জেনারেল মইন বলেছিলেন.... হাসিনা-খালেদা দেশে থাকলে দলে সংস্কার আনা কঠিন


  • মইন উ আহমেদ
    মইন উ আহমেদ
1 2
সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ত ৎ কালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ মার্কিন প্রশাসনকে বলেছিলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার আনা খুব জরুরি। কিন্তু শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দেশে থাকলে তা করা কঠিন হবে।
২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিসের সঙ্গে সাক্ষাতে জেনারেল মইন এসব কথা বলেন। আলোচিত ওয়েবসাইট উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন দূতাবাসের তারবার্তা থেকে এ কথা জানা গেছে।
তারবার্তায় বলা হয়েছে, জেনারেল মইন ও বিউটেনিসের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে কথা হয়। জেনারেল মইন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা নিজেরা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বলতে চাইছেন না। তবে তিনি বিউটেনিসকে জানান, বিএনপির কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে দলের সংস্কার নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে তাঁরা বলেন, খালেদা জিয়াকে সরে দাঁড়াতেই হবে।তারবার্তায় এ অংশে টীকায় লেখা হয়েছে, সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য শেখ হাসিনার দেশে প্রত্যাবর্তনের প্রতিবন্ধকতা জারি রেখেছে। খালেদা জিয়াকে অচিরেই সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মইন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজের অগ্রগতির বর্ণনা দেন। বিশেষ করে, চট্টগ্রাম বন্দরের কথা উল্লেখ করেন। বেসামরিক নেতৃত্বের সাফল্যের ব্যাপারে তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। তিনি বলেন, তাঁদের কাজের গতি ধীর এবং তাঁরা বস্তি উচ্ছেদসহ কিছু প্রশ্নবিদ্ধ কাজ করেছেন। তিনি বলেন, মাত্র দশজন উপদেষ্টা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকার চালানো কঠিন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে দিয়ে এ সংখ্যা বাড়ানোর কথা বিবেচনাধীন। মইন বলেন, সাংবিধানিকভাবে তা করা না গেলে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় বিশেষ উপদেষ্টা নিয়োগ করার আরেকটি বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে।
তারবার্তায় রাষ্ট্রদূত বিউটেনিস লিখেছেন, তিনি জেনারেল মইনকে জানিয়ে দেন, সেনাবাহিনী বা তিনি কোনো রাজনৈতিক ভূমিকা নিলে তা বাংলাদেশের জন্য একটি ভুল পদক্ষেপ হবে। যুক্তরাষ্ট্র তাতে সমর্থন দেবে না। এর জবাবে অতীতের মতোই মইন বলেন, সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। সামরিক আইন জারি, সেনাবাহিনীর মদদে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার বা সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক দল গঠনের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন তিনি। ‘তখন পর্যন্ত’ তাঁর নিজের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ না থাকার কথাও বলেন মইন। সেনাপ্রধান নিজের সাম্প্রতিক ‘রাজনৈতিক’ মন্তব্যকে সমর্থন করেন। তবে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে জনসমক্ষে কম কথা বলবেন।
সেনাপ্রধান মইন উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনীর ‘সীমিত’ ভূমিকার মধ্যেও দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেনাবাহিনী ঘুষ গ্রহণের জন্য প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বার্তার মন্তব্য অংশে বিউটেনিস বলেছেন, ‘মইন কূটনৈতিক মহলের কাছে সামরিক আইন জারি, জাতীয় ঐক্যের সরকার বা সেনা-সমর্থিত কিংস পার্টির কথা বারবার অস্বীকার করছেন। কিন্তু নিজের রাজনৈতিক ভূমিকার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। আমরা মইন এবং সেনাবাহিনীর অন্যদের কাছে স্পষ্ট করে বলেছি, উর্দি পরা অবস্থায় মইন কোনো রাজনৈতিক ভূমিকা রাখতে পারবেন না।’ বিউটেনিস বলেন, নিজের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বক্তব্যের সমালোচনা হওয়ায় মইন নিঃসন্দেহে অস্বস্তিতে ভুগছিলেন। তবে মইন দাবি করেন, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তিনি ওই বক্তব্যের যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন, তার ৭০ শতাংশই তাঁর পক্ষে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন