সীমানা পিলার, কষ্টিপাথর, ক্যাকটাস ও পশু-পাখি নিয়ে স্বপ্নের ব্যবসার নামে প্রতারণা

এক টাকার সোনালি কয়েন নয়, সারাদেশে আমেরিকান ডলার, ব্রিটিশ ও কোম্পানি আমলের প্রচলিত মুদ্রা কেনাবেচার একটি বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। সাবেক মন্ত্রী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সমাজের সব শ্রেণীর লোক সম্পৃক্ত রয়েছে এ কয়েন ব্যবসার সঙ্গে। মূলত, নানা ম্যাগনেটিক তেজস্ক্রিয়া সম্পন্ন কয়েনের শ শ কোটি টাকা মূল্যে কেনাবেচার প্রলোভন দেখিয়ে একটি চক্র দেশব্যাপী সক্রিয় রয়েছে। এ চক্রটি কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ব্রিটিশামলের সীমানা পিলার কেনাবেচার সঙ্গেও যুক্ত। হঠাৎ কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর মানুষগুলো এ সিন্ডিকেটের প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসছেন।




অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার গুলশান, ধানমণ্ডি, বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী জুড়ে একাধিক চক্র এ নিয়ে সক্রিয় আছে। এ চক্রের প্রতারণার শিকার হয়ে হাজার হাজার মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেছে। কেউ কেউ হঠাৎ লাভের আশায় এর পেছনে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করছেন। গুলশানের একাধিক আবাসিক হোটেলে এ চক্র সক্রিয় আছে। কেউ কেউ এ চক্রের সঙ্গে বিদেশে কয়েকটি দূতাবাসের সরাসরি সম্পৃক্ততারও কথা বলে থাকে।



বিগত বিএনপি-জোট সরকারের আমলে বর্তমানে একজন প্রভাবশালী রাজনীতিকের এ নিয়ে প্রকাশ্যে দেন-দরবার করতেও দেখা গেছে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক রাজনীতিবিদও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বরিশালের ঝালকাঠিতে একটি ব্রিজ নির্মাণকালে ব্রিটিশামলের একটি সীমানা পিলারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষেরও ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রভাবশালী ২ রাজনীতিকের সম্পৃক্ততার কথা প্রচলিত আছে।



অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে প্রচলিত কয়েকটি তামা ও রূপার কয়েনের উচ্চমূল্যের কথা বলে একশ্রেণীর মানুষ প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। এসব কয়েনের অনেক নকল কয়েন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। গুলিস্তানের ছেঁড়া টাকার দোকানগুলোতে এসব নকল কয়েন পাওয়া যাচ্ছে। মূলত ১৭১৭, ১৭৯৯ ও ১৮১৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রচলিত ১ আনা, ২ আনার কয়েনগুলোতে তেজস্ক্রিয় উপাদান রয়েছে বলে এগুলোর প্রতিটির জন্য শ শ কোটি টাকা দাম পাওয়া যাবে বলে প্রচলিত আছে। এছাড়া ১৯০১ সালে রূপার ১ রুপি ও ১৭৭৬ ও ১৮৮৫ সালে আমেরিকার ট্রেড ডলার কেনারও একটি বিশাল সিন্ডিকেট আছে। এসব মুদ্রার মূল্য কয়েক শ কোটি টাকা হবে বলে ধারণা দেয়া হয়। এছাড়াও উচ্চমূল্যের কথা প্রচলিত আছে ১৮১৩ সালের ওয়ান ডলার লিবার্টি কয়েন, ১৮০৪ সালের ওয়ান ডলার লিবার্টি (রাণী) কয়েন নিয়ে। এ কয়েনটিতে রাণীর ছবির দু’পাশে থাকা ১৩টি ‘স্টার’ রাতে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়। এছাড়া ১৮৩৯ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত প্রচলিত লিবার্টি গোল্ড কয়েনেরও উচ্চমূল্য আছে বলে বাজারে প্রচলিত রয়েছে। এসব কয়েন কেনার জন্য স্থানীয়ভাবে অনুমোদিত কোনো এজেন্ট না থাকলেও উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এসব কয়েন কেনার জন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ডলার কিনে থাকে এবং উচ্চমূল্যে বিক্রিও করে। মূলত ‘এন্টিকস ভ্যালু’ হিসেবে এগুলো বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু এদেশে এগুলোর ভেতরে নানা তেজস্ক্রিয়ার কথা বলে মানুষকে প্রতারিত করা হয়। জোড়া ডাক, হনুমান মার্কা কিংবা রাম-সীতার প্রতিকৃতি সংবলিত এসব মুদ্রা নাকি মানুষের রক্ত শুষে নেয় এবং তা পানিতে রাখলে আবার ছেড়ে দেয়। কিংবা তীব্র ঝালের মরিচকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঝালহীন করে ফেলে। কিংবা এর সংস্পর্শে আতপ চাল রাখা হলে তা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পোড়া রঙ ধারণ করে কিংবা একপর্যায়ে তা পুড়ে যায়। ব্রিটিশামলে সীমানা চিহ্নিত করার জন্য বসানো পিলারগুলোর ভেতরে এমন ম্যাগনেটিক উপাদান সমৃদ্ধ কয়েন ও গ্লাস আছে বলে প্রচলিত রয়েছে। আর এসবের তেজস্ক্রিয়তা এতই বেশি যে, সংলগ্ন এলাকায় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এর ছবিও নাকি তোলা যায় না।



এছাড়াও লাল ফণি মনসার ক্যাকটাস, ভুই কুমড়া কিংবা সাদা পশাল গাছেরও ব্যাপক মূল্য আছে। এছাড়া প্যাঁচা ও কালো বিড়ালও অনেক দামে বিক্রির কথা বলা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে কেউ কোটিপতি হওয়ার ঘটনা খুব একটা শোনা না গেলেও অল্পতেই কোটিপতি হতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার নজির আছে। ব্রিটিশামলের দলিলও অনেক বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এ নিয়ে ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বেশিরভাগই হঠাৎ বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। বায়তুল মোকাররম মার্কেট, গুলিস্তানের একাধিক অফিস, নবাবপুরের হোটেল, যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন বাড়িতে প্রতারক চক্র সক্রিয় আছে।

1 টি মন্তব্য: