মঞ্জুর নিজের কাঁধ থেকে ব্যাজ খুলে ফেললেন, স্টার্ট নিল গাড়িটা
৩০মে ১৯৮১। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। সারাটা দিন ধকল গেছে সবার ওপর দিয়ে। সেনানিবাসের ভেতর সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছে। শহরের কোথাও থেকে কোনো গোলাযোগের খবর পাওয়া যায়নি। কি হতে যাচ্ছে সে আলোচনাতে মশগুল সাধারণ মানুষ। সারাটা দিনই বিভিন্ন জায়গায় ছুটাছুটি করে বেড়াতে হয়েছে জেনারেল মঞ্জুরকে। একবারও বাসায় যাওয়ার সময় পর্যন্ত পাননি।
আরেকটা বিনিদ্র রাত কেটে গিয়ে সকাল হয়েছে। ৩১মে সকাল ১১টায় সমস্ত বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার এক সমাবেশ ডাকলেন জেনারেল মঞ্জুর ডেপুটি কমিশনারের অফিসে। সবাইকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ঠিকঠাক মতো কাজ চালিয়ে যেতে বললেন। চট্টগ্রামের রেডিও বাংলাদেশকে ২৪ ঘণ্টা কাজ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিলেন। বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানালেন, যেন কোনো জাহাজ বন্দর ত্যাগ না করতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকায় যেন কোনোরকম তেল, পেট্রোল না পাঠানো হয় সে ব্যাপারেও অনুরোধ জানালেন।
এদিকে সকাল ১১টার পর পরই কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনী মার্চ করতে শুরু করেছে
শুভপুর ব্রিজের দিকে। হঠাৎ করেই পরিস্থিতি কেমন ঘোলাটেআরেকটা বিনিদ্র রাত কেটে গিয়ে সকাল হয়েছে। ৩১মে সকাল ১১টায় সমস্ত বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার এক সমাবেশ ডাকলেন জেনারেল মঞ্জুর ডেপুটি কমিশনারের অফিসে। সবাইকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ঠিকঠাক মতো কাজ চালিয়ে যেতে বললেন। চট্টগ্রামের রেডিও বাংলাদেশকে ২৪ ঘণ্টা কাজ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিলেন। বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানালেন, যেন কোনো জাহাজ বন্দর ত্যাগ না করতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকায় যেন কোনোরকম তেল, পেট্রোল না পাঠানো হয় সে ব্যাপারেও অনুরোধ জানালেন।
এদিকে সকাল ১১টার পর পরই কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনী মার্চ করতে শুরু করেছে
মনোবল ভেঙ্গে পড়তে লাগলো সাধারণ সেনাদের। মে. জে. মঞ্জুর আঁচ করতে পারলেন; বুঝলেন মনোবল ভেঙ্গে গেলে আর করার কিছুই থাকবে না। ডিভিশনাল হেড কোয়ার্টারের পেছনে হেলিপ্যাডে দাঁড়িয়ে আছে একটা হেলিকপ্টার। মঞ্জুরের দৃষ্টি পড়লো সেদিকে। হঠাৎ তার মনে হলে হেলিকপ্টারটা এখানে থাকা উচিত না। সাধারণ সৈনিকরা মনে করতে পারে, বিপদের মুহূর্তে জেনারেল পালাতে পারে তাদের ফেলে। এ মুহূর্তে সৈনিকদের মাঝে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকতে দেওয়া যায় না। সোজা ফেরত পাঠালেন হেলিকপ্টার জে. মঞ্জুর।
ডিভিশনাল হেডকোয়ার্টারে সবাই বসে আছে। চিন্তার ছাপ সবার মুখে। পাশে লে.
কর্নেল মতিউর গভীর চিন্তায় মগ্ন। হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে সবাইকে বললেন, `gentlemen we have lost the battle.' সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। চোয়াল কঠিন হয়ে উঠেছে কর্নেল মতিউরের, তবুও গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে বললেন, ‘আমাদের হাতে দুটো পথই খোলা আছে, হয় আমাদের আত্মহত্যা করতে হবে, নয়তো এসকেপ করতে হবে।’
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চিন্তা করে জনৈক বিগ্রেডিয়ারকে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে নির্দেশ দিলেন মে. জে. মঞ্জুর। আগে যেভাবে কথা হয়েছিল অর্থাৎ বিশেষ
বিমানযোগে বিদ্রোহী অফিসারদের সপরিবারে বিদেশ প্রেরণ, সে শর্তে রাজি করাতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলেন। কিন্তু ঢাকা থেকে বিভিন্ন অজুহাতে সময় কাটানো শুরু হলো।
ঢাকার সঙ্গে আলোচনা চলছে। রাত ১০টার দিকে লে. কর্নেল মতি, লে. কর্নেল মাহবুব, মেজর মোজাফফরসহ আরো কয়েকজন এসকেপ কোন পথে কিভাবে করা হবে সে আলোচনায় বসলেন। একজন অমুক্তিযোদ্ধা অফিসারও তখন তাদের
অবাক হয়ে তাকালেন মঞ্জুর ওদের দিকে। ‘এ মুহূর্তে সবাইকে ছেড়ে পালানোর
প্রশ্নই আসে না’- বললেন মঞ্জুর। অনেকটা জোর করেই মেজর মোজাফফর মে. জে. মঞ্জুরকে টেনে তুললেন জীপে। সঙ্গে জেনারেলের সিকিউরিটি অফিসার মেজর রেজা। অভ্যুত্থান হওয়ার পর থেকে বাসায় যাওয়া হয়ে ওঠেনি মঞ্জুরের। রাত ১টারও কিছু পর বাসায় ঢুকলেন তিনি, সঙ্গে মেজর মোজাফফর। মেজর রেজা রয়ে গেলেন গাড়িতে।
মঞ্জুরের বাসার ড্রইংরুমে বসে আছেন মেজর মোজাফফর। ‘স্যার, আপনি কি জাতির উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান’-জিজ্ঞেস করলেন মোজাফফর জেনারেলকে।
গাড়ির ভেতর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন মেজর রেজা। দরজা খোলার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল তার। দেখলেন জে. মঞ্জুর এবং মেজর মোজাফফর উঠলেন গাড়িতে। ড্রাইভার গাড়ির ফ্ল্যাগ খুলে ফেললো এবং স্টার ঢেকে দিল। মঞ্জুর নিজের কাঁধ থেকে খুলে ফেললেন ব্যাজ। একটু শব্দ করে স্টার্ট নিলো গাড়িটা। রওনা হয়ে গেল হাটহাজারীর দিকে। এর কিছুক্ষণ আগের ঘটনা। জেনারেল মঞ্জুরের এসকেপ রুটের খবর গোপনে পেয়ে সেনাভর্তি তিনটি ট্রাক মেজর মান্নানের নেতৃত্বে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে গেলো একই পথে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন