৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত দিবস

 ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত দিবস ! বরিশালে অবস্থানকারী পাকিস্তান আর্মির সদস্য ও মিলিশিয়ারা তখনও অস্ত্র সমাপর্ণ করে নাই। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে খুনি পাকিস্তানী আর্মিরা বরিশাল শহরে অপারেশনে বের না হলেও ওয়াপদা ক্যাম্পের আশে পাশে কেউ গেলেই তাকে গুলি করতো, তাদের গুলিতে সেই সময়ে বহু আহতও হয়েছিলেন। তাছাড়া তখনও বরিশাল শহরের প্রধান

১৯৭১ সালে বরিশাল যে ভাবে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী মুক্ত হয়েছিল

 ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর বরিশাল কালেক্টরেট ভবনের সভা কক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় হানাদার বাহিনীর পদস্থ অফিসার, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের অফিসার, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও ঘৃনিত রাজাকার আবদুর রহমান বিশ্বাস, এ্যাডভোকেট আবদুর রব, শাহজাহান চৌধুরী, মাওলানা বশিরউল্লা আতাহারী, এ্যাডভোকেট প্রমথ কুমার সেনগুপ্ত, এডভোকেট আবুল হোসেন সিকদার, এ্যডভোকেট মেনহাজ উদ্দিন আহমেদ খান (নবগ্রাম রোড), সৈয়দ শের আলী (মোক্তার), প্রীন্সিপ্যাল কাজী মোতাহার হোসেন, খলিলুর রহমান (হেড মাষ্টার, নুরিয়া স্কুল). মীর আনোয়ার হোসেন (বড় মিয়া, আলেকান্দা), আমজেদ মৃধা (হাটখোলা), সামসুদ্দিন তালুকদার (হাটখোলা), আব্দুল মজিদ মুন্সি (রব উকিলের মহুরী,

ঢাকায় যত বাগ

Image result for শাহবাগ
রাজধানীর সব থেকে পরিচিত জায়গা শাহবাগ। এই জায়গাটার অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ ও মজাদার। নাম বিচিত্রের শহর ঢাকা। ‘বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি’র শহর এ ঢাকায় নামের বাহারে বাগের আধিক্য বেশি। এ বাগের সঙ্গে বাগানের একটা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রয়েছে। নামের শুরুটা হয় মুঘল আমলে। যদিও তখন নামের শেষে বাগিচা এবং বাগান ছিল। পরবর্তীতে  তা সংক্ষেপ ‘বাগ’ সংবলিত রূপ ধারণ করে। ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুনের ‘ঢাকা স্মৃতি-বিস্মৃতির নগরী’ বইয়েও এসব কিছু কিছু স্থানের নামের ইতিহাস উল্লেখ রয়েছে।

পুরনো ঢাকা ও নতুন ঢাকার সংযোগস্থল হচ্ছে এই শাহবাগ। এই জায়গার পত্তন হয় ১৭ শতকে মুঘল আমলে। ওই সময় এখানে কেবল মানুষ বসবাস করতে শুরু করে। শাহবাগের নাম ছিল তখন বাগ-ই-বাদশাহী। আর পুরনো ঢাকা ছিল

সৌদি রাজপরিবারের গোপন ইতিহাস প্রকাশ…

সৌদি আরব হলো কোনো ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর একমাত্র মুসলিম দেশ। অন্য কোনো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ কোনো ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
রিয়াদের নিকটস্থ দিরিয়া নামের একটি কৃষিবসতির প্রধান ছিলেন মুহাম্মদ বিন সৌদ। এই উচ্চাভিলাষী মরুযোদ্ধা ১৭৪৪ সালে আরবের বিখ্যাত ধর্মীয় নেতা মুহাম্মদ বিন ওয়াহাব [ওয়াহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা]-এর সাথে মৈত্রী চুক্তি করে “দিরিয়া আমিরাত” গঠন করেন। তুরস্কের উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে শিরক-বিদাত পালনের অভিযোগে এই দুজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। ওই “দিরিয়া আমিরাত”-ই বিশ্বের প্রথম সৌদি রাজ্য/আমিরাত। মুহাম্মদ বিন সৌদ তার পুত্র আবদুল আজিজের সাথে মুহাম্মদ বিন ওয়াহাবের মেয়ের বিয়ে দেন। এভাবেই সৌদ পরিবার ও ওয়াহাবী মতবাদের মিলনযাত্রা শুরু হয়। ১৭৬৫ সালে মুহাম্মদ বিন সৌদ-এর মৃত্যু হলে তার ছেলে আবদুল আজিজ দিরিয়ায় ক্ষমতাসীন হয়।

রহস্যাবৃত জিয়া হত্যা-৮

সেদিন থেকে শুরু এরশাদের ষড়যন্ত্র
৩০ মে ১৯৮১, ঢাকা সেনানিবাসের উচ্চপদস্থ সকলেই ঘুমিয়ে আছেন আরাম করে। শনিবারে সাত সকালে অফিসে যাওয়ার তেমন তাড়া নেই। নিয়ম অনুযায়ী মাসের শেষ শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ চলে সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে। সে জন্য শনিবার অফিস শুরু হয় দেরিতে। ৯টার দিকে গেলেই চলে। ক্রিং ক্রিং বেজে উঠেলো টেলিফোন। ঘুমের মধ্যেই জেনারেল মইন শুনতে পেলেন রিংয়ের শব্দ। তাকালেন সাইড টেবিলে রাখা টইম পিসটার দিকে। ভোর ছটা বেজে গেছে। দ্রুত টেনে নিলেন রিসিভারটা। ঘুমজড়ানো কণ্ঠে বললেন, হ্যালো। অন্য প্রান্ত থেকে কথা বলে উঠলেন জেনারেল এরশাদ। `What are you doing' - বললেন এরশাদ। গলাটা যেন একটু উত্তেজিত মনে হলো তার! উত্তরের অপেক্ষা না করেই এরশাদ আবার বললেন, Come to the office immediately. It’s urgent. বলার ভঙ্গিটাতেই বুঝে গেলেন জেনারেল খারাপ কিছু একটা ঘটেছে। সম্মতি জানিয়ে

রহস্যাবৃত জিয়া হত্যা-৭

সেনানিবাসে নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় জেনারেল মঞ্জুরকে
এগিয়ে যাচ্ছিল জেনারেল মঞ্জুরের কনভয়টা। সমানের দিক থেকে গোলাগুলির শব্দ আসতেই ব্রেক করলো গাড়িগুলো। জেনারেল তাঁকালেন মেজর রেজার দিকে। বুঝতে অসুবিধা হলো না কি বলতে চান তিনি। গাড়ি থেকে নেমে সোজা উঠে গেলেন মেজর রেজা একটা টিলার উপরে। যেদিক থেকে গুলির শব্দ আসছে সেদিকে তাকিয়ে অবস্থা দেখলেন রাস্তার উপর কারা জানি দৌড়াদৌড়ি করছে। স্যার, আমাদের বোধহয় সামনে আর এগিয়ে যাওয়া উচিত হবে না। নিচে নেমে রেজা জানালেন জেনারেলকে।
বুঝে গেলেন জেনারেল মঞ্জুর সামনে আর এগুনো যাবে না। গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে বললেন সবাইকে। ঘুরে গেলো গাড়িগুলোর মুখ। কিন্তু স্টার্ট নিলো না জেনারেলের জীপটা। কিছুক্ষণ বৃথা চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলেন তিনি। আর দুটো গাড়িতে ভাগাভাগি

রহস্যাবৃত জিয়া হত্যা-৬

সামনে পথ বন্ধ, ধরা পড়তেই হবে

Zia killing logo.jpg১৯৮১ সালের ১ জুন। রাত আড়াইটা। জে. মঞ্জুরকে বহনকারী জীপটি একটানে সেনানিবাস থেকে বের হয়ে চলতে লাগলো হাটহাজারীর দিকে। অন্ধকার রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে জীপ। জেনারেল মঞ্জুর হঠাৎ করে গাড়ি থামাতে বললেন। রাজি হলেন না মেজর মোজাফফর। ‘আমাদের আর একটু এগিয়ে গিয়ে থামা উচিত’-বললেন তিনি। মোজাফফরের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেলেন মঞ্জুর। গাড়ি এগিয়ে যেতে থাকলো।
বেশ খানিকটা চলার পর হাটহাজারীর প্রায় কাছকাছি এলে গাড়ি থামাতে বললেন মেজর মোজাফফর। রাস্তার বাম দিক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো জীপ। জে. মঞ্জুর গাড়িটাকে একটু আড়ালে পার্ক করতে বললেন। রাস্তায় নেমে এলেন তিনজন।
মনটাকে কেন যেন শান্ত করতে পারছেন না জেনারেল। বার বার তাকাচ্ছেন চট্টগ্রামের দিকে। তার পরিবারসহ আরো যাদের আসার কথা, কারোরই দেখা পাচ্ছেন না তিনি। মুখে বার বার বলছেন, এখনো আসছে না কেন ওরা। এগিয়ে এসে মেজর মোজাফফর বললেন, ‘স্যার জীবনে তো অনেক

রহস্যাবৃত জিয়া হত্যা-৫

মঞ্জুর নিজের কাঁধ থেকে ব্যাজ খুলে ফেললেন, স্টার্ট নিল গাড়িটা

Zia killing logo.jpg
৩০মে ১৯৮১। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। সারাটা দিন ধকল গেছে সবার ওপর দিয়ে। সেনানিবাসের ভেতর সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছে। শহরের কোথাও থেকে কোনো গোলাযোগের খবর পাওয়া যায়নি। কি হতে যাচ্ছে সে আলোচনাতে মশগুল সাধারণ মানুষ। সারাটা দিনই বিভিন্ন জায়গায় ছুটাছুটি করে বেড়াতে হয়েছে জেনারেল মঞ্জুরকে। একবারও বাসায় যাওয়ার সময় পর্যন্ত পাননি। 
আরেকটা বিনিদ্র রাত কেটে গিয়ে সকাল হয়েছে। ৩১মে সকাল ১১টায় সমস্ত বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার এক সমাবেশ ডাকলেন জেনারেল মঞ্জুর ডেপুটি কমিশনারের অফিসে। সবাইকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ঠিকঠাক মতো কাজ চালিয়ে যেতে বললেন। চট্টগ্রামের রেডিও বাংলাদেশকে ২৪ ঘণ্টা কাজ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিলেন। বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানালেন, যেন কোনো জাহাজ বন্দর ত্যাগ না করতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকায় যেন কোনোরকম তেল, পেট্রোল না পাঠানো হয় সে ব্যাপারেও অনুরোধ জানালেন।
এদিকে সকাল ১১টার পর পরই কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনী মার্চ করতে শুরু করেছে

রহস্যাবৃত জিয়া হত্যা-৪

মঞ্জুর হত্যার বিচার হওয়া উচিত
Zia killing logo.jpgমেজর মোজাফফর চট্টগ্রামের সেনাবিদ্রোহের সময় খুব কাছ থেকে দেখেছেন ঘটনা। মেজর জেনারেল মঞ্জুর ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত তার সঙ্গে ছিলেন। একাত্তরে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি জাতীয় রক্ষীবাহিনীতে যোগ দেন। রক্ষীবাহিনী বিলুপ্ত করা হলে সেখান থেকে সেনাবাহিনীতে গৃহীত হন। পরবর্তীকালে মেজর পদে উত্তীর্ণ হন। জিয়া হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনি মামলার একজন আসামী ছিলেন। কিন্তু তিনি বিদেশ চলে যেতে সক্ষম হন এবং বিদেশে আছেন। সম্প্রতি তার সাক্ষাতকার গ্রহন করা হলে তিনি তার ভাষ্য এভাবে বলেন:
চট্টগ্রাম সেনাবিদ্রোহের সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না। তবে চিটাগাং-এর অন্য সব সেনা অফিসার এবং সদস্যদের মতই আমাকেও জড়িয়ে পড়তে হয়। আর সে কারণেই অনেক কিছু সচক্ষে দেখার সুযোগ হয়ে যায়। 
অনেক দিন থেকেই সামরিক বাহিনীর ভিতরে অসন্তোষ দেখা দিতে শুরু করেছিল। মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধা সংঘাত থেকেই অসন্তোষের প্রধান কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই সামরিক বাহিনীর ভেতর দলাদলি ছিল। 
জিয়াউর রহমান ক্ষমতার আসার পরই মুক্তিযুদ্ধের অতীত থেকে সরে যেতে শুরু করলেন। দ্রুত

রহস্যাবৃত জিয়া হত্যা-৩

পাহাড় থেকে জিয়ার মৃতদেহ ফেলে দিতে তার মন সায় দিলো না
Zia killing logo.jpg৩০মে সকাল ১০ টা। প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হয়েছেন এ খবর জনসাধারণ সবেমাত্র জানতে শুরু করেছে। তবু সার্কিট হাউসের আশেপাশে কৌতুহলী জনতা দেখা গেলো না। সকালের দিকে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার এবং নৌবাহিনীর প্রধান ঘটনাস্থল এক ঝলক দেখে গিয়েছেন মাত্র। 
সারা রাত যেখানে যেভাবে ছিলো সেভাবেই পড়ে আছে মৃতদেহগুলো। কর্নেল মতিউর মেজর মোজাফফরকে বললেন, ‘রাঙ্গামাটির দিকে কোনো এক পাহাড় থেকে জিয়ার মৃতদেহ নিচে ফেলে দেওয়ার জন্য। ইতস্ততঃ করছিলেন মেজর মোজাফফর। কর্নেল মতি বললেন, জিয়াকে কবর দিয়ে আমরা তাকে জাতীয় বীর তৈরি করতে চাই না। সুতরাং যেভাবেই হোক তোমাকে বলছি তাই কর।’ কোনো কথা না বলে বেড়িয়ে গেলেন মেজর মোজাফফর।
সকাল ১০টার পরপরই একটা জিপ ও একটা পিকআপসহ সার্কিট হাউসে পোঁছলেন মেজর মোজাফফর। সকালের আলোয় গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া মৃতদেহগুলো দেখলেন। রক্তে ভেসে আছে

রহস্যাবৃত জিয়া হত্যা-২

জেনারেল মঞ্জুরের কথায় ৪০জন অফিসার হাত তুলে সমর্থন জানালেন

মেজর মোজাফফর জানালেন, The president has been killed. মেজর জেনারেল মঞ্জুর কথা শুনে কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন। একটু ধাতস্থ হয়ে মেজর মোজাফফরকে বললেন, ডিভিশনাল স্টাফ অফিসার, বিগ্রেড কমান্ডারসহ সব সামরিক উর্ধ্বতন অফিসার যেন সকাল সাতটার মধ্যে তার দপ্তরে হাজির হয়। 
টেলিফোন নামিয়ে তৈরি হয়ে নিলেন মেজর জেনারেল মঞ্জুর। বেসামরিক পোশাক পরে নিজের স্টাফ গাড়িতে উঠে বেড়িয়ে গেলেন বাসা থেকে। ষষ্ঠ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের দপ্তরে এসে থামলো গাড়িটা। তাকে নামতে দেখে এগিয়ে আসলেন Zia 44.jpgষষ্ঠ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর দোস্ত মোহাম্মদ শিকদার। অবিলম্বে সিগনাল সেন্টারে প্লাটুন মোতায়েন এবং কুমিল্লা থেকে সম্ভাব্য আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য শুভপুর ব্রিজে সৈন্য পাঠাতে বলে আবার গাড়িতে উঠে বসলেন মঞ্জুর। ঝড়ের বেগে ছুটে চললো তার গাড়ি প্রধান ফটকের দিকে। 
তৎকালীন বিএমএ কমান্ডেন্ট একজন বিগ্রেডিয়ার এবং বিগ্রেডিয়ার শাহজাহানসহ মোট ৪০ জন সামরিক অফিসার ইতিমধ্যেই পোঁছে গিয়ে অপেক্ষা করছিলেন চট্টগ্রাম ডিভিশনাল কমান্ডার মেজর জেনারেল মঞ্জুরের জন্য। উপস্থিত অফিসারদের সামনে দৃঢ় কণ্ঠে বললেন মঞ্জুর, ‘কিছু সেনা অফিসার প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যা করেছে।’ উপস্থিত সবার দৃষ্টি জেনারেলের দিকে। একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন, ‘এ হত্যাকা- ঘটার পেছনে অবশ্যই

রহস্যাবৃত জিয়া হত্যা-১

Zia killing logo.jpg[১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান নিহত হন। এ হত্যাকান্ড সংক্রান্ত তথ্য আজো অনেকখানি গোপণীয়তার আবরণে ঢাকা। বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহিত এবং অনুসন্ধানে প্রাপ্ত জানা-অজানা বহু তথ্যের সমাবেশে সাড়া জাগানো এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেন প্রোবনিউজ-এর প্রধান সম্পাদক ইরতিজা নাসিম আলী। যা ১৯৯৪ সালের মে মাসে আট কিস্তিতে ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছিল মতিউর রহমান সম্পাদিত দৈনিক ভোরের কাগজে। আগ্রহী পাঠকদের জন্য আলোচিত এই প্রতিবেদনটি ধারাবাহিকভাবে পুনঃপ্রকাশ করা হলো।]


এক.
ziamusueam -1.jpgবৃষ্টিভেজা রাতের হত্যাকান্ড: পুরো অপারেশন সময় নিলো মাত্র ৯ মিনিট 
১৯৮১ সালের ২৯ ও ৩০ মে’র রাতের সন্ধিক্ষণ। প্রচন্ড বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছিল চারদিক। চট্টগ্রাম সেনানিবাসের পেছন দিক দিয়ে সতর্ক দৃষ্টি এড়িয়ে একটা সাদা টয়োটা গাড়ি আর দুটো আর্মি পিকআপ বেড়িয়ে এলো আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ দিয়ে। পাবলিক স্কুল রোড হয়ে যাত্রা করলো কালুরঘাট ব্রিজের দিকে। জি-১ হিলট্র্যাক্টস অপারেশন ডিভিশনের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান, ৩৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুবুর রহমান, মেজর খালেদসহ আরো কয়েকজন সেনাবাহিনীর অফিসার গাড়ির আরোহী।
ঘড়ির কাঁটা দুটো ছুলো। কালুরঘাট ব্রিজের সামনে এসে থামলো গাড়ির বহর। মেজর ফজলুল হক,

‘গণতন্ত্র’-এর পথে জিয়াউর রহমান জাসদের ‘পুনর্জন্ম’ এবং ‘দ্বিতীয় সিপাহি বিপ্লব’

১৯৭৬ সালে এসে সিরাজুল আলম খান নতুন তত্ত্ব দিলেও ‘গুরু’র এই নতুন তাত্ত্বিক কাঠামো সম্পর্কে শিষ্যদের মধ্যে মোটেই ঐকমত্য ছিল না। এসময় জাসদ জাতীয় কমিটির সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ সরকারের নামে ‘গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার’-এর বিরোধিতা করে ৩৭ পৃষ্ঠার বিকল্প দলিলও বের হয়। সেখানে ১৯৭৩-৭৪ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপের ‘জাতীয় সরকার’ তথা ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব’ সম্পন্নের ব্যর্থ প্রচেষ্টার উদাহরণ টেনে বলা হয় এ দৃষ্টিভঙ্গী এক ধরনের ‘বিচ্যুতি’। বলাবাহুল্য, আবদুল্লাহ সরকার দলের ভেতরকার একটি শক্তিশালী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। এভাবেই দ্রুত সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্ব দলের মধ্যে প্রথমবারের মতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। বিশেষত ছাত্রলীগ তার রাজনৈতিক প্রস্তাবগুলো একবাক্যে নাকচ করে দেয়। বিরুদ্ধবাদীরা তখন দাদার নতুন দৃষ্টিভঙ্গীকে অভিহিত করেছিলেন সামরিক সরকারের প্রলোভন ও চাপের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে।
1 3 chapterএসময় (১৯৭৮ পর্যন্ত) ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন আ ফ ম মাহবুবুল হক। তার ভাষায়, ‘সিরাজুল আলম খানসহ জাসদের সর্বোচ্চ নেতাদের বক্তব্য সে-সময় মোটেই মার্কসবাদ- লেনিনবাদ সম্মত ছিল না। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সম্পর্কে পার্টিতে আনুষ্ঠানিক বিতর্কেরও সুযোগ দিচ্ছিলেন না তারা। অথচ দল ও গণসংগঠন সবাই তখন চাইছিল জাসদের সামগ্রিক কর্মকান্ডের একটি মূল্যায়ন ও পুনর্গঠন। এই প্রধান দ্বন্দ্বের পাশাপাশি মুখ্য নেতা কর্তৃত্বহীন হয়ে পড়ায় এরপর জাসদের কেন্দ্রীয় স্কোয়াডের মধ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম, গণফ্রন্ট, পার্টি, সশস্ত্র সংগঠন ইত্যাদি প্রশ্নে আরেক ধরনের তীব্র মতদ্বৈততাও চলতে থাকে। নূরে আলম জিকুদের উদারনৈতিক অবস্থান এবং হাসানুল হক ইনুদের জঙ্গী ভূমিকা এসময় জাসদে দাদার প্রতি অনুরক্ত অংশেও ধীরে ধীরে সাংগঠনিক দ্বিধাবিভক্তির সৃষ্টি করে। মির্জা সুলতান রাজা ও শাহজাহান সিরাজরা এক পর্যায়ে নাটকীয়ভাবে ইনু, আরেফ, আম্বিয়া প্রমুখদের

জাসদের উত্থান-পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি -মহিউদ্দিন আহমদ (নির্বাচিত অংশবিশেষ)

বাংলাদেশে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সংঘটিত প্রধান প্রধান ঘটনাগুলো আজও থেকে গেছে অনুদঘাটিত ও অপ্রকাশিত। যারা ইতিহাস লেখেন তারা হয় সুবিধাভোগী, নয়তো ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবহ। ফলে বিকৃতির বেড়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছে ইতিহাস। নতুন প্রজন্ম হচ্ছে বিভ্রান্ত। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মহিউদ্দিন আহমদের ‘জাসদের উত্থান-পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ গ্রন্থটি। বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন।
Mujib mar 12Zia mar 12জাসদ একসময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঝড় তুলেছিল। ইতিহাসের ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ সময়ের অন্তরঙ্গ বর্ণনা পাওয়া যাবে এ বইয়ে। জানা যাবে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর উথালপাতাল রাজনীতির বিস্তার, পচাত্তরের হত্যাকান্ড, অভ্যুত্থান- পাল্টা অভ্যুত্থান, জাসদের জন্ম, পথচলা ও স্বপ্ন ভঙ্গের কথা। ইতিহাসের একটি অজানা পর্ব এই প্রথমবারে মত নির্মোহভাবে তুলে ধরেছেন মহিউদ্দীন আহমদ। তিনি নিজেও একসময় জাসদের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বইটির বিভিন্ন অধ্যায়ের চুম্বক অংশ পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো:
পটভূমি
১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে উপদলীয় কোন্দল স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সভাপতির পদে কে এম ওবায়দুর রহমানের মনোনয়ন মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। সাধারণ সম্পাদক পদে শাহ মোয়াজ্জেমের পছন্দের লোক ছিলেন সিরাজুল আলম খান। অন্যদিকে শেখ মনির সমর্থণ ছিল ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর প্রতি। শেখ মনি ছিলেন শেখ মুজিবের বোনের ছেলে। তিনি একজন পরিশ্রমী ছাত্রনেতা ছিলেন বটে, তবে মুজিব পরিবারের সদস্য হওয়ায় তাঁর একটা অতিরিক্ত সুবিধা ছিল। কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোরেশীর সমর্থক বেশি থাকলেও কাউন্সিলরদের মধ্যে সিরাজুল অলম খান

জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করার নতুন তারিখ নির্ধারিত হয় পঁচাত্তরের ২৩ ও ২৪ নভেম্বর


তেসরা নভেম্বরের অভ্যুত্থানের পেছনে সুসংগঠিত ও স্পষ্ট ভাবাদর্শিক রাজনৈতিক প্রণোদনা ছিল দুর্বল। সেই অভ্যুত্থানের ব্যর্থতা ও তার সংগঠকদের মৃত্যু কিংবা গ্রেফতারের পরে তার রেশ ধীরে ধীরে মিইয়ে যায়। যদিও ঘটনাবলীর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া জারি ছিল দীর্ঘদিন। সাতই নভেম্বরের ‘সিপাহি অভ্যুত্থান’-এর ফলাফল ও প্রভাব সেই তুলনায় অনেকাংশেই ভিন্ন। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ যেমন পূর্ববাংলাকে রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে তেমনি ১৯৭৫ সালের সাতই নভেম্বরের পূর্বের ও পরের বাংলাদেশও অনেকাংশে পৃথক দুই রাষ্ট্র। ১৯৭৫ সালের সাতই নভেম্বর তারিখটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তাই অনন্য এক দিন। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাবের বিচারে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পরেই পঁচাত্তরের সাতই নভেম্বরের গুরুত্ব বাংলাদেশে।
taher ziaসাতই নভেম্বরের ঘটনাবলীকে বিপ্লব কিংবা প্রতিবিপ্লব কীভাবে চিহ্নিত করা হবে তা নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিতর্ক এখনো চলছে। এইরূপ বিতর্ক বরাবর আবর্তিত হয় কথিত ঘটনাবলী কে ঘটিয়েছে, কারা গুলি ফুটিয়েছে, কারা মারা পড়েছে ইত্যাদির অনুসন্ধানে। তবে এই ঘটনা, বিশেষ করে ঘটনার নায়ক লে. কর্নেল আবু তাহেরের ফাঁসির পর, এই অভ্যুত্থানের মূল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর রাজনৈতিক ও সামরিক কী পরিণতি হলো এবং তাদের সেই পরিণতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিকভাবে কীভাবে নিজেকে

জাসদ কাহিনী (শেষ): গুপ্তহত্যা লুট রাহাজানি থামেনি ৭৫ সালেও ; জাফর ওয়াজেদ

চরমপন্থিদের অরাজকতা থেকে জনগণকে তথা দেশকে রক্ষা করার জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরও থেমে থাকেনি গুপ্তহত্যা, লুট, অগি্নসংযোগ। অরাজকতার এই সুযোগে সামরিক বাহিনীর বিপথগামী কতিপয় সদস্য বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর প্রথম চাঞ্চল্যকর ঘটনা ছিল চরমপন্থি ও শ্রেণিশত্রু খতমকারীদের নেতা সিরাজ শিকদারের পতন। ১ জানুয়ারি পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির প্রধান সিরাজ শিকদারকে চট্টগ্রামে গ্রেফতার করা হয়। সশস্ত্র লড়াই করে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছিলেন সিরাজ শিকদার। গুপ্তহত্যা, রাহাজানি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ফাঁড়িতে সশস্ত্র হামলা, খাদ্য ও পাট গুদামে অগি্নসংযোগ, খাদ্যদ্রব্য বহনকারী পরিবহন ধ্বংস ইত্যাদি সহিংস, নাশকতা ও অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগ ছিল পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির সদস্যদের বিরুদ্ধে। পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে পালানোর সময় সিরাজ শিকদার ২ জানুয়ারি নিহত হন। ১৯৭৮-এর ৩ জানুয়ারি সংবাদপত্রে পুলিশের বরাতে উল্লেখ করা হয়, 'নিজের দলের গুপ্ত একটি ঘাঁটি চিনিয়ে দেয়ার জন্যে পুলিশ গাড়িতে করে সাভারের দিকে তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে পালাবার সময় সিরাজ শিকদার পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।' ঘটনাটি তদন্তের জন্য সরকার একটি কমিটি গঠন করে। ৩ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা আইনবলে জরুরি ক্ষমতা বিধি বিধান জারি করা হয়। বিধিতে নাশকতা, সন্ত্রাসী, অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ, চোরাচালানি, কালোবাজারি এবং গুপ্তহত্যার মতো অপরাধের দায়ে দোষীদের প্রাণদণ্ড প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়। এবং এসব সমাজবিরোধী কাজের দমনে সরকারের হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা হয়।৪ জানুয়ারি এক লাখ রেশন কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে খাদ্য বিভাগ ও বিজি প্রেসের মোট ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা 

জিয়া হত্যাকাণ্ড: যেসব প্রশ্নের উত্তর কখনো মিলবে না ............জিয়াউদ্দিন চৌধুরী


জিয়া হত্যাকাণ্ড: যেসব প্রশ্নের উত্তর কখনো মিলবে না
দুঃস্বপ্নের স্মৃতিচারণা কখনোই সুখকর ব্যাপার নয়। তারপরও প্রতিবছর এই সময়ে আমার মন ১৯৮১ সালের ৩০ মের সেই আতঙ্কজনক সকালে চলে যায়, স্থান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস। সেই সকালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আততায়ীর হাতে নিহত হন। শতাব্দীর প্রাচীন ভবনটির অংশবিশেষ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, তিনজন নিরীহ মানুষও নিহত হয়। স্থানীয় সেনানিবাস থেকে আসা একদল উর্দিধারী মানুষ এদের সবাইকে হত্যা করেছিল। আমি যখন ভোরবেলা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই, তখন সেখানে ভুতুড়ে নীরবতা বিরাজ করছিল। মনে হচ্ছিল, ঘণ্টা খানেক আগেই সেখানে রীতিমতো যুদ্ধ হয়েছে। সার্কিট হাউসের বারান্দা এবং ওপরের ব্যালকনির একটি অংশ ভাঙা অবস্থায় পড়ে ছিল। দুজন উর্দিধারী মানুষের নিথর দেহ সিঁড়িতে পড়ে ছিল—একটি ছিল পুলিশের, আরেকটি ছিল সেনাসদস্যের দেহ। কিন্তু সবচেয়ে বিপর্যয়কর ও মর্ম বিদীর্ণ করা ব্যাপার ছিল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বুলেটবিদ্ধ দেহ। যে স্যুটে তিনি ছিলেন, তার খানিক দূরেই পড়ে ছিল তাঁর নিথর দেহটি। সেই দৃশ্যটি আমাকে বহুকাল তাড়িয়ে বেরিয়েছে, এমনকি এখনো তা আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য ছিল। দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষটির ডাকে যেখানে পুরো সেনাবাহিনী মেঝেতে গড়াগড়ি খেতে প্রস্তুত ছিল, সেই রাষ্ট্রপতি কিনা তাঁর নিজের এক লোকের হাতে এভাবে খুন হলেন।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে খুন করার এই অভিযান সম্ভবত এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। এ কথা বলছি কারণ, সেদিন

জাসদ কাহিনী (৩): চরমপন্থিদের ধ্বংসাত্মক ইতিহাস ১৯৭৪

১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু উদ্বোধনী ভাষণে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা ও গুপ্তহত্যাকাণ্ডে লিপ্ত উগ্রবামপন্থি, প্রকাশ্য ও গোপন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও গ্রুপগুলোর তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘তারা যা করছে তা বিপ্লব নয়, বিপ্লবের বিকৃতি-পারভারসন। নিদ্রিত মানুষকে হত্যা করে আর অন্তর্ঘাত ও নাশকতামূলক তৎপরতা চালিয়ে বিপ্লব হয় না।’
স্বাধীনতার দুই বছর পরও উগ্রচরমপন্থি, স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্তানপন্থিদের সহিংস ও নাশকতামূলক এবং অন্তর্ঘাতী আচরণ অব্যাহত থাকে। এতে দিনরাত উৎকণ্ঠিত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে দেশবাসী। চোরাগোপ্তা হামলা, জবাই করা, থানা লুটের সঙ্গে বাজার লুট সবই চলছিল কথিত কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার নামে। অথচ এরা কেউই জনসমর্থিত বা আদৌ কমিউনিস্ট ছিল না। এরা মানুষের রক্তপান করতে ভালোবাসত। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে জনগণ বেশ বিচলিত হয়ে পড়েছিল। অস্ত্রের সরবরাহ বাড়ছিল।  বিশেষত চীনে নির্মিত অস্ত্র সংগ্রহ করত এ দেশের মাওবাদীরা। যাদের দলেরও চেয়ারম্যান মাও সে তুং। এবং এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ছিল অবিশ্বাসী। এদের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছিলেন মওলানা ভাসানী। মূলত চরমপন্থিরাও ভাসানীকে আশ্রয় করত সুযোগমতো। তাদের অরাজকতার মাত্রার সঙ্গে ভাসানীর বক্তৃতা-বিবৃতি জনমনে আশঙ্কা তৈরি করে। তাই দেখা যায় ভাসানী ১৯৭৪ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকা শহরে হরতাল পালন করেন জনমনে আতঙ্ক বাড়াতে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি এবং ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু যখন চরম সর্বনাশের করাল গ্রাস থেকে দেশকে উদ্ধারের পথের সন্ধানে ব্যতিব্যস্ত, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অবাধ গণতন্ত্রের সুযোগে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের দোহাই দিয়ে

মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ সেলিম ছিলেন একজন শরণার্থী; সফিউল্লাহ একজন ‘জ্যান্ত মিথ্যাবাদী






মুখোমুখি দু’জন। 
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ও বঙ্গবন্ধুর হত্যার ঘটনায় শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন কে এম সফিউল্লাহ। শেখ সেলিমের অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু আক্রান্ত হওয়ার সময় তৎকালীন সেনাপ্রধান সফিউল্লাহর সহায়তা চেয়েছিলেন; কিন্তু তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। অন্যদিকে পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় শেখ সেলিম মার্কিন দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং তার সঙ্গে খোন্দকার মোশতাকের আঁতাত ছিল বলে অভিযোগ তুলেন কে এম সফিউল্লাহ। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে তারা একে অপরকে

জাসদ কাহিনী (২): ঘাতকরা চারদিকে নিঃশ্বাস ফেলেছিল

জাফর ওয়াজেদ
১৯৭৩ ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বাঙালির জন্য এক আতঙ্কের বছর। গুপ্তহত্যার বছর। অবৈধ অস্ত্রগুলো এ সময় ঝলসে উঠেছিল। কে যে আততায়ী, কে যে হন্তারক, চেনা দুষ্কর তখন। ঘাতকরা চারপাশে নিঃশ্বাস ফেলছিল। দেশজুড়ে অব্যাহত গুপ্তহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড। ২১ মে মওলানা ভাসানী এসব ঘটনাকে আরও প্রসারিত করার জন্য হরতাল পালন করেন। চরমপন্থিরা এতে উদ্বুদ্ধ হয়। ২৭ মে নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের একটি মিছিলে সর্বহারা পার্টি গুলি চালালে চারজন নিহত হন। ২৯ মে নড়িয়ায় নিজ বাসভবনে চরমপন্থিদের গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত এমপি নুরুল হক। ঘটনার সঙ্গে সর্বহারা পার্টি জড়িত বলে পুলিশের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ১২ জুন বাগেরহাটের ফকিরহাট থানার বেতাগী পুলিশ ফাঁড়িতে সশস্ত্র হামলা ও লুটপাট। মাওবাদীদের প্রথম ফাঁড়ি আক্রমণ এটি। ১৩ জুন বগুড়ার গাবতলী থানা লুট করে মতিন, আলাউদ্দিন গ্রুপ। ১৮ জুন নওগাঁর নিয়ামতপুর থানার ছাতড়া পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির অহিদুর রহমান ও আলমগীর কবির। ২২ জুন কুস্টিয়ার দৌলতপুর থানার মাধিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় আবদুল হকের নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি। তারা ফাঁড়ির সব অস্ত্রশস্ত্র এমনকি পুলিশের পোশাকও লুট করে নিয়ে যায়। ২৬ জুন পিরোজপুরের কাঁঠালিয়া থানার আমুয়া পুলিশ ফাঁড়ি লুট করে সিরাজ সিকদারের পূর্ব বাংলা সর্বহারা