জাতিসংঘের পরিচালনায় নির্বাচন চেয়েছিলেন হাসিনা, খালেদা জানতেন কম আসন পাবেন


২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করতে সব চেষ্টাই চালিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ড. ইয়াজউদ্দিনের অধীনে নির্বাচনের চেয়ে জাতিসংঘের পরিচালনায় একটি নির্বাচনের দাবি তুলেছিলেন। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন প্রস্তাবিত ২২ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন নির্বাচনে তার দল ২০০১ সালের নির্বাচনের তুলনায় কম আসন পাবে।
২০০৬ সালের ৩১ অক্টোবর তখনকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিস তার সঙ্গে আলোচনার সময় খালেদা জিয়া এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এসব কথা বলা হয়েছে উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক গোপন তারবার্তায়। এতে বলা হয়, একদিকে রাজপথে উত্তাল আন্দোলন, অন্যদিকে শেখ হাসিনা প্রত্যাশা করেছিলেন তিন বাহিনীÑ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা ড. ইয়াজউদ্দিনকে প্রধান উপদেষ্টার পদ ত্যাগ করতে চাপ সৃষ্টি করুক। এ বিষয়ে ২০০৭ সালের ৭ জানুয়ারি প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিস ওয়াশিংটনকে জানান, শেখ হাসিনা জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে ডিসেম্বরে (২০০৬) একটি চিঠি লিখেছেন। এতে তিনি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এর একদিন আগে তখনকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে বিউটেনিস সাক্ষাৎ করেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর সঙ্গে।
বিউটেনিসের তারবার্তায় বলা হয়েছে, ওই সাক্ষাতে তিনি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি নির্বাচনের পক্ষে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে, তিনি চেয়েছিলেন কার্যকরভাবে জাতিসংঘ নির্বাচন পরিচালনা করুক। দুই রাজনৈতিক জোটের মধ্যকার রাজনৈতিক বিষয়ে জাতিসংঘের মধ্যস্থতা তিনি চাননি।
২০০৭ সালের ৩ জানুয়ারি এক তারবার্তায় বিউটেনিস বলেন, সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলেও তিনি মতপ্রকাশ করেন। হাসিনা এখন প্রত্যাশা করেন, তিন বাহিনীর প্রধানরা এখন ড. ইয়াজউদ্দিনকে প্রধান উপদেষ্টার পদ ছাড়তে চাপ সৃষ্টি করবেন। মার্কিন গোপন তারবার্তায় বলা হয়, ৩ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনের পর শেখ হাসিনা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে গোপনে বলেন যে, ৫ জানুয়ারির আগে যদি নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের নতুন সিডিউল ঘোষণা করে তাহলে তিনি তার প্রতিবাদ কর্মসূচি বন্ধ করে দেবেন। ওদিকে ২০০৬ সালের ৩১ অক্টোবর বিউটেনিসের সঙ্গে সাক্ষাতে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, তার দল নির্বাচনে ১৮০ থেকে ১৯০ আসনে জিতবে। এর আগের নির্বাচনে তারা পেয়েছিলেন ২২০ আসন। ২০০৬ সালের ২ নভেম্বরে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক তারবার্তায় বিউটেনিস বলেন, জাতীয় পার্টি তাদের এ পূর্বাভাসকে সমর্থন করে।
খালেদা জিয়া বলেছেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এরই মধ্যে তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিউটেনিস তার তারবার্তায় লিখেছেন, খালেদা জিয়া বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে তার দলের শক্তিশালী জনসমর্থন আছে। এরপর জাতীয় পার্টির এরশাদকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয়াতে কয়েক মাস সক্রিয় চেষ্টা চলে। কিন্তু এ বিষয়ে তখনো সাবেক ওই স্বৈরশাসক কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। 
দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতার অংশ হিসেবে এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের দুর্নীতির দুটি মামলা প্রত্যাহার করা হয় ২৪ আগস্ট। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে বলেন, অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি।
২০০৬ সালের ২৪ আগস্ট বিউটেনিস তারবার্তায় লিখেছেন, এরশাদ বলেছেন, যদি তার বিরুদ্ধে করা সব দুর্নীতির অভিযোগের সন্তোষজনক সমাধান হয় তাহলে তিনি ক্ষমতাসীন জোটে যোগ দেবেন। একই সঙ্গে সমান্তরালভাবে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। সেখান থেকে নির্বাচনের পর নতুন সরকারে ভালো একটি অবস্থান নিশ্চিত করতে আলোচনা চালিয়ে যান।
দরকষাকষির পর এরশাদ অবশেষে খালেদা জিয়াকে হতাশ করে দিয়ে ২০০৬ সালের নভেম্বরের শুরুর দিকে জোট বাঁধেন শেখ হাসিনার সঙ্গে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন