হাসিনা মানসিকভাবে, খালেদা শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন

আড়াই লাখ মার্কিন তারবার্তা ফাঁস করেছে উইকিলিকস। মার্কিন কূটনীতিকদের ভাষ্যে এসব তারবার্তায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার অন্দরমহলের খবর

সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাবন্দী অবস্থায় শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া—এ দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রীই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তবে শেখ হাসিনা শারীরিক অসুস্থতার চেয়ে মানসিকভাবেই ভেঙে পড়েছিলেন বেশি। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ছিল বেশ নাজুক।

ত ৎ কালীন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসানকে উদ্ধৃত করে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কূটনৈতিক তারবার্তায় এ কথা বলা হয়েছে। উইকিলিকসের গত ৩০ আগস্ট ফাঁস করা তারবার্তার অন্যতম এটি।
২০০৮ সালের ১৩ মার্চ মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতা পাসির ওয়াশিংটনে পাঠানো ওই তারবার্তায় বলা হয়, দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা সম্প্রতি কারা মহাপরিদর্শকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁরা জরুরি ক্ষমতার আওতায় কারাবন্দীদের বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় দুই নেত্রীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান। দূতাবাসের কর্মকর্তাকে ব্রিগেডিয়ার হাসান জানান, তিনি অস্থায়ী কারাগারে একাধিকবার দুই নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষা ৎ করেছেন। এ সময় শেখ হাসিনা বিদেশে চিকি ৎ সার দাবি জানান, তবে খালেদা তা চাননি।
তারবার্তায় বলা হয়, হাসিনার চিকি ৎ সকেরা গণমাধ্যমের কাছে ‘রাজনৈতিক মন্তব্য’ করায় বেকায়দায় পড়েন বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক। তিনি কারা কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা, বিশেষ করে ভিআইপি কারাবন্দীদের চিকি ৎ সার জন্য নিরাপদ হাসপাতাল এবং বন্দী বড় নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত রক্ষীর অভাব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।
তারবার্তায় আরও বলা হয়, কারা মহাপরিদর্শক মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তাকে বলেন, দুর্নীতির বিচার চলাকালীন শেখ হাসিনা উচ্চ রক্তচাপের কারণে মাথা ঘোরায় আক্রান্ত হন। এতে আদালত তাঁকে উপস্থিতি থেকে অব্যাহতি দেন। কারা মহাপরিদর্শক বলেন, এ ধরনের সমস্যার চিকি ৎ সা হচ্ছে পূর্ণ বিশ্রাম ও ওষুধ। তিনি বলেন, হাসিনা শারীরিক অসুস্থতার চেয়ে মানসিকভাবে বেশি ভেঙে পড়েছেন। মানসিক অবস্থাই তাঁর উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে থাকতে পারে বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক।
কারা মহাপরিদর্শক জানান, চিকি ৎ সার ক্ষেত্রে তিনি আওয়ামী লীগ নেত্রীর ইচ্ছামাফিক কাজ করার চেষ্টা করছেন, যদিও তা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। হাসিনা চিকি ৎ সার জন্য বিদেশে যেতে চাইলেও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার, কারা কর্তৃপক্ষ নয়। ব্রিগেডিয়ার হাসান বলেন, ঢাকার নামকরা চিকি ৎ সকদের নিয়ে যাওয়া হলেও হাসিনা তাঁদের দেখাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। কাজেই তাঁকে নিজের পছন্দের চিকি ৎ সকদেরই দেখতে দেওয়া হচ্ছে।
এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে কারা মহাপরিদর্শক জাকির হাসান বলেন, শেখ হাসিনার পছন্দের ওই চিকি ৎ সকেরা তাঁকে দেখে ফেরার পর গণমাধ্যমের কাছে কথা বলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁরা অনেক সময় রাজনৈতিক মন্তব্য করে বসছেন।
তারবার্তায় বলা হয়, কারা মহাপরিদর্শকের মতে, শেখ হাসিনার চেয়ে খালেদা জিয়া বেশি অসুস্থ বলে মনে হচ্ছে। তবে তাঁর দাবি কম। তিনি গেঁটেবাতের যন্ত্রণায় ভুগছেন, বিশেষ করে হাঁটুতে। এ ছাড়া সম্প্রতি তাঁর কনুই ফুলে গেছে। তাই তিনি হাত ভাঁজ করতে পারছেন না। একই সঙ্গে দাঁতের যন্ত্রণায় ভুগছেন। হাসিনার মতো খালেদাকেও চিকি ৎ সা করছেন তাঁর পছন্দের চিকি ৎ সকেরা। তবে তিনি চিকি ৎ সার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানাচ্ছেন না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন