মুক্তিযুদ্ধ ও কিছু কথা-৩


বড়ই পরিতাপের বিষয় আজ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের “ইতিহাস হয়ে গেছে কে জাতির পিতা, কে স্বাধীনতার ঘোষক” অথচ আমাদের মুক্তির সংগ্রামের পিছনে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে মজলুম জননেতা ভাসানী সাহেবের কাগমারীতে হানাদার শাসকদেরকে আস্সালামুআলাইকুম বলার মধ্য দিয়ে, সেই বিষয়টা মুক্তির ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না, কিছু টগবগে তরুনের অক্লান্ত চেষ্টায় গড়ে উঠা মুক্তির চেতনার কথা ইতিহাসে ঠাঁয় পায় নাই।
ইতিহাস বিকৃত হতে হতে আজ এমন এক জায়গায় এসে দাড়িয়েছে তার ছোট্র একটা উদাহরন দেই, সে দিন চা দোকানে গেলাম কথায় কথায় একটা ছেলের সাথের পরিচয়, ইতিহাস নিয়ে মাষ্টারস করেছে, অথচ স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের নামই শুনে নাই।

যারা আমাদের মুক্তির ইতিহাস নিয়ে লিখেন সেই সকল লেখক কলামিষ্টগনের নিকট আমার প্রশ্ন মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী সাহেবকে ছাড়া আমাদের মুক্তির ইতিহাস কি পূরনতা পেতে পারে?
স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস এর প্রসঙ্গ ছাড়া যে ইতিহাস লিখা হয় তা কি হতে পারে আমাদের মুক্তির ইতিহাস?
সর্ব্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ছাড়া কি আমাদের মুক্তির ইতিহাস লেখা যায়?

সমাজতান্ত্রীক স্বাধীন বাংলার প্রস্তাবক স্বাধীন বাংলার প্রথম রাজনৈতিক হত্যার স্বীকার বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব স্বপন কুমার চৌধূরীর নাম নেই যেই মুক্তির ইতিহাসে তা কি কখনও মুক্তির ইতিহাস হতে পারে?


যেই মুক্তির ইতিহাসে ততকালীন ছাত্র নেতা, ১. সিরাজুল আলম খান, ২. কাজী আরেফ আহমেদ ৩. আঃ রাজ্জাক ৪. মনিরুল ইসলাম(মাশাল মনি) ৫. কামরুল আলম খান খসরু ৬. মোস্তফা মোহসিন মন্টু ৭. আ.স.ম আবদুর রব ৮. আব্দুল কুদ্দুস মাখন ৯. শাহজাহান সিরাজ ১০. নুরে আলম সিদ্দিকি সাহেবদের মত সর্ব দলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ছাত্র নেতাদের নাম আসে না যেই ইতিহাসে তা কি করে মুক্তির ইতিহাস হয়?

ওমাইয়্য়া খেলাফতের সময় খলিফা ওয়ালিদের শাসন আমলে ইরাকের গর্ভনর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নির্দেশে রাজা দাহীরের অত্যাচার থেকে অসহায় মজলুমকে রক্ষা করতে মোঃ বিন কাসেম ছুটে আসেন সিন্ধু নদের তীরে। ইতিহাস কিন্তু হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে একজন অত্যাচারী হিসেবেই উল্লেখ করেছে। কিন্তু তার পরেও কুরআনের মত আল্লাহর বানী অনারবদের পড়ার সুবিধার জন্য হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নিদেশেই “জবর,জের পেশ, তথা আরবীতে যেটাকে বলা হয় হরকত তা সংযোজন করা হয়, ইতিহাস কিন্তু তার এই সকল যাবতীয় নেক ও উত্তম কাজ গুলোকেও ঠিকই উল্লেখ করেছে। গোপন করেনি তার ভাল কাজ গুলোকে, মন্দ কাজের সাথে ভাল কাজ গুলি মিশ্রন করে ইতিহাসকে বিকৃত করেনি।
তাহলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মাওলানা ভাসানীর আস্সালামুআলাইকুম থেকে ২৫শে মার্চ হানাদারের ঘুমন্ত নিরিহ বাংলার মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়ার আগে যে বিষয় গুলির মাধ্যমে স্বাধীনতার পক্ষে যারা কাজ করেছেন সংগঠন তৈরী করে মানুষের মাঝে মুক্তির প্রদ্বীপ জ্বেলেছেন তাদের কথা কেন উল্লেখ করা হয় না?

সেদিন বঙ্গতাজ জনাব তাজুদ্দিন সাহেবকে প্রবাসী সরকার গঠনের আগে কি কারনে শ্রীমতী ইন্দারা গান্ধী ফেরৎ দিয়ে ছিলেন তা কেন ইতিহাসের কোন পাতায় উল্লেখ নেই?
আগতলা মামলার সত্য ইতিহাস যদি জাতির সামনে তুলে ধরা হত তবে তা হতো আমাদের মুক্তির ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। 

ততকালীন ছাত্রলীগের যে বৈঠকে প্রথম সমাজতান্ত্রীক স্বাধীন বাংলার প্রস্তাব পাশ হয় সেই মিটিং এর সভাপতি জনাব নুরে আলম সিদ্দিকি সাহেব সভাপতির ভার জনাব মারশাল মনির কাছে অরপন করে কি কারনে সভা ত্যাগ করেন তা আজ অবদি জাতি জানতে পেরেছে?

আমাদের সংবিধানের রচয়িতাগনের মাঝে অন্যতম জনাব ডাঃ কামাল হোসেন সাহেব ২৫শে মার্চ রাতে ৩২ নাম্বার থেকে ভারতে যাবার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পথের মধ্যে তাজুদ্দিন সাহেবদেরকে আত্মীয়র বাসায় যাবার কথা বলে জীপ থেকে নেমে যান। পরে দেখা যায় তিনি সারেন্ডার করে করাচিতে বঙ্গবন্ধুসহ ছবিতে। এর কারন কি তিনি কখনো জাতিকে ব্যাখা করেছেন? 

সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ সাহেব মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দেশে অবস্থান করেও মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন না করে হানাদার বাহিনীর গোলামী করার জন্য পাকিস্তানে ফেরৎ গেলেন? তিনি কি তা কখনো জাতির সামনে পরিস্কার করেছেন?
মাওলানা ভাসানীর ডাকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার আগে শেষ জনসভা ২৩শে মার্চ ভাসানী সাহেব শারীরিক কারনে উপস্থিত না হতে পারায় তাঁর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন তারই দলের জনাব মশিউর রহমান যাদু মিয়া, তা কেন আমাদের মুক্তির ইতিহাসে উল্লেখ নেই?

এমন অংখ্য বিষয় আছে যা ছাড়া আমাদের মুক্তির ইতিহাস পূরনতা পেতে পারেনা সে গুলো কেন বারবার পাশ কাটানো হয় তা আমার বুঝে আসে না।
আমাদের ইতিহাসের লেখকগন বারবরই দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করতে করেতে তা আজ এসে দাড়িয়েছে কে স্বাধীনতার ঘোষক, বড়ই লজ্জা হয় মুক্তির ইতিহাস দেখলে।
ইতিহাসের সত্যগুলো সন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে অনেক মহা নায়কের নাম যাদের কথা আমাদের মুক্তির ইতিহাসে উপেক্ষিত হয়েছে। সেদিন খুব একটা বেশি দূরে নয় ইতিহাসের অনেক নায়কেই খল নায়কের ভাগ্য বরন করতে হবে। হয়তো এর মাঝে কেটে যাবে আর কয়েকটি যুগ কিন্তু সত্য একদিন ঠিকই বেরিয়ে আসবে। 

আমাদের এই উপমহাদেশে চলমান রাজনীতিতে সেই সকল মানুষ গুলোই উপরে উঠে আসে যারা শিয়ালের মত ধূত, শুয়োরের মত দলভুক্ত, কুকুরের মত প্রভুভক্ত, সাপের মত বিষাক্ত, নেকড়ের মত হিংস্র, আর শকুনের মত তীক্ষ দৃষ্টি সম্পন্ন।
রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থানকারীরা যখন জড়িয়ে পড়ে যাবতীয় অপকর্মের সাথে স্বাবতই নিচের দিকে যাদের অবস্থান সেটা তাদের জন্য আর্শীবাদ হয়ে ধরা দেয়। এভাবেই সমাজে অত্যাচার অনাচারের রেলগাড়ি হতে থাকে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর , সাধারন জনগন হয়ে যায় তখন নিরেট পাথরের মূর্তি। কান থাকে কিন্তু শুনতে পায় না, চোখ খোলা রেখেও দেখতে পায়না, এভাবে অত্যাচার অবিচারের থেকে আজ আমাদের মুক্তির ইতিহাসেরও রক্ষা পায় নাই, স্বাধীনতার সুর্দির্ঘ ইতিহাস ৪১ বছর পরেও আমাদের স্বাধীনতার জন্মলগ্নের ইতিহাস নিয়ে বেহায়ার মত মিথ্যে লিখে যায় কিছু বুদ্ধির ফেরিওয়ালারা।
আমরা,আমাদের সন্তানেরা  কি আদৌ জানতে পারব আমাদের গৌরবময় মুক্তির সত্য ইতিহাস? 
banglar_hasan এর ব্লগ থেকে সংগ্রহীত


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন