আন্তঃদলীয় সংলাপ.......উইকিলিকস

 ক্ষমতাসীন বিএনপি এবং বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আজ চতুর্থ দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে । বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের আব্দুল জলিল সাংবাদিকদের বলেন যে, দুই পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছানোর মত বিভিন্ন ইস্যুতে একমত পোষণ করেছে। কিন্তু মিডিয়া ও একান্তে দুই দলের নেতারা আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার ব্যাপারে এখনো আশাবাদী নন। পরবর্তী বৈঠকের তারিখ ঠিক হয়েছে ১৬ অক্টোবর ,যখন প্রধানমন্ত্রী জিয়া এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা দু’জনেই বিদেশে থাকবেন। পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোন পক্ষ থেকে সামান্য ছাড় দেয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

মূল অংশঃ
১০ অক্টোবর তারিখে, বিএনপির সেক্রেটারি জেনারেল মান্নান ভুইয়া ও আওয়ামী লীগের আব্দুল জলিলের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংসদে চতুর্থ দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন- এটিই মূল ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বিচারপতি হাসানের তীব্র বিরোধীতা করেছে তার অতীত বিএনপি-সংশ্লিষ্টতার কারণে । তারা আরও বলেছে আওয়ামী লীগের অন্য দাবিগুলো নিয়ে আলোচনার আগে এ ইস্যুটি সমাধান করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জিয়া নির্বাচন নিয়ে বর্তমান সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার উপর জোর দিয়ে গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা শান্তি ও মতৈক্য চাই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে বিরোধী দল যা বলবে তাই মেনে নিতে হবে।”
আওয়ামী লীগ আলোচনাকে সরকারি দলের উপর চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসাবে দেখছে। ৯ অক্টোবর হাসিনা অভিযোগ করে বলেন আওয়ামী লীগের দাবির প্রতি ব্যাপক জনসমর্থনের কারণে বিএনপি আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছে। তিনি তার সমর্থকদের আলোচনা বানচালের যেকোন প্রচেষ্টা রুখে দেয়ার আহ্বান জানান। হার্ডলাইন আওয়ামী প্রেসিডিয়াম সদস্য ও হাসিনার ফুপাতো ভাই শেখ সেলিম আমাদেরকে বলেছেন যে, জলিলের জনসমক্ষে আশাব্যঞ্জক ভাবভঙ্গীর লক্ষ্য ভোটারদের উদ্দীপ্ত করা এবং আলোচনা ভেস্তে গেলে তার দায় বিএনপির উপর চাপানো।

দুই সপ্তাহ আগে আওয়ামী লীগ মার্কিন ও যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকদের ইংগিত দিয়েছিল তারা বিচারপতি হাসানের জায়গায় বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরীকে মেনে নিবে। (মজার ব্যাপার হল, বিচারপতি চৌধুরী বিচার বিভাগ সংস্কারের জন্য বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা সাংবিধানিকভাবে বাড়ানোর ব্যাপারে প্রকাশ্যে তদবির করেছিলেন, যার ফলে বিচারপতি হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার তালিকার প্রথমে চলে আসেন।) জলিল তৃতীয় দফা বৈঠকের পর স্থানীয় এক টিভি চ্যানেলের সাক্ষাতকারে কথাটা প্রকাশ করে ফেলেন, যদিও পরে তিনি তা প্রত্যাহারের চেষ্টা করেন। কারণ তা উভয় পক্ষের সম্মতি ছাড়া আলোচনার খুঁটিনাটি প্রকাশ না করার ব্যাপারে তাদের মধ্যে সমঝোতা লঙ্ঘন করে।

আওয়ামী ও বিএনপি নেতারা একান্তে সংলাপের অগ্রগতির ব্যাপারে আশাবাদী নন। আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে ভুঁইয়া খালেদা জিয়ার কাছ থেকে দরকষাকষির ব্যাপারে যথেষ্ট ক্ষমতা পাননি । শেখ সেলিম বলেছেন, “মান্নান সাহেব জলিলকে বলেছেন হাসানকে প্রতিস্থাপনের ব্যাপারে তাঁর ব্যক্তিগতভাবে আপত্তি নেই। তবে দলের অন্যান্য নেতারা আপোষ করতে আগ্রহী নন। অন্যান্য সিনিয়র বিএনপি নেতাদের কাছ থেকেও আমরা একই অভিমত পাচ্ছি। সেলিম বলেন, “হয়তোবা শেষে নাটকীয় কিছু ঘটলেও ঘটতে পারে। হয়তোবা বিচারপতি হাসান নিজে থেকেই বলবেন দায়িত্ব নেয়ার জন্য তিনি প্রস্তুত নন এবং নিজেকে সরিয়ে নেবেন। এতে দুই পক্ষেরই মুখ রক্ষা হবে।”

জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরী- যিনি তাঁর সাথে উত্তরবঙ্গ সফরে আছেন, তিনি জানিয়েছেন যে ভুঁইয়া এবং জিয়ার মধ্যে সম্প্রতি সংলাপ নিয়ে
আলোচনার জন্য দেখা হয়নি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বিরোধী দলের দাবি মেনে হাসানকে অপসারণ করার কোন প্রশ্নই আসে না।”

পরবর্তী বৈঠক ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা যদিও দুই নেত্রী তখন দেশে থাকবেন না। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৪ তারিখ সৌদি আরব যাচ্ছেন। হাসিনা আমেরিকা যাচ্ছেন ১২ তারিখে। জলিল নিজেই ১৩ তারিখ সংক্ষিপ্ত সফরে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন, বাহ্যত চিকিৎসার জন্যে।

মন্তব্যঃ বাংলাদেশের জনগণ যতটা না বিশ্বাস করে তার থেকে বেশি আশা করে এই আন্তঃদলীয় সংলাপ রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটাবে এবং জানুয়ারি ২০০৭ এ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনটি সফল হওয়ার পথ সুগম করবে।

রেফারেন্স আইডিঃ 06DHAKA6224 
তারিখঃ ১০/১০/২০০৬

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন