মুক্তিযুদ্ধ ও কিছু কথা-২


স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস নিয়ে আমি আমার মুক্তিযুদ্ধ ও কিছু কথা-১ শিরোনামে আলোচনা করেছি, এখানে আমরা আলোচনায় নিয়ে আসবো এমন দুইজন জীবিত ব্যক্তির নাম যারা আমার দৃষ্টিতে জাতীয় বীর কিন্তু উনারা নিজেদের আড়াল করে লুকিয়ে রেখেছেন এক বিশাল অজানা সত্য ইতিহাস। উনাদের এই অজানা সত্য ইতিহাস লুকিয়ে রাখার অপরাধে যদি কেউ কেউ তাদেরকে জাতীয় বীর থেকে নামিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয় আসামীর কাঠগড়ায় তবে কি খুব বেশি অন্যায় হবে?
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি কখনোই তা অন্যায় হবে না কারন তাদের চুপ থাকর জন্যই আজ স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের এক বিশাল অধ্যায় রয়ে গেছে অজানা সৃষ্টি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস। এই যে বিকৃত
ইতিহাস তৈরী হলো এর দায় ভার কি উনারা এড়াতে পারবেন?

৭ই মার্চ ১৯৭১ এ বঙ্গবন্ধু যখন তার ঐহিহাসিক ভাষনে বলেলন এবারের "সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম" এটাকেই যদি আমরা স্বাধীনতার ঘোষনা হিসেবে ধরে নেই তাহলে ৭ই মার্চ ১৯৭১ এর "সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম" বলার পরও তিনি কেন হানাদার পাকিস্তানীদের সাথে বৈঠক করেন?
অথবা আজ যখন স্বাধীনতার ঘোষনা নিয়ে কথা উঠে তখন দেখা যায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয় বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ ১৯৭১ এই দিন দিবাগত রাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ঢাকা সহ সারা দেশে বাঙালিদের উপর আক্রমণ শুরু হবার পর ওয়্যারলেস মেসেজের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন, তাদের এই বক্তব্যই সুস্পষ্ট ভাবে প্রমান নয় কি ৭ই মার্চ ১৯৭১ এর "সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম" বক্তব্যটি ছিল হানাদার পাকিস্তানী শোষকের উপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির কৌশল মাত্র?
আমরা যদি ততকালীন রাজনৈতিক নেতাদের উপর দৃষ্টি দেই তাহলে আমরা দেখতে পাই মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীই ছিলেন একমাত্র রাজনৈতিক লিডার যিনি সরাসরি সেই সময়ে স্বাধীনতার পক্ষে সুদৃড় অবস্থান গ্রহন করেন, তারই প্রমান ২৩ মার্চ পল্টনে মওলানা ভাসানীর আহবানে সর্বশেষ যে জনসভায় আয়োজন করা হয়েছিল তাতে মওলানা ভাসানী সশরীরে উপস্থিত হতে পারেননি সেখানে মওলানা ভাসানী এবং তার দল ন্যাপের পক্ষ থেকে মশিউর রহমান যাদু মিয়া ‘স্বাধীন পূর্ব বাংলার' আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। 

এবং ২৩ মার্চ পল্টনের জনসভা শেষে ছাত্র নেতারা এক বিশাল মিছিল নিয়ে ৩২ নাম্বারে আসে এবং বঙ্গবন্ধুকে দোতলার বারান্দায় নিয়ে যান ও তার হাতে "স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের" চিন্তা চেতনায় তৈরী স্বাধীন বাংলার পতাকা তুলে দেন, সেই একই দিনে অথাৎ ২৩ মার্চ ১৯৭১ এ বঙ্গবন্ধু যখন হানাদার পাকিস্তানী শোষক ইয়াহিয়া খানের সাথে বৈঠক করতে যান তখন বঙ্গবন্ধুর গাড়ীতে ততকালীন ছাত্র নেতা জনাব কামরুল আলম খান খসরু ,ও জনাব মস্তোফা মহসিন মন্টু "স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের" চিন্তা চেতনায় তৈরী স্বাধীন বাংলার পতাকা বেঁধে দেন, বঙ্গবন্ধুর গাড়ীতে স্বাধীন বাংলার পতাকার কারনেই মাত্র পাঁচ মিনিটেই বৈঠক ভেঙ্গে যায় এবং হানাদার পাকিস্তানী শোষক ইয়াহিয়া খান দেশ ত্যাগ করে তার পরই সৃষ্টি হয় ২৫ মার্চ এ ইতিহাসের সেই কাল রাত্রি। 

২৫ মার্চ ১৯৭১ এই দিন দিবাগত রাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী
ঢাকা সহ সারা দেশে বাঙালিদের উপর আক্রমণ শুরু করে। ইতিহাসে তা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। এখন প্রশ্ন হলো জনাব কামরুল আলম খান খসরু ,ও জনাব মস্তোফা মহসিন মন্টু যদি বঙ্গবন্ধুর গাড়ীতে স্বাধীন বাংলার পতাকা না বেঁধে দিতেন তবে কি বৈঠক ভেঙ্গে যেত?
আর বৈঠক যদি না ভাঙ্গতো তবে কি সৃষ্টি হতো ২৫ মার্চ ১৯৭১ এই দিন দিবাগত রাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নিরিহ বাঙালিদের উপর আক্রমণ?
তবে কি আমরা ধরে নিতে পারি ২৫ মার্চ ১৯৭১ এই দিন দিবাগত রাত থেকে শুরু করে ১৬ই ডিসেম্বরের আগে পাকিস্তানী হানাদার সেনাবাহিনীর হাতে যত নিরিহ বাঙালি হত্যার স্বীকার হয় তার দায় এই দুই নেতার নাকি ধরে নিবো মুক্তিযুদ্ধের বিশাল অবদান রাখা জাতীয় বীর হিসেবে?
জনাব কামরুল আলম খান খসরু ,ও জনাব মস্তোফা মহসিন মন্টু সাহেব আপনাদের বলছি আপনারা এখনো জীবিত সময় আছে প্রকৃত ইতিহাস প্রকাশ করুন অন্যথায় আপনাদের গৌরভময় অধ্যায় ঢেকে যাবে চলে যাবেন ইতিহাসের কাঠগড়ায় আসামীর কাতারে


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন