বাংলাদেশে কুমির আগমনে লাভ কার? নেড়িকুকুরের ইন্টারভিউ


প্রকৃতিপ্রেমী ও পরিবেশবাদীরা লক্ষ্য করেন আজকের বাংলাদেশের আকাশে কদাচিৎ চিলকে ঘুরপাক খেতে দেখা যায়। বিশেষত রাজধানী ঢাকার আকাশ থেকে হারিয়ে গিয়েছে ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুরপাকরত চিল। অতীতে বেকার যুবকরা মুখে শস্তা সিগারেট ধরিয়ে বিছানায় শুয়ে ওই চিল দেখে দিনটা কাটিয়ে দিতে পারতো। এখন তাদের সেই অবলম্বনটি হারিয়ে গিয়েছে। এখন আর আকাশ থেকে হঠাৎ স্খলে ডাইভ দিয়ে চিল কারো মুখের খাবার ছো মেরে নিয়ে যায় না। 
বাংলাদেশে আকাশের সিনারি পরিবর্তিত হওয়ার সাথে সাথে স্খলের সিনারিও বদলে গিয়েছে। রাজধানীতে বেওয়ারিশ গরু ছাগল হাস মুরগি নিরুদ্দিষ্ট হয়েছে। তবে রাতের বেলায় প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি করা গরুর পাল ট্রাকে অথবা পথে দেখা যায়। বিশেষত কোরবানির ঈদের আগে। 
বৃটিশ ও পাকিস্তানি আমলে গোড়ার দিকে রাজধানীতে ঘোড়া দেখা যেত। চার চাকার কাঠের গাড়ির সামনে একটা বা দুটো ঘোড়া জুড়ে দেয়া হতো। শহর অঞ্চলে বিয়েতে ঘোড়ার গাড়ি চড়ে পাত্র-পাত্রীরা যেতেন। তখন ঢাকার রেস কোর্সে ঘোড়দৌড় হতো। টয়োটার যুগে এখন ঘোড়ার গাড়ি রিটায়ার করেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও জিয়া শিশুপার্কের যুগে রেসিং ঘোড়া চিরবিদায় নিয়েছে। 
শুধু আকাশে এবং মাটিতেই নয়, পানিতেও বিশেষত বুড়িগঙ্গায় অদৃশ্য হয়েছে ডলফিন এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। জিকিউ অথবা ম্যাটাডর বলপয়েন্ট পেন নির্মাতারা হয়তো অদূরভবিষ্যতে বুড়িগঙ্গার পানিকে তাদের বলপয়েন্ট পেনের কালি হিসেবে ব্যবহার করবেন। 
আকাশে, স্খলে ও জলে রাজধানীর এই অবস্খা দেখে যখন প্রকৃতিপ্রেমীরা হন ব্যথিত এবং পরিবশেবাদীরা হন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, তখন, আমি নেড়িকুকুর হই নিরুদ্বিগ্ন, নিশ্চিন্ত ও নির্ভয়। 
কারণ আমি দেখি, ঢাকার পথে এখন দুপেয়ে মানুষ ছাড়া প্রাণী জগত থেকে অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী আমার নেই। খাবার ও আশ্রয়ের জন্য মানুষই এখন আমার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে মানুষের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। কুকুরের সংখ্যা কম। মানুষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বেচে থাকার কিছু ফন্দিফিকির আমি আবিষ্কার করেছি। মানুষের সঙ্গে আমি সহ-অবস্খান করতে পারি। 
শেখ হাসিনার কুমির তত্ত্ব 
এই ছিল আমার অবস্খান মঙ্গলবার ১৪ জুন ২০১১ পর্যন্ত। 
আমার এই অবস্খান বদলে যায় ওই কালো দিনে। 
আমি জানতে পারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে কোনো ফর্মুলা থাকলে তা সংসদে উপস্খাপনের জন্য বিরোধী দলের প্রতি আবার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করবো। কিন্তু খাল কেটে কুমির আনার সুযোগ করে দেবেন না।’ 
শেখ হাসিনার এই উক্তিতে আমার নিরাপদ পৃথিবীটা বদলে গিয়েছে। আমি খুব দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা ও দু:সময়ে পড়েছি। 
শেখ হাসিনা মাঝে মাঝে বেফাস উক্তি করেন। সেজন্য কেউ কেউ তার সমালোচনা করেন। কিন্তু আমি করি না। আমি মনে করি এই ধরনের বেফাস উক্তিতেই শেখ হাসিনার প্রকৃত মনোভাব ফুটে ওঠে। তার লক্ষ্য সম্পর্কে মানুষ জানতে পারে। তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মানুষ বুঝতে পারে। 
সেই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার এই উক্তি আমি সত্য বলে বিবেচনা করেছি। বিশেষত সংবাদটির পরিবেশক যখন সরকারি সংবাদ সংস্খা বাসস। 


কুমির ও কুকুর, মিল ও গরমিল 
আমার শংকিত হবার বহু কারণ আছে। 
প্রথমেই আমি দেখছি আসলে আমাকে শুধু দুপেয়ে মানুষের সঙ্গেই নয়­ অদূরভবিষ্যতে চার পেয়ে কুমিরের সঙ্গেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। কিন্তু এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমি পেরে উঠবো কি? আমার মতো কুমিরেরও চার পা আছে। 
মেরুদণ্ড আছে। লেজও আছে। ব্যাস। আমাদের মধ্যে ওইটুকুই শুধু মিল। 
কিন্তু গরমিলগুলো আমাকে ভাবিয়ে তুলছে কুকুরের তুলনায়। কুমিরের চোয়ালের শক্তি অনেক বেশি। কুমিরের কামড়ের চাপ হচ্ছে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে প্রায় ২,২৭৩ কেজি। 
আর একটা রটওয়েলার কুকুরের কামড়ের চাপ প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে মাত্র ১৫২ কেজি। আমার মতো বাংলাদেশি নেড়িকুকুরের কামড়ের চাপ তো আরো কম। 
সুতরাং কুমির আসতে পারে জেনে কুকুরকুল তো বটেই­ মনুষ্যকুলেরও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবার সঙ্গত কারণ আছে। সে জন্যই শেখ হাসিনা সতর্কবাণী দিয়েছেন। 
কুমির মানুষ খেতে পারে। কুকুর জীবন্ত মানুষ খেতে পারে না। আমরা জীবন্ত মানুষকে শুধু কামড়াতেই পারি। 
অন্য দিকে কুমির শুধু মানুষই নয়­ সাপ, মাছ, হাঙ্গর, পাখি­ এমনকি ছোট কুমিরও খায়। 
তবে কুকুরের সঙ্গে কুমিরের একটি বড় মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে কুকুর ডাঙ্গাতে থাকে। কিন্তু কুমির জলেও থাকতে পারে, স্খলেও থাকতে পারে। যদিও বাংলাদেশে একটা কথা চালু আছে, ডাঙ্গায় বাঘ জলে কুমির­ আসলে কুমির উভচর। তবে জলে তার গতিবেগ বেশি হতে পারে। 
সাধারণ কুমিররা শুধু স্খলে এবং জলেই থাকতে পারে। শেখ হাসিনা যে ধরনের বিপজ্জনক কুমিরের কথা বলেছেন, তারা অবশ্য স্খলে, জলে এবং আকাশেও থাকতে পারে। আর তাই হাসিনার মুখনি:সৃত কুমির আসার ভবিষ্যদ্বাণীতে­ অর্থাৎ স্খলে জলে এবং আকাশে মানুষ খেকো কুমির আসার সম্ভাবনায়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এবং সাধারণ কুকুর, আমরা সবই আতংকিত ও ভীত। 
রফতানি সম্ভাবনা? 
গত কয়েক দিন বিষয়টি নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। শেখ হাসিনা কেন খালেদা জিয়ার প্রতি এমন সতর্কবাণী দিলেন? খালেদা জিয়া কি কুমিরজাত কোনো পণ্য রফতানির সম্ভাবনা সম্প্রতি তার ইংল্যান্ড ও আমেরিকা সফরে পর্যালোচনা করেছেন? কুমিরের চামড়া দিয়ে পশ্চিমে দামি বৃফকেস, হ্যান্ডব্যাগ, মানিব্যাগ, পার্স, বেল্ট, হ্যাট, জুতা প্রভৃতি বানানো হয়। গুচচি, কৃশ্চিয়ান ডিওর, প্রাডার মতো ক্রোকোডাইল নামে দামি ব্যান্ড প্রডাক্টও আছে। সুতরাং বাংলাদেশে বড় সংখ্যায় কুমির আসলে হয়তো আমাদের রপ্তানি শিল্পে আরেকটি নতুন যুগের সূচনা হবে। 
বস্তুত, এখানেও কুমিরের সঙ্গে কুকুরের একটা বড় পার্থক্য আছে। কুকুরের চামড়া দিয়ে রফতানিযোগ্য কোনো পণ্যই বানানো হয় না। 
খালেদা জিয়া কি ক্রোকোডাইল লেদার ইন্ডাস্টৃর কথা ভাবছেন? অথবা, অনাগত দুর্ভিক্ষের সময়ে কুমিরের মাংস দেশবাসীকে খাওয়ানোর কথা ভেবেছেন? পশ্চিমের কিছু দেশে কুমিরের মাংস ডেলিকেসি বা দুর্লভ ভালো খাবার বলে গণ্য হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আমরা দাবি করতে পারি চায়না ও কোরিয়াতে কুকুরের মাংসকে ডেলিকেসি গণ্য করা হয়। 
বহু চিন্তাভাবনার পর আমি সিদ্ধান্তে এলাম যে ১৩ নভেম্বর ২০১০ পর্যন্ত যদিও খালেদা জিয়া কুমির অধ্যুষিত এলাকায় থাকতেন, তবুও অতীতে তিনি কুমির বিষয়ে খুব উৎসাহী ছিলেন না। সুতরাং এখনো কুমিরের চামড়া রফতানি অথবা মাংস ভক্ষণের চিন্তা তিনি নিশ্চয়ই করছেন না। 
শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক 
বরং আমি ভেবে দেখলাম কুমির জাতির সঙ্গে শেখ হাসিনার বরাবরই একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সেজন্যই তিনি কুমিরের আগমন বিষয়ে আগাম আভাস দিতে পেরেছেন। 
ভেবে দেখুন ২৪ মার্চ ১৯৮২-র কথা। সেই তখন থেকেই শেখ হাসিনা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছেন জনৈক কুমিরপ্রধানের সঙ্গে। ওই কুমিরপ্রধান আয়োজিত জুন ১৯৮৬-র নির্বাচনে শেখ হাসিনার নির্দেশে তার দল আওয়ামী লীগ অংশ নিয়েছিল। এর দশ বছর পরে ১৯৯৬-এ সেই একই কুমিরপ্রধানের সঙ্গে জোট বেধে শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছিলেন। নির্বাচনের পর ওই কুমিরপ্রধানের দলটির সঙ্গে জোট বেধে সরকার গঠন করেছিলেন। ফাস্ট ফরোয়ার্ড। সেই একই কুমিরপ্রধানের দলটির সঙ্গে মহাজোট করে শেখ হাসিনা ২০০৮-এর নির্বাচনে বিজয়ী হন এবং মন্ত্রিসভা গঠন করেন। 
অন্যান্য কুমিরপ্রধানের সঙ্গেও শেখ হাসিনার ভালো সমঝোতা ছিল। মে ১৯৯৬-তে আরেক কুমিরপ্রধান যখন নড়াচড়া করেন, তখনো তাঁর মুভমেন্ট ছিল আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং বিএনপির বিপক্ষে। ঠিক একইভাবে ২০০৭-এ যখন আরো এক কুমিরপ্রধান (যিনি এখন আমেরিকায় চিকিৎসাধীন আছেন) সংবিধান মাড়িয়ে কিছু চাকরিজীবীকে সামনে রেখে ক্ষমতা দখল করেন, তখন তার সাথেও শেখ হাসিনার সুসম্পর্ক দেখা যায়। এই কুমিরপ্রধানের যোগসাজশে ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে তিনি দুইবার আমেরিকা চলে যান। তখন হাসিনা দাবি করেন ওই কুমির সরকার তারই আন্দোলনের ফসল। অর্থাৎ তিনিই কুমির এনেছিলেন। ২০০৭-এ আমেরিকা যাবার আগে ঢাকা এয়ারপোর্টে শেখ হাসিনা বলে যান, পরবর্তী সময়ে দেশে ফিরে এসে ওই কুমির সরকারের সব কাজ ‘র‌্যাটিফাই’ করে দেবেন­ অর্থাৎ বৈধতা দেবেন। এখন তিনি তা-ই করছেন। 
যদিও শেখ হাসিনা কুমির অধ্যুষিত এলাকার বাইরে থেকেছেন, তবুও তিনটি কুমিরপ্রধানের সঙ্গে শেখ হাসিনার এই সুসম্পর্ক তাঁকে দিয়েছে কুমিরদের সম্পর্কে গভীর জ্ঞান। 
সুতরাং পরবর্তী কুমির যুগ যদি শুরু হয়, তাতে শেখ হাসিনারই লাভবান হবার সম্ভাবনা বেশি। খালেদা জিয়ার আরো ক্ষতি হবার সম্ভাবনা বেশি। ২০০৭-পরবর্তী বর্ণচোরা কুমির যুগে খালেদার সংসার গিয়েছে ভেঙ্গে। তার পরিবারের নিকট সদস্যরা হয়েছেন দেশ থেকে নির্বাসিত। ২০০৮-এ কুমির সাজানো নির্বাচনে খালেদা হয়েছেন পরাজিত। 


বিপদ বেশি : বিদেশি কুমিরের আগমন 
এ তো গেল বাংলাদেশি কুমিরের কথা। 
এবার খালেদা জিয়ার বিপদ আরো বেশি। 
কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি এবার বিদেশি কুমিরদের সাদরে ডেকে আনছেন শেখ হাসিনা। 
ইনডিয়ার কুমিরপ্রধান তার দেশে দায়িত্ব নেন ৩১ মার্চ ২০১০-এ। এ দায়িত্ব নেয়ার আগে তিনি একবার বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। বাংলাদেশে কুমিরবাহিনীতে সাধারণত বছরে দুটি পাসিং আউট প্যারেড হয়। জুন মাসের প্যারেডে সাধারণত স্খল, জল ও আকাশ কুমিরবাহিনীর একজন প্রধান অতিথি হিসাবে স্যালিউট নেন। ডিসেম্বরের পাসিং আডিট প্যারেডে স্যালিউট নেন প্রেসিডেন্ট (আগে যখন প্রেসিডেন্ট-শাসিত সরকার ছিল) বা প্রধানমন্ত্রী। 
এই প্রথম ইনডিয়ান কুমিরপ্রধান জুন মাসে বাংলাদেশি কুমিরবাহিনীগুলোর স্যালিউট নেবেন। ইনডিয়ান দূতাবাসের জনৈক কুমির কর্মকর্তা বাংলাদেশে রয়েছেন ইনডিয়ান কুমিরপ্রধানের এই স্যালিউট গ্রহণ পর্বকে সম্পূর্ণ সফল করার জন্য। 
বলা বাহুল্য, এই অপ্রত্যাশিত স্যালিউট ঘটনা বাংলাদেশি কুমিরকুলের মধ্যে বহু রকমের জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি করেছে। তাদের মনে পড়েছে, ২০০৭-০৮-এর বাংলাদেশি কুমিরপ্রধান দিল্লি গিয়ে ছয়টি ঘোড়া নিয়ে এসেছিলেন। এবার ঘোড়া নয়। স্বয়ং কুমিরপ্রধানই আসছেন! জানা গেছে, তিনি পাঁচ দিন থাকবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এত অল্প সময়ে কি বাংলাদেশি কুমিরদের মনমানসিকতা বদলে দেয়া সম্ভব হবে? 
এই প্রশ্নের উত্তরটি শেখ হাসিনাকেই গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে। শেখ হাসিনার পিতা স্বদেশে কুমিরবাহিনীর সমান্তরাল আরেকটি বাহিনী করেছিলেন। সেই বাহিনী দেশে প্রচুর ক্ষোভের কারণ হয়েছিল। পরিণতিতে এক দল কুমিরের হাতে শেখ হাসিনার পিতা নিহত হয়েছিলেন। সুতরাং কুমির নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি ও ঘাটাঘাটি না করাই মঙ্গলজনক। 
বন্যেরা বনে সুন্দর­ কুমিররা কুমিরমেন্টে। অথচ আমি দেখতে পাচ্ছি গত কয়েক দিনে কুমিরবাহিনীর গোয়েন্দাপ্রধান হঠাৎ বদলি হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ায় অবস্খানরত এক কুমির কর্মকর্তাকে ঢাকায় বদলি করা হয়েছে। আমি নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী বুঝেশুনে এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবুও, সাবধানের মার নেই বলে, আমি শেখ হাসিনাকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করছি। 
পদ্মায় পানি দিলে... 
এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশি কুমিরদের মন জয় করার জন্য আমি একটা টিপস প্রধানমন্ত্রীকে দিতে চাই। ফারাক্কা পয়েন্টে ন্যায্য পানি না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তে মরুকরণ শুরু হয়েছে। খাল কোথায় হবে? ওই দিক থেকে যদি ইনডিয়ান কুমির আনতে হয় তাহলে ইনডিয়ান কুমিরপ্রধানকে শেখ হাসিনা অনুরোধ করতে পারেন পদ্মায় পানি দেয়ার জন্য। যদিও ইনডিয়ান কুমিরপ্রধান আকাশপথেই আসবেন। তবুও পদ্মায় পর্যাপ্ত পানি থাকলে যে ইনডিয়ান কুমির আগমন সহজতর হবে সেটা তিনি নিশ্চয়ই বুঝবেন। 
যা-ই হোক। শেখ হাসিনা কি সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা তার ব্যাপার! আমি শুধু কয়েকটি সিদ্ধান্তে এসেছি : 
এক. কুমির আনলে খালেদা জিয়ার কোনো লাভ নেই। কুমিরের হাতে তিনি হয়েছেন বন্দী। শেখ হাসিনার মতো হাতে মেহেদি লাগিয়ে ফুরুৎ-ফারুৎ করে আমেরিকায় যেতে পারেন নি। খালেদা জিয়ার পরিবারের নিকট সদস্যরা হয়েছেন নির্যাতিত ও নির্বাসিত। তাছাড়া ১৯৮১-তে কুমিরবাহিনীর বিপথগামী একটি অংশের হাতে তার স্বামী হয়েছিলেন নিহত।
দুই. কুমির আনলে শেখ হাসিনার লাভ হবে। প্রথমত তিনি ক্ষমতায় থেকে যেতে পারবেন ২০০৮-এর স্টাইলে। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা না দেখলে কুমিরবাহিনীর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তিনি চলে যেতে পারবেন ২০০৭-এর স্টাইলে। অর্থাৎ কুমিরবাহিনীর যোগসাজশে বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে পারবেন। 
তিন. কুমিরবাহিনীর উচুপর্যায়ে এখন দেশি-বিদেশি কুমিরদের মধ্যে আলোচনা চলছে, যার ফসল শেখ হাসিনাই পাবেন বলে মনে করছেন। 
চার. এ জন্যই শেখ হাসিনা দেশের রাজনীতিতে কুমির প্রসঙ্গ হঠাৎ তুলেছেন। 
এর ফলে প্রকৃতিপ্রেমী ও পরিবেশবাদীরা খুশি হতে পারেন। তারা দেখবেন বাংলাদেশের স্খলে জলে দেশি-বিদেশি কুমির চরম আনন্দে বিচরণ করছে। 
কিন্তু যারা গণতন্ত্রমনস্ক তারা হয়তো এই খবর পড়ে চুল ছিড়ছেন। তারা ভাবছেন কুমির আসলে গণতন্ত্রের কি হবে? পরবর্তী কুমির শাসন কতো দিন চলবে? ১৯৮২ থেকে ১৯৯০-এর মতো প্রায় নয় বছর? অথবা ২০০৭ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রায় দুই বছর? 
আমি নেড়িকুকুর। আমার গায়ে তো লোম নেই। আমি কি ছিড়বো? 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন