ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া নানা জানা-অজানা ও এক্সক্লুসিভ বিষয়ের বর্ণনা -১৩তম পর্ব

ড. ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন সরকার

ফখরুদ্দীন সরকারের সাংবিধানিক ভিত্তি
ফখরুদ্দীন সরকারের সাংবিধানিক ভিত্তি সমন্ধে আইনবিশারদদের মধ্যে মতভেদ আছে। প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ এবং সামরিক বাহিনীর প্রধান মইন উ আহমেদ এই সরকারকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলে অভিহিত করেন। কিন্ত– ফখরুদ্দীন সরকার সংবিধানের ৫৮ ধারা (যে ধারায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্ণনা আছে) মতে নিযুক্ত হননি।
সংবিধানের ৫৮(গ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: ‘রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে যিনি সবশেষে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছেন যিনি এই অনুচ্ছেদের উপদেষ্টা নিযুক্ত হওয়ার যোগ্য তাকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে যদি উক্তরূপ অবসরপ্রাপ্ত বিচারক না পাওয়া যায় অথবা তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণে অসম্মত হন তা হলে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সর্বশেষ আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের মধ্যে যিনি সবশেষে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং যিনি অনুচ্ছেদের উপদেষ্টা নিযুক্ত হওয়ার যোগ্য তাকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন।
যদি আপিল বিভাগের কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে না পাওয়া যায় অথবা তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণে অসম্মত হন তা হলে রাষ্ট্রপতি যতদূর সম্ভব প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনাক্রমে বাংলাদেশের যেসব নাগরিক এই অনুচ্ছেদের অধীনে উপদেষ্টা নিযুক্ত হওয়ার যোগ্য তাদের মধ্য থেকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন।’


ফখরুদ্দীন আহমদ স্পষ্টত সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হননি। তাকে নিযুক্ত করার আগে রাষ্ট্রপতি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করেননি।
তাই ফখরুদ্দীন সরকারকে আমাদের সংবিধানে বর্ণিত ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলা যায় না।’
তবে ফখরুদ্দীন সরকারের একটি তত্ত্বগত ভিত্তি আছে। সেটা হলো ‘রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন তত্ত্ব’ অনুযায়ী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার কারণে কোনো অসাংবিধানিক সরকারকেও মেনে নেয়া যায়। এই তত্ত্ব অনুযায়ী বিচারপতি মুনীর পাকিস্তানের গণপরিষদ গভর্নর জেনারেল কর্তৃক ভেঙে দেয়া সমর্থন করেছিলেন। তার এক ঐতিহাসিক রায় ছিল এটি। ১১ জানুয়ারির আগে বাংলাদেশে যে সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল তাতে ফখরুদ্দীন সরকারের মতো একটি সরকারের প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশের তিন সামরিক বাহিনী প্রধানদের সম্মতিতে রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দীন সরকারকে মনোনয়ন দেন। এই পদক্ষেপে কয়েকটি বিদেশী রাষ্ট্র ও জাতিসঙ্ঘের সম্মতি ছিল বলে মনে করা হয়। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন