বক্ষবন্ধনীর ১০০ বছর পূর্তি




 ফাইল ফটোএকটা সময় ছিল যখন মানুষ কাপড়চোপড় পরতে জানত না। কিন্তু সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ পোশাক পরার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে।
মস্তিষ্কের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ একটা সময় বুঝতে পারে, প্রকৃতির বিরূপ আচরণ ও শীত-রোদের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পোশাক দরকার। এরপর গাছের ছালবাকল-পাতা দিয়ে সে শুরু করে নিজেকে আচ্ছাদিত করা। তখন হয়তো লজ্জা নিবারণের উদ্দেশ্যটা মানুষের মাথায়ই ছিল না।

এরপর প্রাচীন যুগ থেকে আস্তে আস্তে জামাকাপড়ের পরিধি বাড়তে থাকে। ছালবাকল থেকে পোশাকও বিবর্তিত হয়ে অনেক আধুনিক হয়। একটা
সময় পোশাক হয়ে যায় আভিজাত্যের প্রতীক।

নারী-পুরুষের পোশাকে আসে ভিন্নতা। আবিষ্কৃত হয় নারী-পুরুষের বিশেষ কিছু গোপনীয় পোশাক। তার মধ্যে অন্যতম মেয়েদের ব্রা বা বক্ষবন্ধনী। নারীত্ব থেকে নারীবাদ, যৌনতা থেকে পুরুষশাসিত সভ্যতা, সবকিছুর প্রতীক হতে পারে এই ছোট্ট অথচ মহিলাদের কাছে প্রায় অপরিহার্য এই পরিধেয়টি। 
১২ ফেব্রুয়ারি ছিল বক্ষবন্ধনীর শতবর্ষ পূর্তি।

প্রতিদিন সারা বিশ্বের কোটি কোটি মহিলা যে অন্তর্বাসটি পরে থাকেন, ইংরেজিতে যার নাম ব্রেসিয়ার বা ব্রা, সেই বক্ষবন্ধনীর পেটেন্ট নথিভুক্ত করা হয় আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে ১৯১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। 
ব্রেসিয়ারের স্রষ্টা ‘মেরি ফেল্পস জেকব’ ১০০ বছর আগে ব্রার পেটেন্ট নথিভুক্ত করেন। তখন তার বয়স ২৩ বছর। পরে মাত্র দেড় হাজার ডলার মূল্যে সেই পেটেন্ট বেচেও দিয়েছিলেন তিনি।

সে আমলে মহিলারা পোশাকের তলায় যে বস্তুটি ধারণ করতেন, তাকে বলা হতো ‘কর্সেট’। সেটা ছিল এক ধরনের বর্ম। তিমি মাছের হাড় দিয়ে তৈরি হুক যুক্ত। কাজেই মেরির সৃষ্টি ছিল সে তুলনায় নারীমুক্তির সমতুল্য৷

ষাটের দশকে নারীমুক্তি আন্দোলন যখন চরমে, তখন আবার ইউরোপ-আমেরিকায় ওই মহিলারাই তাদের ব্রা পুড়িয়ে পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। দেশ, সংস্কৃতি ও কাল একটি প্রতীকের অর্থ ও তাৎপর্য নির্ধারণ করে এটি। মিসরে সম্প্রতি নীল রঙের ব্রা পরে আন্দোলনে নেমেছিলেন মহিলারা।


ব্রা চিরকালই পরিধেয় বস্ত্র ও প্রতীক। নারী ও পুরুষের যৌনতা তার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।

মহিলাদের অন্তর্বাস নির্মাতা মার্কিন কোম্পানি ভিক্টোরিয়াস সিক্রেট-এর মণিমাণিক্য-খচিত ফ্লোরাল ফ্যান্টাসি ব্রা-টির দাম হাঁকানো হয়েছিল ২৫ লাখ ডলার।

নারীমুক্তি ও নারীস্বাধীনতার আন্দোলনের সমাপ্তি ব্রা-তে কিংবা ব্রা পোড়ানোতেই নয়, নারীদেহই এখন সেই প্রতিবাদ-প্রতিরোধের প্রতীক, যেমনটি দেখা গেছে ইউক্রেনের ‘ফেমেন’ গোষ্ঠীর আন্দোলনে।
ব্রার শত বছর পূর্তিতে জয় হোক নারীবাদের, জয় হোক নারীদের।

সূত্র : দয়েচেভেলে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন