ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া নানা জানা-অজানা ও এক্সক্লুসিভ বিষয়ের বর্ণনা - ১০ম পর্ব

কূটনৈতিক তৎপরতা ফিরে দেখা
জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপট যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতিক্রিয়া:
বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপটকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। ১২ জানুয়ারি ২০০৭ ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের বিশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিস্থিতি তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে অনুরোধ করে এসেছে। নিজেদের মধ্যে মতভেদের সমাধান করার জন্য আলোচনায় অংশ নিতে এবং সংঘাত থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সব সময়ই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে এসেছি। আমরা দুঃখিত যে, রাজনৈতিক দলগুলো অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নতুন এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে এমন উপায়ে গ্রহণ করবে, যা হবে আইনের শাসনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ নাগরিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি সশ্রদ্ধ। বিবৃতিতে সব দলের প্রতি কোনো প্রকার সহিংসতা ও উসকানি থেকে বিরত থাকতে এবং সবাই মিলে একত্রে কাজ করে সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানানো হয়।’
ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটা দুঃখজনক, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সরকারকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হয়েছে।
সব দলের অংশগ্রহণে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যেকোনো সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে নির্বাচন প্রক্রিয়া সফল করার জন্য এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব দল, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে একটি গঠনমূলক সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’ একই সঙ্গে তিনি সরকার, সশস্ত্র বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জনগণের নিরাপত্তা, মানবাধিকার, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় বিদেশী তৎপরতা
নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট প্রস্তুতি নিলেও তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সে নির্বাচন প্রতিহত করার অঙ্গীকার করে। সব মিলিয়ে দেশে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি এবং হাঙ্গামার আশঙ্কাও দেখা দেয়। দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে তার অবসান ঘটে। জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে নির্বাচন বন্ধ হওয়ায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নির্বাচন বন্ধ হওয়ায় কিঞ্চিৎ উৎফুল্ল হলেও জরুরি অবস্থার স্বরূপ ও তার মেয়াদ কত দীর্ঘ হবে সে প্রশ্নে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটও হতাশ ও কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়। আর সাধারণ মানুষ খানিকটা হাঁপ ছাড়ে। অবরোধ, বিক্ষোভ, হরতাল, হাঙ্গামার আপাত-অবসান তো হয়! এটাই তখনকার নগদ পাওয়া। কিন্তু দেশের জন্য যারা ভাবেন এবং একটি স্থায়ী রাজনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হোক এ কামনা যারা করেন, তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়, আসলে দেশ যাচ্ছে কোথায়?
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে যে বিতর্কের সূচনা হয় এর মধ্য দিয়ে সে বিতর্কের আপাত: অবসান ঘটে। তবে সংঘটিত বিতর্ক তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় যে ত্র“টি রয়েছে, সেটা প্রমাণ করে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে অনেক নাটকই মঞ্চায়িত হয়। সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এর আগে দু’দফা সংবিধানের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হলেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা যায়নি। আরো উল্লেখ করার বিষয়, এর আগে কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদটি রাষ্ট্রপতিকে গ্রহণ করতে হয়নি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গোটা উপদেষ্টা পরিষদকে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হয়নি, এক মেয়াদে দু’বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদও গঠিত হয়নি। এসব ঘটনার কোনোটিই স্বাভাবিক ছিল না।
দেশে অনেক বিষয়েই জটিল কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হয়, যার সহজ কোনো উত্তর নেই। এর মধ্যে নির্বাচন কখন হবে, সংবিধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সময়সীমার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তার কী হবে? বিদেশী কূটনীতিকদের তৎপরতার লক্ষ কী¬ এসব প্রশ্ন অনেককেই পেরেশানির মধ্যে রাখে। বাংলাদেশের সংবিধানে সু¯পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে, ‘সংসদ ভেঙে দেয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে।’ এই বেঁধে দেয়া সময় ২৮ জানুয়ারি ২০০৭ এর মধ্যে শেষ হয়ে যায়। আর এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন কোনোক্রমেই সম্ভব ছিল না। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল স্থগিত ঘোষণা করেন। তখন সংবিধানের অবস্থানটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই প্রশ্ন দেখা দেয়?
আরো একটি স্পর্শকাতর ছিল নতুন প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি। রাষ্ট্রপতি সংবিধানের কোন বিধানবলে প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়োগদান করেন? হয়তো রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেন সংবিধানের ৫৮গ এর ৫ উপ-অনুচ্ছেদ অনুসারে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘যদি আপীল বিভাগের কোন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে পাওয়া না যায় অথবা তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণে অসম্মত হন, তাহা হইলে রাষ্ট্রপতি যতদূর সম্ভব প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের সহিত আলোচনাক্রমে, বাংলাদেশের যে সকল নাগরিক এই অনুচ্ছেদের অধীনে নিযুক্ত হইবার যোগ্য তাহাদের মধ্য হইতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করিবেন।’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি এমন কোনো আলোচনা করেননি। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি? বস্তুত এখানে সংবিধানের নির্দেশ নয়, পশ্চিমা কয়েকটি দেশের চাপই এ ক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মকাণ্ডকে সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে ৯০ দিনের ভেতর নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। আর রাষ্ট্রযন্ত্রের দৈনন্দিন রুটিন কাজগুলো করা। কোনো মৌলিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া বা দেয়ার কোনো এখতিয়ার তাদের নেই। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৯০ দিনের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকে, সে ক্ষেত্রে অনেক মৌলিক প্রশ্নেই তাদের সিদ্ধান্ত দিতে ও নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের অবস্থান কী ? এখানে কয়েকটি উদাহরণ পেশ করা হলো, যেখানে সংবিধানের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা উপেক্ষিত হয়। নির্বাচন কবে হবে¬ এ প্রশ্নটি ছিল খুবই প্রাসঙ্গিক। কেননা নির্বাচনকে ঘিরেই গোটা দেশের রাজনীতি আবর্তিত হয়। তা ছাড়া নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব নয়। রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় একটি বিষয় স্মরণ করেন। সেটি হলো, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে ভোটারদের আইডি কার্ড প্রদান, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও নির্ভুল ভোটার তালিকা দাবি করে। বিষয়টিকে রাষ্ট্রপতির ভাষণে গুরুত্ব পায় এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসব কাজ সম্পন্ন করেই নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। ফলে এই কাজগুলো শেষ করে নতুন নির্বাচন করতে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সময় লাগায় দীর্ঘ দুই বছর।
দেশের রাজনীতিতে এই পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে সকলেই ধরে নেয় এবার সব দলই নির্বাচনে আসবে। আর কেউ কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়বে না। আর দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যা ১৯৫৪ সালে তৎকালীন যুক্তফ্রন্টের ব্যানারে অংশ নেয়ার মাধ্যমে সূচনা হয়। এরপর ১৯৬৪ ও ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার জারিকৃত সামরিক আইনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নেয়। বাংলাদেশ আমলে ১৯৭৩ সালে, তারপর সামরিক শাসনের অধীনে ১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয়। সামরিক স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদের পতনের পর ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ এ দেশের নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে বেগবান ও সমৃদ্ধ করে। স্মরণ করা যেতে পারে, উল্লিখিত নির্বাচনের অনেকগুলোতেই আওয়ামী লীগ প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করেই অংশ নেয়। সম্ভবত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার থেকেই আওয়ামী লীগ বরাবর নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। অথচ এবার তেমন প্রতিকূল পরিস্থিতি না থাকলেও তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অপরিপক্বতা দোদুল্যমানতার জের হিসেবে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি শুধু ঘোলাটেই হয়ে ওঠেনি, ৫৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাজনৈতিক দল
আওয়ামী লীগ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচন-প্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়তে যাচ্ছিল। বিস্ময়ের ব্যাপার ছিল, নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়ার যৌক্তিকতা অনেকেই খুঁজে পাননি, এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতাও এ সম্পর্কে ছিলেন নিরব।
আওয়ামী লীগ প্রথম থেকেই নির্বাচন সংস্কারের দাবি করে আসে। এই দাবিদাওয়ার সারবত্তা কতটুকু সে প্রশ্ন তোলার আগে বলতে হয়, তাদের বক্তব্যগুলো শুধু অস্পষ্টই ছিল তাই নয়, তা ছিল পর¯পরবিরোধীও। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়েছিল তখন জনগণ ভেবেছিল, বিগত চারদলীয় সরকারের ব্যর্থতাগুলো যেমন¬ বিদ্যুৎ ঘাটতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দুর্নীতি বিস্তার¬ এসব নিয়েই আওয়ামী লীগ কথা বলবে, যা মানুষের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ এসব নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। তারা কেবলই কথা বলেছে নির্বাচন সংস্কার নিয়ে, অথচ এসব বিষয় জনগণকে কখনোই স্পর্শ করেনি। তাই আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কোনো আগ্রহ তৈরি হয়নি। সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয় ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের প্রায় সব দাবি মেনে নিলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রতিশ্র“তি দেয় এবং নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে। অথচ এর কিছু পরে হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগ সবাইকে হতবাক করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। তাদের এই সিদ্ধান্ত দেশকে যে কত বড় বিপদের সম্মুখীন করেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে সংবিধান নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়, সেটা মূলত তাদের জন্যই। আওয়ামী লীগের সৌভাগ্য, তাদের বিদেশী মিত্ররা দেশের আইনকানুন বিধিবিধান সব কিছু উপেক্ষা করে তাদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেয়। এখানে দেশবাসীর দুর্ভাগ্য, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি। তারা ভরসা করেছে তাদের বিদেশী মিত্রদের ওপর।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশী দূতাবাসগুলোর কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক দিন থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়। তাদের কর্মকাণ্ড অনেক ক্ষেত্রে কূটনীতির পরিধি ও শিষ্টাচার পর্যন্ত অতিক্রম করে। এক পর্যায়ে তাদের তৎপরতা ও অভিপ্রায় এমন পর্যায়ে পৌঁছে, যা কিনা অতীতে কখনো লক্ষ করা যায়নি। এসব দূতাবাস দেশের শাসনব্যবস্থায় সরাসরি হস্তক্ষেপ শুরু করে, যা শুধু আশঙ্কাজনক নয়, দেশের সার্বভৌমত্বকেও চ্যালেঞ্জ করার মতো। তবে এ জন্য বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা এবং বিশ্বব্যাপী মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ওপর পশ্চিমের খবরদারির উগ্র কামনার পাশাপাশি আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকাও কম দায়ী নয়। দেশে বিরাজমান তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে পশ্চিমা শক্তি আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাতে সক্ষম হয়। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির অহমিকা, নিজেদের মধ্যে সংলাপ বন্ধ রাখা, অন্ধ দলীয় স্বার্থসিদ্ধির চিন্তা ও অযৌক্তিক দাবিদাওয়া পেশই প্রধান কারণ ছিল। সাধারণ বিষয় নিয়েও রাজনীতিকরা পরস্পর আলোচনা না করে সেসব বিষয় নিয়ে বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে ধরনা দিয়েছেন তা সুরাহা করার জন্য। এর পরিণতিই তখন আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। পশ্চিমারা আমাদের গণতন্ত্রের সবক দেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপদেশ খয়রাত করেন। অথচ এ দেশের গণতন্ত্র হরণকারী ¯ৈ¦রশাসক ও দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ব্যক্তির সঙ্গে বসে এই কূটনীতিকরা খোশ আলাপ করেন। দেশের মানুষ এসব কর্মকাণ্ডকে ভালোভাবে গ্রহণ করেননি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন