ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া নানা জানা-অজানা ও এক্সক্লুসিভ বিষয়ের বর্ণনা নিয়ে ৭ম পর্ব

উপদেষ্টা নিয়োগ

উপদেষ্টা পরিষদ গঠনে রাজনৈতিক দলসমূহের পরামর্শ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ১০ উপদেষ্টার শপথ গ্রহণ নিয়ে দিনভর ছিল নানা জল্পনা। আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক আব্দুল জলিল শপথ অনুষ্ঠানের আগের দিন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে দলের পক্ষ থেকে অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবিনামা পেশ করেন। একই সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদে তাদের প্রস্তাবিত নামের তালিকাও জমা দেন। এর আগেই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত উপদেষ্টার নামের তালিকা জমা দেয়া হয়। রাজনৈতিক দলসমূহের প্রদত্ত উপদেষ্টাদের তালিকা যাচাই বাছাই করতে সময় পার হয়ে যায় অনেক। প্রাথমিকভাবে বিকাল ৪টায় উপদেষ্টাদের শপথ গ্রহনের জন্য সময় নির্ধারন না হলেও সন্ধ্যা নাগাদ নিশ্চিত করা যায়নি কখন শপথ গ্রহনের অনুষ্ঠান হবে। শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে ১০ টায় শপথ গ্রহণের সময় নির্ধারণ করা হয় রাত ৮ টার পরে (উপদেষ্টা) বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল হক, লে. জেনারেল অব: হাসান মশহুদ চৌধুরী ও ড. আকবর আলী খান বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে শপথ গ্রহণ হয়। চূড়ান্তভাবে পরিষদে স্থান পাওয়া উপদেষ্টারা কোন কোন দলের প্রস্তাবিত ব্যক্তি ছিলেন তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও যতটুকু জানা যায় তা হল: আওয়ামী লীগ প্রস্তাবিত তালিকা থেকে সি এম শফি সামি, ধীরাজ কুমার নাথ ও অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল চক্রবর্তী। বিএনপির তালিকা থেকে ড. আকবর আলী খান, এম আজিজুল হকও অধ্যাপিকা সুফিয়া রহমান, জামায়াতের তালিকা থেকে লে. জেনারেল অব: হাসান মশহুদ চৌধুরীকে বাছাই করা হয়। বাকিদের কিভাবে বাছাই করা হয় তা নিশ্চিত জানা যায়নি। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে বাইরে ব্যাপক কৌতুহল থাকলেও বঙ্গভবনের ভেতরে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। বঙ্গভবনের মূল ফটকের বাইরে দিনভর ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিকরা অপেক্ষা করলেও শেষ পর্যন্ত তাদের কাউকেই ভেতরে নেযা হয়নি। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত থাকলেও পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। ফলে বঙ্গভবনের দরবার হলে ১০ উপদেষ্টা ও কর্মকর্তারাই উপস্থিত ছিলেন। উপদেষ্টাদের তালিকা নিয়েও দিনভর ছিল বিভ্রান্তি। জানা যায়, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তালিকায় কাটছাঁট করা হয় তবে এই কাটছাঁট করেন রাষ্ট্রপতি নিজেই। অনেক ভেবে চিন্তেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন। রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া তালিকার মধ্যে যারা সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত রাষ্ট্রপতি সেই নামগুলো পরিহার করেন। বিতর্ক এড়াতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন বলে বঙ্গভবন সূত্র থেকে জানানো হয়।

উপদেষ্টাদের শপথ গ্রহণ
রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ ৩১ অক্টোবর বঙ্গভবনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ১০ জন উপদেষ্টাকে শপথ পাঠ করান। অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তত্ত্বাবধয়াক সরকারের ১০ উপদেষ্টা শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণকারী উপদেষ্টারা হলেন সুপ্রিম কোর্টের অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল হক, সাবেক মন্ত্রি পরিষদ সচিব ড. আকবর আলী খান, সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান লে. জেনারেল অব: হাসান মশহুদ চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সি এম শফি সামি, সাবেক আইনজিবী আজিজুল হক, সাবেক সচিব ধীরাজ কুমার নাথ, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের সম্পাদক মাহবুবুল আলম, প্রফেসর এমিরেটাস, অধ্যাপিকা ডাক্তার সুফিয়া রহমান, স্কলাসটিকা কলেজের অধ্যক্ষ ইয়াসমিন মোরশেদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল চক্রবর্তী। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০ টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে এই শপথ বাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবু সোলায়মান চৌধুরী।

উপদেষ্টাদের দফতর বণ্টন
১ নভেম্বর রাতে নবনিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে দফতর বন্টন করা হয়। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ উপদেষ্টাদের মধ্যে এই দফতর বন্টন করেন। রাতেই এ সংক্রান্ত নির্দেশ কেবিনেট বিভাগে পাঠানো হয়। রাতেই কেবিনেট বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বন্টনকৃত দফতরের মধ্যে সংস্থাপন পররাষ্ট্র, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, মন্ত্রি পরিষদ বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার হাতে রাখা হয়েছে। এছাড়া আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল হক; ড. আকবর আলী খানকে অর্থ ও পরিকল্পনা, অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অভ্যন্তরীন সম্পদ বিভাগ শিক্ষা, বানিজ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, লেফটেন্যান্ট জেনারেল অব: হাসান মশহুদ চৌধুরীকে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, খাদ্য ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সি এম শফি সামিকে কৃষি, সংস্কৃতি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ধীরাজ কুমার নাথকে মৎস্য ও পশু সম্পদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মাহবুবুল আলমকে তথ্য, পানি সম্পদ ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, এম আজিজুল হককে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রফেসর ডা. সুফিয়া রহমানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, প্রফেসর ইয়াসমিন মোরশেদকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং সামজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সুলতানা কামাল চক্রবর্তীকে শিল্প, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। (চলবে) 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন