আমাদের স্বাধীনতা ৬ষ্ঠ পর্ব

স্পীকার শাহেদ আলীর মৃত্যুর কিছুদিন পরই ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর জেনারেল আইউব খান পাকিস্তানের অধিপতি হয়ে বসলেন । ক্ষমতায় এসেই প্রধান সামরিক শাসন ক্ষমতার দায়িত্বভার নিয়ে তিনি পূর্ব বাংলা সফরে আসেন । যুক্তফ্রণ্টের দুই প্রধান দল আওয়ামিলীগ ও কৃষক-শ্রমিক পার্টির বারবার ক্ষমতার পালাবদল এবং দুর্নীতির কারণে পূর্ব বাংলার মানুষ সেদিন জেনারেল আইউব খানকে অকুণ্ঠ চিত্তে সমর্থন জানায় । এ ব্যাপারে জনাব অলি আহাদ তার “জাতীয় রাজনীতি” বইয়ের ২৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন , “ঢাকা স্টেডিয়ামে এক বিশাল জনসভায় (আইউব খান) ভাষণদান করেন । অনস্বীকার্য যে , দুর্নীতির দরুন লোকচোথে হেয় রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক অঙ্গন হইতে বিদায় দেওয়ার কারণে সামরিক অভ্যুথ্থানে সেই সময় জনগণ আনন্দিত হইয়াছিল এবং জেনারেল আইউব খান সাধারণ লোকের প্রাণঢালা সমর্থনও লাভ করিয়াছিলেন ।” এই বইয়ের ২৪৪ ও ২৪৫ পৃষ্ঠায় আছে , শেখ মুজিবুর রহমান ১২ই অক্টোবর দুর্নীতির কারণে গ্রেফতার হন এবং পরবর্তীতে আদালতে ৯টি মামলার মধ্যে ৮টি মামলা খারিজ হয় । কিন্তু একটি মামলায় তিনি দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৫০০০ টাকা জরিমানা হয় । অবশ্য নিম্ন আদালতের এ রায় ঢাকা হাইকোর্ট সন্দেহের অবকাশ আছে যুক্তিতে নাকচ করে দেয় । “জাতীয় রাজনীতি” বই এর ২৪৩ পৃষ্ঠায় আছে , “মুসলিম লীগ , যুক্তফ্রণ্ট ও আওয়ামিলীগের মন্ত্রি - মেম্বার , নেতা -উপনেতা দেশ সেবার বদৌলতে ঢাকায় স্ব-স্ব বাড়ী-ঘর নির্মাণে অপূর্ব দক্ষতার পরিচয় দেন । ধানমন্ডি এলাকায় আওয়ামিলীগ সদস্যদের নির্মিত ঘর-বাড়ীসমূহ আওয়ামিলীগ কলোনী আখ্যা পায় ।” এখনও ধানমন্ডি এলাকায় আওয়ামিলীগ নেতাদের বাড়ী-ঘরের হিসেব নিলে জনাব অলি আহাদের কথার সত্যতা মিলবে । এভাবে সাধারণ জনগণ এবং ছাত্রসমাজকে স্বায়ত্ব শাসন , অধিকার আদায় ইত্যাদির স্বপ্ন দেখিয়ে নেতারা ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং প্রভূত সম্পত্তির অধিকারী হয়েছেন । বিশেষ করে নেতারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিজেদের স্বার্থে লেখা-পড়ার পরিবর্তে রাজপথে নামিয়েছিলেন , ভাঙ্গচোর করিয়েছিলেন , ফলে আজও ছাত্ররা একই পথে চলছে । আমরা ৪৭ হতে ৭১ পর্যন্ত ছাত্রদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা বলি । আসলে সেটি ছিল রাজনীতিবিদ কর্তৃক ছাত্রদের ব্যবহারের ইতিহাস । সেই ইতিহাসের ফলাফল হল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের পতন , যা আনন্দিত করেছিল কলকাতার বুদ্ধিজীবিদের , যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছিল । কলকাতার বুদ্ধিজীবি এজন্যই বলেছি যে , আমাদের অনেক নেতা তাদের নিকট হতে রাজনৈতিক মন্ত্র গ্রহণ করতেন এবং তাদেরই পরামর্শে পরিচালিত হন । তাই পৃথিবীর অন্য কোথাও না থাকলেও আজও বাংলাদেশে ছাত্ররা রাজনৈতিক ব্যাপারে মিছিল করে , পুলিশের সাথে সংঘর্ষ করে , মারা যায় , প্রতিপক্ষ ছাত্রদের সাথে খুনোখুনি করে এবং নেতারা ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করে । আমি পাঠকদের একটু লক্ষ্য করার জন্য বলব , কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কি কখনও রাজনৈতিক ব্যাপারে মিছিল করে , পুলিশের সাথে সংঘর্ষ করে , মারা যায় , প্রতিপক্ষ ছাত্রদের সাথে খুনোখুনি করেছে ? কলকাতা কেন , ভারতের অন্য কোথাও , এমনকি পাকিস্তান ও শ্রীলংকাতেও ছাত্ররা এ ধরনের রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত নয় ।
আইউব খান সামরিক শাসক ছিলেন সত্য , কিন্তু তার সময় পূর্ব বাংলার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছিল । তার সময় ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবন , সচিবালয়ের আধুনিক ভবনসমূহ , বায়তুল মোকররম , হাইকোট-সুপ্রিম কোর্টের ভবন , বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক ভবন , বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় , জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত আধুনিক ভবন , কমলাপূর রেলস্টেশন , জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (পরবর্তীকালে নাম জিয়া হয়েছে , বর্তমানে শাহজালাল) , জিপিও ভবন , এটমিক এনার্জি সেণ্টার , সায়েন্স ল্যাবরেটরী , পিজি হাসপাতাল , রাজশাহী , খুলনা , চট্টগ্রাম ইন্জিনিয়ারিং কলেজ , আইডব্লিটিও এর টার্মিনালসমূহ , জয়দেবপূর ধান গবেষণা কেন্দ্র , বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফেক্টরি , গাজীপূর অস্ত্র কারখানা , আশুগন্জ বিদ্যুৎ প্রকল্প , কাপ্তাই বিদ্যুৎ প্রকল্প , চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানা , ঘোড়াশাল সার কারখানা , নর্থ বেঙ্গল পেপার মিল , সরকারি ১৭টি জুট মিল প্রতিষ্ঠা , ইত্যাদি আইউব আমলে হয়েছে । (আত্মঘাতী রাজনীতির তিনকাল , ২য় খন্ড) । এটিই ইতিহাস । আইউবের এ উন্নয়ন তার ঘোর বিরোধী অলি আহাদও তার “জাতীয় রাজনীতি” বইয়ে স্বীকার করেছেন । আর যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে , তাদের প্রতিষ্ঠাকাল দেখে নিলেই বর্তমান প্রজন্মরা সত্য ধারণাটি পেয়ে যাবেন । কিন্তু আমাদের প্রজন্মকে শিখানো হয়েছে শুধু শোষণের কথা । আইউবের শাসনে সাধারণ গ্রামের এবং শহরের ছোট চাকুরে বা ব্যবসায়ী জনগণ খুশী ছিল । কারণ আইউব খান দ্রব্য মূল্যকে তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন । কিন্তু শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং রাজনীতিবিদরা যারা আর্থিক উন্নতির সাথে সাথে ক্ষমতার চর্চা করতে চান , তারা আইউব খানের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে আন্দোলন গড়ে তুলতে লাগলেন । সামরিক শাসনের কারণে এ সমস্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সবাই সুবিধাভোগ করতে পারে না । এক্ষেত্রে সুবিধাভোগী শ্রেণীর সংখ্যা কম থাকে । অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসলে তাদের দলীয় কর্মী সংখ্যা বিশাল হওয়ার কারণে সবাইকে খুশি রাখার জন্য সরকারি সম্পদের অবাধ লোপাট হয় । সামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা যে পরিমাণ লাভবান হয় রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসলে তাদের সংখ্যা ও লাভের পরিমাণ উভয়ই বেড়ে যায় । ফলে যুক্তফ্রণ্ট সরকার পূর্ব বাংলার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও পূর্ব বাংলার তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি , কিন্তু উন্নয়ন হয়েছে সামরিক শাসক আইউব খানের সময় । যেভাবে উন্নয়ন হয়েছিল বর্তমান সময়ে সামরিক শাসক এরশাদ সরকারের আমলে । রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সমস্যা যদি বুঝতে না পারে , তবে জনগণ বার বার সামরিক সরকারকে অভিন্দন জানাবে । একটি লক্ষণীয় বিষয় যে , প্রায় প্রতিটি সামরিক সরকার ১০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে । এর কারণ কী ? এর কারণ হল সামরিক সরকার আসে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির কারণে । ফলে প্রথমদিকে এ রাজনীতিবিদরা কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে না । সময়ের সাথে সাথে তাদের দুর্নীতি চাপাঁপরলে এবং সামরিক সরকারও দুর্নীতির মধু গ্রহণ করতে থাকলে রাজনীতিবিদরা আস্তে আস্তে আন্দোলন শুরু করে এবং এক সময় তা গতিশীলতা অর্জন করে । এ আন্দোলন করার সময় বিভিন্ন বিপরীত মতাদর্শের রাজনীতিবিদদের মধ্যে ঐক্য হয় । উদ্দেশ্য হলো আগে সামরিক সরকার সরাও , পরে আমরা ক্ষমতার জন্য মারামারি করব । আবার অনেক রাজনৈতিক নেতা তখন আন্দোলনের সুয়োগে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পিছনের দরজায় সামরিক সরকারের সাথে আলোচনা করেন । কিন্তু এগুলো তারা প্রকাশ্যে বলেন না , তারা প্রকাশ্যে বলেন জনগণের মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলন করছি ।
আইউব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য আওয়ামিলীগের কর্ণধার জনাব হোসেন শহীদ সোহরোয়ার্দি উদ্যোগে ১৯৬২ সালের ৪ঠা অক্টোবর এন , ডি , এফ গঠিত হয় । আওয়ামিলীগ , কৃষক-শ্রমিক পার্টি , কাউন্সিল মুসলিম লীগ , ন্যাপ , নেজামে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলাম নিয়ে এন , ডি , এফ গঠিত হয় । (আত্মঘাতী রাজনীতির তিনকাল , ২য় খন্ড) । পাঠকরা লক্ষ্য করুন বিভিন্ন মতাদর্শের দলদের নিয়ে এন , ডি , এফ গঠিত হয়েছিল । কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে এন , ডি , এফ এ ভাঙ্গন সৃষ্টি হয় । এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান । কারণ অসুস্থ সোহরাওয়ার্দির অবর্তমানে এন , ডি , এফ এর নের্তৃত্ব ছিল নুরুল আমীন , মাওলানা ভাসানী , আতাউর রহমানের হাতে । তাই তিনি (মুজিব) লন্ডনে অসুস্থ জনাব সোহরাওয়ার্দির নিকট আওয়ামিলীগের পুনরুজ্জীবনের অনুমতি চেয়েছিলেন । আইউবের সামরিক শাসনের প্রথমদিকে রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল । কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ উঠে গেলে সোহরাওয়ার্দির উদ্যোগে এন , ডি , এফ গঠিত হয় । এখন যদি রাজনৈতিক দলগুলো পুনরুজ্জীবিত হয়ে নিজ নিজ ব্যানারে কাজ করে , তবে আইউবের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করা যাবে না বলে সোহরাওয়ার্দি আওয়ামিলীগ পুনরুজ্জীবনের মত দেননি এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে তিরস্কার করেন । (“সাংবাদিকের রোজনামচা” , মোহাম্মদ মোদ্দাবের পৃষ্ঠা- ২৯৬ , ২৯৭ সূত্রঃ আত্মঘাতী রাজনীতির তিনকাল ) । কিন্তু সোহরাওয়ার্দির মৃত্যুর পর আওয়ামিলীগের নের্তৃত্ব শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্রমান্বয়ে চলে আসে এবং ১৯৬৪ সালের ২৫শে জানুয়ারি আওয়ামিলীগ পুনরুজ্জীবনের সিদ্ধান্ত নেন । এন , ডি , এফ এর ভাঙ্গনের পর রাজনৈতিক দলগুলো নিজ স্বার্থে ১৯৬৪ সালের ২৪শে জুলাই সম্মিলিত বিরোধী দল (COP) গঠন করে । কারণ হল আইউব খান ১৯৬৫ সালের ২ জানুয়ারি প্রেসিডেণ্ট নির্বাচন ঘোষণা করেছেন । তাই একক ভাবে আইউব খানের সাথে লড়াই করা যাবে না বলে আওয়ামিলীগ , ন্যাপ , জামায়াতে ইসলামী , কাউন্সিল মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামী পার্টি মিলে COP গঠন করে এবং মোহাম্মদ আলীর জিন্নাহর ভগ্নি ফাতেমা জিন্নাহকে প্রেসিডেণ্ট হিসেবে মনোয়ন দেয় । নির্বাচনে ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রির (ইউনিয়ন পরিষদ হতে নির্বাচিত) মধ্যে আইউব খান পান ৪৯,৯৫১ এবং ফাতেমা জিন্নাহ পান ২৮,৬৯১ ভোট । এই ভোটের মধ্যে পূর্ব বাংলায় আইউব খান পান ২১,০১২ এবং ফাতেমা জিন্নাহ পান ১৮,৪৩৪ ভোট ।
১৯৬৫ সালের নির্বাচন আইউবের হাতকে শক্তিশালী করল । কিন্তু ৬৫ এর পাক-ভারত যুদ্ধের পর তাসখন্ড চুক্তি আইউবের সমর্থন হ্রাস করে । তাসখন্ড চুক্তির পর আইউবের প্রিয়পাত্র পররাষ্ট্রমন্ত্রি জুলফিকার আলী ভুট্টো আইউবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে মন্ত্রিসভা হতে বেরিয়ে আসেন এবং পিপলস পার্টি গঠন করেন । তখন আইউব এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শক্তিশালি করার জন্য কারারুদ্ধ শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য তিনি বিবৃতি দেন , “ শেখ মুজিব একজন জাতীয় নেতা । ৬ দফা কর্মসূচী আলোচনার উপযুক্ত । শেখ মুজিব সাহেবকে তার নিজস্ব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চিন্তাধারার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী বলিয়া আখ্যা প্রদান ঠিক নহে ।” (দৈনিক আজাদ , ২৭ অক্টোবর ১৯৬৭, সূত্রঃ আত্মঘাতী রাজনীতির তিনকাল) ।
আইউব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেন এবং মুজিব-ভুট্টো যাতে সমঝোতা করে একসাথে আন্দোলন করার সুযোগ না পায় , সে জন্য তিনি মুজিবের সাথে আলোচনা করে তাকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রি হওয়ার প্রস্তাব দেন । (আত্মঘাতীরাজনীতির তিনকাল ২য় খন্ড পৃষ্ঠা ৩২৪) । এ ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ জি , ডব্লিও চৌধূরীর “অখন্ড পাকিস্তানের শেষ দিন গুলি” বইয়ের ৪৪ পৃষ্ঠায় আছে । বিবরণটি হল “ বাইশ পরিবারের অন্তর্ভূক্ত এক পরিবার হলেও হারুন ভ্রাতৃদ্বয়ের দীর্ঘদিনেরে বন্ধুত্ব ছিল শেখ মুজিবের সাথে , যাকে তারা দীর্ঘদিন রাজনৈতিক নির্যাতন ভোগের সময় ৩ হাজার টাকা করে মাসোহারা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন । এ সময় আলতাফ গওহরের সহযোগিতায় আইয়ুব হারুন ভ্রার্তৃদ্বয়ের এ খেদমতকে ব্যবহার করলেন - মুজিবের সাথে একটা বোঝাপড়ায় আসতে - যা ছিল আইউবের সর্বশেষ আশা-ভরসা । ------ বোঝাপড়া এই ছিল যে , শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনসহ সংসদীয় ব্যবস্থার অধীনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রি হবেন । ইউসুফ হারুন ইতিমধ্যেই পশ্চিম পাকিস্তানের গভর্ণর হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং শেখ মুজিবের প্রার্থী এম এন হুদাকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর করা হয় । আর আইউব খান সংসদীয় পদ্ধতির অধীনে প্রেসিডেণ্ট থেকে যাবেন ।” আইউব-মুজিবের এ গোপন বোঝাপড়ার খবর ভুট্টো পেয়ে যান জেনারেল হেড কোয়ার্টারের তার বন্ধুদের মাধ্যমে বিশেষ করে জেনারেল পীরজাদার মাধ্যমে । এ বোঝাপড়া ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণে বাঙ্গালীদের মধ্যে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে চিন্তা করে শেখ মুজিব ঘাবড়ে গেলেন । (অখন্ড পাকিস্তানের শেষ দিন গুলি পৃষ্ঠা ৪৪ , ৪৫) । এ ব্যবস্থায় শেখ মুজিব যাতে আইউব খানের সাথে হাত মিলাতে না পারেন তার জন্য মাওলানা ভাসানী ও ভুট্টো একসাথে কাজ করতে থাকেন । এ ব্যাপরে উভয়ই লাহরের মুচি গেইটে সম্মিলিত ভাবে এক জনসভায় ভাষণ দেন । ভাষণে ভাসানী হুশিয়ার করে দেন মুজিব যদি এলিট লোকদের সাথে মিলে গরীবদেরকে বরবাদ করার চেষ্টা করেন , তবে তাকে পূর্ব পাকিস্তানে যেতে দেয়া হবে না । । (আত্মঘাতীরাজনীতির তিনকাল ২য় খন্ড পৃষ্ঠা ৩২৫) । 

 চলবে ...... 
 সুত্রঃ আবু নিশাত(সোনার বাংলাদেশ ব্লগ)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন