মুক্তিযুদ্ধ ও কিছু কথা-১



এ কথা সত্য এবং এটাই ইতিহাস যে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ত্ব অরোপিত হয়েছিল আওয়ামি লীগ নামক রাজনৈ্তিক দলটির ওপর। এই বাস্তবতা কে স্বীকার করতেই হবে। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি তার প্রকৃত হতিহাস জানতে হলে আমাদের যেতে হবে ৭১ এর আগে, ১৯৫৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে টাঙ্গাইলের কাগমারীতে দলের কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানী যখন উচ্চারণ করলেন তাঁর ঐতিহাসিক আসসালামু আলাইকুম তত্ত্ব, তখন মাওলানাকে ততকালীন তাঁর দলের আওয়ামী নেতারা ভারতের দালাল বলে গালাগাল করেছিলেন। ভাষা আন্দোলন সহ পাকিস্তানী শোষকদের বিভিন্ন
অত্যাচারের ইসু গুলো তখনও ছিলো তরতাজা, আর তখনকার ছাত্র সংগঠন গুলি ছিলো স্বাধীন মুক্তমনা এখনকার মত দলের লেজুড় নয় আর ছাত্র নেতাদের স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন মওলানা ভাসানীর ঐতিহাসিক আসসালামু আলাইকুম তত্ত্ব আরো বহুগুনে বাড়িয়ে দিলো। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ভিতরে ভিতরে নিজেদের মাঝে তৈরী করতে লাগলো স্বাধীনতার পক্ষে আলাপ আলোচনা।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬২ সালে সৃষ্টি হয় “স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস” স্বাধীন বাংলার স্বপ্নে বিভোর মাত্র চারজন তরুনকে নিয়ে শুরু হয় অগ্রযাত্রা পরে অবশ্য একজন কমে তিনজনে নেমে আসে, যেই একজন বিয়োগ হন তিনি কখনও মুখ খোলেননি এবং বাকী তিনজনও কখনো বলেননি কেন একজন সরে গেলেন তাই এই বিষটি ইতিহাসে আজও অজানা, এই ”স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস” কাছে ছিলোনা আজকের মত মোবাইল ফোন,ইন্টারনেট, বা যাতায়াতের জন্য কোন সুব্যবস্থা আর অন্যদিকে ছিলে অত্যাচারি পাকিস্তানী শোষকদের জেল-জুলুম,নিপীড়ন নির্যাতন তবুও অদম্য সাহসী তিন তরুন সকল প্রতিকুলতার মাঝেও চষে বেড়ালেন সারা দেশের আনাচে-কানাচে তৈরী করলেন স্বাধীন প্রিয় এক ঝাক তরুনকে, তারই পরিক্রমায় এক সময় এসে সৃষ্টি হলো “সর্ব দলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ”।

১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যখন পাকিস্তানী শোষকদের সাথে বৈঠকের পর বৈঠকে ব্যস্ত ঠিক সে রকমই এক মুহুত্ত্বে তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির” ; + তারিখ ১২ আগস্ট ১৯৭০ এক মিটিং এ বসে যে মিটিং এ(জনাব নুরে আলম সিদ্দিকী ও মার্শাল মনিরের) সভাপতিত্বে জনাব স্বপন কুমার চৌধূরীর প্রস্তাবনায় “সমাজতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলা” প্রস্তাব পাশ হয়। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে একই মিটিং এ দুইজন সভাপতি কি করে হয়? জনাব নুরে আলম সিদ্দিকী বারংবার সভাকে মিটিং বন্ধ করার অনুরোধ করেন, সভাপতির বিরুধীতা সত্ত্বেও “সমাজতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলা” প্রস্তাব এর পক্ষে মিটিং চলতে থাকে তখন সভাপতি জনাব নুরে আলম সিদ্দিকী পেটের সমস্যার কথা বলে মিটিং থেকে বের হয়ে ফিরে না আসায় জনাব মার্শাল মনিরের সভাপতিত্বে “সমাজতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলা” প্রস্তাব পাশ হয়। তখনও আওয়ামী লীগ পাকিস্তানী শোষকদের সাথে বৈঠকে ব্যস্ত, এর পরে দেখা যায় পতাকা উত্তোলন থেকে নিয়ে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ কুচকা আওয়াজ সবই “স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস” এর মূল ভূমিকা এতে প্রতিয়মান হয় যে তখনও সমসাময়িক রাজনৈতিক দলগুলো ছিলো স্বাধীনতার বিষয়ে “স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস” ও “সর্ব দলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ” এর থেকে অনেক অনেক পিছিয়ে। রাজনৈতিক নেতাদের সাথে “স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস” এর কথা ছিলো স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ত্ব দিবে “স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস” ও “সর্ব দলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ” এবং রাজনৈনিত নেতাদের মধ্য থেকে একটি “সমাজতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলা” সরকার গঠনের মাধ্যমে যা পরে আর ঠিক থাকে নাই।

এভাবে আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস খুঁজি পাঠ বাই পাঠ হিসেব করে তবে দেখা যাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতিটি পাতায় পাতায় লুকিয়ে আছে এক একটা পলাশীর ময়দার আর শত শত মীরজাফর, অনেকের কাছে শুনতে হয়তো খারাপ লাগবে সেই স্বপন কুমার চৌধূরীর প্রস্তাবনায় “সমাজতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলা” প্রস্তাব পাশ হলো সেই জাতীয় বীর জনাব স্বপন কুমার চৌধূরীকে দিয়েই দেশ স্বাধীন হবার মাত্র দুই দিন পরে রাজনৈতি হত্যা শুরু যা আজও চলছে; ১৮ই ডিসেম্বর তিনি রাঙ্গামাটি একটি হাসপাতাল থেকে মুক্তিযুদ্ধে আহত “সমাজতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলার” প্রস্তাবক জনাব স্বপন কুমার চৌধূরীকে তার সেবায় নিয়োজিত হাসপাতালের সেবিকাসহ চিরদিনের জন্য গুম করে হত্যা করা হয়। স্বাধীন বাংলার দ্বিতীয় রাজনৈতিক হত্যার স্বীকার আরেক বীর আগরতলা যড়যন্ত্র মামলার চার নং আসামী বীর মুক্তিযোদ্ধা স্টুয়াড মজিব, এভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই প্রতিটি পৃষ্ঠায় নয় বরং ইতিহাতের প্রতিটি লাইনে লাইনে এক একটা পলাশীর ময়দানে ভরপুর।

তাই নতুন প্রজন্মের কাছে আমার আহবান দয়া করে প্রকৃত ইতিহাস খুঁজে বের করুন খুলে দিন সব মীর জাফরের মূখোশ, সৃষ্টি করুন একটি নতুন “নিউক্লিয়াস” সময় এসেছে স্বাধীনতার সব সব হিসাব নিবার।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন