‘ধনী বাবার ছেলে আমি। চাইলে অন্যান্য ধনাঢ্য সৌদি নাগরিকের মতো আমিও ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় বিলাসী জীবন কাটাতে পারতাম। আমি তা করিনি। হাতে তুলে নিয়েছি অস্ত্র, চলে এসেছি আফগানিস্তানের পাহাড়ে। শুধু কি ব্যক্তিগত লাভের আশায়, যেখানে আমার প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে মৃত্যুকে সঙ্গী করে? না, মুসলমানদের ওপর যারা আঘাত করে চলেছে, তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনার ধর্মীয় দায়িত্ব থেকেই শুধু আমি এ পথে এসেছি। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৃত্যু হলেও আমি তা পরোয়া করি না। আমি এবং আমার মতো আরও অনেকের মৃত্যুই একদিন লাখ লাখ মুসলিমকে তাদের উদাসীনতা সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে।’
১৯৯৭ সালের মার্চের এক সকালে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন এ কথাগুলোই বলেছিলেন আমাকে। আফগানিস্তানের তোরাবোরা পাহাড়ের একটি গুহায় বসে প্রথম পাকিস্তানি সাংবাদিক হিসেবে আমি তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম।
১৯৯৮ সালের মে মাসে কান্দাহার বিমানবন্দরের কাছে একটি গুপ্ত স্থানে দ্বিতীয়বারের মতো লাদেনের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ আমার হয়েছিল। কয়েক ঘণ্টার দীর্ঘ সেই সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর মৃত্যুর সম্ভাব্য হুমকিগুলো বারবার আমাকে বলেছিলেন। লাদেন বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি জানি, আমার শত্রুরা অনেক বেশি ক্ষমতাধর। তবে আমি আপনাকে নিশ্চিত করে বলছি, তারা আমাকে হত্যা করতে পারবে, কিন্তু জীবিত ধরতে পারবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের হামলার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি যে বার্তা দিয়েছিলেন, তা আমি জানি। হামলার সঙ্গে জড়িত সবার প্রশংসা করেছিলেন তিনি, কিন্তু হামলার দায় স্বীকার করেননি। বিষয়টি আমিও বুঝে উঠতে পারিনি। তাই আবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে উদ্যোগী হই। ২০০১ সালের নভেম্বরে মার্কিন জঙ্গি বিমান যখন আল-কায়েদা ও তালেবানের লক্ষ্যবস্তুতে সমানে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি আফগানিস্তানে ঢুকি। আমার ভাগ্য যথেষ্ট ভালো ছিল। ৮ নভেম্বর সকালে তাঁর সঙ্গে তৃতীয়বারের মতো সাক্ষাতের সুযোগ পেলাম। নাইন-ইলেভেনের ঘটনার পর আমিই প্রথম এবং একমাত্র সাংবাদিক, যে লাদেনের সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছে।
কাবুলে ও কাবুলের বাইরে তখন সমানে বোমা হামলা চলছে। হাসিমুখেই তিনি আমাকে স্বাগত জানালেন। লাদেন বললেন, ‘শেষবার আমি আপনাকে বলেছিলাম, শত্রুরা আমাকে হত্যা করতে পারবে, কিন্তু জীবিত ধরতে পারবে না।’ সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ করে তিনি আরও একবার বললেন, ‘হামিদ মির, মনে রাখবেন, তারা আমাকে হত্যা করতে পারবে, কিন্তু জীবিত আটক করতে পারবে না। যদি তারা সেটা পারে, কেবল তখনই তারা নিজেদের সফল বলে দাবি করতে পারে। আর তারা যদি কেবল আমার মৃতদেহটা হাতে পায়, তাহলে সেটা হবে তাদের পরাজয়। আমার মৃত্যুর পরও আমেরিকানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ হবে না। নিজের বন্দুকে শেষ গুলিটি অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত আমি লড়ে যাব। শহীদ হওয়াই আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। আমি শহীদ হলে আরও অনেক ওসামা বিন লাদেন সৃষ্টি হবে।’
আমার কাছে প্রতিবার বলা সেই কথা রেখেছেন লাদেন। তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত রোববার ঘোষণা দিয়েছেন, লাদেনকে হত্যা করা হয়েছে। আমেরিকানদের কাছে এটি একটি বড় খবর। কিন্তু লাদেনের সমর্থকেরা অন্তত খুশি যে, তাঁকে জীবিত ধরতে পারেনি আমেরিকা। জীবিত ধরতে পারলে তাঁকেও হয়তো ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের মতো অসম্মান করা হতো।
আমার নিজের কাছে এটা একটা অবাক করার মতো ব্যাপার—বিশ্বের সবচেয়ে ‘কাঙ্ক্ষিত সন্ত্রাসী’ ব্যক্তিটি পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে লুকিয়ে ছিলেন! যেখানে অবস্থিত পাকিস্তানের মিলিটারি একাডেমি।
জানা গেছে, এই অভিযান সম্পর্কে পাকিস্তানকে আগেভাগে কিছুই জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চল থেকে দুটি মার্কিন চিনুক হেলিকপ্টার পাকিস্তানি ভূখণ্ডে ঢোকে। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, মার্কিনরা তাঁদের (পাকিস্তানের) রাডার-ব্যবস্থা অচল করে দেওয়ায় তাঁরা কিছুই জানতে পারেননি।
তবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত বছরের মে মাসে লাদেন-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে জানায় পাকিস্তান। তক্ষশীলা ও অ্যাবোটাবাদ এলাকা থেকে কিছু আরব নাগরিকের একটি ফোনালাপে আড়ি পাতে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী। ওই বছরের আগস্ট মাসে সিআইএকে জানানো হয়, তক্ষশীলা ও অ্যাবোটাবাদ এলাকার মধ্যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ আল-কায়েদা নেতা থাকতে পারেন। সম্ভবত, ওই ফোনটা করেছিলেন লাদেন এবং ওটাই হয়তো তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল। আমার জানামতে, নাইন-ইলেভেনের পর কমপক্ষে চারবার তিনি মৃত্যুর কবল থেকে বেঁচে যান, কিন্তু পারলেন না পঞ্চমবার।
শুধু নিজের বুদ্ধির জোরেই লাদেন কয়েকবার দুনিয়ার সবচেয়ে অত্যাধুনিক উপগ্রহব্যবস্থা এবং ভয়ংকর ক্ষেপণাস্ত্রকে ফাঁকি দিতে পেরেছেন অথবা কোনো কোনোবার শুধু বরাত-জোরে দু-এক মিনিটের হেরফেরে রক্ষা পান।
তালেবান ও আল-কায়েদার অবস্থান লক্ষ্য করে মার্কিন বিমান হামলা শুরু হয় ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর। এরপর ৮ নভেম্বর কাবুলে লাদেনের অবস্থান চিহ্নিত করে ফেলে মার্কিন বাহিনী। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন আল-কায়েদার আরেক নেতা আইমান আল জাওয়াহিরি। আল-কায়েদার একটি বৈঠকে যোগ দিতে তাঁরা জালালাবাদ থেকে কাবুলে যান।
ওই দিনই কাবুলে লাদেনের তৃতীয় সাক্ষাৎকার নিই আমি। আমার ক্যামেরায় লাদেনের কোনো ছবি তুলতে দেওয়া হয়নি। তবে লাদেনের ছেলে আবদুল রেহমান তাঁর ক্যামেরায় লাদেন ও জাওয়াহিরির সঙ্গে আমার ছবি তোলেন এবং সেই ছবির ফিল্ম আমাকে দেন। ওই সময় অনেক গোপনীয়তা রক্ষা করা সত্ত্বেও এক নারী গোয়েন্দা কর্মী কাবুলে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন আরব নাগরিকের উপস্থিতির বিষয়টি ঠিকই লক্ষ করেন।
একটা ঘটনা মনে পড়ছে। সাক্ষাৎকার নেওয়া শেষ। লাদেন ও জাওয়াহিরির সঙ্গে বসে চা খাচ্ছি। তখন লাদেন আমাকে জানান, এই নিয়ে তৃতীয়বার তিনি আমাকে সাক্ষাৎকার দিলেন। তিনি বলেন, প্রথম সাক্ষাৎকারটিতে তাঁর বক্তব্যের অনুবাদে আমি কিছু ভুল করেছিলাম। তবে তথ্য বিকৃত করা হয়েছে এমন কিছু তাঁর নজরে পড়েনি। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি আশা করছি, এবার আর আপনি কোনো ভুল করবেন না।’ যেখানে বসে আমি তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরও প্রায় ২০ জন আল-কায়েদা নেতা। তাঁরাও সবাই চা খাচ্ছিলেন। তাঁদের কথাবার্তা থেকে আমি আন্দাজ করতে পারছিলাম, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী কাবুলের দিকে এগিয়ে আসছে। মার্কিন বাহিনী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সহযোগিতা পাচ্ছে। তিনি মার্কিন বাহিনীকে পাকিস্তানের সেনাঘাঁটি ব্যবহার করতে দিয়েছেন।
হঠাৎ করে এক আরব আল-কায়েদা যোদ্ধা ওই কক্ষে ঢুকে পড়লেন। তিনি তাঁর নেতাদের জানান, আমরা যেখানে বসে আছি, তার মাত্র কয়েক গজ দূর থেকে বোরকা পরিহিত এক নারীকে আটক করা হয়েছে। ভিক্ষা করার ছলে ওই নারী গোয়েন্দাগিরি করছিলেন। ভবনের বাইরে নিয়োজিত আল-কায়েদার নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে ভিক্ষা দিতে চাইলেও সেদিকে তাঁর মন ছিল না। তখন নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁর দিকে নজর রাখেন। এর মধ্যে তাঁরা দেখতে পান, ওই নারী স্যাটেলাইট টেলিফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছেন। তখনই হাতেনাতে তাঁকে ধরে ফেলা হয়। এসব কথাবার্তা তাঁরা আরবি ভাষাতেই বলছিলেন। কিন্তু এর সারাংশ আমি ঠিকই বুঝতে পারি। তখন মুুহাম্মাদ নামের এক সহযোগীকে লাদেন নির্দেশ দেন, তাঁর মেহমানের (আমি) যেন কোনো ক্ষতি না হয়। মুহাম্মাদ আমাকে জানান, তিনি আমাকে জালালাবাদ পৌঁছে দিতে চান। তখন আমি তড়িঘড়ি করে লাদেনকে বিদায় জানিয়ে মুহাম্মাদের সঙ্গে একটি গাড়িতে উঠে পড়লাম। কাবুলের বাইরে কিছু তালেবান যোদ্ধা আমাদের পাকড়াও করল, কারণ আমার দাড়ি নেই। আবার আমার সঙ্গে ক্যামেরাও আছে। মুহাম্মাদ একবারের জন্যও তালেবান যোদ্ধাদের কাছে বলেননি যে, তিনি আল-কায়েদার লোক। বরং তিনি তাঁদের বললেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা আবদুল রাজি আসেদের হয়ে কাজ করছেন তিনি। তখন তাঁরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হন। অবশেষে তিন ঘণ্টা পর আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এলাহাবাদ পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে গেল। মুহাম্মাদ আমাকে বিশাল একটা বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন। ঘণ্টা দুয়েক বাদে ফিরে এলেন। সঙ্গে আনলেন চমকে ওঠার মতো খবর। তিনি বললেন, কাবুলের যে জায়গায় আমি তাঁর ‘শেখ’-এর (লাদেন) সঙ্গে দেখা করেছি, আমরা চলে আসার মাত্র ১৫ মিনিট পর সেখানে বোমা হামলা হয়েছে। ‘শেখ’ এবং তাঁর অন্য সহযোগীরাও সৌভাগ্যক্রমে আগেভাগেই সরে পড়েছিলেন। ফলে কেউ হতাহত হননি। মুহাম্মাদ মুচকি হেসে আমাকে বললেন, ‘ভাইজান, আমাদের সঙ্গে শহীদ হওয়ার সুযোগটা আপনার হাতছাড়া হয়ে গেল!’
সাক্ষাৎকারটি ঠিক কোন জায়গায় নিয়েছিলাম, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। অবশ্য মুহাম্মাদ আমাকে বলেছিলেন, জায়গাটা ছিল কাবুলের বীর আকবার খান এলাকা। সেখানেই আমি মোস্ট ওয়ান্টেড এই লোকটির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম।
রাতটা জালালাবাদে কাটালাম। আমার আশ্রয়স্থলের ডান ও বাঁ পাশে মার্কিন বাহিনী অবিরাম বোমা ফেলছিল। কপালগুণে বেঁচে গেলাম। পরদিন সকালবেলা জালালাবাদ থেকে মুহাম্মাদ আমাকে বিদায় জানালেন এবং আমি সড়কপথে পাকিস্তানের দিকে রওনা হলাম। ২০০৪ সালে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় সেখানে খবর সংগ্রহের জন্য গিয়েছিলাম। সেবার গিয়ে আবার মুহাম্মাদের সঙ্গে দেখা হলো। পূর্ব আফগানিস্তানের তোরাবোরা পর্বতে মার্কিন বিমানবাহিনী কার্পেট বোমা ফেলার পরও কীভাবে তিনি এবং তাঁর ‘শেখ’ বেঁচে গিয়েছিলেন, সব খুলে বললেন।
২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বিন লাদেন এবং তাঁর সাথিদের মার্কিন বাহিনী স্থানীয় নেতা হাজি জহির, হাজি জামান ও হজরত আলীর সহায়তায় চার দিক থেকে ঘিরে ফেলে। তবে তাঁরা সুচতুর কৌশলে সেই বলয় ভেদ করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। আল-কায়েদা মাঝেমধ্যে এমন সব যুদ্ধকৌশলের আশ্রয় নেয়, যার সঙ্গে পশ্চিমা সিনেমার মিল রয়েছে।
তোরাবোরা থেকে বিপুলসংখ্যক আল-কায়েদা যোদ্ধা বেরিয়ে এসে পাকিস্তানের কুররম উপজাতীয় এলাকার দিকে ছুটতে থাকে। কিন্তু বিন লাদেন ছোট একদল যোদ্ধা নিয়ে ঠিক উল্টো দিকে রওনা হন। ওই দলে মুহাম্মাদ নিজেও ছিলেন। চেচেন ও সৌদি বংশোদ্ভূত কিছু বন্দুকধারী এ সময় তাঁদের ‘কাভার’ দিতে থাকে। সারা রাত পায়ে হেঁটে তাঁরা পাকতিয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছান।
লুৎফুল্লাহ মশাল নামের একজন শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা অবশ্য আমাকে ওই সময় বলেছিলেন, ২০০১ সালের ডিসেম্বরে বিন লাদেন তোরাবোরা থেকে পাকতিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। মশাল তাঁকে গোপনে অনুসরণ করেছিলেন। মশালের দাবি, বিন লাদেন পাকতিয়া থেকে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে চলে আসেন। সেখানকার শাওয়াল এলাকায় কিছুদিন অবস্থান করার পর তিনি আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত প্রদেশে চলে যান। লুৎফুল্লাহ মশাল বর্তমানে প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে কাজ করছেন। মশালের দাবি, আফগানিস্তানে পদাতিক সেনা নামানোর জন্য তখনো মার্কিন বাহিনী তৈরি হয়নি; শুধু এ কারণে সেদিন লাদেন ও তাঁর সাথিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, ওই সময় মার্কিন বাহিনী উত্তরাঞ্চলীয় জোটের কমান্ডার হজরত আলীর ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত হজরত আলী আল-কায়েদার কাছ থেকে মোটা অর্থ নিয়ে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন এবং লাদেনকে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন।
২০০২ সালের পুরো সময়টা লাদেন ও তাঁর সাথিরা এখান থেকে সেখানে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। একের পর এক তাঁরা আস্তানা বদল করছিলেন। নিজেদের বাঁচানোই তাঁদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ কারণে এ সময়কালে তাঁরা কোনো লড়াইয়ে জড়াননি।
যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালানোর পর ২০০৩ সালের এপ্রিলে আবারও প্রেক্ষাপটে নিজের উপস্থিতির জানান দেন বিন লাদেন। কুনার প্রদেশের পেখ উপত্যকায় তিনি একটি বৈঠক ডাকেন। সেখানে দেওয়া জ্বালাময়ী ভাষণে তিনি ইরাকে মার্কিন বাহিনীকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। ওই ভাষণে তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী আমাদের পাকড়াও করার আগেই ইরাকে তাদের পাকড়াও করতে হবে।’ সেখানে তিনি ঘোষণা করেন, ইরাকের প্রতিরোধ বাহিনীর প্রধান সংগঠক হবেন সাঈফ আল আদিল। তিনি আদিলকে ইরানে আত্মগোপনে থাকা আল-কায়েদা নেতা আবু মুসাব আল জারকাবির সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দেন। এর পর থেকে তিনি কুনার ও পাকতিয়ায় ছোট ছোট গোপন সমাবেশে বক্তব্য দিতে থাকেন।
এ সময়কালে কুনার এলাকায় লাদেনের এক পুত্রবধূ সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মারা যান। তাঁর দাফন অনুষ্ঠানে বহু লোক শরিক হয়েছিল। স্থানীয় আফগান বাসিন্দারা তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে সেখানে এসেছিল। তাদের মাধ্যমে কথাটা মার্কিন সেনাদের কানেও পৌঁছায়। তাৎক্ষণিকভাবে তারা কুনারে অভিযান চালায়। কিন্তু তারা পেচ উপত্যকায় বোমা ফেলা শুরু করার আগেই বিন লাদেন দক্ষিণাঞ্চলে পালিয়ে যান।
২০০৪ সালে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশে অবস্থানকালে লাদেন বুঝতে পারেন, ব্রিটিশ বাহিনী তাঁকে ঘিরে ফেলেছে। বিন লাদেন সেখানে অনুগতদের বানানো তিনটি নিরাপত্তাব্যূহের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
সম্প্রতি কাবুলে আফগানিস্তানের একজন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক আমাকে জানিয়েছেন, ব্রিটিশ সেনাবাহিনী লাদেনকে পাকড়াও করার খুব কাছাকাছি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে সুসংগঠিত সেনাবাহিনীকেও ধোঁকা দিয়ে সেবারও তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। হেলমান্দের কয়েকজন তালেবান সদস্যের দেওয়া তথ্যমতে, পাঁচ কিলোমিটারব্যাপী ওই এলাকায় ব্রিটিশ বাহিনী লাদেনের দুটি নিরাপত্তাব্যূহ ভেঙে ফেলেছিল। দিনের বেলা ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে লাদেনের অনুগত যোদ্ধাদের ‘ওয়ান-টু-ওয়ান’ লড়াই হতে যাচ্ছিল। তবে রাত নেমে পড়ায় নিকষ অন্ধকার আল-কায়েদার সামনে মুক্তির দূত হিসেবে হাজির হয়। বিন লাদেন নিজে ফ্রন্ট লাইনে লড়াই করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সাথিরা তাঁকে নিবৃত্ত করেন। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে লাদেনের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়। লাদেন রেগে গেলেও আবু হামজা আল জাজিরি তাঁকে পালানোর ব্যাপারে রাজি করান। প্রতিপক্ষকে ধোঁকা দিতে তাঁরা দুটি ভিন্ন দিকে মুখ করে অসংখ্য টাইমার লাগানো রকেট বসিয়ে রেখেছিলেন। তাঁরা তৃতীয় ব্যূহের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের চক্রব্যূহ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। একটি গ্রুপ লাদেনকে কভার দেয়। ওই ঘটনায় লাদেনের সহযোগীদের বেশির ভাগই মারা যায়। তবে শেষ পর্যন্ত লাদেন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
আবু হামজা আল জাজিরি এবং অন্য কিছু যোদ্ধার সহায়তায় লাদেন পালাতে সক্ষম হন। ধরা পড়ার মতো পরিস্থিতি এলে দেহরক্ষীরা যেন তাঁকে গুলি করে হত্যা করে—লাদেন এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে যে খবর শোনা যায়, এসব সূত্র তার সত্যতা অস্বীকার করেছিল। আল-কায়েদা সূত্রের দাবি, লাদেন আত্মহত্যায় বিশ্বাসী ছিলেন না। এর চেয়ে শেষ বুলেট ও রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই চালানো তাঁর কাছে অনেক সহজ ছিল। ওইবার শত্রুর হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি অনেক বেশি সতর্ক হন। তিনি আফগানিস্তানে যাওয়া বন্ধ করে পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকায় আত্মগোপন করেন। নাইন-ইলেভেনের পর তাঁর বিরাট পরিবারের সদস্যরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েন। তাঁর বেশ কয়েকজন ছেলে-মেয়ে ইরানে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। এক ছেলে কিছুদিন করাচিতে বাস করছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে তাঁকে যে অ্যাবোটাবাদ থেকে আটক করা হবে, তা কেউ আশা করেনি।
অ্যাবোটাবাদে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বিন লাদেন বাস করছিলেন। আমেরিকান সেনারা তাঁর আস্তানায় হামলা চালানোর পর তাৎক্ষণিকভাবে তিনি পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করেন। এ সময় তাঁর স্ত্রীর পায়ে গুলি লাগে। আহত স্ত্রীর ভাষ্যমতে, ওসামা দৌড়ে বাড়ির ছাদে উঠে যান এবং রক্ষীদের সঙ্গে তিনিও গুলি চালাতে থাকেন। লাদেনের ১০ বছর বয়সী মেয়ে সাফিয়া জানিয়েছে, মার্কিন সেনারা বাড়ির মধ্যে ঢুকে তার বাবার মৃতদেহ নিয়ে গেছে। এটা সে দেখেছে। সাফিয়া আরও বলেছে, ‘মার্কিন সেনারা বাবার লাশ সিঁড়ি দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল।’
ওসামা বিন লাদেন এখন মৃত, কিন্তু আল-কায়েদা ও তার মিত্ররা মরেনি। লাদেন সব সময়ই মার্কিন নীতির ভুলত্রুটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। মার্কিনবিদ্বেষ ছিল তাঁর মূল শক্তি, ইসলাম কখনোই নয়। বিন লাদেনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় খবর হতে পারে; কিন্তু আমেরিকার বাইরের বহু মানুষ সেই সব মার্কিন নীতির পরিবর্তন চায়, যা কিনা আরও অনেক লাদেনের জন্ম দিতে পারে।
আমেরিকা আফগানিস্তানে এসেছিল লাদেনের খোঁজে। সন্দেহ নেই বিন লাদেন বহু নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছিলেন; কিন্তু লাদেনকে খুঁজে বের করার নামে মার্কিন বাহিনী ড্রোন হামলা চালিয়ে যেসব নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করছে, তা-ও বৈধ বলে বিবেচিত হতে পারে না। লাদেন ও আমেরিকা উভয়ই পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। এটা এখনই বন্ধ হতে হবে। বিন লাদেনের মৃত্যুর পরও আমেরিকা যদি আফগানিস্তান ছেড়ে না যায়, তাহলে এ যুদ্ধ খুব শিগগির থামবে না। বিশ্ব আগের মতোই অনিরাপদ থেকে যাবে।
১৯৯৭ সালের মার্চের এক সকালে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন এ কথাগুলোই বলেছিলেন আমাকে। আফগানিস্তানের তোরাবোরা পাহাড়ের একটি গুহায় বসে প্রথম পাকিস্তানি সাংবাদিক হিসেবে আমি তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম।
১৯৯৮ সালের মে মাসে কান্দাহার বিমানবন্দরের কাছে একটি গুপ্ত স্থানে দ্বিতীয়বারের মতো লাদেনের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ আমার হয়েছিল। কয়েক ঘণ্টার দীর্ঘ সেই সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর মৃত্যুর সম্ভাব্য হুমকিগুলো বারবার আমাকে বলেছিলেন। লাদেন বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি জানি, আমার শত্রুরা অনেক বেশি ক্ষমতাধর। তবে আমি আপনাকে নিশ্চিত করে বলছি, তারা আমাকে হত্যা করতে পারবে, কিন্তু জীবিত ধরতে পারবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের হামলার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি যে বার্তা দিয়েছিলেন, তা আমি জানি। হামলার সঙ্গে জড়িত সবার প্রশংসা করেছিলেন তিনি, কিন্তু হামলার দায় স্বীকার করেননি। বিষয়টি আমিও বুঝে উঠতে পারিনি। তাই আবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে উদ্যোগী হই। ২০০১ সালের নভেম্বরে মার্কিন জঙ্গি বিমান যখন আল-কায়েদা ও তালেবানের লক্ষ্যবস্তুতে সমানে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি আফগানিস্তানে ঢুকি। আমার ভাগ্য যথেষ্ট ভালো ছিল। ৮ নভেম্বর সকালে তাঁর সঙ্গে তৃতীয়বারের মতো সাক্ষাতের সুযোগ পেলাম। নাইন-ইলেভেনের ঘটনার পর আমিই প্রথম এবং একমাত্র সাংবাদিক, যে লাদেনের সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছে।
কাবুলে ও কাবুলের বাইরে তখন সমানে বোমা হামলা চলছে। হাসিমুখেই তিনি আমাকে স্বাগত জানালেন। লাদেন বললেন, ‘শেষবার আমি আপনাকে বলেছিলাম, শত্রুরা আমাকে হত্যা করতে পারবে, কিন্তু জীবিত ধরতে পারবে না।’ সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ করে তিনি আরও একবার বললেন, ‘হামিদ মির, মনে রাখবেন, তারা আমাকে হত্যা করতে পারবে, কিন্তু জীবিত আটক করতে পারবে না। যদি তারা সেটা পারে, কেবল তখনই তারা নিজেদের সফল বলে দাবি করতে পারে। আর তারা যদি কেবল আমার মৃতদেহটা হাতে পায়, তাহলে সেটা হবে তাদের পরাজয়। আমার মৃত্যুর পরও আমেরিকানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ হবে না। নিজের বন্দুকে শেষ গুলিটি অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত আমি লড়ে যাব। শহীদ হওয়াই আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। আমি শহীদ হলে আরও অনেক ওসামা বিন লাদেন সৃষ্টি হবে।’
আমার কাছে প্রতিবার বলা সেই কথা রেখেছেন লাদেন। তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত রোববার ঘোষণা দিয়েছেন, লাদেনকে হত্যা করা হয়েছে। আমেরিকানদের কাছে এটি একটি বড় খবর। কিন্তু লাদেনের সমর্থকেরা অন্তত খুশি যে, তাঁকে জীবিত ধরতে পারেনি আমেরিকা। জীবিত ধরতে পারলে তাঁকেও হয়তো ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের মতো অসম্মান করা হতো।
আমার নিজের কাছে এটা একটা অবাক করার মতো ব্যাপার—বিশ্বের সবচেয়ে ‘কাঙ্ক্ষিত সন্ত্রাসী’ ব্যক্তিটি পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে লুকিয়ে ছিলেন! যেখানে অবস্থিত পাকিস্তানের মিলিটারি একাডেমি।
জানা গেছে, এই অভিযান সম্পর্কে পাকিস্তানকে আগেভাগে কিছুই জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চল থেকে দুটি মার্কিন চিনুক হেলিকপ্টার পাকিস্তানি ভূখণ্ডে ঢোকে। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, মার্কিনরা তাঁদের (পাকিস্তানের) রাডার-ব্যবস্থা অচল করে দেওয়ায় তাঁরা কিছুই জানতে পারেননি।
তবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত বছরের মে মাসে লাদেন-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে জানায় পাকিস্তান। তক্ষশীলা ও অ্যাবোটাবাদ এলাকা থেকে কিছু আরব নাগরিকের একটি ফোনালাপে আড়ি পাতে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী। ওই বছরের আগস্ট মাসে সিআইএকে জানানো হয়, তক্ষশীলা ও অ্যাবোটাবাদ এলাকার মধ্যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ আল-কায়েদা নেতা থাকতে পারেন। সম্ভবত, ওই ফোনটা করেছিলেন লাদেন এবং ওটাই হয়তো তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল। আমার জানামতে, নাইন-ইলেভেনের পর কমপক্ষে চারবার তিনি মৃত্যুর কবল থেকে বেঁচে যান, কিন্তু পারলেন না পঞ্চমবার।
শুধু নিজের বুদ্ধির জোরেই লাদেন কয়েকবার দুনিয়ার সবচেয়ে অত্যাধুনিক উপগ্রহব্যবস্থা এবং ভয়ংকর ক্ষেপণাস্ত্রকে ফাঁকি দিতে পেরেছেন অথবা কোনো কোনোবার শুধু বরাত-জোরে দু-এক মিনিটের হেরফেরে রক্ষা পান।
তালেবান ও আল-কায়েদার অবস্থান লক্ষ্য করে মার্কিন বিমান হামলা শুরু হয় ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর। এরপর ৮ নভেম্বর কাবুলে লাদেনের অবস্থান চিহ্নিত করে ফেলে মার্কিন বাহিনী। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন আল-কায়েদার আরেক নেতা আইমান আল জাওয়াহিরি। আল-কায়েদার একটি বৈঠকে যোগ দিতে তাঁরা জালালাবাদ থেকে কাবুলে যান।
ওই দিনই কাবুলে লাদেনের তৃতীয় সাক্ষাৎকার নিই আমি। আমার ক্যামেরায় লাদেনের কোনো ছবি তুলতে দেওয়া হয়নি। তবে লাদেনের ছেলে আবদুল রেহমান তাঁর ক্যামেরায় লাদেন ও জাওয়াহিরির সঙ্গে আমার ছবি তোলেন এবং সেই ছবির ফিল্ম আমাকে দেন। ওই সময় অনেক গোপনীয়তা রক্ষা করা সত্ত্বেও এক নারী গোয়েন্দা কর্মী কাবুলে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন আরব নাগরিকের উপস্থিতির বিষয়টি ঠিকই লক্ষ করেন।
একটা ঘটনা মনে পড়ছে। সাক্ষাৎকার নেওয়া শেষ। লাদেন ও জাওয়াহিরির সঙ্গে বসে চা খাচ্ছি। তখন লাদেন আমাকে জানান, এই নিয়ে তৃতীয়বার তিনি আমাকে সাক্ষাৎকার দিলেন। তিনি বলেন, প্রথম সাক্ষাৎকারটিতে তাঁর বক্তব্যের অনুবাদে আমি কিছু ভুল করেছিলাম। তবে তথ্য বিকৃত করা হয়েছে এমন কিছু তাঁর নজরে পড়েনি। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি আশা করছি, এবার আর আপনি কোনো ভুল করবেন না।’ যেখানে বসে আমি তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরও প্রায় ২০ জন আল-কায়েদা নেতা। তাঁরাও সবাই চা খাচ্ছিলেন। তাঁদের কথাবার্তা থেকে আমি আন্দাজ করতে পারছিলাম, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী কাবুলের দিকে এগিয়ে আসছে। মার্কিন বাহিনী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সহযোগিতা পাচ্ছে। তিনি মার্কিন বাহিনীকে পাকিস্তানের সেনাঘাঁটি ব্যবহার করতে দিয়েছেন।
হঠাৎ করে এক আরব আল-কায়েদা যোদ্ধা ওই কক্ষে ঢুকে পড়লেন। তিনি তাঁর নেতাদের জানান, আমরা যেখানে বসে আছি, তার মাত্র কয়েক গজ দূর থেকে বোরকা পরিহিত এক নারীকে আটক করা হয়েছে। ভিক্ষা করার ছলে ওই নারী গোয়েন্দাগিরি করছিলেন। ভবনের বাইরে নিয়োজিত আল-কায়েদার নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে ভিক্ষা দিতে চাইলেও সেদিকে তাঁর মন ছিল না। তখন নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁর দিকে নজর রাখেন। এর মধ্যে তাঁরা দেখতে পান, ওই নারী স্যাটেলাইট টেলিফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছেন। তখনই হাতেনাতে তাঁকে ধরে ফেলা হয়। এসব কথাবার্তা তাঁরা আরবি ভাষাতেই বলছিলেন। কিন্তু এর সারাংশ আমি ঠিকই বুঝতে পারি। তখন মুুহাম্মাদ নামের এক সহযোগীকে লাদেন নির্দেশ দেন, তাঁর মেহমানের (আমি) যেন কোনো ক্ষতি না হয়। মুহাম্মাদ আমাকে জানান, তিনি আমাকে জালালাবাদ পৌঁছে দিতে চান। তখন আমি তড়িঘড়ি করে লাদেনকে বিদায় জানিয়ে মুহাম্মাদের সঙ্গে একটি গাড়িতে উঠে পড়লাম। কাবুলের বাইরে কিছু তালেবান যোদ্ধা আমাদের পাকড়াও করল, কারণ আমার দাড়ি নেই। আবার আমার সঙ্গে ক্যামেরাও আছে। মুহাম্মাদ একবারের জন্যও তালেবান যোদ্ধাদের কাছে বলেননি যে, তিনি আল-কায়েদার লোক। বরং তিনি তাঁদের বললেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা আবদুল রাজি আসেদের হয়ে কাজ করছেন তিনি। তখন তাঁরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হন। অবশেষে তিন ঘণ্টা পর আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এলাহাবাদ পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে গেল। মুহাম্মাদ আমাকে বিশাল একটা বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন। ঘণ্টা দুয়েক বাদে ফিরে এলেন। সঙ্গে আনলেন চমকে ওঠার মতো খবর। তিনি বললেন, কাবুলের যে জায়গায় আমি তাঁর ‘শেখ’-এর (লাদেন) সঙ্গে দেখা করেছি, আমরা চলে আসার মাত্র ১৫ মিনিট পর সেখানে বোমা হামলা হয়েছে। ‘শেখ’ এবং তাঁর অন্য সহযোগীরাও সৌভাগ্যক্রমে আগেভাগেই সরে পড়েছিলেন। ফলে কেউ হতাহত হননি। মুহাম্মাদ মুচকি হেসে আমাকে বললেন, ‘ভাইজান, আমাদের সঙ্গে শহীদ হওয়ার সুযোগটা আপনার হাতছাড়া হয়ে গেল!’
সাক্ষাৎকারটি ঠিক কোন জায়গায় নিয়েছিলাম, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। অবশ্য মুহাম্মাদ আমাকে বলেছিলেন, জায়গাটা ছিল কাবুলের বীর আকবার খান এলাকা। সেখানেই আমি মোস্ট ওয়ান্টেড এই লোকটির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম।
রাতটা জালালাবাদে কাটালাম। আমার আশ্রয়স্থলের ডান ও বাঁ পাশে মার্কিন বাহিনী অবিরাম বোমা ফেলছিল। কপালগুণে বেঁচে গেলাম। পরদিন সকালবেলা জালালাবাদ থেকে মুহাম্মাদ আমাকে বিদায় জানালেন এবং আমি সড়কপথে পাকিস্তানের দিকে রওনা হলাম। ২০০৪ সালে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় সেখানে খবর সংগ্রহের জন্য গিয়েছিলাম। সেবার গিয়ে আবার মুহাম্মাদের সঙ্গে দেখা হলো। পূর্ব আফগানিস্তানের তোরাবোরা পর্বতে মার্কিন বিমানবাহিনী কার্পেট বোমা ফেলার পরও কীভাবে তিনি এবং তাঁর ‘শেখ’ বেঁচে গিয়েছিলেন, সব খুলে বললেন।
২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বিন লাদেন এবং তাঁর সাথিদের মার্কিন বাহিনী স্থানীয় নেতা হাজি জহির, হাজি জামান ও হজরত আলীর সহায়তায় চার দিক থেকে ঘিরে ফেলে। তবে তাঁরা সুচতুর কৌশলে সেই বলয় ভেদ করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। আল-কায়েদা মাঝেমধ্যে এমন সব যুদ্ধকৌশলের আশ্রয় নেয়, যার সঙ্গে পশ্চিমা সিনেমার মিল রয়েছে।
তোরাবোরা থেকে বিপুলসংখ্যক আল-কায়েদা যোদ্ধা বেরিয়ে এসে পাকিস্তানের কুররম উপজাতীয় এলাকার দিকে ছুটতে থাকে। কিন্তু বিন লাদেন ছোট একদল যোদ্ধা নিয়ে ঠিক উল্টো দিকে রওনা হন। ওই দলে মুহাম্মাদ নিজেও ছিলেন। চেচেন ও সৌদি বংশোদ্ভূত কিছু বন্দুকধারী এ সময় তাঁদের ‘কাভার’ দিতে থাকে। সারা রাত পায়ে হেঁটে তাঁরা পাকতিয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছান।
লুৎফুল্লাহ মশাল নামের একজন শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা অবশ্য আমাকে ওই সময় বলেছিলেন, ২০০১ সালের ডিসেম্বরে বিন লাদেন তোরাবোরা থেকে পাকতিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। মশাল তাঁকে গোপনে অনুসরণ করেছিলেন। মশালের দাবি, বিন লাদেন পাকতিয়া থেকে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে চলে আসেন। সেখানকার শাওয়াল এলাকায় কিছুদিন অবস্থান করার পর তিনি আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত প্রদেশে চলে যান। লুৎফুল্লাহ মশাল বর্তমানে প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে কাজ করছেন। মশালের দাবি, আফগানিস্তানে পদাতিক সেনা নামানোর জন্য তখনো মার্কিন বাহিনী তৈরি হয়নি; শুধু এ কারণে সেদিন লাদেন ও তাঁর সাথিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, ওই সময় মার্কিন বাহিনী উত্তরাঞ্চলীয় জোটের কমান্ডার হজরত আলীর ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত হজরত আলী আল-কায়েদার কাছ থেকে মোটা অর্থ নিয়ে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন এবং লাদেনকে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন।
২০০২ সালের পুরো সময়টা লাদেন ও তাঁর সাথিরা এখান থেকে সেখানে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। একের পর এক তাঁরা আস্তানা বদল করছিলেন। নিজেদের বাঁচানোই তাঁদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ কারণে এ সময়কালে তাঁরা কোনো লড়াইয়ে জড়াননি।
যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালানোর পর ২০০৩ সালের এপ্রিলে আবারও প্রেক্ষাপটে নিজের উপস্থিতির জানান দেন বিন লাদেন। কুনার প্রদেশের পেখ উপত্যকায় তিনি একটি বৈঠক ডাকেন। সেখানে দেওয়া জ্বালাময়ী ভাষণে তিনি ইরাকে মার্কিন বাহিনীকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। ওই ভাষণে তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী আমাদের পাকড়াও করার আগেই ইরাকে তাদের পাকড়াও করতে হবে।’ সেখানে তিনি ঘোষণা করেন, ইরাকের প্রতিরোধ বাহিনীর প্রধান সংগঠক হবেন সাঈফ আল আদিল। তিনি আদিলকে ইরানে আত্মগোপনে থাকা আল-কায়েদা নেতা আবু মুসাব আল জারকাবির সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দেন। এর পর থেকে তিনি কুনার ও পাকতিয়ায় ছোট ছোট গোপন সমাবেশে বক্তব্য দিতে থাকেন।
এ সময়কালে কুনার এলাকায় লাদেনের এক পুত্রবধূ সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মারা যান। তাঁর দাফন অনুষ্ঠানে বহু লোক শরিক হয়েছিল। স্থানীয় আফগান বাসিন্দারা তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে সেখানে এসেছিল। তাদের মাধ্যমে কথাটা মার্কিন সেনাদের কানেও পৌঁছায়। তাৎক্ষণিকভাবে তারা কুনারে অভিযান চালায়। কিন্তু তারা পেচ উপত্যকায় বোমা ফেলা শুরু করার আগেই বিন লাদেন দক্ষিণাঞ্চলে পালিয়ে যান।
২০০৪ সালে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশে অবস্থানকালে লাদেন বুঝতে পারেন, ব্রিটিশ বাহিনী তাঁকে ঘিরে ফেলেছে। বিন লাদেন সেখানে অনুগতদের বানানো তিনটি নিরাপত্তাব্যূহের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
সম্প্রতি কাবুলে আফগানিস্তানের একজন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক আমাকে জানিয়েছেন, ব্রিটিশ সেনাবাহিনী লাদেনকে পাকড়াও করার খুব কাছাকাছি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে সুসংগঠিত সেনাবাহিনীকেও ধোঁকা দিয়ে সেবারও তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। হেলমান্দের কয়েকজন তালেবান সদস্যের দেওয়া তথ্যমতে, পাঁচ কিলোমিটারব্যাপী ওই এলাকায় ব্রিটিশ বাহিনী লাদেনের দুটি নিরাপত্তাব্যূহ ভেঙে ফেলেছিল। দিনের বেলা ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে লাদেনের অনুগত যোদ্ধাদের ‘ওয়ান-টু-ওয়ান’ লড়াই হতে যাচ্ছিল। তবে রাত নেমে পড়ায় নিকষ অন্ধকার আল-কায়েদার সামনে মুক্তির দূত হিসেবে হাজির হয়। বিন লাদেন নিজে ফ্রন্ট লাইনে লড়াই করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সাথিরা তাঁকে নিবৃত্ত করেন। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে লাদেনের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়। লাদেন রেগে গেলেও আবু হামজা আল জাজিরি তাঁকে পালানোর ব্যাপারে রাজি করান। প্রতিপক্ষকে ধোঁকা দিতে তাঁরা দুটি ভিন্ন দিকে মুখ করে অসংখ্য টাইমার লাগানো রকেট বসিয়ে রেখেছিলেন। তাঁরা তৃতীয় ব্যূহের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের চক্রব্যূহ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। একটি গ্রুপ লাদেনকে কভার দেয়। ওই ঘটনায় লাদেনের সহযোগীদের বেশির ভাগই মারা যায়। তবে শেষ পর্যন্ত লাদেন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
আবু হামজা আল জাজিরি এবং অন্য কিছু যোদ্ধার সহায়তায় লাদেন পালাতে সক্ষম হন। ধরা পড়ার মতো পরিস্থিতি এলে দেহরক্ষীরা যেন তাঁকে গুলি করে হত্যা করে—লাদেন এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে যে খবর শোনা যায়, এসব সূত্র তার সত্যতা অস্বীকার করেছিল। আল-কায়েদা সূত্রের দাবি, লাদেন আত্মহত্যায় বিশ্বাসী ছিলেন না। এর চেয়ে শেষ বুলেট ও রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই চালানো তাঁর কাছে অনেক সহজ ছিল। ওইবার শত্রুর হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি অনেক বেশি সতর্ক হন। তিনি আফগানিস্তানে যাওয়া বন্ধ করে পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকায় আত্মগোপন করেন। নাইন-ইলেভেনের পর তাঁর বিরাট পরিবারের সদস্যরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েন। তাঁর বেশ কয়েকজন ছেলে-মেয়ে ইরানে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। এক ছেলে কিছুদিন করাচিতে বাস করছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে তাঁকে যে অ্যাবোটাবাদ থেকে আটক করা হবে, তা কেউ আশা করেনি।
অ্যাবোটাবাদে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বিন লাদেন বাস করছিলেন। আমেরিকান সেনারা তাঁর আস্তানায় হামলা চালানোর পর তাৎক্ষণিকভাবে তিনি পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করেন। এ সময় তাঁর স্ত্রীর পায়ে গুলি লাগে। আহত স্ত্রীর ভাষ্যমতে, ওসামা দৌড়ে বাড়ির ছাদে উঠে যান এবং রক্ষীদের সঙ্গে তিনিও গুলি চালাতে থাকেন। লাদেনের ১০ বছর বয়সী মেয়ে সাফিয়া জানিয়েছে, মার্কিন সেনারা বাড়ির মধ্যে ঢুকে তার বাবার মৃতদেহ নিয়ে গেছে। এটা সে দেখেছে। সাফিয়া আরও বলেছে, ‘মার্কিন সেনারা বাবার লাশ সিঁড়ি দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল।’
ওসামা বিন লাদেন এখন মৃত, কিন্তু আল-কায়েদা ও তার মিত্ররা মরেনি। লাদেন সব সময়ই মার্কিন নীতির ভুলত্রুটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। মার্কিনবিদ্বেষ ছিল তাঁর মূল শক্তি, ইসলাম কখনোই নয়। বিন লাদেনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় খবর হতে পারে; কিন্তু আমেরিকার বাইরের বহু মানুষ সেই সব মার্কিন নীতির পরিবর্তন চায়, যা কিনা আরও অনেক লাদেনের জন্ম দিতে পারে।
আমেরিকা আফগানিস্তানে এসেছিল লাদেনের খোঁজে। সন্দেহ নেই বিন লাদেন বহু নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছিলেন; কিন্তু লাদেনকে খুঁজে বের করার নামে মার্কিন বাহিনী ড্রোন হামলা চালিয়ে যেসব নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করছে, তা-ও বৈধ বলে বিবেচিত হতে পারে না। লাদেন ও আমেরিকা উভয়ই পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। এটা এখনই বন্ধ হতে হবে। বিন লাদেনের মৃত্যুর পরও আমেরিকা যদি আফগানিস্তান ছেড়ে না যায়, তাহলে এ যুদ্ধ খুব শিগগির থামবে না। বিশ্ব আগের মতোই অনিরাপদ থেকে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন