জিয়া কেন বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুনর্বাসন করলেন? এই প্রশ্নটা আমার আগের পোষ্টে সবচেয়ে বেশি লোক করেছে বলে এর উত্তর ই আগে দিচ্ছি।
জিয়ার ক্যাবিনেটে শাহ আজিজ নামের এক লোক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সত্যি কথা বলতে কি তিনি ছিলেন রাজাকার এবং জিয়ার যে সব কাজ প্রশংসিত হয়েছিল তার প্রত্যেকটির তিনি বিরোধীতা করতেন। একই ভাবে বঙ্গবন্ধুও জানতেন যে মোশতাক যুদ্ধের সময় বিতর্কিত ভূমিকা রেখেছিলেন। তা সত্তেও তিনি বলতেন যে বড় পিড়িটায় শত্রুকে বসতে দিতে হয়। তিনি মোশতাককে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে বসিয়েছিলেন। আমি এখানে যে মজার বিষয়টা দেখাতে চাই তা হল জিয়া শেখ সাহেবের মত হযত রাজনীতি করে করে ক্ষমতায় যাননি, কিন্তু কিছু দয়া বা জনসম্পৃক্ততার গুনাবলী তিনি জন্ম থেকেই ধারন করতেন। জিয়াকে নিয়ে কিছু উদাহরন দেয়া যাক। পিরোজপুর এর মঠবাড়ীয়া পরিদর্শনে যাবেন জিয়া।যে দিন তার যাওয়ার কথা সেদিন সবাই অধির আগ্রহে তার হেলিকপ্টারের অপেক্ষায় আছে। জিয়া তখন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট । কিন্তু মঠবাড়ীয়াবাসী সকাল বেলায় অবাক হয়ে দেখলেন জিয়াউর রহমান একটা খালি স্লিপার আর শার্ট পড়ে মঠবাড়ীয়ার টি এনও অফিস থেকে বের হচ্ছেন।কি অদ্ভুত। এর আগেও তিনি এ রকম অনেকবার করেছেন। রংপুরে যেবার শিশু গায়িকা বেবীনাজনীন কে আবিস্কার করেন , সেবার মাত্র আধাঘন্টার নোটিশে তিনি রংপুর বড় মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন।
তিনি ছিলেন বাস্তবেই নিরহংকার, এবং সেই সাথে সাহসীও। বক্তব্য হচ্ছে জিয়া কেন বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুনর্বাসন করলেন? এই প্রশ্নটা আমার আগের পোষ্টে সবচেয়ে বেশি লোক করেছে বলে এর উত্তর ই আগে দিচ্ছি।
১। প্রথমত একথা কিন্তু কোন ইতিহাসবিদ বলেন নি যে বঙ্গবন্ধুর খুনের ঘটনার সাথে কোনভাবে জিয়া প্রত্যক্ষ জড়িত ছিলেন। কিন্তু বিষয়টা তিনি জানতেন বলে অনেকের ভাষ্য। ১৫ আগষ্ট সকালে যখন কর্নেল শাফায়াত জামিল জিয়াকে খবর দেন যে -প্যেসিডেন্ড নিহত। জিয়া কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে শুধু বললেন, সো হোয়াট ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার!
অর্থাৎ এতবড় একটা খবর কেন তাকে বিচলিত করলনা?
দুটো উত্তর হতে পারে এর। এক. তিনি আগেই কারো কাছে শুনেছিলেন । দুই. ষড়যন্ত্রের বিষয়টা তিনি জানতেন বা আঁচ করতে পেরেছিলেন।
]যাই সত্য হোক প্রেক্ষাপট দেখুন, বঙ্গবন্ধুর খুনীরা তাকে খুন করার পর পরই সেটা একটা মহৎ কাজ হয়েছে বলে সদম্ভে ঘোষনা করে। এবং ১৫ আগষ্ট শুক্রবার যখন জুম্মার নামাজের জন্য দু ঘন্টা কার্ফ্যু শিথিল করা হয় তখন জনগন বঙ্গবন্ধুর পক্ষ নিয়ে কেউ রাস্তায় নামে নি। বরং ১৬ আগস্ট ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি ছবি ছাপা হয় সেখানে দেখা যায় খুশিতে জনগন মিস্টিমুখ করছে। এটা এখনকার প্রেক্ষাপটে শুনতে খারাপ লাগতে পারে , কিন্তু ঘটনা সত্য।জনগনও এটাকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিতে পেরেছিল।আমরাও তো দেখেছি ১/১১ র সরকারকেও জনগন প্রথমে স্বাগত জানিয়েছিল। কেন? কারন তখন জনগন মুক্তি চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সময়ের কথা একটু চিন্তা করেন। তখন., দুর্ভিক্ষ, অনিয়ম, দুর্নিতি , রক্ষিবাহীনির অত্যাচার আর এসবের মধ্যে মড়ার উপর খাড়ার ঘা ছিল বাকশাল গঠন করে এই অবস্থাগুলোর স্থায়ী রূপ দেয়ার চেষ্টা। বাকিটা আপনারা মেলাবেন। আপনারা বলতে পারেন শিশু রাসেলের দোষ তো কিছু ছিলনা। আমিও সমর্থন করি কথাটা। এমনকি আমি নিজে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডটিও সমর্থন করিনা। কিন্তু ক্যু তো এভাবেই হয়, তাইনা? তাছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদের প্রায় সকলেই বিভিন্ন খেতাব প্রাপ্ত মহান মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। এই রশিদ , শাহরিয়ার বা কর্ণেল ফারুক সবাই দুই বছরের সিনিয়রিটি পেয়েছিলেন।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু পরবর্তী দেশের শাসনভার চলে যায় খন্দকার মোশতাকের হাতে। জিয়া সেনাপ্রধান হন্। কিন্তু মোশতাকের সাতে জিয়ার চেয়ে খালেদ মোশাররফের ই বেশি খাতির ছিল।বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুনর্বাসন করেন মোশতাক।তাদের প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট আলাদা মূল্যায়ন করতেন। সেনাপ্রধানকে না জানিয়ে তাদের বঙ্গভবনে দাওয়াত করে খাওয়াতেন। নিয়ম অনুযায়ী জিয়াকে না জানিয়ে তার অধিনন্ত সে সব অপিসারদের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে ন্যাস্ত করা হয়। তো আপনার ক্লাসের ছাত্ররা যদি আপনাকে না মেনে বাইরের কাউকে বেশি মানে আর আপনার করার কিছুই না থাকে তো কি আপনি খুশি হতেন। তিনি বরং খুশি ছিলেন না, আবারও বলি এজন্য নয় যে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কেন পুনস্কৃত করা হচ্ছে, বরং এজন্য যে তাকে ওভারটেক করার প্রবনতা দেখা দিতে পারে এজন্য। সেই সব খুনী কর্নেলরা তখন বঙ্গবন্ধুকে মেরে অন্যরকম ফর্মে ছিল। নিজেদের আইনের উর্দ্ধে বলে মনে করত।তো ওই সময়ে জিয়া তাদের সহয়োগীতা করার প্রশ্ন্ই আসেনা।
২। মোশতাক শুধু বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ই এতটা প্রশ্রয়ে রাখতেন। কিন্তু জিয়া ওই সময়ে মোশতাককে সেরকম সমর্থন দেননি বলেই এত জনপ্রিয় একজন সেনাপ্রধান হওয়া সত্তেও তাকে মোশতাক সরিয়ে দিয়ে খালেদ মোশাররফকে সেনাপ্রধান করেন। এবং জিয়াকে মোশতাকের শেষ সময়টা গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হয়।এরপরে তো সেই নভেম্বর এল"। সেখানে জিয়া হাল না ধরলে কি হত দেশের অবস্থা একবার বিয়য়গুলো পড়লে বুঝবেন। (উপরের লিংক এ আছে।)
এর পরে জিয়া যখন ক্ষমতায় যায় তখোনো এসব খুনীদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি, একথা সত্য। কিন্তু জিয়া তো দেশে জরুরী অবস্থা দিয়ে রাখেন নি। বরং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। হাসিনা সহ সবাইকে রাজনীতি করাস সুযোগ দিয়েছিলেন।তখন কেন কেউ বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার চেয়ে একটা মিছিলও করলনা? বঙ্গবন্ধু যে দলটিকে নিজ হাতে কবর দিয়েছিলেন সেই চোরের দল (তারই মতে) আওয়ামীলীগ কখোনোই তার হত্যাকান্ডের বিচার চায়নি। ৯৬ এ ক্ষমতায় আসার জন্য এ ইস্যুটি প্রয়োজন ছিল তাই ব্যবহার করেছে মাত্র। আর এবার ক্ষমতায় আসার জন্য তারা যুদ্ধাপরাধূ ইস্যুটি ব্যবহার করেছে।
কিন্তু বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আসল প্রশ্রয়দানকারী এরশাদ কে তো এখোনো হাসিনা তার মহান বড়ভাই বানিয়ে খুশিতে ই আছে। জিয়া ইনডিমিনিটি দিয়েছিলেন দুটি কারনে, এক, তার ক্ষমতায় আসার প্রক্রিয়া , বাকশাল তুলে দেয়া , সংবাদপত্রের স্বাধীনতা , বহুদলীয় গনতন্ত্র ইত্যাদি অর্ডিন্যান্সগুলো যা পার্লামেন্ট গঠনের আগেই হয়েছিল তার বৈধতা দেয়ার জন্য। বস্তুত এরশাদের সময়ও এ ইনডিমিনিঠি বলবৎ ছিল। আর বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ইনডিমিনিটি(দায়মুক্তি) দিয়ে যান খন্দকার মোশতাক, জিয়া নন। এবং সেই আইন তুলে নেয়ার জন্য এরশাদের আমলেও প্রচুর সময় পাওয়া সত্তেও আওয়ামীলীগ দাবী তোলেনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন