বিডিআর বিদ্রোহ দমনে সাহায্য করতে প্রস্তুত ছিল ভারত


বিডিআর বিদ্রোহের সময় বাংলাদেশকে ‘যেকোনো ধরনের সমর্থন ও সহায়তা’ করতে প্রস্তুত ছিল ভারত। অবশ্য ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল তারা বিদ্রোহকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে করে, তবে যেকোনো ধরনের সাহায্য কামনা করা হলে তারা তা দিতে প্রস্তুত। শেখ হাসিনার ওপর ভারতের আস্খা ও সেইসাথে কোনো সহায়তা নতুন সরকারের জন্য অস্খিতিশীলতা বা সন্দেহের সৃষ্টি হতে পারে আশঙ্কায় তা থেকে বিরত থাকা হয়। সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসে গত ৩০ আগস্ট প্রকাশিত মার্কিন দূতাবাসের গোপন তারবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। তারবার্তাটি ২০০৯ সালের ২৬ মার্চ নয়াদিল্লি দূতাবাস থেকে ভারপ্রাপ্ত পলিটিক্যাল কাউন্সিলর লেস ভিগুইরি ওয়াশিংটনে পাঠিয়েছিলেন। 
তারবার্তাটিতে বলা হয় ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উষä ও ঘনিষ্ঠ রয়েছে। বাংলাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) বিদ্রোহের পরও হাসিনার ওপর থেকে ভারতের আস্খা নষ্ট হয়নি এবং তারা মনে করেছিল হাসিনা দক্ষতার সাথে সঙ্কটটি মোকাবেলা করতে পারবেন। 
তারবার্তাটিতে বলা হয়, ভারতপন্থী হিসেবে পরিচিত শেখ হাসিনার সাথে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের ঘনিষ্ঠ ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গাìধী ও শেখ হাসিনা পুরনো বাìধবী। নির্বাচনের পর পরই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফর করে দু’টি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এগুলোর একটি বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন এবং অপরটি প্রতিবেশী দেশ দু’টির মধ্যে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগসংক্রান্ত নতুন চুক্তি। 
ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর বিদ্রোহ ভারতীয় পর্যবেক্ষকদের মধ্যে বেদনার সৃষ্টি করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি বিদ্রোহের পর পরই এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ সরকার পরিস্খিতি মোকাবেলায় সক্ষম। সংবাদমাধ্যমের ভাষ্যানুযায়ী বিদ্রোহের পর পরই মুখার্জি শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি লিখে বিদ্রোহকে নির্বাচিত সরকারকে অস্খিতিশীল করার চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেন এবং ‘যেকোনো ধরনের সমর্থন ও সহায়তা’ প্রদানের প্রস্তাব দেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ভারত মনে করে শেখ হাসিনা নিজেই সমস্যাটির মোকাবেলা করতে পারবেন। 
তারবার্তাটিতে বলা হয়, নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, ভারত বিদ্রোহকে অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে অভিহিত করে এবং সহায়ক বিবৃতি প্রদান করে ‘চাপ হন্সাস’ করায় ভারতের কাছে বাংলাদেশ কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ভারত তাদের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত এবং ভারতীয় রাজনীতিবিদদের কাছে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ব্যাপার নয়। বাইরের শক্তি এতে জড়িত কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার দুর্বল হওয়াতে যাদের স্বার্থ রয়েছে তারা এ জন্য দায়ী হতে পারে। 
তারবার্তাটিতে বলা হয়, ছয় মাস বìধ থাকার পর ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সমুদ্রসীমা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর আগে হারিয়াভাঙ্গা নদীর দাবি নিয়ে মতানৈক্যের জের ধরে তিন দশক বìধ থাকার পর ২০০৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুই দেশের মধ্যে পূর্ববর্তী তথা এগারোতম রাউন্ডের আলোচনা হয়। 
তারবার্তাটির মন্তব্যে বলা হয়, ঢাকায় গোলযোগ সত্ত্বেও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে ভারত স্বস্তি অনুভব করে। বিদ্রোহের পর ভারতের সহায়ক মনোভাবের জন্য ঢাকার কৃতজ্ঞতা প্রকাশকে ভারতীয় মিডিয়া বেশ গুরুত্ব প্রদান করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে চড়াই উৎরাই থাকলেও এখন এই সম্পর্ক উষä রাখার প্রতিই ভারতের নজর থাকবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন