দশ মাস দশ দিন ধরে গর্ভে ধারণ… কিন্তু কীভাবে সম্ভব??




কিছু সাধারণ বাংলা চলচ্চিত্র দেখলে নায়ক/নায়িকার মায়ের মুখ থেকে তাদের উদ্দেশ্যে করা এই কথা অবশ্যই শুনে থাকবেনঃ
দশ মাস দশ দিন তোকে পেটে ধরেছি......
অথবা নিশ্চই শুনেছেন জেমসের গাওয়াঃ


দশ মাস দশ দিন ধরে গর্ভে ধারণ
কষ্টের তীব্রতায় করেছো আমায় লালন...


কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান কিন্তু তা বলে না। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে মানুষের ক্ষেত্রে গর্ভ-ধারণ কাল গড়ে ৪০ সপ্তাহ। তবে এটা ৩৭-৪২ সপ্তাহের মধ্যেই থাকে। গড় হিসেবে ৪০ সপ্তাহের মানে ২৮০ দিন বা ৯ মাস ১০ দিন [গড়ে ৩০ দিনে মাস ধরে]... বরং ১০ মাস দশ দিন গর্ভে থাকলে সন্তানের মৃত্যুর সম্ভাবনাই অনেক বেশি। সাথে মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি তো আছেই।


তাহলে কেন ১০ মাস ১০ দিন বলা হয়??




অন্যান্য প্রাণীর মতন মানুষের জীবনেরও অন্যতম লক্ষ্য তার ভবিষ্যত প্রজন্মকে এই দুনিয়ায় নিয়ে আসা। আর এর জন্যই দরকার নারী পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক। সকল প্রাপ্ত বয়স্কেরই একথা জানার কথা তাই আর এই নিয়ে কথা বাড়াচ্ছি না।


আরেকটা জানা ব্যাপারে কথা না বললেই নয়। এটা হল মিন্সট্রুয়াল কিংবা রজঃচক্র কিংবা মাসিকীর ব্যাপারে কিছু কথা বলবো। এটা একটা মেয়েকে শারীরিক ভাবে নারী হয়ে ওঠার আগমনী বার্তা বহন করে। মেয়েদের এই রজঃচক্র সাধারণত প্রায় ১ মাস (আসলে ২৮ দিন) পর পর হয় বলেই একে বাংলাতে অনেকেই মাসিক বলে থাকেন। এই মিন্সট্রুয়াল কী জিনিস তার বিশদ ব্যাখ্যাতেও যাচ্ছি না। আমার কার্যকরণে যতটুকু দরকার শুধু ততটুকুই টানবো।


সন্তান গর্ভে থাকাকালীন সময়ে মায়েদের এই চক্র বন্ধ থাকে। তাই সর্বশেষ মিন্সট্রুয়ালের দিন থেকেই হিসেব করে বেড় করা হয়ে থাকে গর্ভ-ধারণকালের হিসেব। যদিও সাধারণত নারীর ডিম্বাণু তার সঙ্গী পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হবার সময়কাল এই দিনটির পরে হবার সম্ভাবনাই অনেক বেশি। কারণ এই চক্র চলাকালীন সময়ে নারী-পুরুষের মিলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও বিজ্ঞান বলে এই সময়েই নারীর দেহ তার সঙ্গীকে বেশি চাইবে। আর মন তো শরীরেরই অংশ। তাই ১০ মাস ১০ দিন হবার কোন সম্ভাবনাই নাই। বরং প্রকৃত হিসেবে এই দিনের পরিমাণ ৯ মাস ১০ দিনেরও কম হবে


এরপরও পরিস্কার হল না এই ১০ মাস ১০ দিনের হিসেবটা। আমার ধারণা বাংলাদেশে এই কথার প্রচলন যখন হয় তখন গর্ভধারণ কাল নারী-পুরুষের সফল মিলনের পূর্বের মিন্সট্রুয়ালের আগের মিন্সট্রুয়ালের প্রথম দিন থেকে হিসেব করতো। তাই স্বভাবতই সময়কাল ১ মাস বেড়ে যাবে।


আলোচনা করে মনে হল আরো কিছু কথা না বললেই নয়। এই মিন্সট্রুয়ালের হিসেব থেকেই কোন প্রকার নীরোধ ছাড়াই জন্ম-নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কারণ এই মিন্সট্রুয়ালের হিসেব থেকে সহজেই বোঝা সম্ভব নারী এর কোন সময়কালে মিলিত হলেও গর্ভবতী হবেন না। অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিকেই দেখেছি যে এই হিসেবে গন্ডগোল করায় নারী অকালে গর্ভধারণ করে বসে এবং কোন কোন সময়ে এর করুণ পরিণতি ঘটে ভ্রূণ অপসারণের মতন অমানবিক কাজের মধ্য দিয়ে। উল্লেখ্য এই গননা অনুযায়ী রজচক্রের ৩-৪ দিন সবচেয়ে নিরাপদ। এরপর নিরাপদ হল রজচক্র শুরুর দিনকে প্রথম দিন গুণে ৮ম-২১তম দিন সময় কালে কোন প্রকার নীরোধ ছাড়া শারীরিক সম্পর্কে না যাওয়া। তবে অসময়ে সন্তান না চাইলে নীরোধের ব্যবহারই সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থা। কারণ শুক্রাণু নারীদেহের ডিম্বাশয়ে ৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে!!!


এত কথা বললাম কিন্তু এই ব্যাপারে ধর্মীয় কথাগুলো এড়িয়ে গেলাম - ব্যাপারটা ঠিক হচ্ছে না। তাই ঐ কথা দিয়েই শেষ করছি।


হিন্দু ধর্ম অনুযায়ীঃ
রজচক্রের ৪-৫ দিন মহিলারা কোন প্রকার পূজার্চণা করতে পারেন না।


ইসলাম ধর্ম অনুযায়ীঃ
রজচক্রের ৪-৫ দিন মহিলারা নামাজ পড়তে পারবেন না, রোযা রাখতে পারবেন না, এমন কি কোরানও ধরতে পারবেন না। এবং এই সময়কালে শারীরিক সম্পর্কে যাওয়া নিষেধ।


কেন ধর্মগুলো নারীদের শারীরবৃত্তীয় স্বাভাবিক এক প্রক্রিয়াকালে নারীদের ছোট করে দেখার চেষ্টা করেছে তার উত্তর আমার জানা নেই। আর সবশেষে নিজের একটা কথা দিয়েই শেষ করছি। আমার খুবই হাসি পায় যখন কোন ২৩-২৪ বছরের মেয়ে দাবি করে যে সে সবগুলো রোযাই রেখেছে। কিন্তু অনেক কষ্টে সে হাসি চাপতে হয়। এটা মিথ্যা দাবি শুনে মেজাজ খারাপ অথচ কিছু বলা যাবে না এই কষ্টের হাসি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন