‘কাল নির্বাচন হলে বিএনপি জিতবে না’ বিউটেনিসকে মান্নান ভূঁইয়া


২০০৬ সালে ২৬ এপ্রিল মার্কিন রাষ্ট্রদূত পেট্রিসিয়া বিউটেনিস তৎকালীন এলজিআরডি মন্ত্রী ও বিএনপির মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার সঙ্গে আলোচনা করেন। এছাড়া সেসময় বহুল আলোচিত ও প্রত্যাশিত জলিল-মান্নান বৈঠক ও আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট সংক্রান্ত বিষয়েও আলোচনা করেন তারা। ২০০৬ সালের ৩০ এপ্রিল ওয়াশিংটনে এ সংক্রান্ত একটি তারবার্তা পাঠায় মার্কিন দূতাবাস। ৩০ আগস্ট নথিটি ফাঁস করে উইকিলিকস। 


তারবার্তায় বলা হয় বৈঠকে মান্নান ভূঁইয়া রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচে বড় বিনিয়োগকারী। বাংলাদেশি পোশাকজাত পণ্য সবচেয়ে বেশি আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর তিনি প্রসঙ্গ পাল্টে রাষ্ট্রদূতকে বলেন, জঙ্গিবিরোধী যুদ্ধ প্রসঙ্গে একটি সুসংবাদ আছে। জেএমবির শীর্ষ দুই নেতাকে আটক করেছে র‌্যাব। এরপর বিউটেনিস তাকে স্বাগত জানান।


এরপর রাষ্ট্রদূত আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের ওপর জেএমবির প্রভাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। মান্নান ভূঁইয়া বলেন, জামায়াত আর জেএমবির নীতি-আদর্শ একই। কিন্তু জামায়াত গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাবও তারা গ্রহণ করেছে। এরপর রাষ্ট্রদূত বলেন, জামায়াতে ইসলামি জেএমবিকে সমর্থন করছে এমন অভিযোগ রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে মান্নান ভূঁইয়া বলেন, প্রমাণিত হলে আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। 


এরপর রাষ্ট্রদূত বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনি সংস্কার চাচ্ছে। মান্নান ভূঁইয়া বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়েছিল। কিন্তু তা নিরপেক্ষ হয়নি। 


আওয়ামী লীগ চাচ্ছে নির্বাচনি সংস্কার। এ প্রসঙ্গে ভূঁইয়া বলেন, আসল সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। কারণ নির্বাচনের আগের বছর দুর্নীতি বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, বিএনপির কাছে অনেক শান্তি প্রস্তাব রয়েছে কিন্তু ‘একগুঁয়ে’ শেখ হাসিনার কারণে তা প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ। যদি আগামীকাল নির্বাচন হয়, আওয়ামী লীগ যদি তাতে অংশগ্রহণ করে তাহলে তাদের জন্য নির্বাচনে জেতার এটা বড় সুযোগ। আর আমাদের (বিএনপির) জেতা কষ্টকর হয়ে পড়বে। কারণ লোডশেডিং, তেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ে চাপে আছে সরকার। এরপর তিনি নির্বাচন কমিশনের সংস্কার বিষয়ে আওয়ামী লীগের দাবির প্রতি দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার ভালো ও সৎ লোক। তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার যোগ তিনি। 


জামায়াতে ইসলামির জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে মান্নান ভূঁইয়া বলেছিলেন, দলটির জন্য বিদেশ থেকে আর্থিক সহায়তা আসে। কিন্তু দলটির জনসমর্থন কম। বিএনপিকে ছাড়া জামায়াত ৩টি অথবা ৫টি আসনে জয় লাভ করতে পারে। বিএনপি সঙ্গে থাকলে তারা ২০টি আসনে জয় পেতে পারে। তবে বিএনপির অনেক প্রভাবশালী নেতা জামায়াতকে জোটে নেওয়ার পক্ষে নয় এবং বিএনপির পরাজয়ের জন্য তারা দায়ী এমন অভিযোগ রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ভূঁইয়া বলেন, জামায়াতে ইসলামির সদস্যরা ‘ভালো মুসলমান’।-প্রসঙ্গ এড়িয়ে ভূঁইয়া বলেন, গত ১০ থেকে ১৫ বছর মাদ্রাসগুলো মধ্যপ্রাচ্যের অনুদানে পরিচালিত হচ্ছে। আর মধ্যপ্রাচ্য থেকে শ্রমিকরা জঙ্গিবাদের আদর্শ নিয়ে দেশে ফিরছে। 


এরপর বিউটেনিস মন্তব্য বিভাগে জানান, আওয়ামী লীগ-বিএনপির বহুল প্রত্যাশিত সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করছেন মান্নান ভূঁইয়া। তার প্রস্তাব নিয়ে তার দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। তবে বিষয়টি অনিশ্চিত যে, সংলাপের নামে তিনি সত্যিকার অর্থে কী করতে চাচ্ছেন। সংলাপের নামে মান্নান ভূঁইয়া কি লোকদেখানো ইঁদুর-বিড়াল খেলছেন? তিনি সাবেক মাওবাদী এবং ছাত্র রাজনীতি করতেন। তাই ইসলামপন্থী জঙ্গিদের প্রতি তার ভালবাসা নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন