সরকারের অস্তিত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন প্রধানমন্ত্রী


বিডিআর বিদ্রোহের বেশ কিছু দিন পরও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন। তিনি বিদ্রোহ দমনে অবিলম্বে সেনাবাহিনী না পাঠানোর তার সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল বলেও ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে দাবি করেছিলেন। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের এক গোপন তারবার্তায় এ কথা বলা হয়েছে। সাড়াজাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসে ফাঁস করা মার্কিন দূতাবাসের গোপন তারবার্তায় বলা হয়, তিনি এই বিদ্রোহকে সরকারকে অস্খিতিশীল করার একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করলেও স্বীকার করেন যে, তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। ২০০৯ সালের ১২ মার্চ ঢাকা থেকে তারবার্তাটি ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়েছিল। 
তারবার্তায় বলা হয়, ২০০৯ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির সাথে এক বৈঠকে শেখ হাসিনা বিদ্রোহ তদন্তে এফবিআইয়ের সমর্থন কামনা করে বলেছিলেন, সত্য ঘটনা জানা শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, এই অঞ্চল ও বিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বিদ্রোহ দমনে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উথাপনকারীদের সমালোচনা করেন। 
তারবার্তায় বলা হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকটি হয় ১২ মার্চ। বিডিআর বিদ্রোহের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে এটিই ছিল তার প্রথম বৈঠক। শেখ হাসিনা জানান, ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারির বিদ্রোহকালে তার প্রধান লক্ষ্য ছিল যত কম রক্তপাতে বিদ্রোহীরা অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করেন। 
২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরিবর্তে ২৫ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী পাঠানো হলে রক্তপাত এড়ানো যেত বলে যে দাবি করা হচ্ছে তিনি তার সাথে দৃঢ় মতানৈক্য প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ও বেশ ক’জন সেনাকর্মকর্তা দাবি করেছেন, এক ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা যেত এবং এর ফলে অনেক জীবন বাঁচানো যেত। তারবার্তার প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বিদ্রোহের প্রথম দুই ঘন্টাতেই ক্ষতিগ্রস্তরা নিহত হয়েছিলেন। এত দ্রুত ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানসহ প্রয়োজনীয় অস্ত্র নিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা যেত কি না সে ব্যাপারে শেখ হাসিনা সন্দেহ প্রকাশ করেন। বিডিআরের অনেক সদস্য ভারতের সাথে সীমান্তে গুলি বিনিময়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন থাকায় সেনাবাহিনী দেখামাত্র অস্ত্রসমর্পণ করতেন বলে অনেকে যে দাবি করেন তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। 
শেখ হাসিনার মতে, জওয়ানদের শান্ত করতে তিনি যেসব আলোচকদের পাঠিয়েছিলেন তারা মারাত্মক ঝুঁকিতে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বাঘের গুহায়’ পাঠিয়েছিলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এবং অন্য সরকারি যেসব কর্মকর্তা বিডিআর সদর দফতরে ঢুকেছিলেন, তারা ছিলেন নিরস্ত্র এবং বিদ্রোহীদের তুলনায় সংখ্যায় খুবই কম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অস্ত্রসমর্পণ ও বন্দীদের উদ্ধারের জন্য আলোচনা চলে। 
প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করলেও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন, তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। 
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, বেগম জিয়া ও এরশাদসহ সরকারি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে তিনি কথা বলেছেন এবং তাদের সঙ্কটময় মুহূর্তে সরকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করতে বলেছেন। 
আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর রাষ্ট্রদূতের সাথে একান্ত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বেসামরিক-সামরিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে মার্কিন সহায়তাকে স্বাগত জানাবেন। 
তারবার্তায় বলা হয়, গোয়েন্দা সংস্খাগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা তার সাথে তথ্য বিনিময় করে না। 
তারবার্তায় মন্তব্য করা হয়, শেখ হাসিনা তার সরকারের স্খায়িত্ব নিয়ে এখনো সংশয়ে রয়েছেন। শেখ হাসিনা ও তার উপদেষ্টারা এখনো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা বলে গেলেও এর কোনো প্রমাণ নেই। বিডিআর বিদ্রোহ সরকারের কর্তৃত্ব হন্সাস করেছে এমন কোনো প্রমাণও নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন