আমাদের স্বাধীনতা (৩য় অংশ)

১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব ১৯৪৬ সালে পরিবর্তিত হয়ে একটিমাত্র মুসলিম স্বাধীন রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রস্তাবে পরিণত হয় । অন্যদিকে ভারত স্বাধীনের ব্যাপারে বৃটিশ সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা মুসলিম লীগ এবং কংগ্রেস দ্বারা প্রত্যাখান হতে থাকে । ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলমানদের ৪৯৫ টি (তখন হিন্দু ও মুসলমানদের আসন ভিন্ন ছিল ) আসনের মধ্যে মুসলিম লীগ পেয়েছিল ৪৩৪ টি আসন । এর মধ্যে বাংলা প্রদেশের ১১৯ টি আসনের মধ্যে মুসলিম লীগ জয় করেছিল ১১৩টি আসন । ১৯৪৬ সালে মুসলিম আসনে মুসলিম লীগের এ বিরাট বিজয় মুসলিম লীগকে ভারতের মুসলমানদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বশীল দলে পরিণত করে এবং একই সাথে ভারত বিভাগের মাধ্যমে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা তুলে ধরে । মুসলিম লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তান দাবী করলেও সংখ্যালঘু মুসলমানদের সাংবিধানিক রক্ষা কবচের মাধ্যমে এক ভারতে থাকতে রাজী ছিলেন । এর প্রমাণ হিসেবে বলা যায় যে , তিনি ১৯৪৬ সালে মে মাসের দিকে যে “কেবিনেট মিশন প্লান” এসেছিল , তা তিনি গ্রহণ করেছিলেন । এ প্লান এ বলা হয়েছিল , ভারতকে এ , বি ও সি ৩টি গ্রুপে বিভক্ত করা হবে । হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা যেমন মাদ্রাজ , বোম্বে , বিহার , মধ্য প্রদেশ ইত্যাদি নিয়ে হবে গ্রুপ “এ” । মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা যেমন পাণ্জাব , সিন্ধু , উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে হবে ”বি” গ্রুপ এবং বাংলা ও আসাম নিয়ে হবে “সি” গ্রুপ । এই তিনটি গ্রুপ নিয়ে হবে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র । (“আত্মঘাতী রাজনীতির তিনকাল” , “১০০ বছরের রাজনীতি” ) । কিন্তু ১৯৪৬ সালের ১০ জুলাই কংগ্রেস সভাপতি জওয়াহরলাল নেহেরু এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন , কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিয়ে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে । নেহেরুর এ বক্তব্য “কেবিনেট মিশন প্লান” এর মৃত্যু ঘটায় । এ ব্যাপারে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি মওলানা আবুল কালাম আযাদ তার “ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম” গ্রন্থে বলেছেন , “১৯৪৬ সালের ভুল ছিল মহার্ঘ এবং স্বাক্ষ্য - তথ্য হিসেবে আমি লিখে যেতে চাই জওয়াহরলাল নেহেরুর ওই বিবৃতি ছিল ভুল ।” মুসলিম লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বললেন “ইংরেজ সরকার থাকাকালীন অবস্থায় কংগ্রেস নেতারা যখন নিজেদের ইচ্ছামত নিজেদের কথা পাল্টাচ্ছেন তখন ইংরেজরা চলে গেলে এরা কী করবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই ।” (“আত্মঘাতী রাজনীতির তিনকাল” ১ম খন্ড) । নেহেরুর সংখ্যাগরিষ্ঠ তত্ত্ব এক ভারতে হিন্দু রাজত্ব কায়েম করবে এবং ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর কংগ্রেস শাসিত প্রদেশে মুসলমানদের কী দুর্দশা হয়েছির সে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এক ভারতের আশা ত্যাগ করে মুসলমানদের শান্তি ও নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে পাকিস্তান দাবী আদায়ের জন্য ১৯৪৬ সালের ১৬ই অগাস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেন । বাংলায় ১৬ই অগাস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালনের জন্য মুসলিম লীগ ঐ দিন কলকাতার গড়ের মাঠে এক জনসভার আয়োজন করে । পাকিস্তান অর্জনের মাধ্যমে বাংলার কৃষিজীবি মুসলমানরা জেগে উঠবে , তা কলকাতার হিন্দু ভাইদের সহ্য হল না । তাই তারা সভায় আগত মুসলমানদের আক্রমণ করে এবং মুসলমানদের লাশ কলকাতার অলি-গলিতে পড়ে থাকে । বড় দুর্ভাগ্যজনক যে , ১৯৪৬ এর কলকাতার দাঙ্গাকে অনেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে দায়িত্ব পালন করেছেন । সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বললে বর্তমান প্রজন্ম বুঝবে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা । কিন্তু কলকাতার দাঙ্গা ছিল হিন্দু কর্তৃক মুসলমান নিধন । তবে এটা ঠিক দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর মুসলমানরাও সংগঠিত হয়ে কিছু হিন্দু নিধন করেছিল । যে কোন দাঙ্গায় দূর্বল প্রতিপক্ষ অপর পক্ষের কিছুটা ক্ষতি করে । কিন্তু দাঙ্গার দায়িত্ব তাদের উপর পড়ে না । দূর্বল পক্ষ চাইবে সবসময় দাঙ্গা যাতে না হয় । কারণ দাঙ্গা হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবচেয়ে বেশি । ১৯৪৬ সালে কলকাতার জনসংখ্যার ২৩% ছিল মুসলমান এবং বাকী ৭৭% হল হিন্দু জনগোষ্ঠি । এখন যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করুন ২৩% মুসলমান কীভাবে ৭৭% হিন্দু জনগোষ্ঠিকে আক্রমণ করবে ? এ ব্যাপারে আবুল মনসুর আহমদ “আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চার বছর” ২য় খন্ডে (পঞ্চম সংস্করণ ) ২১০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন , ““আমার নিতান্ত ঘনিষ্ঠ আলীপূর কোর্টের এক তরুণ মুন্সেফ সত্য-সত্যই কিছুকালের জন্য মনোবিকার রোগে আক্রান্ত হইয়াছিলেন । রিটায়ার্ড জজ ও বয়স্ক উকিল ব্যারিস্টারের মত উচ্চশিক্ষিত কৃষ্টিবান ভদ্রলোকদিগকে খড়গ-রামদা দিয়া তাদের মহল্লার বস্তির মুসলমান নারী-পুরুষ ও শিশু -বৃদ্ধকে হত্যা করিতে দেখিয়াই ঐ তরুণ হাকিমের ভাবালু মনে অমন ধাক্কা লাগিয়াছিল ।” ২১২ পৃষ্ঠায় আছে “সভার কাজ শুরু হয়-হয় । এমনি সময় খবর আসিল বেহালা , কালিঘাট , মিটিয়াবুরুজ , মানিকতলা ও শ্যামবাজার ইত্যাদি স্থানে -স্থানে মুসলমানদের উপর হিন্দুরা আক্রমণ করিয়া অনেক খুন-জখম করিয়াছে । অল্পক্ষণের মধ্যে লহু-মাখা পোশাক পড়া জনতা রক্ত রন্জিত পতাকা উড়াইয়া আহত ব্যক্তিদের কাঁধে করিয়া চারিদিক হতে মিছিল করিয়া আসিতে লাগিল ।” অলিআহাদ তার “জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ হতে ৭৫” এ লিখেছেন কলকাতার দাঙ্গায় মুসলমানরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । বিহারে নির্দোষ নিরীহ মুসলমানদিগকে উন্মক্ত সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের হাতে কচুকাটা হইতে হইয়াছে । কলকাতার দাঙ্গা সম্পর্কে সরকার শাহাবুদ্দীন আহমদ “আত্মঘাতী রাজনীতির তিনকাল” বইয়ের ১ম খন্ডে আনন্দ বাজার পত্রিকার ১৯৯২ সংখ্যা , যা ১৯৮৯ সালের ৮ই ডিসেম্বর পুনঃ প্রকাশিত হয়েছে তা হতে নিম্নের উদ্ধৃতি দিয়েছেন -
“ইহার মাত্রএক মাস পূর্বে বোম্বাই শহরে হিন্দুরা একটি তুচ্ছ ব্যাপারে দলবদ্ধভাবে অতর্কিত আক্রমণ করিয়া ১৭জন পাঠানসহ শতাধিক মুসলমান নাগরিককে হত্যা এবং বহু নিরাপরাধ মুসলমানের দোকানপাট ও বাড়ীঘর লুণ্ঠন করা সত্ত্বেও ১৬ই অগাস্ট প্রাতঃকাল পর্যন্ত কলিকাতার হিন্দু ও মুসলমানরা নির্বিবাদে পাশাপাশি বাস করিয়া আসিতেছিল । অতি বড় সাবধানী মুসলমান পর্যন্ত ইহা জানিতে বা বুঝিতে পারে নাই যে , ১৬ই অগাস্ট তাঁহাদের রক্তে কলিকাতা মহানগরীর রাজপথ রন্জিত করিবার জন্য হিন্দু অধ্যুষিত পুলিশ বাহিনী হিন্দু জনসাধারণের সাথে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রহিয়াছে । --------- মানিকতলার পর শোভা বাজার , শ্যামবাজার , বাগবাজার , ভবানীপূর , কালীগন্জ , টালীগন্জ মুসলমান এলাকা ও ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত বাড়ীগুলো আক্রান্ত হয় । দ্বিপ্রহরের মধ্যে হিন্দুরা এ সকল এলাকার বহু মুসলমানকে হত্যা এবং বাড়ীঘর নিশ্চিহ্ন করিয়া দেয় । ------- নিরস্ত্র শোভাযাত্রীদের উপর যখন বেদম লঠিসোটা ছোরা এবং রিভলবার ইত্যাদি চলিতেছিল , তখন রাস্তার উভয় পার্শ্ববর্তী হিন্দু বাড়ীগুলি হইতে গরম তেল , ইটপাটকেল এসিড ও জ্বলন্ত কয়লা বর্ষিত হইতে থাকে । ------প্রায় সব কয়টি থানার অফিসার ইনচার্য ছিলেন হিন্দু । টেলিফোন অফিসটি ছিল কার্যতঃ হিন্দুদের পরিচালনাধীন । লালবাজার পুলিশ হেডকোয়াটার্সের কণ্ট্রোল রুমের প্রধান কর্তাও ছিলেন অমুসলমান । এক কথায় সোহরাওয়ার্দীর মন্ত্রিসভা ছাড়া সেই ঘোর বিপদের দিনে মুসলমানদের আপন বলিতে বা তাহাদিগকে অনুমাত্রও সাহায্য করিতে পারে এমন কেহ তাহাদের ছিল না । ------ব্যাপকতা স্থায়িত্বের দিক দিয়া বিহারের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা -হাঙ্গামা পূর্ববর্তী সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করিয়াছিল । বিহারের মুসলমান জনসংখ্যা ছিল শতকরা ১৪ জন মাত্র । এই কয়টি লোক হত্যার জন্য তিন মাস ব্যাপী সেখানে প্রস্তুতি চলে । -------- বিহারের প্রথম ৩ দিনের দাঙ্গায় ২৫-৩০ হাজার মুসলমান শিশু ও নর-নারীর প্রাণহানি ঘটে ।” (আনন্দ বাজার , ৮ ডিসেম্বর , ১৯৯২ সংখ্যা , ১৯৮৯ পূণ মুদ্রণ । ) কলকাতার দাঙ্গার প্রতিক্রিয়া হিসেবে নোয়াখালী জেলায় দাঙ্গা শুরু হয় । এখানে সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানরা হিন্দু জনসাধারণকে হত্যা করতে থাকে । কিন্তু এ হত্যাকান্ডকে কলকাতার হিন্দু পত্রিকাগুলো এমনভাবে ফুলিযে - ফাঁপিয়ি প্রচার করে যে , কলকাতার এবং বিহারের দাঙ্গার ব্যাপকতা বাড়িয়ে দেয় । এ ব্যাপারে কলকাতার আনন্দ বাজার পত্রিকা বলে , “কলিকাতার এই নরমেষ যজ্ঞে নোয়াখালী জেলার বহু মুসলমান (কলকাতায় বসবাসরত) নিহত হইয়াছিল । কাজেই সর্বাগ্রে তথায় ইহার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । -----দাঙ্গার উস্কানী যোগায় হিন্দুরা , দাঙ্গা শুরু হয় মুসলমানদের হাতে । দাঙ্গার পাশাপাশি দুটি থানার একশতের কিছু কম হিন্দু হতাহত হয় । কিন্তু নোয়াখালী জেলার এই দাঙ্গার খবর এমন ফলাও করিয়া কলিকাতার হিন্দু দৈনিক পত্রিকাগুলি প্রকাশ করিতে থাকেন যে , ভয়াবহতার দিক দিয়া উহা কলিকাতার মহা হত্যাকান্ডকে পশ্চাতে ফেলিয়া দিয়াছিল । ---- উপরোক্ত মিথ্যা প্রচারণার মূলে যে উদ্দেশ্য লুক্কায়িত ছিল মাত্র ছয় সপ্তাহ পর উহা প্রকাশ পায় বিহারে । (আনন্দ বাজার , ৮ ডিসেম্বর , ১৯৯২ সংখ্যা , ১৯৮৯ পূণ মুদ্রণ । ) আজ যারা দ্বিজাতি তত্ত্ব ভুল বলেন এবং এক বাংলার পক্ষে কথা বলেন , তারা একবার দয়া করে আমাদের পূর্ব ইতিহাসটা জেনে নিলে ভাল হয় ।
১৯৪৬ সালে হিন্দু জনতা কর্তৃক মুসলমান নিধন প্রমাণ করে দেয় এ উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলমান জাতি একসাথে বসবাস করতে পারবে না । অবশ্যই ভারত বিভাগের প্রয়োজন আছে । এমনকী বাংলার বাংলা ভাষাভাষী লোকজন বাঙ্গালী হলেও , তারা হিন্দু বাঙ্গালী ও মুসলমান বাঙ্গালী এ দুটি অংশে বিভক্ত ছিল । প্রায় ৭৫০বছর এ দুই জাতি পাশাপাশি বসবাস করা সত্ত্বেও তারা এক জাতিতে পরিণত হতে পারেনি । বরং তাদের ধর্মের মধ্যে সংস্কৃতগত পার্থক্য এত বেশি শক্তিশালী যে , বিগত ৭৫০ বছর তারা পাশাপাশি বসবাস করেছে কিন্তু তাদের জীবনযাত্রা , সাহিত্য ধারা ,আচার-আচরণ , ভাল বা মন্দ লাগার অনুভূতিগুলো ছিল ভিন্ন । বাংলার হিন্দু বাঙ্গালীরা ছিল জমিদার , চাকুরিজীবি , ব্যবসায়ী এবং মুসলমান বাঙ্গালী ছিল কৃষিজীবি । এ শ্রেণী বিভাজন কীভাবে হয়েছে , আমি তা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি । ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল , তখন হিন্দুরা বঙ্গ মাতার অঙ্গছেদন করা যাবে না বলে আন্দোলন শুরু করল এবংফলাফল হিসেবে মুসলমানদেরকে প্রাণ দিতে হল । আবার ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় এক বাংলার কথা উঠল , তখন সেই হিন্দু বাবুরা দেখল এক বাংলা ভারত হতে আলাদা হলে সামগ্রীকভাবে বাংলায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে । তাই মাত্র কিছু দিনের ব্যবধানে তারা বঙ্গ মাতার অঙ্গ ছেদন করতে রাজী হলেন । দুই বাংলা এক থাকার ব্যাপারে বাংলার মুসলিম লীগ নের্তৃবৃন্দ একমত ছিলেন । এর মধ্যে মুসলিম লীগের সোহরাওয়ার্দী এবং আবুল হাশিম ধারার নের্তৃবৃন্দরা স্বাধীন এক বাংলার পক্ষে ছিলেন এবং মওলানা আকরম খাঁ ও খাঁজা নাজিমুদ্দিন ধারার নের্তৃবৃন্দরা এক বাংলা কিন্তু পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন । এ ব্যাপারে মুসলিম লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছেন স্বাধীন বাংলার ব্যাপারে তার কোন আপত্তি নেই । জিন্নাহ মনে করতেন কলিকাতা ছাড়া পূর্ব বাংলা হল অর্থহীন । তাই তিনি বঙ্গভঙ্গের বিপক্ষে ছিলেন । জনাব অলিআহাদ তার “জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ হতে ৭৫” এর ২৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন “বঙ্গের গর্ভণর স্যার ফ্রেডারিক বরোজ বঙ্গদেশকে অখন্ড এবং স্বাধীন রাখার জন্য প্রচন্ড চেষ্টা করেছিলেন জিন্নাহ এবং মুসলিম লীগ এ প্রয়াসের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেয় ।” এ বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় আছে ১৯৪৭ সালের ১১ই মে মুসলিম লীগের আবুল হাশিম এবং শরৎ চন্দ্র বসু কলকাতার সোদপূর আশ্রমে মহাত্মা গান্ধির সাথে অখন্ড স্বাধীন বাংলার জন্য আলোচনা করেন । ১৫ই মে স্বাধীন অখন্ড বঙ্গদেশ প্রচেষ্টার অগ্রগতি আবহিত করার জন্য জিন্নাহর সাথে সোহরাওয়ার্দী দিল্লীতে এক বৈঠকে মিলিত হন । গান্ধির সাথে আবুল হাশিমের কী কথা হয়েছিল , তা এ বইয়ে উল্লেখ নেই । এ ব্যাপারে জনাব আবুল আসাদ তার “একশ বছরের রাজনীতি” বইয়ের ২৬৬ পৃষ্ঠায় “অখন্ড বাংলার স্বপ্ন” বই হতে উদ্ধৃত করেছেন । “গান্ধি আবুল হাশিমকে প্রশ্ন করেছিলেন , আপনি যে বাঙ্গালী সংস্কৃতির কথা বলেছেন , তার মূল উৎস উপনিষদ , বর্তমানকালে রবীন্দ্রনাথ তাকে শুধু বঙ্গদেশ নয় , সর্বভারতীয় রূপে প্রকাশ করেছেন । বঙ্গদেশ কি স্বেচ্ছায় ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র গঠনের জন্য আহ্বায়ন জানাবে ? এ প্রশ্নের জবাবে আবুল হাশিম নিরুত্তর ছিলেন ।” (অখন্ড বাংলার স্বপ্ন , আহসান উল্লাহ , পৃষ্ঠা ১৬১,১৬২) । গান্ধির এ বক্তব্যের মাধ্যমে হিন্দু মানসিকতা কী ছিল , তা পরিস্কার হয়ে উঠে । তাই রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ধারায় অনুসারীরা পশ্চিম বাংলার হিন্দু বাঙ্গালীরা কখনও ভারত হতে পৃথক হওয়ার চিন্তা আজ পর্যন্ত করেনি এবং করবেও না । তাই ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস সহ সমস্ত হিন্দু নের্তৃবৃন্দ ছিলেন বাংলা বিভক্তিকরণের পক্ষে । তবে শরৎ বসু , কিরণ শংকরের মত কিছু উদার নের্তৃবৃন্দ এক বাংলার পক্ষে ছিলেন , কিন্তু হিন্দু জনগণের মধ্যে তারা কোন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেননি । এভাবে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে ১৪ ই অগাষ্ট ভারত বিভক্ত হয় এবং অসংখ্য মুসলমানের প্রাণহানির মাধ্যমে পশ্চিম পান্জাব , সিন্ধু , বেলুচিস্তান , উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং হাজার মাইল দূরের পূর্ববাংলা নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়
। 
চলবে ..... ।  

 সুত্রঃ আবু নিশাত(সোনার বাংলাদেশ ব্লগ)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন