ফিরে দেখা ...১/১১; প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন পূরণে গঠন করা হয়েছিল কিংস পার্টি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দেশে ফিরতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ১ জন শীর্ষ কর্মকর্তা। এজন্য চিঠিও লেখেন। বিভিন্ন দিক থেকে শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে দেওয়ার চাপ তৈরি হওয়ার পর বাধ্য হয়ে ২৪ ঘণ্টা সময় চেয়ে নেন অপর ১ সেনা কর্মকর্তা। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার সব ব্যবস্থা করেন। যিনি হাসিনাকে দেশে আসতে বাধা দেন তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন পূরণে বিভোর ছিলেন। এজন্য গঠন করেন কিংস পার্টি। সবুজ কলমে লিখে দেন পার্টি আর পার্টি প্রধানের নাম। সে অনুযায়ী গঠন করা হয় রাজনৈতিক দল।


সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ওয়ান ইলেভেনের পর যখন বিদেশে যান, তখন তাকে দেশে ফিরতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ১ জন। যার কথার ওপর কথা বলার মতো কারও সাহস ছিল না। তিনি ওই সুযোগটা নেন। হাসিনাকে দেশে আসতে বাধা দেন। বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারেননি। তিনি এমন কোনো অপরাধ করেননি যে দেশে আসতে পারবেন না। গোটা বিশ্ব জেনে যায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না। হিথ্রো বিমাবন্দরে তাকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাকে দেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না, দেশে এলে ফেরত পাঠানো হবে এজন্য চিঠি লিখেছিলেন ওই ক্ষমতাধর কর্মকর্তা। কিন্তু যখন দেশ-বিদেশের সবাই ঘটনাটি জেনে যান তখন তাকে কোনোভাবেই ওই ব্যক্তির পক্ষে দেশে ফিরে আসতে না দেওয়া সম্ভব ছিল না। অবস্থা বেগতিক দেখে তার লেখা চিঠি ১ দিনের মধ্যে বাতিল করতে হয়। 

সূত্র জানায়, হাসিনাকে দেশে ফিরে আসতে না দেওয়ার কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পেছনে থাকা শক্তির কয়েকজনের মধ্যে মিশ্র প্রক্রিয়া দেখা দেয়। নানা চাপে পরে ১ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য। ওই সেনা কর্মকর্তা হাসিনাকে লন্ডনে ফোন করেন। ফোন করে প্রথমে তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। ওই সময়ে তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না এটাই বড় সমস্যা। কারও দুঃখ প্রকাশ করায় তার কোনো কিছুই যায় আসে না। তিনি দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাকে কেউ দেশের বাইরে রাখতে পারেন এমন ক্ষমতা কারও নেই। তারপরও তাকে বিদেশে জোর করে রাখা হয়। যখন তাকে ওই কর্মকর্তা ফোন করেন তখন হাসিনা তাকে বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। তোমরা আমাকে বিদেশে থাকতে বলছ। দেশে আসতে দিচ্ছ না। এটা তোমরা ঠিক করছ না। ওই কর্মকর্তা বোঝেন যে কাজটি তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি কতটা ভুল করেছেন। ম্যাডাম কতটা রাগান্বিত হয়েছেন। এই কারণে তিনি বারবার বিনয়ের সঙ্গে বলেন, ম্যাডাম, যা হয়েছে ভুল হয়েছে। ম্যাডাম, আপনি কিছু মনে করবেন না। আপনাকে শুধু অনুরোধ করব আমাকে ১টা দিন সময় দিন। আমি আজকের মধ্যেই সব ঠিক করে ফেলব এবং আপনার দেশে ফেরার ব্যবস্থা করব। আজকের দিনের পর আপনার আর দেশে ফিরে আসতে কোনো সমস্যা হবে না। যখন খুশি আসতে পারবেন। ম্যাডাম, আপনি কালকে আসতে চাইলে কালকেও দেশে আসতে পারবেন। কেবল ২৪ ঘণ্টা সময় চাইছি। এরপর ওই কর্মকর্তা শেখ হাসিনার কাছ থেকে ১ দিন সময় পান। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাকে জানালেন না ঠিক তিনি কবে ফিরবেন। এরপর ওই কর্মকর্তা কথা শেষ করে পরে বিষয়টি শীর্ষ ব্যক্তিকে জানান। শীর্ষ কর্মকর্তা ও তার অফিস পাশাপাশি হওয়ায় তাদের মধ্যে কথা বলা অনেক সহজ হতো। হাসিনার সঙ্গে কথা বলেই তিনি ৫ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যান। তাকে বলেন, স্যার, আপনি যে চিঠি দিয়েছেন এ চিঠি বাতিল করেন। আর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ফিরে আসার জন্য যাতে কোনো সমস্যা না হয় এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলুন। বাকি কাজ আমি করব স্যার। 

এরপর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ওইসব সমস্যার সমাধান করা হয়। শেখ হাসিনার দেশে ফিরতে আর কোনো বাধা ছিল না। পরে অবশ্য হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। 

সূত্র জানায়, শেখ হাসিনাকে বাইরে রাখার মূল কারণ ছিল খালেদা জিয়াকেও বাইরে পাঠিয়ে দেবেন। ওই খবরও তাকে পাঠানো হয়েছিল। বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হয়েছিল, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হবে। আপনি ফিরবেন না। হাসিনা কোনোভাবেই চাননি বিদেশে থাকতে। তিনি দেশের কথা চিন্তা করেই দেশে ফিরে আসেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাবে এটাও তিনি মেনে নিতে পারেননি। 

সূত্র জানায়, হাসিনাকে বিদেশে রাখার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর নতুন পরিকল্পনা শুরু হয়। ক্ষমতার পেছনে থাকা ৩ ব্যক্তি ঠিক করেন তারা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকবেন। এজন্য তাদের একজন প্রেসিডেন্ট হবেন। আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসার জন্য ব্যবহার করা হবে ওই সময়ের প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে। তখন সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয় কেমন করে ইয়াজউদ্দিন আহমদেকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরানো যাবে।

সূত্র জানায়, একজন বিশেষ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ও আইনি সহায়তা নিয়ে উপায় বের করেনÑ কেমন করে প্রেসিডেন্ট রিজাইন দিয়ে বিদায় নিতে পারেন। সেখানে তারা বুদ্ধি বের করেন ইয়াজউদ্দিন আহমেদ অসুস্থ। এই গ্রাউন্ড দেখিয়ে তাকে রিজাইন করতে বলা হবে। তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেবেন এবং তার চলে যাওয়ার কারণে প্রেসিডেন্ট পদে যে শূন্যতা তৈরি হবে ওই শূন্যতা পূরণ করার জন্য প্রেসিডেন্ট নিজেই ওই শীর্ষ কর্মকর্তার হাতে ক্ষমতা দিয়ে যাবেন। এজন্য ড্রকট্রিন অব নেসিসিটি উল্লেখ করে অর্ডার পাস করা হবে। সংসদ না থাকায় কীভাবে তা করা যায় এরও উপায় বের করা হয়। বলা হয়, সংসদ না থাকায় অর্ডিন্যান্স জারি করা হবে। আর ওই অর্ডিন্যান্সের বলেই বদল হয়ে যাবে প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট পদে রদবদল করার পর ইয়াজউদ্দিনকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে সব কাজ থেকে দূরে। চাইলে তিনি দেশে থাকবেন, বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে চাইলেও পারবেন। যেটা তার ইচ্ছা। একারণে তার অসুস্থতার সময়ে অনেক নাটক হয়। কিন্তু প্রেসিডেন্টের পদে রদবদল করা সম্ভব হয়নি। এটা রদবদল করতে না পারার কারণও ছিল ২ নেত্রী। কারণ, তারা কোনোভাবেই এ ধরনের কোনো কিছু মেনে নেবেন না। 

সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্ট পদে বসার জন্য ওই ব্যক্তি একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার উদ্যোগ নেন। রাজনৈতিক বিষয় দেখতেন এবং রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এমন ১ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন সংস্কারবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। তিনি অবশ্য আগে থেকেই যোগাযোগ করছিলেন। তবে সেটা ওইভাবে ছিল না। ওই সময়ে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় যে ১০০ এমপি আসার জন্য তৈরি আছেন ওই সব এমপিকে নিয়ে আসার জন্য। তাদের সবাইকে নিয়ে একটি পার্টি করার জন্য। এজন্য গঠন করা হয় কিংস পার্টি। পার্টির প্রধান হিসেবে সবুজ কলমে লিখে দেওয়া হয় পার্টির নাম ও পার্টি প্রধানের নাম। 

পার্টি প্রধানের নামটি পরিচিত, তবে তেমন আলোচিত নয়। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে পেছনে ফেলে জনগণ তাকে মেনে নেবে এমনও নয়। ওই ব্যক্তি রাজনৈতিক মহলে তেমন জনপ্রিয় না হলেও এবং তার একটি আলাদা পরিচয় থাকার কারণে ওই শীর্ষ ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক থাকার জন্য তাকেই পার্টি প্রধান করে দল গঠন করা হয়। ওই দলের প্রধান হিসেবে তিনি সাবেক এমপিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাকে তার দলে ভেরান। তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কি তাও জানান। অনেকেই শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বেইমানি করে ওই কিংস পার্টিতে নাম লেখান। ওই পার্টি গঠন করা, পার্টি গঠন করার পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা ও এর পেছনে যত টাকা খরচ হয় সব দেন ওই কর্মকর্তা। তার লক্ষ্য একটাই সাবেক, সৎ ও তরুণ দক্ষ এমপিদের নিয়ে দল গঠন করে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশ চালাবেন। এজন্য তার ক্ষমতাও বাড়িয়ে নেবেন। ওই সময়ে প্রেসিডেন্টের যে ক্ষমতা ছিল তা আরও বাড়ানো হবে যাতে করে তিনি তার পছন্দমতো সব কাজ করে যেতে পারেন। 

কিংস পার্টি গঠন নিয়ে ওই সময়ে অনেক কথা হয়। এটা গঠন করার সঙ্গে যারা জড়িত, তারাও বিষয়টি অস্বীকার করেন। বক্তৃতা থেকে শুরু করে সব জায়গায় বলত এটা জানেন না। অন্য দিকে এও বলেন, তাদের পার্টি করার কোনো ইচ্ছা নেই। কিন্তু যে কর্মকর্তাকে দল গঠন করা ও পার্টি প্রধান কাকে করা হবে এর নাম লিখে দিয়েছেন সেই কাগজও তিনি দেখে নেন। আর এরপর থেকে পেছনের যারা জানতে পারেন তাদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতায় থাকা। তখন এ নিয়ে বিরোধ বাধে। কারণ, ওয়ান ইলেভেনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল ৫টি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন