত¦ আদেশের বরাত দিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, ‘নির্বাচন কমিশন কোনো আধাবিচারিক প্রতিষ্ঠান নয়, নির্বাচন কমিশনারদের পদগুলো আধাবিচারিক পদ নয় বরং নির্বাচন কমিশন প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান এবং কমিশনারদের পদগুলো প্রশাসনিক পদ। এ অবস্থায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদ এমএ আজিজের বিচারপতি হিসেবে অবসরের দিন থেকে শূন্য হয়েছে ধরে নিয়ে রাষ্ট্রপতি গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করার মাধ্যমে ওই দিন থেকে এম এ আজিজ আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে বহাল নেই বলে ঘোষণা দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তার পদত্যাগ বা অপসারণ নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ থাকবে না।’ কিন্তু এম এ আজিজ প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত¦ গ্রহণ করেন, নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেন, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে আবার হালনাগাদ করেন, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে এম এ আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সম্বোধন করা হয়, কাল্পনিক বিতর্কিত হলেও যাকে সারাদেশের জনগণ প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে জেনেছিলো, মিডিয়ার কল্যাণে সারাবিশ্ব যখন তাকে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে চিনেছিলো আর তখন কি না তিনি যেদিন বিচারপতি পদ থেকে অবসর নিলেন সেদিন থেকেই আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার নেই মর্মে ঘোষণা শুধু হাস্যকরই নয়, আত্মঘাতীও বটে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. অবঃ হাসান মশহুদ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয় অস্বীকার করে সিইসি মিথ্যা বলেছেন এবং অসদাচরণ করেন। সুতরাং অসদাচরণের অভিযোগে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করানো হোক। উপদেষ্টা পরিষদের কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই এ ধরনের একটি গোপন বিষয় প্রকাশ করে লে. জে. হাসান মশহুদ চৌধুরী প্রকারান্তরে সংবিধান লঙ্ঘন করেন। সংবিধানের তৃতীয় তফসিলের ১৪৮ (২ক) (খ) অনুচ্ছেদে উপদেষ্টাদের জন্য গোপনীয়তার শপথে বলা হয়েছে, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কিংবা উপদেষ্টারূপে যে সকল বিষয় আমার বিবেচনার জন্য আনীত হইবে বা যে সকল বিষয় আমি অবগত হইব, তাহা প্রধান উপদেষ্টা কিংবা উপদেষ্টারূপে যথাযথভাবে আমার কর্তব্য পালনের প্রয়োজন ব্যতীত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো ব্যক্তির নিকট গোপন করিব না বা কোনো ব্যক্তির নিকট প্রকাশ করিব না।’ প্রকৃত অর্থে উপদেষ্টা লে. জে. হাসান মশহুদ চৌধুরী সিইসিকে পদত্যাগের অনুরোধ করতে গিয়ে কার্যত সততার নামে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য বুদ্ধিকে লেজেগোবরে করে ফেলেন। তিনি বলেননি, পদত্যাগের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষ থেকে তিনি সিইসিকে অনুরোধ করেন কি না। আর সেটি করে থাকলে তার ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্বের বরখেলাপ হতো, শপথ ভঙ্গ হতো। আর সে ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এম এ আজিজই অন্যায় বলেন নি যে, তার সঙ্গে পদত্যাগের বিষয়ে কোনো উপদেষ্টার কথা হয়নি। 

ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া নানা জানা-অজানা ও এক্সক্লুসিভ বিষয়ের বর্ণনা - ১১ম পর্ব

আন্তর্জাতিক মহলের চতুর্মুখী চাপ ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা পূনর্মূল্যায়ন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাণিজ্যিক সুবিধা ও উন্নয়ন সহযোগিতা পর্যালোচনা, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে বিদেশী পর্যবেক্ষকদের সরে দাঁড়ানো এবং প্রয়োজনে বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী মিশনগুলোকে সঙ্কুচিত করার চতুর্র্মুখী চাপ সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক মহল। আন্তর্জাতিক মহলের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে মহাজোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের পদ থেকে রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে পদত্যাগ ও জরুরি অবস্থা ঘোষণায় বাধ্য করে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এক বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর পরপরই অপর এক বিবৃতিতে সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে সহযোগিতা দেয়ার লক্ষ্যে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন প্রশ্নসাপেক্ষ বলে উল্লেখ করে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রেনেটা লক ডেসালিয়েন বলেন, এতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভূমিকায় প্রভাব পড়তে পারে। তিনি বলেন, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য ও বৈধ বিবেচিত হবে না।
বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি ইব্রাহিম গোমবারি এবং রাজনৈতিক ও শান্তিরক্ষী বাহিনী বিভাগের জন মারি গুহিনো বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সামরিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করবেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সৈন্য প্রেরণকারী দেশের মর্যাদা লাভ করেছে।
একই দিন বিকেলে হোটেল লেক শোরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সব দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন (ইওএম) তাদের কর্মকাণ্ড স্থগিত রাখা এবং কয়েক দিনের মধ্যে দেশত্যাগের কথা ঘোষণা দেয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনডিআই, আইআরআই ও কমনওয়েলথ এবং দাতাগোষ্ঠীর অর্থায়নে পরিচালিত ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল। ফলে একপক্ষীয় নির্বাচনের ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ওপর প্রচণ্ড মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি হয়। লেক শোরে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ইউরোপীয় কমিশনের রাষ্ট্রদূত ড. স্টিফেন ফ্রয়েন বলেন, একপক্ষীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারের সঙ্গে ইইউ বাংলাদেশের জন্য বিদ্যমান বাণিজ্যিক সুবিধা ও উন্নয়ন সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে কি না তা পর্যালোচনা করা হবে।
সবশেষে একপক্ষীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে পশ্চিমা কূটনীতিকরা বাংলাদেশে অবস্থিত মিশনগুলো সঙ্কুচিত করার হুমকি দেয়।
বস্তুত ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য তিনটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে অনেক এগিয়ে যায়। বিশ্বের অল্প যে ক’টি মুসলিম বা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্র চালু রয়েছে বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। তাই পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশকে ‘মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক দেশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। 

ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া নানা জানা-অজানা ও এক্সক্লুসিভ বিষয়ের বর্ণনা - ১০ম পর্ব

কূটনৈতিক তৎপরতা ফিরে দেখা
জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপট যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতিক্রিয়া:
বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপটকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। ১২ জানুয়ারি ২০০৭ ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের বিশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিস্থিতি তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে অনুরোধ করে এসেছে। নিজেদের মধ্যে মতভেদের সমাধান করার জন্য আলোচনায় অংশ নিতে এবং সংঘাত থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সব সময়ই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে এসেছি। আমরা দুঃখিত যে, রাজনৈতিক দলগুলো অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নতুন এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে এমন উপায়ে গ্রহণ করবে, যা হবে আইনের শাসনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ নাগরিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি সশ্রদ্ধ। বিবৃতিতে সব দলের প্রতি কোনো প্রকার সহিংসতা ও উসকানি থেকে বিরত থাকতে এবং সবাই মিলে একত্রে কাজ করে সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানানো হয়।’
ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটা দুঃখজনক, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সরকারকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হয়েছে।
সব দলের অংশগ্রহণে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যেকোনো সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে নির্বাচন প্রক্রিয়া সফল করার জন্য এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব দল, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে একটি গঠনমূলক সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’ একই সঙ্গে তিনি সরকার, সশস্ত্র বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জনগণের নিরাপত্তা, মানবাধিকার, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় বিদেশী তৎপরতা
নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট প্রস্তুতি নিলেও তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সে নির্বাচন প্রতিহত করার অঙ্গীকার করে। সব মিলিয়ে দেশে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি এবং হাঙ্গামার আশঙ্কাও দেখা দেয়। দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে তার অবসান ঘটে। জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে নির্বাচন বন্ধ হওয়ায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নির্বাচন বন্ধ হওয়ায় কিঞ্চিৎ উৎফুল্ল হলেও জরুরি অবস্থার স্বরূপ ও তার মেয়াদ কত দীর্ঘ হবে সে প্রশ্নে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটও হতাশ ও কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়। আর সাধারণ মানুষ খানিকটা হাঁপ ছাড়ে। অবরোধ, বিক্ষোভ, হরতাল, হাঙ্গামার আপাত-অবসান তো হয়! এটাই তখনকার নগদ পাওয়া। কিন্তু দেশের জন্য যারা ভাবেন এবং একটি স্থায়ী রাজনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হোক এ কামনা যারা করেন, তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়, আসলে দেশ যাচ্ছে কোথায়?
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে যে বিতর্কের সূচনা হয় এর মধ্য দিয়ে সে বিতর্কের আপাত: অবসান ঘটে। তবে সংঘটিত বিতর্ক তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় যে ত্র“টি রয়েছে, সেটা প্রমাণ করে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে অনেক নাটকই মঞ্চায়িত হয়। সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এর আগে দু’দফা সংবিধানের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হলেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা যায়নি। আরো উল্লেখ করার বিষয়, এর আগে কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদটি রাষ্ট্রপতিকে গ্রহণ করতে হয়নি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গোটা উপদেষ্টা পরিষদকে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হয়নি, এক মেয়াদে দু’বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদও গঠিত হয়নি। এসব ঘটনার কোনোটিই স্বাভাবিক ছিল না।
দেশে অনেক বিষয়েই জটিল কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হয়, যার সহজ কোনো উত্তর নেই। এর মধ্যে নির্বাচন কখন হবে, সংবিধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সময়সীমার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তার কী হবে? বিদেশী কূটনীতিকদের তৎপরতার লক্ষ কী¬ এসব প্রশ্ন অনেককেই পেরেশানির মধ্যে রাখে। বাংলাদেশের সংবিধানে সু¯পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে, ‘সংসদ ভেঙে দেয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে।’ এই বেঁধে দেয়া সময় ২৮ জানুয়ারি ২০০৭ এর মধ্যে শেষ হয়ে যায়। আর এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন কোনোক্রমেই সম্ভব ছিল না। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল স্থগিত ঘোষণা করেন। তখন সংবিধানের অবস্থানটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই প্রশ্ন দেখা দেয়?
আরো একটি স্পর্শকাতর ছিল নতুন প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি। রাষ্ট্রপতি সংবিধানের কোন বিধানবলে প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়োগদান করেন? হয়তো রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেন সংবিধানের ৫৮গ এর ৫ উপ-অনুচ্ছেদ অনুসারে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘যদি আপীল বিভাগের কোন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে পাওয়া না যায় অথবা তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণে অসম্মত হন, তাহা হইলে রাষ্ট্রপতি যতদূর সম্ভব প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের সহিত আলোচনাক্রমে, বাংলাদেশের যে সকল নাগরিক এই অনুচ্ছেদের অধীনে নিযুক্ত হইবার যোগ্য তাহাদের মধ্য হইতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করিবেন।’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি এমন কোনো আলোচনা করেননি। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি? বস্তুত এখানে সংবিধানের নির্দেশ নয়, পশ্চিমা কয়েকটি দেশের চাপই এ ক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মকাণ্ডকে সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে ৯০ দিনের ভেতর নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। আর রাষ্ট্রযন্ত্রের দৈনন্দিন রুটিন কাজগুলো করা। কোনো মৌলিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া বা দেয়ার কোনো এখতিয়ার তাদের নেই। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৯০ দিনের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকে, সে ক্ষেত্রে অনেক মৌলিক প্রশ্নেই তাদের সিদ্ধান্ত দিতে ও নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের অবস্থান কী ? এখানে কয়েকটি উদাহরণ পেশ করা হলো, যেখানে সংবিধানের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা উপেক্ষিত হয়। নির্বাচন কবে হবে¬ এ প্রশ্নটি ছিল খুবই প্রাসঙ্গিক। কেননা নির্বাচনকে ঘিরেই গোটা দেশের রাজনীতি আবর্তিত হয়। তা ছাড়া নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব নয়। রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় একটি বিষয় স্মরণ করেন। সেটি হলো, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে ভোটারদের আইডি কার্ড প্রদান, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও নির্ভুল ভোটার তালিকা দাবি করে। বিষয়টিকে রাষ্ট্রপতির ভাষণে গুরুত্ব পায় এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসব কাজ সম্পন্ন করেই নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। ফলে এই কাজগুলো শেষ করে নতুন নির্বাচন করতে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সময় লাগায় দীর্ঘ দুই বছর।
দেশের রাজনীতিতে এই পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে সকলেই ধরে নেয় এবার সব দলই নির্বাচনে আসবে। আর কেউ কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়বে না। আর দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যা ১৯৫৪ সালে তৎকালীন যুক্তফ্রন্টের ব্যানারে অংশ নেয়ার মাধ্যমে সূচনা হয়। এরপর ১৯৬৪ ও ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার জারিকৃত সামরিক আইনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নেয়। বাংলাদেশ আমলে ১৯৭৩ সালে, তারপর সামরিক শাসনের অধীনে ১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয়। সামরিক স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদের পতনের পর ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ এ দেশের নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে বেগবান ও সমৃদ্ধ করে। স্মরণ করা যেতে পারে, উল্লিখিত নির্বাচনের অনেকগুলোতেই আওয়ামী লীগ প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করেই অংশ নেয়। সম্ভবত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার থেকেই আওয়ামী লীগ বরাবর নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। অথচ এবার তেমন প্রতিকূল পরিস্থিতি না থাকলেও তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অপরিপক্বতা দোদুল্যমানতার জের হিসেবে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি শুধু ঘোলাটেই হয়ে ওঠেনি, ৫৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাজনৈতিক দল
আওয়ামী লীগ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচন-প্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়তে যাচ্ছিল। বিস্ময়ের ব্যাপার ছিল, নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়ার যৌক্তিকতা অনেকেই খুঁজে পাননি, এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতাও এ সম্পর্কে ছিলেন নিরব।
আওয়ামী লীগ প্রথম থেকেই নির্বাচন সংস্কারের দাবি করে আসে। এই দাবিদাওয়ার সারবত্তা কতটুকু সে প্রশ্ন তোলার আগে বলতে হয়, তাদের বক্তব্যগুলো শুধু অস্পষ্টই ছিল তাই নয়, তা ছিল পর¯পরবিরোধীও। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়েছিল তখন জনগণ ভেবেছিল, বিগত চারদলীয় সরকারের ব্যর্থতাগুলো যেমন¬ বিদ্যুৎ ঘাটতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দুর্নীতি বিস্তার¬ এসব নিয়েই আওয়ামী লীগ কথা বলবে, যা মানুষের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ এসব নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। তারা কেবলই কথা বলেছে নির্বাচন সংস্কার নিয়ে, অথচ এসব বিষয় জনগণকে কখনোই স্পর্শ করেনি। তাই আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কোনো আগ্রহ তৈরি হয়নি। সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয় ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের প্রায় সব দাবি মেনে নিলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রতিশ্র“তি দেয় এবং নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে। অথচ এর কিছু পরে হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগ সবাইকে হতবাক করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। তাদের এই সিদ্ধান্ত দেশকে যে কত বড় বিপদের সম্মুখীন করেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে সংবিধান নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়, সেটা মূলত তাদের জন্যই। আওয়ামী লীগের সৌভাগ্য, তাদের বিদেশী মিত্ররা দেশের আইনকানুন বিধিবিধান সব কিছু উপেক্ষা করে তাদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেয়। এখানে দেশবাসীর দুর্ভাগ্য, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি। তারা ভরসা করেছে তাদের বিদেশী মিত্রদের ওপর।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশী দূতাবাসগুলোর কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক দিন থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়। তাদের কর্মকাণ্ড অনেক ক্ষেত্রে কূটনীতির পরিধি ও শিষ্টাচার পর্যন্ত অতিক্রম করে। এক পর্যায়ে তাদের তৎপরতা ও অভিপ্রায় এমন পর্যায়ে পৌঁছে, যা কিনা অতীতে কখনো লক্ষ করা যায়নি। এসব দূতাবাস দেশের শাসনব্যবস্থায় সরাসরি হস্তক্ষেপ শুরু করে, যা শুধু আশঙ্কাজনক নয়, দেশের সার্বভৌমত্বকেও চ্যালেঞ্জ করার মতো। তবে এ জন্য বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা এবং বিশ্বব্যাপী মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ওপর পশ্চিমের খবরদারির উগ্র কামনার পাশাপাশি আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকাও কম দায়ী নয়। দেশে বিরাজমান তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে পশ্চিমা শক্তি আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাতে সক্ষম হয়। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির অহমিকা, নিজেদের মধ্যে সংলাপ বন্ধ রাখা, অন্ধ দলীয় স্বার্থসিদ্ধির চিন্তা ও অযৌক্তিক দাবিদাওয়া পেশই প্রধান কারণ ছিল। সাধারণ বিষয় নিয়েও রাজনীতিকরা পরস্পর আলোচনা না করে সেসব বিষয় নিয়ে বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে ধরনা দিয়েছেন তা সুরাহা করার জন্য। এর পরিণতিই তখন আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। পশ্চিমারা আমাদের গণতন্ত্রের সবক দেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপদেশ খয়রাত করেন। অথচ এ দেশের গণতন্ত্র হরণকারী ¯ৈ¦রশাসক ও দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ব্যক্তির সঙ্গে বসে এই কূটনীতিকরা খোশ আলাপ করেন। দেশের মানুষ এসব কর্মকাণ্ডকে ভালোভাবে গ্রহণ করেননি।