ছবিঃ প্রিয়জনের লাশের উপর আহাজারি
আজ ২৫শে ফেব্রুয়ারী। মাত্র দু বছর আগে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিডিআর হেডকোয়ার্টারে রক্তক্ষয়ী যে ঘটনা ঘটে গেল, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রকম জিঘাংসাপূর্ণ, নির্মম ও লোমহর্ষক ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। এ হত্যা কান্ড কারা ঘটিয়েছে কি তাদের মিশন ছিল, তা আজো রহস্যাবৃত। মনে করা হয় দুনিয়ার কোন যুদ্ধেতো তো নয়েই, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও এতো সংখ্যক সেনাঅফিসার হত্যার ঘটনা ঘটেনি।
জাতী হিসেবে আমরা বড়ই আত্নোভোলা। তাই এনিয়ে পুরোনো কিছু টুকরো খবরের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে,
ছবিঃ নিহত সেনা অফিসারদের তালিকা
কিছু পুরোনো তথ্য
১.
জানাজার আগে মিডিয়ার সমালোচনা । বিডিআর সদর দপ্তরে নিহত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো• আবদুল বারী, কর্নেল মুজিবুল হক, কর্নেল মো• আনিসুজ্জামান, কর্নেল জাহিদ, লে• কর্নেল আবু মুসা মো• কায়সার, লে• কর্নেল এনায়েত এবং মেজর মিজানের জানাজা বাদ আসর ঢাকা সেনানিবাসের সেনা কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ ও নিহত সেনা কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজন অংশ নেন। জানাজার আগে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের সহকর্মী ও স্বজনরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বিডিআর সদস্যদের জঘন্য অপরাধের বিচার দাবি করেন। এ ঘটনায় রাজনীতিবিদদের ভূমিকার সমালোচনা করে কয়েকজন তাদের সামনের সারিতে রেখে জানাজা পড়তে অস্বীকৃতি জানান। সাবেক সেনা কর্মকর্তারা তাদের কাছে এই প্রশ্ন রাখেন, কেন সেনাবাহিনীকে পিলখানায় সময়মত ঢুকতে দেয়া হলো না। কেন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের পালানোর সুযোগ দেয়া হলো। তারা এমনও বলেন যে, সরকারের এসব লোকজনকে জানাজায় অংশ নিতে দিয়ে আমরা আমাদের সহকর্মীদের লাশের অমর্যাদা হতে দেবো না। কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা বিডিআরের ঘটনার পর পরিবেশিত সংবাদের জন্য গণমাধ্যমের কড়া সমালোচনা করেন। তারা বলেন, আর্মির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর জন্যই যেন মিডিয়া সেখানে হাজির হয়েছিল। এসব ঘটনায় জানাজা কিছুটা বিলম্বিত হয়। আসরের নামাজের আগ মুহূর্তে মসজিদ প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক। এ সময় কয়েকজনের আপত্তির মুখে তারা পেছনের সারিতে চলে যান। (মানব জমিন, ২৮/০২/২০০৯)
ছবিঃ বুট, হেলমেট ছাড়া অপারেশনে এরা কারা?
২.
বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী পাঠাতে চায় ভারত, কলকাতার টেলিগ্রাফ পত্রিকার খবর। বাংলাদেশে পিস মিশনের নামে সামরিক কিংবা আধা সামরিক বাহিনী পাঠানোর বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে ভারত। বিডিআর বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য ভারত বাংলাদেশে পিস মিশন পাঠানোর প্রস্তাব দিচ্ছে। নয়াদিল্লির অত্যন্ত উচ্চপর্যায়ের সূত্র টেলিগ্রাফকে এই তথ্য জানিয়েছে । শ্রীলঙ্কার পর বাংলাদেশেই হতে পারে ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক দ্বিপক্ষীয় পিস মিশন। উল্লেখ্য, রাজিব গান্ধীর সময় তামিল গেরিলাদের দমনের লক্ষ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী বাহিনী শ্রীলঙ্কায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল এবং বিপুলসংখ্যক হতাহতের পর তা পরিত্যক্ত হয়।
এমতাবস্থায় ঢাকা সম্মত হলে ভারত সরকার তার সেনাবাহিনী না পাঠিয়ে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স, রেলওয়ে প্রটেকশন ফোর্স কিংবা বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়টিও বিবেচনা করতে পারে। এখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিডিআর’র ওপর ভরসা করতে পারছে না এবং বাংলাদেশ রাইফেলসও তাদের সেনাবাহিনীর অফিসারদের বিশ্বাস না করায় পিস মিশন পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিডিআর’র বদলে মৈত্রী এক্সপ্রেসের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে ভারতীয় কোনো সামরিক বা আধা সামরিক সংস্থা। (Daily Telegraph, Calcutta, ২৭.০২. ২০০৯)
Indian peace mission signal Click this link...
৩.
রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন (রাওয়া) পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, টকশো’তে কিছু কিছু ভাষ্যকার তাদের বক্তব্যে বাহিনীসমুহের মধ্যে এমন বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যা দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্হায় চিড় ধরানোর শামিল। রাওয়া এসব উস্কানিমুলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। দক্ষতা ও নেতৃত্বের গুণাবলী দ্বারা এসব কর্মকর্তা বিডিআরকে সুসংগঠিত করে একটি বিশালায়তন প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করে সীমান্ত রক্ষায় অবদান রাখছে। এই অর্জিত সুনামকে বিনষ্ট করা ও বাহিনীকে নেতৃত্বশুন্য করার অপচেষ্টাই বর্তমান বিদ্রোহের সুত্রপাত বলে রাওয়ার সদস্যরা মনে করে। যারা টকশো কিংবা মিডিয়ার মাধ্যমে তথাকথিত ‘পুঞ্জীভুত ক্ষোভ’ শব্দটি ব্যবহার করে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য রাখছেন আমরা তাদের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সশন্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মিডিয়া কিংবা জনসমক্ষে মন্তব্য কিংবা আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ নেই। সশস্ত্র বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক এবং আধাসামরিক বাহিনী যুদ্ধকালীন সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে থেকে কাঁধে কাঁধ রেখে যুদ্ধ করে। কিছু কিছু ভাষ্যকার তাদের বক্তব্যে বাহিনীসমুহের মধ্যে এমন বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যা দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্হায় চিড় ধরানোর শামিল। (যুগান্তর, ২৮.০২.২০০৯)
ছবিঃ ঘাতকদের সাথে নানক, আজম আর তাপস
৪.
বিডিআর অস্ত্র সমর্পণ করলেও সেনাবাহিনীর সশস্ত্র অবস্থানের প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণ করলেও সেনাবাহিনীর স্বশস্ত্র মহড়া ও অবস্থানের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভমিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্র ফেডারেশনের ব্যানারে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল হয়। এসময় তারা শেস্নাগান দেয় ‘বিডিআর ছাত্র ভাই ভাই, সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাও’। (আমাদের সময়, ২৭.০২.২০০৯)। ইত্তেফাক রিপোর্ট বলা হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পিলখানা বিডিআর সদর দফতরের তিন নম্বর গেটে শতাধিক বেসামরিক তরুণ ‘বিডিআর-জনতা ভাই ভাই’ বলে শেস্নাগান দিতে থাকে। তারা শেস্নাগান দিয়ে বিডিআর-এর দাবির সমর্থনে মিছিল বের করে। মিছিলটি নিউ মার্কেট হয়ে নিলক্ষেত মোড়ে আসলে অবস্থানরত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। তবে তিন নম্বর গেটে দফায় দফায় মিছিলকারীদের মধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দেখা যায়। তারা সেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করে বলে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানান। মিছিলকারীদের মাঝে মাঝে গেটে প্রহরারত বিদ্রোহীরা গুলিবর্ষণ করে উৎসাহ যোগাতে দেখা যায়। (ইত্তেফাক, ২৭.০২.২০০৯ )। উল্লেক্ষ্য ছাত্র ফেডারেশন একটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন, যারা প্রায়ই সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন আপত্তিকর তথ্য প্রচার করে থাকেন। ইত্তেফাক বিডি আর সদর দফতরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিক্ষোভকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ না করলেও অন্য জায়গায় লিখে বিদ্রোহী জওয়ান দের অনেকের মুখেই জয় বাংলা, জয় বংগবন্ধু শ্লোগান ছিল।
৫.
২৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ভারতের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘আউটলুকে’ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সাবেক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা বি-রমন বাংলাদেশের বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে এক নিবন্ধ লিখেছেন। ওই নিবন্ধে তিনি বাংলাদেশ রাইফেলসকে একটি ভয়ানক বাহিনী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিডিআরকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আদলে গড়ে তোলা এবং সীমান্ত রক্ষায় তাদের দুর্দান্ত মনোভাব এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে বিভিন্ন যুদ্ধে নাস্তানাবুদ করার কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে তার লেখায়। বিডিআরকে সামগ্রিকভাবে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ দেয়া এবং তাদের কমান্ড কন্ট্রোল থাকায় সীমান্তে তারা বিএসএফকে তোয়াক্কা করে না বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বি রমন বরাইবাড়ী যুদ্ধে বিডিআর’র স্মরণীয় যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে ওই ঘটনা যখন ঘটে, তখন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু বিডিআর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ১৫ সদস্যকে হত্যা করার ওই ঘটনার তিনি কোনো বিচার করেননি। বি রমন বলেন, বাংলাদেশের সেনা গোয়েন্দা সংস্থার সরাসরি তত্ত্বাবধানে বিডিআর এবং অন্যান্য বাহিনী পরিচালিত হয়। নিবন্ধে বলা হয়, সীমান্তে সর্বদা পাহারারত থাকায় বিডিআর’র সদস্যদের মধ্যে ভারতের প্রতি বিরূপ মনোভাব কাজ করে। (weekly outlook and saag paper no. 3072, 27.02.2009)
দেখুন এখানে,
Click this link...
ছবিঃ সারাসারি লাশ আর লাশ
৬.
উদ্ধার পাওয়া এক সেনাকর্মকর্তা একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেছেন, এ ঘটনার পেছনে বিদেশী শক্তির হাত রয়েছে। কারণ, এসব ঘটনা ঘটেছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, তাৎক্ষণিক কোনো ক্ষোভ থেকে নয়। সেনাকর্মকর্তাদের লাশের সাথে যে অসম্মান ও পৈশাচিকতা দেখানো হয়েছে কোনো সাধারণ জওয়ানের পক্ষে এ ধরনের কাজ করা অসম্ভব। এগুলো করা হয়েছে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। প্রতিশোধস্পৃহা থেকে। বিডিআর’র প্রতি কাদের এই প্রতিশোধস্পৃহা তা এ দেশের মানুষ জানেন। বেসরকারি চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনাশাসক এইচ এম এরশাদ বলেন, যারা এতগুলো সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে তারা কোন স্থান দিয়ে কিভাবে পালিয়ে গেলো? তাদেরকে কেন কেউ চিনতে পারলো না? এমনকি কেউ সন্দেহ করল না যে, হত্যাকারীরা বাইরের লোক। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, এ ঘটনার পেছনে একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত রয়েছে। এটা সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। (আরটিএনএন, ০১.০৩.২০০৯)
৭.
লক্ষণীয় দিক হলো, বিডিআর মহাপরিচালকের মৃত্যুর খবর দেশী সংবাদমাধ্যম কিংবা রয়টার্স, এপি, এএফপি’র মতো সংবাদ সংস্থার আগে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা-সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি প্রথম প্রকাশ করে। ২৫ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের কোন সংবাদ মাধ্যম এবং ২৬ ফেব্রুয়ারী কোন পত্রিকাই বিডিআর এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল সহ দরবার হলে উপস্থিত ১৬৮ জন কর্মকর্তার ভাগ্যে কি ঘটেছে সে ব্যপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে না পারলেও ঘটনার মাত্র ৪ ঘন্টা পরেই নয়াদিল্লি টিভি (এনডিটিভি) দুপুর ২ টার নিউজ এ নিশ্চিত ভাবে প্রচার করে যে বিডিআর এর বিদ্রোহে মেজর জেনারেল শাকিল সহ ১৫ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছে। দেশের সরকার, গনমাধ্যম নিশ্চিত করে এ সম্পর্কিত কোন তথ্য দিতে না পারলেও দেশের বাইরের একটি মিডিয়া কি করে তা নিশ্চিত করল সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
৮.
উদ্ধার পাওয়া সেনাকর্মকর্তা মেজর জায়েদি বলেছেন, ঘটনাস্থল থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জেনারেল তারেকের সাথে কথা বলেছেন এবং এরপর বিডিআর’র ডিজি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেন। বিডিআর’র ডিজি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আপনি তাদের আশ্বস্ত করুন। তারা যেন গুলি না করে। আমরা সব দাবিদাওয়া মেনে নেবো। (প্রথম আলো ২৭ ফেব্রুয়ারি ’০৯ Click this link... ) মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা সেনা কর্মকর্তা লে• কর্নেল কামরুজ্জামান বর্ণনা ঘটনার বর্ননা দেন এভাবে ‘অবস্থা বেগতিক দেখে ডিজি মহোদয় সিএনের সঙ্গে কথা বললেন, প্রধানমন্পীর সঙ্গে কথা বললেন, ডিজি-র্যাবের সঙ্গে কথা বললেন। আমিও ব্যক্তিগতভাবে আর্মি হেডকোয়ার্টারের অপারেটরের সঙ্গে কথা বললাম। তারা সবাই বলল- আসছি। কিন্তু সেই আসতেই শুনলাম, কেউ আর এলো না। আমরা বাধ্য হয়ে তখন স্দ্বেজের পেছনে গ্রিনরুমে গেলাম। তখনো ওরা হলের ভেতরে ঢোকেনি। বাইরে থেকেই গুলি করছিল।’ (সমকাল, ২৮/০২/২০০৯)
ছবিঃ সিসিটিভিতে ধারন করা বিডি আর হত্যাকান্ডের কিছু ছবি
৯.
৭২ সালে বিডিআর বিদ্রোহ নিরসনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ। ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন দেশে বিডিআরের সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহ করেছিল জওয়ানরা। বিক্ষুব্ধ জওয়ানদের শান্ত করতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিডিআর সদর দপ্তরে ছুটে গিয়েছিলেন। সংকট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদকে। সেদিনের বিডিআর বিদ্রোহের কারণে রক্ষী বাহিনীর জন্ম হয়েছিল। এক পর্যায়ে তাদের বিক্ষোভ তীব্র হয়ে ওঠে। বেশ কয়েকজন বিডিআর অফিসার আহত হয়েছিলেন বিক্ষুব্ধ জওয়ানদের হাতে। (আমাদের সময়, ২৭.০২.২০০৯)
১০.
বিদ্রোহের আগে রাতভর মিটিং, গড়ে তোলা হয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক । আগের রাতে বিডিআর জওয়ানরা রাতভর মিটিং করেন। কোথায় তারা অবস্থান নেবেন, কে কোন স্থানে অপারেশন চালাবেন সবই ঠিক হয় রাতের মিটিংয়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সকাল থেকে যে যার অবস্থানে চলে যান। সুবেদার শহীদের দায়িত্ব ছিল দরবার হলে ঘটনার সূত্রপাত করে দেয়া। এর আগেই সকাল ৭টায় তারা অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুট করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়্যারলেস সিস্টেমও সকাল থেকে বিদ্রোহীরা তাদের দখলে নিয়ে নেন। এমনকি তাদের নিজেদের মধ্যে একটি গোয়েন্দা নেটওয়ার্কও গড়ে তোলেন। সাধারণ জওয়ানরা তাদের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলেও মূল গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ছিল অন্ধকারে। (নয়া দিগন্ত, ২৭.০২.২০০৯) দেখুন এখানে,
Click this link...
ছবিঃ হাতের মেহেদীর দাগ তখন শুকায়নি, প্রিয়জন হারানোর বেদনা
১১.
বিডিআর এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনাবেল (অব.) ফজলুর রহমান বলেন, বিডিআর প্রতিনিধির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যখন বসলেন তখন প্রধানমন্ত্রী বলতে পারতেন, ডিজি কোথায় আছে, তাকে নিয়ে আসো। সেনা কর্মকর্তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জানতে চাওয়া উচিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলতে পারতেন, দুই ঘণ্টার মধ্যে ডিজিসহ সব সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারকে জিম্মি অবস্হা থেকে ফেরৎ দিয়ে অস্ত্র সমর্পণ করলেই সাধারণ ক্ষমা কার্যকর হবে। বড়জোর সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দেয়া যেত। নিঃশর্ত সাধারণ ক্ষমার কারণে হয়তোবা বিডিআর জওয়ানরা প্রশ্রয় পেয়ে পরবর্তীতে আরো খুন, লুটতরাজ ও সেনা পরিবারের সদস্যদের নিগৃহীত করেছে। (আমার দেশ, ০২/০৩/২০০৯)
প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে বের হয়ে আসছেন ঘাতক দলের নায়ক ডিআইডি তৌহিদ
Click this link...
১২.
নিহত সেনাকর্মকর্তাদের সহকর্মী ও সহপাঠীদের সূত্রে জানা যায়, তাদের প্রায় সকলেই ছিলেন মেধাবী, চাকুরীক্ষেত্রে সফল ও চৌকস এবং ধর্মভীরু। এদের বেশির ভাগই সীমান্তে বিএসএফ এর দূর্বৃত্তপনা থেকে দেশের সীমান্তকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে ছিলেন অতন্দ্রপ্রহরী। গত ১ ফেব্রুয়ারী কলকাতা কনফারেন্স ২০০৯ নামে কলকাতার সুবাস ইন্সটিটিউটে বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের একটি অংগ সংগঠনের ৪র্থ বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষন ছিল, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির প্রযোজিত ডকুমেন্টারী “মানুষ না মালাউন”?ডকুমেন্টারীর ধারা বিবরনীতে বলা হয় বাংলাদেশে সংঘটিত সকল নির্যাতন নিপিড়নের জন্য দায়ী হচ্ছে, বর্বর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, সেনাবাহিনী ও এর গোয়েন্দা সংস্থা। ইসলাম ও সেনাবাহিনীকে উতখাত করতে না পারলে এ সংকটের সমাধা হবে না। এ ব্যপারে ভারত সহ সকল আন্তর্জাতিক শক্তির সহযোগিতা চাওয়া হয়।
ছবিঃ হত্যাকান্ডের ঠিক আগের মুহুর্তের কিছু বিরল ছবি
১৩.
বিমানের ফ্লাইট দু’ঘণ্টা বিলম্বিত, ৪ বিদ্রোহী চলে গেল বিদেশে । বিডিআর বিদ্রোহে অংশ নেয়া চার জওয়ান অপারেশন শেষ করার ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে জিয়া আন্তôর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের পালাতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সহায়তা করেছেন বলেও সেনারা জানতে পেরেছেন। ওইসব বিদ্রোহী বিমানে উঠেছে একেবারে বোর্ডিং ব্রিজ থেকে উড়োজাহাজ ছেড়ে যাওয়ার কয়েক মিনিট আগে। নিরাপদে তাদের বিমানবন্দরের সকল গেট পার করে তুলে দেয়ার পর ওই উড়োজাহাজটি ঢাকা ছাড়ে। এ জন্য উড়োজাহাজটি দুই ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে যায়। ২রা মার্চ সকাল ন’টায় বিমানের বিজি-০৪৯ ফ্লাইটটি ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও উড্ডয়ন করেছে ১১টা ২৫ মিনিটে। পলাতকদের ব্যাপারে জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে তথ্য নিশ্চিত করা হচ্ছে। র্যা বের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল রেজানুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারাও বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তাই ওই ফ্লাইটের যাত্রীদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় ওই চার জন সৌদি আরব গেছেন বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, আমরা তাদের পুরো পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর প্রয়োজনে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবো। তাদের ব্যাপারে আমাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য রয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হলে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে। ওই সূত্র জানায়, তারা জানতে পেরেছেন পিলখানায় অপারেশন শেষে নিরাপদে দেশ ছাড়ার ব্যবস্থা আগে থেকেই করা হয়। এ জন্য আগে থেকেই তাদের পাসপোর্ট ও ভিসা সংগ্রহ করা হয়। পলাতক ওই চার ব্যক্তি সম্পর্কে বিডিআরের কিছু রেকর্ডপত্র দেখে ও অন্য বিদ্রোহীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। (মানব জমিন, ০৫/০৩/২০০৯)
১৪.
একটি বিশেষ জায়গা নিরাপদে রেখে সুযোগ বুঝে বিদেশ পাঠানো হচ্ছে । সূত্র জানায়, শুরুতে পিলখানা অপারেশনে অংশ নেয়া বিদ্রোহী জওয়ানদের সদর দপ্তর থেকে বের করার ব্যবস্থা করেন প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। পরে অন্য আরেক ব্যক্তিসহ তাদের নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সব রকম ব্যবস্থাই করা হয়। পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের একটি গোপন স্থানে রেখে পরে সুযোগ বুঝে দেশের বাইরে পাঠানো হয়। ঘটনার পর পরই বিডিআরের কোন বিদ্রোহী যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সে জন্য সকল বিমানবন্দর, স্থল বন্দর ও অন্যান্য সীমান্তে কড়া নজরদারি বসানো হলেও বিদ্রোহীদের একটি অংশ পালিয়ে যেতে সড়্গম হয়। এ খবরটি সেনারা পাওয়ার পর তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন- কে তাদেরকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন। ওইদিন শুরুতে অপারেশনে অংশ নেয়া বিদ্রোহীদের এখন খুঁজে বেড়াচ্ছে র্যা ব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। তাদের ধরতে বিভিন্ন জায়গায় চলছে অপারেশন রেবেল হান্ট। (মানব জমিন, ০৫/০৩/২০০৯)
হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দেয়া হলো যেভাবে,
Click this link...
ভিডিও দেখুন,
Click this link...
এটাকে পুঞ্জিভুত ক্ষোভ বলেছিল যারা,
Click this link...
আগে থেকে কবর খোড়া হয়?
Click this link...Click this link...
বিডিআর প্রধান জেনারেল শাকিলের বাসায় ঘটানো নৃশংসতা
Click this link...
আর্মি অফিসার পরিবারের উপর চালানো হয় নির্যাতন, লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার ভাষ্য
Click this link...
পিলখানায় নিহত সেনা অফিসারদের তালিকাClick this link...
সেনাবাহিনী কতৃক বিডিআর ঘটনার প্রকাশিত আংশিক রিপোর্ট
নয়া দিগন্ত,
Click this link...
প্রথম আলো,
Click this link...
এ ঘটনা যারাই ঘটাক না কেন, কিছু বিষয় পরিস্কার। এটা পরিকল্পিত। বাইরের শক্তি যারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দূর্বল করতে চায়, যারা বাংলাদেশের সসস্ত্র বাহিনী দূর্বল করে সেই সুযোগে নিজেদের সেনাবাহিনী পাঠাতে চায়, যারা দেশটিড় রক্ষাকবজ ইসলাম ও সেনাবাহিনীকে মুখোমুখী করতে চায়, আমরা মনে করি তারাই এই নারকীয় হত্যাকান্ডের মূলহোতা, এতে কোন সন্দেহ নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন