বাংলাদেশের রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ বোঝা মুশকিল'

'বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানারকম মারপ্যাঁচ চলছে। এই মারপ্যাঁচ এতই জট পাকানো যে, তা বুঝে ওঠা মুশকিল। আসলে পরিস্থিতিটা এমন যে, তা চিন্তা করলে মূর্ছা যাওয়ার উপক্রম হয়। তার পরও আশা করা যায়, ২০০৮ সালের শেষ দিকে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়তো হবে। তবে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হবে তা এখনও অনিশ্চিত। সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের প্রকাশ্য বক্তৃতা-বিবৃতি থেকে সমাজ ও রাজনীতি বিশ্লেষকদের কাছে এই অনিশ্চয়তার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। '
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতা পাসির ওয়াশিংটনে পাঠানো গোপন কূটনৈতিক বার্তায় এ কথা বলা হয়। ২০০৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি হোয়াইট

হাউসে এ বার্তাটি পাঠান। বহুল আলোচিত ওয়েবসাইটভিত্তিক অপ্রাতিষ্ঠানিক গণমাধ্যম উইকিলিকস গত ৩০ আগস্ট এটি প্রকাশ করেছে।
গীতা পাসির ওই বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনীতি আগামীতে কোন দিকে মোড় নেবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। এ নিয়ে রাজনীতির নানামুখী মারপ্যাঁচ শুরু হয়েছে। রাজনীতিতে প্রভাবশালী মহলগুলো প্রকাশ্য ও গোপনে নানরকম ঘুঁটি চালছে। পরিস্থিতিটা এতই জটিলতায় ঠাসা যে তা ভাবলে মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা। তাছাড়া ড. ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল শক্তি হলো সেনাবাহিনী এবং বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ। তিনি এখন রাজনীতি নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন। তার বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, তার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। তবে এও বলেছেন, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে আর ওয়ান-ইলেভেনের পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে দেওয়া হবে না।
এ কারণেই দেশের আগামী দিনের রাজনীতি ও প্রশাসনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে একটা কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে সেনাবাহিনীতে প্রভাবশালী অনেক পেশাদার কর্মকর্তা আছেন, যারা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জড়ানোর চেয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করতে বেশি আগ্রহ বোধ করেন। তারা জানেন, সেনাবাহিনী যদি দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। হাতছাড়া হবে জাতিসংঘ মিশনের লোভনীয় কাজ। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে পরস্পরবিরোধী সম্পর্ক বিরাজমান, সেনাবাহিনীর কেউ কেউ সক্রিয় আছেন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল গঠন করে দেশ শাসনের হিস্যা নিতে_ তাই নিশ্চিত করে বলা যায় না, কখন একজন জেনারেল জিয়া কিংবা জেনারেল এরশাদের (রূপকার্থে) আবির্ভাব হয়।
দূতাবাসের মন্তব্য : বাংলাদেশের রাজনীতির দাবার ছকে যারা এখন খেলুড়ে হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, তারা কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। এটাও একটা বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, রাজনীতির বর্তমান কুশীলব তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাবাহিনীর নিরাপদ প্রস্থান কীভাবে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা মিশন এবং এর আন্তর্জাতিক মিত্ররা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। তবে শেষ কথা হলো_ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ দেশের জনগণই ঠিক করবেন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন