জাসদ-গণবাহিনী সৈনিক সংস্থার বিপ্লবের চালচিত্র ৩


তাহেরের বিপ্লবী সহযোগী সৈনিক সংস্থার সদস্যরা ক্যান্টনমেন্টে ঢুকে ‘সিপাই সিপাই ভাই ভাই অফিসারের রক্ত চাই স্লোগান দিয়েছেন। তাহের যদি পিপলস আর্মি গঠনের স্বপ্ন দেখে থাকেন, তাহলে সেটা তার একক ইচ্ছায় কিছুতেই হতো না।

এ জন্যসরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, জাতীয় ঐক্য, বিশেষ করে সেনাবাহিনীতেও ঐকমত্য থাকতে হবে। কিন্তু তাহের নিজেই প্রত্যক্ষ করেছেন যে, তার ইউটোপিয়ান স্বপ্ন তদানিন্তন সেনাপ্রধান থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর কোন শীর্ষ অফিসারই সমর্থন করেননি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহ, উপ-সেনাপ্রধান (তৎকালীন) জেনারেল জিয়া এবং তাহেরের সমপর্যায়ের সেনা অফিসার সহ তার সিনিয়রদের কেউই সেনাবাহিনী পুনর্গঠনে তার পরিকল্পনা সমর্থন করেননি। হতাশাগ্রস্ত ও ক্ষুব্ধ হয়ে তাহের স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনী থেকে রিজাইন করেছেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার রাজনৈতিক বা বিপ্লবী প্রতিবিপ্লবী ভূমিকায় যে কোন কর্মসূচি নিতেই পারেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ডের বাইরে থেকে সেনাবাহিনীর নিয়মিত সদস্যদের নিয়ে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা গঠন করে বিপ্লবের নামে সেনা অফিসারদের হত্যা, অভ্যুত্থানের নামে সেনাবাহিনীর অস্ত্রাগার দখল ও লুণ্ঠনের নেতৃত্বদানকারী যে কারও বিরুদ্ধে বিপ্লব-অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবার পর দুনিয়ার যে কোন আইনে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ দন্ড ধার্য হয়ে যাবার কথা। জেনারেল জিয়া একজন পেশাদার সৈনিক এবং তিনি সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড কখনও লঙ্ঘন করেননি। বরং সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড রক্ষা করাই হচ্ছে তাঁর ব্রত ও শপথ। স্বাধীনতা-উত্তরকালে জেনারেল জিয়ার সিনিয়রিটি নাকচ করে তাঁকে তাঁর জুনিয়র জেনারেল সফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান পদে বসানো হয়, তখনও তিনি অনুগত সৈনিক হিসেবে কর্তৃপক্ষীয় নির্দেশ মান্য করেছেন। বলা হয়ে থাকে, জিয়া তাহেরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং নিজের শক্তি সংহত করতে তাহেরকে বিচারের প্রহসনে ফাঁসি দিয়েছেন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগে এখন এসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তবে তাহেরের ফাঁসির বিনিময়ে জাসদ নেতা তাত্ত্বিক সিরাজুল আলম খান-ইনুসহ অন্যান্য জাসদ নেতা এবং গণবাহিনীর সদস্যরা বিস্ময়করভাবে বেঁচে যান। চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ করে প্রচলিত আইনে জাসদ নেতাদের বিচার হলে তাদেরও চরম দন্ড ভোগ করতে হতো বলে আইনী বিষেশজ্ঞরা মনে করেন।

জেনারেল জিয়া কখনও তাহেরের থট-প্রোসেসকে সমর্থন বা উৎসাহিত করেননি। কিংবা তার চিন্তাধারাকে সাবসক্রাইবও করেননি। এমনকি তাহের যখন সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করার কথা জানান, তখনও জেনারেল জিয়া তাঁকে ঠান্ডা মাথায় ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেবার পরামর্শ দিয়েছেন। তাহের নিজের মতো করে ভেবে নিয়েছেন যে, জেনারেল জিয়াকে তারা সাথে পাবেন। অথবা তাকে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। বন্দিদশা থেকে জিয়ার মুক্তিতে তাহেরের যদি কোন অবদান থাকে, তবে তার বিনিময়ে জিয়া সেনাবাহিনী ধ্বংস করার প্রক্রিয়ায় জাসদ-তাহেরের সাথে জড়িত হতে পারেন না। শারীরিকভাবে জীবন ফিরে পেয়ে জিয়া যদি তাহেরের কাজে সায় দিতেন, তাহলে তাঁর সামরিক জীবনের ওপর আত্মঘাতের পন্দা নেমে আসতো। কেবল জেনারেল জিয়াই নন, শীর্ষ পর্যায়ের কর্মরত কোন সেনা সদস্যকেই তাহের সাথে পাননি। এমনকি মেজর জিয়াউদ্দীন, যিনি বর্তমানে তাহেরের গোপন বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং আদালতে ভাষ্য দিয়েছেন, তিনিও তাহেরের দুন্দিনে তার পাশে থাকার বদান্যতা দেখাতে পারেননি। এতবড়ো একটা বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় মেজর জিয়াউদ্দীন কেন ঢাকার বাইরে ছিলেন, কেন জাসদ নিউক্লিয়াসের তাত্ত্বিক গুরু সিরাজুল আলম খান ঐ সময় গোপন আস্তানায় চলে গিয়েছিলেন? এই গোপন আস্তানা কী অন্য কোন দেশের দূতাবাস? সিরাজুল আলম খানের আত্মগোপনে যাবার কৌশল থেকেই বিপ্লবের ভেতরে প্রতিবিপ্লবী হঠকারিতা ও দুর্বলতার বীজ এবং বিপ্লব ব্যর্থ হতে পারে বলে আশঙ্কার ছায়া লুকিয়ে ছিল। বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটানোর চেয়ে সেনা বাহিনীর ভিত্তি ও চেইন অব কমান্ড ধ্বংস করাই হয়তো গণবাহিনী সৈনিক সংস্থার লক্ষ্য ছিল। এমনকি সৈনিক সংস্থার নামে জাসদ-গণবাহিনীর ক্যাডাররা ক্যান্টনেমেন্ট ঢুকে হত্যা-নৈরাজ্য ও অস্ত্রাগার লুণ্ঠন গোলাবর্ষণের মতো কাজে লিপ্ত ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের নানা বর্ণনায় পাওয়া যায়। তাহেরের কারণে সেদিন জাতীয় সেনাবাহিনীর অস্তিত্বই অরক্ষিত হয়ে পড়েছিল।

লিফলেটের ভাষা......

বিপ্লবের প্রকৃতিটা কেমন হবে, তা লিফলেটের খসড়া তৈরির কারিগরদের পদবী পরিচয় থেকেই কিছুটা বোঝা যায়। ট্যাংক রেজিমেন্টের হাবিলদার বারী এবং নায়েক সুবেদার জালাল লিফলেটের খসড়া তৈরি করেন। এতে লেখা হয় : ‘‘সৈনিক ভাইয়েরা, আমরা আর ধনিক শ্রেণীর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহƒত হইতে চাই না। নিগৃহীত, অধিকার বঞ্চিত সিপাইরা আর কামানের খোরাক হইবে না। আসুন, আমরা একটি অভ্যুত্থান ঘটাই। আমাদের এই অভ্যুত্থান শুধুমাত্র নেতৃত্বের পরিবর্তন করিবার জন্য হইবে না। বরং এই অভ্যুত্থান হইবে সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার জন্য। এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়া আমরা ঔপনিবেশিক আমলের রীতিনীতি বদলাইয়া ফেলিয়া সশস্ত্র বাহিনীকে জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী একটি বাহিনীতে পরিণত করিব। আমরা রাজবন্দিদের মুক্ত করিব, দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করিব। মনে রাখিবেন, এখন সিপাই আর জনতার ভাগ্য এক। তাই সিপাই জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করিতে হইবে। সিপাই সিপাই ভাই ভাই। সুতরাং সিপাইদের ঐক্যবদ্ধভাবে অফিসারদের এই ক্ষমতার লড়াইকে রুখিয়া দাঁড়াইতে হইবে। যদি অফিসাররা নির্দেশ দেয়, আর এক সৈনিক ভায়ের বিরুদ্ধে বন্দুক ধরিবার তাহা হইলে আপনারা বন্দুক ধরিবেন না। আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে বিদ্রোহ করি।’’ [প্রাগুক্ত- ২৬৮]

এই লিফলেট ছাপানো ও ক্যান্টনমেন্টের জাহাঙ্গীর গেটে পৌঁছে দেবার দায়িত্ব যাকে দেয়া হয়, তিনি ‘জনকণ্ঠ পত্রিকার একজন সাংবাদিক, নাম সামসুদ্দীন পেয়ারা, শহীদ ড. আফতাবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি আজও বেঁচে আছেন এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য।

সেনাবাহিনীর সিপাইদের উত্তেজিত করে অফিসারদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দিয়ে তাঁদের হত্যা করে অথবা নিরস্ত্র করে আর যাই হোক, জাতীয় পর্যায়ে কোন বিপ্লব হতে পারে না। বিপ্লবের সফলতার জন্য সেনাবাহিনী একক উপাদানও নয়। তাহের নিজেও সফলতা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘....পার্টি পুরোপুরি প্রস্তুত নয় বলে আমিও মনে করি। এই মুহূর্তেই জাসদ বা সৈনিক সংস্থার পুরোপুরি ক্ষমতা দখল করা ঠিক হবে না। একটা ইন্টেরিম পিরিয়ড আমাদের দরকার, যে সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের শক্তি সঞ্চয় করে নিতে পারবো। এমন একটা ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে আমরা ক্ষমতার কেন্দ্রে না থেকেও পরিস্থিতিকে কন্ট্রোল করতে পারব। সেজন্য এই মধ্যবর্তী সময়ে সিপাই এবং জনগণ সমর্থন করবে, এমন একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসিয়ে জাতীয় সংহতি রক্ষা করা দরকার। তাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের নিজেদের অবস্থা অনুকূলে এনে তারপর আমরা পাওয়ার নিতে পারি।’’ [প্রাগুক্ত ২৭১-৭২] এ বক্তব্য তাহেরের।

কিন্তু উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সাথে একমত না হয়ে কেউ কখনও অন্যের তল্পীবহন করবে না। বিপ্লবের পক্ষে কাউকে ব্লাকমেইল করে বা চাতুরী করে ব্যবহার করেও সফল হওয়া যায় না। তাহের জিয়াকে তাদের মধ্যবর্তী সময়ের তল্পীবাহী হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন। জিয়া তাতে সায় দিতে পারেননি। কেননা তিনি জাসদ বা সৈনিক সংস্থার কনসেপশনে বিশ্বাস করেননি। জনগণের কাছে সুপরিচিত ও আস্থাভাজন কোন পাবলিক ফিগার না থাকায় জাসদ গণবাহিনীর বিপ্লব রক্তাক্ত নৈরাজ্য হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। বিপ্লবকে ধার করেও পাবলিক ফিগারের অভাব দূর করা যায় না। জাসদের রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার জন্য তাদেরকে জিয়ার নাম ব্যবহার করতে হয়। জিয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তারা তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। এটুকু উপলব্ধি করার মতো মেধা জিয়ার থাকবে না, যারা এমনটা মনে করেছেন তারা আসলেই অর্বাচীন। সুতরাং জিয়া তাহেরের কথা শুনলেও তাতে তার নিরাপত্তা রক্ষিত হতো না। ঘটনার একক নিয়ন্ত্রক নন তিনি। জিয়া হঠকারী বিপ্লবী বা প্রতিবিপ্লবীদের বিরুদ্ধে অবস্থান গিয়ে রাজনৈতিক প্রজ্ঞারই পরিচয় দিয়েছেন। অধুনা মোশতাক জিয়া চক্র, উল্লেখ করে জিয়াকে মোশতাকের সাথে ব্রাকেটবন্দী করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু জিয়া কোনভাবেই মোশতাকের সহযোগি বা উত্তরসƒরী নন। জিয়ার রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি সায়েম। সায়েমকে তাহেরও মেনে নেন। জিয়া খন্দকার মোশতাকের বিরুদ্ধে বঙ্গভবনের তৈজসপত্র সরিয়ে নেয়া সংক্রান্ত মামলা করেন। বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে মোশতাকের জনসভায় সাপ ছেড়ে দেয়া এবং বোমা হামলার মাধ্যমে তার জনসভা পন্ড করে দেয়া পর্যন্ত মোশতাক ছিলেন জিয়ার প্রতিপক্ষ চক্ষশূল। জিয়ার সমর্থন না পাওয়ায় মোশতাককে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। মোশতাককে বাদ দিয়ে বিচারপতি সায়েমকে রাষ্ট্রপতি পদে বসানোর ব্যাপারে জিয়ার সায় ছিল।
অফিসারের রক্ত চাই.......

সিপাইরা ক্যান্টনমেন্টে ‘সিপাই সিপাই ভাই ভাই অফিসারের রক্ত চাই স্লোগান দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। তারা ৭ নবেম্বর ভোর রাতে মেস এবং বাসা থেকে অসংখ্য অফিসারদের ধরে এনে লকআপে রেখেছেন টুফিল্ড আর্টিলারীতে। ঘুমের পোশাক পরা, নিরস্ত্র এসব অফিসারদের সদলবলে আতঙ্কিত করে রাখা হয়। সশস্ত্র সৈনিকরা কোন শৃ´খলা ছাড়াই রাজপথে বেরিয়ে এসেছেন। কথাছিল, তারা জনতার হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে সম্মিলিতভাবে ডাক দেবেন বিপ্লবের। কথাছিল জিয়া আর তাহের এসে উন্মুক্ত জনসভায় বক্তৃতা দেবেন। তার কিছুই ঘটেনি।

শাহাদুজ্জামান লিখেছেন, জিয়া রয়ে গেছেন ক্যান্টনমেন্টে, তাহের তার ক্রাচে ভর করে ছোটাছুটি করছে ক্যান্টনমেন্ট, এলিফ্যান্ট রোড, রেডিও স্টেশন। এর মাঝে আবার হটাৎ নারায়ে তাকবীর ধ্বনি তুলে মাটি ফুঁড়ে বেরিয়েছে মোশতাকের দল। সৈনিকেরা তখনও শহরময় ঘোরাঘুরি করছেন। তারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে এসেছেন মাঝরাতে, এরপর তারা কি খাবেন, কোথায় থাকবেন ঠিক নাই। জাসদ নেতৃবৃন্দও স্পষ্ট কোন নির্দেশনা দিতে পারছেন না। তাহেররা নাগালের বাইরে চলে যাওয়া পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছেন আপ্রাণ। স্পষ্ট হয়ে উঠছে তাহের এবং জিয়ার দূরত্ব। রাতের অন্ধকারে অস্ত্রাগার ভেঙ্গে, হাতে হাতে অস্ত্র নিয়ে সিপাইরা রাজপথে বেরিয়ে এসেছিল যুগান্তকারী এক সেনাবাহিনী গড়ে তুলবার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু স্বপ্ন যেন দিন না ফুরাতেই ধুলিস্যাত হতে বসেছে। সৈনিকদের মধ্যে জন্ম নিতে থাকে দ্বিধাদ্বনদ্ব, সন্দেহ, অনিশ্চয়তা। তাদের চেপে থাকা ক্ষোভ উসকে উঠতে থাকে আবার।

সন্ধ্যারাতে একসৈনিক আর্মির এক লেডি ডাক্তারকে সামনে পেয়ে গুলী করে দেন। এক ক্রাপ্টেন জনসমক্ষে সৈনিকদের নিয়ে টিটকারী করলে সোজা তার বুক লক্ষ্য করে গুলী ছোঁড়ে এক সিপাই। ক্ষুব্ধ সৈনিকরা নানা অফিসারের বাসায় হামলা চালায়। কোন কোন অফিসার সিপাইদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন। অফিসারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা রাতের অন্ধকারে ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালাতে থাকেন। অফিসে যাওয়ার পথে এক ক্যাপ্টেনের কাঁধের র‌্যাং কের পিপগুলো ছিড়ে ফেলেন বিক্ষুব্ধ সৈনিক। অফিসাররা র‌্যাংক না লাগিয়ে যাতায়াত করতে থাকেন। এয়ার পোর্টে, ক্যান্টনমেন্টের কয়েকটি যায়গায় কিছু অফিসার হত্যার খবর পাওয়া যায়। জিয়া ফোন করেন তাহেরকে। বলেন, ‘তাহের, তোমার লোকেরা আমার অফিসারদের হত্যা করছে।

তাহের ক্যান্টনমেন্টে যেতে চাইলে জিয়া তাকে আসতে বারণ করেন এবং বললেন, ক্যান্টনমেন্টের বাইরের সোলজারদের ক্যান্টনমেন্টে ফেরত পাঠিয়ে দিতে। অফিসারদের বিনা বিচারে বিনা অপরাধে হত্যার দায় জাসদ ও সৈনিক সংস্থার নেতাদের ঘাড়েই বর্তায়। জেনারেল জিয়া যদি তাহেরের সাথে থাকার কথা দিয়ে থাকতেন, তাহলে পরিকল্পনা ও এ্যাকশন নিয়ে তাহের জিয়ার সাথে আগেই কথা বলতেন। কিন্তু তাহেরের বিপ্লবের নিউক্লিয়াস জিয়ানন, সিরাজুল আলম-ইনু গং। জিয়াকে অন্ধকারে রেখে তারা তাকে ব্যবহার করে সকল অপকর্ম আড়াল করতে চেয়েছে। সেনা অফিসার হত্যা এবং সৈনিকদের কর্তৃত্বে তাহের যে সেনাবাহিনী গড়তে চেয়েছিলেন, জিয়া তাতে সায় না দিয়ে সেনাবাহিনীকে জাতীয় বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন। ব্যর্থ বিপ্লবীরা এজন্য সুযোগ বুঝে এখন জিয়ার ইমেজের ওপর আঘাত হানতে শুরু করেছেন। এর সূত্রপাতটা হয়েছে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের বিচারবিভাগীয় রায় ঘোষণা এবং প্রেসিডেন্ট জিয়ার সামরিক ফরমানকে অবৈধ ঘোষণা করার বিচারিক রায়ের মধ্য দিয়ে। ১৯৭৫-এ একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা না ঘটলে ১৫ই আগস্টের মতো ঘটনা ঘটতো না। আগস্ট অভ্যুত্থানের কাউন্টার অভ্যুত্থানে মোশতাকের ক্ষমতাচ্যুতি, খালেদ মোশাররফের ক্ষমতা দখল না ঘটলে এবং জেনারেল জিয়া বন্দি না হলে সিপাহী-জনতার নবেম্বর বিপ্লব ঘটতো না।

জাসদ, সৈনিক সংস্থা, গণবাহিনীর কোন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জনগণের কাছে দৃশ্যমান ছিল না। তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি সম্পর্কেও জনগণকে অন্ধকারে রাখা হয়। মুজিবী শাসনের সাড়ে তিন বছরে জাসদের চেয়ে সিরাজ সিকদারের পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি অথবা হক- তোয়াহার আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির প্রতি জনগণের সমর্থন বেশী ছিল। জাসদ-র্যা ডিকাল সমাজতন্ত্রী বা জঙ্গি বিরোধীদল হলেও জাসদ ছিল মূলত আওয়ামী লীগেরই বেয়াড়া দলছুট এবং জাসদের সাথে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে জনমনে যে সন্দেহ ছিল, তাতে করে দলটি জনগণের কাছেও বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি। স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনায় যারা ভারতকেন্দ্রিক ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের কেন্দ্রীয় কুশীলব ছিলেন, তাদের অধিকাংশই ছিলেন জাসদের তাত্ত্বিক-প্রতিাষ্ঠাতা। সুতরাং দিল্লীর বি টিম হিসেবেই রাজনৈতিক শিবিরে জাসদ-এর মূল্যায়ন ছিল। এই অপবাদ সম্পর্কে জাসদ নেতারাও সচেতন ছিলেন। এক পর্যায়ে জাসদ নেতারা মার্কিন ও ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের জিম্মি করে তাদের ব্যাপারে প্রচারিত ধারণা মোচনেরও উদ্যোগ নেয়।

বাকশালের একদলীয় শাসন দেশে সাংবিধানিকভাবে সকল রাজনৈতিক দলের বিলুপ্তি ঘোষণা করায় বহু সংগ্রাম-আন্দোলনের ইতিহাসের সাক্ষী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরও বিলুপ্তি ঘটে। জেনারেল জিয়ার রাজনৈতিক দল পুনর্গঠনের ধারায় আওয়ামী লীগকে দরখাস্ত করে পুনরুজ্জীবিত করেন মালেক উকিল-জোহরা তাজউদ্দিনরা। সেই পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগেরই নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা এবং এই সুবাদেই তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেত্রী হিসেবে দেশের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়া যে সংসদ নির্বাচন দেন, তাতে আওয়ামী লীগ ছিল প্রধান বিরোধী দল। জোটগতভাবে একবার এবং দলীয়ভাবে একবার, মোট দুবার আওয়ামী লীগ জেনারেল জিয়ার সাথে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরেছে। এমনকি সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পাশের সংসদেও আওয়ামী লীগ বিরোধীদলের ভূমিকায়। এই সংশোধনীর রাজনৈতিক অর্জন হচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন। আওয়ামী লীগ এর প্রধান বেনিফিশিয়ারী। একজন সেনা প্রধানের কেন ক্ষমতার দৃশ্যপটে আসতে হয়েছে এবং কেন সামরিক ফরমান দিয়ে দেশ শাসন করতে হয়েছে, তার কৈফিয়ৎ আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে। সংসদীয় ক্যু করে যারা ফ্যাসিবাদকে সংবিধানের মাধ্যমে বৈধতা দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণের রাজনৈতিক প্রতিরোধ রুদ্ধ ছিল বলেই অসাংবিধানিক ধারায় পটপরিবর্তন অনিবার্য হয়েছে। সুতরাং সেনা অভ্যুত্থান বা সামরিক ফরমান বলে দেশ শাসনের যে সিলসিলা তৈরী হয়েছে, তার একক দায় আওয়ামী লীগের। জেনারেল জিয়া পরিকল্পনা করে বঙ্গভবনে অভিযান চালিয়ে ক্ষমতা দখল করেননি। জাতীয় ক্রান্তিকালে ইতিহাসই তাকে ক্ষমতার দৃশ্যপটে টেনে এনেছে এবং দেশের বৃহত্তর মানুষের নন্দিত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি যে জনভিত্তি পেয়েছিলেন, তা বাংলাদেশের আর কোন শাসক পাননি। ৫ম সংশোধনী বাতিল এবং জিয়ার সামরিক ফরমান অবৈধ ঘোষণার বিচারিক রায়কে যারা তাদের রাজনৈতিক বিজয় তথা ইতিহাসকে পঁচাত্তর-পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবার সফলতায় উল্লসিত, তাদের নৈতিকতার ডাবলস্ট্যান্ডার্ড জনগণকে বিস্মিত করেছে। ১৯৮২ সালের সেনা অভ্যুত্থানের নায়ক জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখলকে আওয়ামী লীগ কার্যত অভিনন্দন জানিয়েছে। এরশাদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘‘জাতীয় বেঈমানের’’ অপবাদ ঘাড়ে তুলে নিতেও তাদের বাধেনি। শেষ পর্যন্ত এরশাদের সংসদ নির্বাচনে (১৯৮৬) অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে এরশাদের বৈধতা দানের সুযোগ করে দিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে জ্যেষ্ঠ সেনা অফিসার হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার জিয়াকে প্রধান সেনাপতির প্রাপ্য মর্যাদা দিতে পারেনি।

১৯৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে বাঁচাতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়ে তার পুরস্কার নিয়ে বিদেশে রাষ্ট্রদূতের চাকরি নিয়ে আয়েশী জীবন কাটিয়েছেন। এই সেনাপতি আওয়ামী লীগের রাজনীতির অলঙ্কার। শুধু তাই নয়, বাইরের একটি মহলের পরিকল্পিত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবি প্রমোট করতে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের অন্যতম দিকপাল হিসেবে জাতিকে বিভক্ত করার এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় রয়েছেন। ১৯৭৫-এর পটপরিবর্তন -উত্তর পর্বে সেনা প্রধান সফিউল্লাহর শূন্য পদে জেনারেল জিয়ার অধিষ্ঠান ঘটে। কিন্তু খালেদ মোশাররফ-সাফায়াত জামিলের কাউন্টার ক্যু-জেনারেল জিয়ার প্রধান সেনাপতিত্বই শুধু কেড়ে নেয়নি। সপরিবারে জেনারেল জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে বন্দি করে রাখা হয়। এই অনিশ্চিত অবস্থায় জেনারেল জিয়া লিখিতভাবে পদত্যাগ পর্যন্ত করতে বাধ্য হন। মুজিব হত্যার বদলা নিতে আগস্ট অভ্যুত্থানের মেজরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা ব্রিগেডের তদানীন্তন কমান্ডার বঙ্গবন্ধু অন্তপ্রাণ ব্রিগেডিয়ার সাফায়াত জামিল অপর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে জেনারেল পদোন্নতি ও সেনাপ্রধান বানিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। খন্দকার মোশতাককেও তারা বন্দুকের মুখে পদত্যাগে বাধ্য করে বঙ্গভবন থেকে এক প্রকার জোর করে আগামীসহ লেনে পাঠিয়ে দেন। জেনারেল জিয়াকে খালেদ-সাফায়াত চক্র যেমন প্রধান সেনাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেন, তেমনি আওয়ামী লীগও রাজনৈতিক বিবেচনায় (হয়তোবা প্রতিবেশী দেশের পরামর্শে) জেনারেল জিয়াকে সেনাপ্রধান বানানোর ঝুঁকি নেয়নি। সেই জেনারেল জিয়াই যখন স্বাধীনতার সাড়ে চার বছরের মাথায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ধারায় সেনাপ্রধান পদে বরিত ও অধিষ্ঠিত হন, তখনও পুরনো শত্রু শিবির আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন হলো। এই উদ্বেগের অবসান তারা করতে চেয়েছে আর একটা পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। খালেদ মোশাররফের ক্ষমতা দখলকে দিল্লী প্রো-ইন্ডিয়ান ক্যু বলে মনে করেছে। ভারতের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রচার মাধ্যমে এর ফলাও প্রচার হয়েছে। ‘‘খালেদের ভাই আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ মোশাররফ, তার মা- ঢাকায় তার সমর্থনে মিছিল বের করেন।’’ শাহাদুজ্জামান তাঁর বইয়ে লিখেছেন : ‘‘... শেখ মুজিব হত্যার পর সেই প্রথম আওয়ামী লীগের ব্যানারে কোন মিছিল। সেই প্রথম আবার জয় বাংলা। সেদিন সন্ধ্যায় ভারতের রেডিও এবং টিভি খালেদ মোশাররফের ক্ষমতা দখলে উচ্ছবাস প্রকাশ করে খবর প্রচার করে। ... তার এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে আওয়ামী লীগ অবশ্যই জড়িত। নইলে তিনি ক্ষমতায় বসবার সঙ্গে সঙ্গে জয়বাংলা শ্লোগান নিয়ে কেন তার মা, ভাই রাস্তায়? তার সঙ্গে অবশ্যই ভারতের যোগাযোগ আছে। নইলে তারা এত উচ্ছবসিত কেন?’’ [প্রাগুক্ত-পৃ-২৬৩]

খালেদ মোশাররফকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়। জাসদ-সৈনিক সংস্থা এই হত্যাকান্ডে তাদের কোন হাত না থাকার কথা দাবি করলেও তখন মোশতাক ক্ষমতাচ্যুত; ফারুক-রশিদরা ভবিষ্যৎ নিয়ে দিশেহারা এবং জিয়া ক্যান্টনমেন্টে বন্দী। তখন ক্যান্টনমেন্টে একমাত্র উন্দিধারী সৈনিক সংস্থার সদস্য ও জাসদের গণবাহিনীর সদস্যরাই বন্দুক হাতে অফিসারদের হত্যার নেশায় উন্মত্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কার শক্তি আছে যে জেনারেল খালেদ মোশাররফকে দেখামাত্র গুলী করে হত্যা করবে? এই হত্যার তদন্ত ও বিচারও আজ সময়ের দাবি। এ ছাড়া বঙ্গভবনে ব্রিগেডিয়ার সাফায়াত সৈনিক সংস্থার আক্রমণ থেকে বাঁচতে দেয়াল টপকে পালাতে গিয়ে পা ভেঙ্গে ফেলেন। এখনও তিনি পঙ্গুত্ব বইছেন। এখন সৈনিক সংস্থা ও গণবাহিনীর সেদিনের ব্যর্থ কুশীলবরা তাহেরের গোপন বিচার চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা লড়ছেন। জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু সামরিক আদালতের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রীট মামলা দায়ের করেছেন। ইতিহাসের চাপাপড়া অধ্যায়ের পন্দা উন্মোচনের এই এজেন্ডা দেশকে কোথায় নিয়ে যায়, এখন সেটা দেখার জন্য প্রতীক্ষার পালা।

আওয়ামী লীগের সাড়ে তিন বছর তাদের মাথাব্যথা ছিল র‌্যা ডিক্যাল জাসদ। ৭ নবেম্বর- পটপরিবর্তনের সময় মেজর জলিল, আ স ম রব, শাহজাহান সিরাজ, মীর্যা সুলতান রাজা, মোহাম্মদ শাহজাহানসহ শত শত জাসদ নেতাকর্মী কারাগারে বন্দী জীবন কাটিয়েছেন। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করার ঘোষণা দিয়ে জাসদ আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিযে দেশব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল। সময়ের বিবর্তনে সেই জাসদ আজ মহাজোটের আশীর্বাদে আওয়ামী লীগের অংশীদার এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ঘাড়ে চড়েই তারা জেনারেল জিয়ার গোপন আদালতে তাহেরের বিচারকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা লড়ছে। সাড়ে তিন বছর ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জাসদের যে অভিযোগ ও প্রতিবাদী সংগ্রাম এবং এ সময় যে হাজার হাজার জাসদ কর্মী হত্যার কলঙ্কময় ইতিহাস তৈরি হয়েছে, তার কী হবে? এসব নিহত জাসদ কর্মীদের আত্মার ফরিয়াদ এবং তাদের পরিবার-পরিজনের বিচারের দাবি কী তাহেরের পুনর্বিচারের দাবির চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ?

ক্ষমতার আওয়ামী লীগকে গুড হিউমারে রেখে তাদের বন্ধু দেশের সরকারটি জেনারেল ওবানের প্রশিক্ষিত-দীক্ষিত প্রো-ইন্ডিয়ান হার্ডকোর গ্র”পকে দিয়ে যে খেলা শুরু করেছে, তার দায় আওয়ামী লীগ বহন করতে পারবে কিনা, সে প্রশ্নও রয়েছে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন