গোলাম মাওলা রনি; শেয়ার নিয়ে মুখ খোলাই হলো আমার কাল (দ্বিতীয় পর্ব)

শেয়ার নিয়ে মুখ খোলাই হলো আমার কাল  (দ্বিতীয় পর্ব)
বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খবর আসছিল- গাজীপুরে সরকারদলীয় প্রার্থী শোচনীয়ভাবে হারবে, অন্তত দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে। সরকারও সর্বশক্তি নিয়োগ করল এই নির্বাচনী যুদ্ধে জয়লাভের জন্য। সরকারের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক বিশেষভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেন নির্বাচন পরিচালনার জন্য। ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং তাকে শ্রদ্ধাও করি দারুণভাবে। তিনি একাধিকবার আমাকে ফোন করে নির্দেশ দিলেন গাজীপুরে যাওয়ার জন্য। তিনি এও বললেন যে, 'এটা নেত্রীর নির্দেশ'। তোমার যেহেতু একটি পরিচিতি এবং সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা আছে সেহেতু নির্বাচনের পুরো সময় তোমাকে গাজীপুরে থেকে প্রচারণায় অংশ নিতে হবে। আমার পারিবারিক সমস্যার কথা
আমি বলারই সুযোগ পেলাম না।
আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো গাজীপুরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাজ করার জন্য। অথচ আমার অসুস্থ ছেলেকে রেখে সারাদিনের জন্য কোথাও যাওয়া সম্ভব ছিল না। বিষয়টি নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গেও আলাপ করতে ভরসা পাচ্ছিলাম না। টাঙ্গাইলের এমপি রানার সঙ্গে পরামর্শ করে এলজিইডির একটি ডাকবাংলো ঠিক করলাম এবং ওকে বললাম ওর পরিবার নিয়ে আসার জন্য। ও যখন রাজি হলো তখন আমার স্ত্রীকে বললাম- এখানে চমৎকার একটি বাংলো পাওয়া গেছে। তোমরা সবাই আসতে পার। অনেকটা নিমরাজি হওয়ার পরও আমার পুরো পরিবার এলো এবং সঙ্গে আনা হলো বিড়ালটি। রানাকে আমার ছেলের দুর্ঘটনার কথা খুলে বললাম। ডাকবাংলোয় আসার পর শুরু হলো নানা সমস্যা। প্রথমত, কোনো রুমে এসি চলছিল না। অন্যদিকে একটু পরপর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছিল। ফলে পরিবারের সবাই অধৈর্য হয়ে পড়ল। আর এর মধ্যেই আমরা নির্বাচনী প্রচার শুরু করলাম।
আমার ওপর অর্পিত ১৬ নম্বর ওয়ার্ডটি বিএনপি প্রার্থী মান্নান সাহেবের এলাকা। এখানে সরকারদলীয় প্রার্থীর ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু আমি প্রচণ্ড আত্দবিশ্বাস নিয়ে কাজে নেমে পড়লাম। প্রতিটি বাড়িতে গেলাম। টেলিভিশনের কল্যাণে সবাই আমাকে চিনল এবং অসম্ভব খাতির করল। স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও দারুণভাবে উজ্জীবিত হলো। আমরা দলবেঁধে দিনরাত পরিশ্রম শুরু করলাম। কেবল ১৬ নম্বর ওয়ার্ডই নয়, আমি ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেও ব্যাপক প্রচারণা চালালাম। প্রচার চালাতে গিয়ে ভোটারদের নানামুখী প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলো আমাদের। এর মধ্যে এক নম্বর ছিল শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি। তারা বলত এই ঘটনার সঙ্গে সরকারের সর্বোচ্চ মহল সরাসরি জড়িত। কারণ প্রকাশ্যে শেয়ার কেলেঙ্কারির একজন নায়ক ঘোরাফিরা করেন। প্রশাসনযন্ত্রের সর্বস্তরের লোক তার অঙ্গুলি হেলনে চলে। আপনারা কেন এসেছেন। ওনাকে পাঠান। জনমের ভোট দিয়ে দেব- এসব কথার কোনো উত্তর আমাদের কাছে ছিল না। ফলে যেখানে এসব প্রসঙ্গ আসত সেই এলাকা দ্রুত ত্যাগ করতাম। কিন্তু অনেকক্ষণ মন ভার হয়ে থাকত। এরই মধ্যে এক দিন টেলিফোনে ওবায়দুল কাদের সাহেব এবং প্রার্থী আজমত উল্লাহর সঙ্গে কথা বললাম কিছু বাস্তব সমস্যা নিয়ে। কোনো ফল হলো না। অবশেষে নির্বাচনে সরকারি দল পরাজিত হলো। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, আমার ৩টি ওয়ার্ডে আমাদের পক্ষে ফল ভালো হলো। সপরিবারে ঢাকায় ফেরার পর মনটা এমন ভার হয়ে রইল যেন আমি নিজেই পরাজিত হয়েছি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, দলের কাউকে দেখলাম না পরাজয়ের কারণ নিয়ে সত্যিকার অর্থে মন খারাপ করতে বা চিন্তাক্লিষ্ট হতে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে ফিরে এয়ারপোর্টে নেমেই রসিকতা করলেন। একান্ত আলাপচারিতায় জানালেন, তিনি আগেই জানতেন যে সরকারি প্রার্থী পরাজিত হবে, ঠিক যেমনটি জানতেন নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিষয়ে। এসব কথা শুনে আমার মন আরও খারাপ হয়ে গেল। 
শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি নিয়ে আমি কল্পিত একটি ছোট গল্প লিখে ফেসবুকে পোস্ট করলাম। বাংলাদেশ প্রতিদিনের মতো দেশের এক নম্বর পত্রিকাসহ আরও কয়েকটি পত্রিকা এবং শীর্ষ অনলাইন পোর্টাল তাদের প্রথম পৃষ্ঠায় সেটি ছাপাল। আর যায় কোথায়? সারা দেশে হৈ হৈ রৈ রৈ রব পড়ে গেল। আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং দেশের নামকরা এক সিনিয়র সাংবাদিক আমাকে ফোন করে ভয় দেখালেন। বললেন, আপনি কেন এ কাজ করতে গেলেন। বললাম মর্মবেদনা থেকে করেছি। আপনি যেহেতু বললেন তাই আর করব না।
আমার বিশ্বাস ছিল দেশের প্রথিতযশা সংবাদপত্র এবং তাদের মালিকরা অবশ্যই কোনো গণধিকৃত, বিতর্কিত মানুষের পক্ষ অবলম্বন করে আমার প্রতি অবিচার করবেন না। অন্যদিকে মিডিয়া ভুবনের অনেক নামকরা ব্যক্তির সঙ্গে আমারও ব্যক্তিগত সম্পর্ক চমৎকার। কিন্তু ঘটনা যখন ঘটল তখন দেখলাম আমার পরিচিত চেনা ভুবন হঠাৎ অপরিচিত হয়ে গেল কেবল কয়েকজন ছাড়া। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ডাক পড়ল এবং যথারীতি গেলাম। সেদিনই সব প্রধান দৈনিকে আমার লেখাটি ছাপা হয়েছে। আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম।
বিকাল বেলা পটুয়াখালী থেকে কয়েকজন সাংবাদিক ফোন করে বললেন একটি টিভির বিশেষ টিম সেখানে। উদ্দেশ্য আমার দুর্নীতি ও অনিয়মের খোঁজ করা। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাদের সাহায্য করছে। আমি বিষয়টি গায়ে মাখলাম না। কারণ আমি কি করেছি তা আমার ভালোই জানা ছিল। তা ছাড়া আমার প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ২০০৯ সালে একনাগাড়ে ৬ মাস আমার বিরুদ্ধে সিরিজ রিপোর্ট করেছে। এতে করে আমার জন্য শাপে বর হয়েছে। কাজেই আমি আমার আপনজনদের বললাম ওই টিভির লোকদের সব রকম সাহায্য করার জন্য। সম্ভবত আমার নির্বাচনী এলাকা গলাচিপা-দশমিনা অথবা আমার জন্মভূমি ফরিদপুর জেলার সদরপুরে আমার বিরুদ্ধে আকর্ষণীয় কিছু না পেয়ে তারা ঢাকায় আমার অফিসে এক পরিস্থিতির অবতারণা করতে চাইল, যাতে করে আমি প্রভোকট হয়ে তাদের ফাঁদে পা দেই।ওই টিভির লোকজন সকালে এসে আমার অফিসের সামনে ক্যামেরা তাক করে সারাদিন বসে থাকত। অফিসের কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে অকথ্য ভাষায় এমন সব কথা বলত, যাতে লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে এবং সেই দৃশ্য তারা টিভিতে দেখাতে পারে। আমি নিজে পরম ধৈর্য ধরলাম এবং অন্য সবাইকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিলাম। আমার জন্য এই ঘটনা ছিল খুবই লজ্জাকর কারণ আমি নিজেও দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত। তাই লজ্জায় কাউকে বলতেও পারছিলাম না। এভাবেই চলল কয়েক দিন। সম্ভবত আমাদের নির্লিপ্ততার কারণে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠল। তাদের দুটি গাড়ি সার্বক্ষণিক আমাকে অনুসরণ করতে শুরু করল। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি আমি যেখানেই যাই তারা আমার পিছু নিল। এক সময় আমার শঙ্কা হলো কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি শাহবাগ থানার ওসির কাছে অনেকবার ফোন করে সাহায্য চাইলাম। কিন্তু নূ্যনতম সাড়া পেলাম না। মনে হলো, আমি একটি চক্রান্তের মধ্যে পড়ে গেছি। আমার নিয়তি বোধহয় আমাকে ডাকছে।
দুর্ঘটনার দিন আমি একটি সূত্র মারফত জানতে পারলাম, ওরা আমার অফিসের সামনে কিছু টাকার প্যাকেট ফেলে একটি দৃশ্যের অবতারণা করতে চাচ্ছে। অন্যদিকে কোনো ভাড়া করা নারীর মাধ্যমে অফিসে একটি সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছে। এ খবর শোনামাত্র আমি অফিস থেকে বের হয়ে আমার এক বন্ধুর অফিসে রওনা দিলাম। বেলা তখন ১টা। ওরা যখন দেখল শিকার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে তখন আমার পথ আগলে ধরল। আমি পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সিঁড়ি দিয়ে নিচে না নেমে উপরে উঠে রক্ষা পেতে চাইলাম। তারা আমাকে দাঁড় করিয়ে কিছু বাজে শব্দ উচ্চারণ করল। আমি দাঁড়ালাম। তারা ক্যামেরা তাক করল ঠিক আমার পায়ের কাছে। আমি কথা বলতে গিয়ে পা দিয়ে ক্যামেরা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
আমি কোনোমতে দৌড়ে আমার অফিসে ঢুকে পুলিশ, র্যাব ও সাংবাদিক নেতাদের ফোন করলাম। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা সবাই এলেন। প্রায় শখানেক সদস্যের গুণ্ডাবাহিনীও এলো। পুলিশ ও র্যাবের সামনে শুরু হলো তাণ্ডব। পারলে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। র্যাবের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এবং সাংবাদিক নেতাদের হস্তক্ষেপে শারীরিক লাঞ্ছনা থেকে রক্ষা পেলাম। শাহবাগ থানার ওসির দিকে করুণ মুখে তাকালাম। সে এক অর্থপূর্ণ হাসি দিল। সাংবাদিক নেতারা একটি সমঝোতার প্রস্তাব দিলেন এবং উভয়পক্ষ তা মেনে নিয়ে উপস্থিত অন্য মিডিয়ার সাংবাদিকদের সামনে আমরা যৌথ বিবৃতি দিলাম। সিদ্ধান্ত হলো কোনো পক্ষই মামলা করবে না। আমি আমার পূর্ব নির্ধারিত একটি ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য বের হলাম। বিকাল ৬টার দিকে শাহবাগ থানার ওসি ফোন করে জানাল যে, আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। কাজেই আমাকেও একটি কাউন্টার মামলা দিতে বললেন। আমি অফিসে ফিরলাম এবং ওসির পরামর্শ মতো কাজ করলাম।
সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হলো কয়েকটি টিভি চ্যানেলে আমার বিরুদ্ধে প্রচারণা। রাত ১২টার টকশোগুলোতে কিছু কিছু বক্তা আমার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করলেন। সে রাতেই চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রায় জিল্লুর রহমান আমাকে ও ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির বার্তা প্রধান খালিদকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করলেন। সেখানে আমি আত্দপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ পেলাম। বেশির ভাগ দর্শক আমার পক্ষে রায় দিল।
সারাদিনের ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত এবং বিধ্বস্ত দেহ ও মন নিয়ে রাত ১২টার দিকে আমি বাসায় পেঁৗছলাম। স্ত্রী এবার অগি্নমূর্তি ধারণ করল। বলল আমাদের চৌদ্দগুষ্টিতে কেউ কখনো কারও সঙ্গে অশালীন আচরণ করেনি। তুমি কি করে এই কাজ করলে? আমি যতই তাকে বুঝাতে চাইলাম আসল ঘটনা সে ততই আমার প্রতি বিরূপ আচরণ শুরু করল। আমি বললাম, দেখ আমি রোজা ছিলাম। ইফতারও করতে পারিনি। এখন রাত ১২টা, ক্ষুধায় জান বের হয়ে যাচ্ছে- অনুগ্রহ করে কিছু খেতে দাও। সে বলল তোমার ভাত আমি বাড়তে পারব না। এভাবে রাত একটা বেজে গেল। শুরু হলো চ্যানেল আই তৃতীয় মাত্রার অনুষ্ঠান। আমার স্ত্রী পুরো অনুষ্ঠান দেখল এবং আমার ও খালেদের কথা শোনার পর আমার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে আবেগে কাঁদতে লাগল। এর পর ফ্রিজ থেকে ভাত-তরকারি বের করে আমাকে খেতে দিল। রাত তখন ২টা। আমি প্রায় অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়েছিলাম। পেটে খাবার পড়ার পর নিদ্রাদেবীর দয়ায় আমি বিছানার ওপর ঘুমের ঘোরে অচেতন হয়ে পড়লাম।
শাহবাগ থানায় আমার বিরুদ্ধে যেরূপ মামলা হয়েছিল তদ্রূপ সেই টিভির মালিকসহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছিল। আমাকে বলা হয়েছিল যে, পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যাবে না কারও বিরুদ্ধেই। কিন্তু তারপরও আমি মামলার পরের দিনই নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়ে নেই। এতে অনেকের মাথায় বাজ পড়ে। তারা সবাই চাচ্ছিল আমার একটা কিছু হোক। মানে আমি জেলে যাই। এদের সঙ্গে যোগ হলেন কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী, যাদের বিভিন্ন সময় আমি সমালোচনা করতাম বিভিন্ন টকশো, সভা ও সমিতিতে। সারা শহরে গুজব ছড়িয়ে পড়ল আমি গ্রেফতার হচ্ছি। আমার অসুস্থ বড় ছেলেটির কানেও গুজবটি পৌঁছল। সে আমাকে অবাক করে দিয়ে ফোন করে জিজ্ঞাসা করল, বাবা তোমাকে নাকি গ্রেফতার করা হয়েছে?
আইনের একজন ছাত্র হিসেবে আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকছিল না- কীভাবে আমাকে গ্রেফতার করা হবে। কারণ একটি মিথ্যা মামলা হওয়া সত্ত্বেও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আমি জামিন নিয়েছিলাম। কিন্তু রাতে বিষয়টি খোলাশা করলেন স্বয়ং এক প্রতিমন্ত্রী। তিনি অজানা একটি নম্বর থেকে ফোন করে জানালেন যে, সে রাতেই তিনি ওমরা করতে যাচ্ছেন। যাওয়ার আগে তিনি আমাকে দয়াপরবশ হয়ে জানালেন যে, শাহবাগ থানায় একটি জিডি এন্ট্রি হয়েছে। বাদীকে হুমকি প্রদান করা হচ্ছে এবং সেটির ভিত্তিতে জামিন বাতিল হবে আগামীকাল। আমি তার সঙ্গে একটু জিজ্ঞাসু মন নিয়ে কিছু প্রশ্ন করলাম। তিনি উপদেশ দিলেন তর্ক না করা ভালো। উকিলের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য। এর পর আমি একজন সচিবকে ফোন করলাম। তিনিও প্রায় একই কথা বললেন। আমি বুঝলাম, সরকার আমাকে গ্রেফতার করবে। আমি যখন অফিস থেকে বের হচ্ছিলাম তখন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেই। সেখানে বলছিলাম, আমি হয়তো এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছি। মুহূর্তের মধ্যেই তা মিডিয়া জগতে রাষ্ট হয়ে যায়। সবাই ফোন করে জানতে চান। আমি তাদের বলি স্পিকার মহোদয়ের সঙ্গে আলাপের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। এখানে পদত্যাগের সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে একটি চমৎকার ঘটনা। চারদিকে যখন আমার গ্রেফতারের গুজব চরমে তখন আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি তখন পর্যন্ত আমার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব জানি না। তবে তার আশপাশের বেশির ভাগ কর্মকর্তাই আমার বিরুদ্ধে, বলতে গেলে তারা প্রতিপক্ষের মুরিদ। এ অবস্থায় কোনো কিছু না জেনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া আমার জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, আমি গেলাম কিন্তু তার সঙ্গে দেখা করতে পারলাম না_ এমনটি যদি ঘটে, তবে তা মুহূর্তের মধ্যে সংবাদপত্রের শিরোনাম হবে। আমি কয়েকজন সংসদ সদস্যকে ফোন করলাম। কেউই আমার কথা বলার জন্য গণভবনে যেতে সাহস দেখালেন না।
শেষমেশ আমি কেরানীগঞ্জের এমপি দীপু ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি স্পষ্ট করেই বললেন, তুমি আজ অথবা কাল গ্রেফতার হতে যাচ্ছ। তার মতে, উচ্চ মহলের নির্দেশে এসব হচ্ছে। আমি বললাম, যদি আমার ব্যাপারে তারা এতই বিরক্ত হন সেক্ষেত্রে এই দলের এমপি পদ আঁকড়ে থাকার নৈতিক অধিকার থাকে না। আমি কি পদত্যাগ করব? তিনি বললেন, তিনি যদি নিজে আমার অবস্থানে থাকতেন তাহলে অবশ্যই পদত্যাগ করতেন। দীপু ভাইকে বিশ্বাস করি এবং শ্রদ্ধাও করি। তার কথার পর আমি মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি পদত্যাগ করব এবং সে মতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলাম। অন্যদিকে স্পিকার মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে দেখা করার অনুমতি চেয়ে অফিস থেকে বের হলাম। প্রথমে অন্য একটি সরকারি অফিসে যাব, তারপর স্পিকার অফিস। পথে আমার ঘনিষ্ঠ, বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য কয়েকজন বন্ধু ও মুরবি্বদের সঙ্গে কথা বললাম। তারা সবাই পদত্যাগ না করার পরামর্শ দিলেন। কারণ সরকারের শেষ সময়ে এটি রাজনৈতিক মহলে দারুণ বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে এবং বিরোধীরা বগল বাজানোর সুযোগ পাবে।
স্পিকার মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য সংসদে ঢোকার মুখে সব সাংবাদিক আমাকে ঘিরে ধরলেন। আমি তাদের বললাম অপেক্ষা করার জন্য। কারণ স্পিকার মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ ব্যতীত আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না। আমি যখন স্পিকার মহোদয়ের রুমে ঢুকলাম তিনি তখন সেগুফতা ইয়াসমিন এমিলি এমপির সঙ্গে কথা বলছিলেন। আমি আমার সমস্যাগুলো বললাম। তিনি ইন্টারকমে হুইপ আ স ম ফিরোজ সাহেবকে ডাকলেন। ফিরোজ ভাই আসার পর অনেক আলাপ হলো। আমি স্পিকার মহোদয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব জানতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু তিনি কিছুতেই প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করতে রাজি হলেন না। আমাদের মধ্যে অনেক বিষয়ে অনেকক্ষণ ধরে কথা হলো। কিন্তু আশাব্যঞ্জক কিছুই হলো না। বড় হতাশা নিয়ে তার রুম থেকে বের হওয়ার সময় মনে হচ্ছিল- আজ যদি স্পিকার হিসেবে আবদুল হামিদ থাকতেন তাহলে হয়তো অন্যরকম ফল পাওয়া যেত। বাইরে অপেক্ষমাণ শত শত সাংবাদিক ঘিরে ধরল। একটি টিভি সবকিছু লাইভ দেখানোর আয়োজন করেছে। আমি সাংবাদিকদের নিয়ে সংসদে মিডিয়া সেন্টারে গেলাম। মনে মনে গ্রেফতারবরণের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে প্রাণ খুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললাম।সংসদ ভবন থেকে বের হয়ে বন্ধুবর সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের অফিসে গেলাম এবং সেখানে ইফতার সেরে বাসায় ফিরলাম। রাতে স্ত্রীকে বললাম সম্ভবত আগামীকাল গ্রেফতার হচ্ছি। সে শুনল কিন্তু ভাবান্তর হলো না। মনে হলো বিশ্বাস করেনি। পরের দিন বিষণ্ন মনে বাসা থেকে বের হলাম। গলির মোড় থেকে ডিবি পুলিশের একটি গাড়ি আমাকে অনুসরণ শুরু করল। আমি অফিসে পোঁছে কাউকে কিছু বললাম না। আমার অফিসের লোকজন সব ভীতুর ডিম। শুনলে নয় তো কান্নাকাটি করবে অথবা থরথর করে কাঁপা শুরু করবে। পকেটে হাত দিলাম। ৯ হাজার টাকা পকেটে নিলাম। তারপর আনমনে বের হয়ে পড়লাম গাড়ি নিয়ে। ডিবির গাড়ি আমাকে পূর্ববত অনুসরণ করতে থাকল। তারা ডিবির লোক কিনা তা যাচাই করার জন্য আমি মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরে ঢুকলাম। কমিশনার বেনজীর সাহেব আমার পূর্ব পরিচিত। তিনি অফিসে ছিলেন না, তবে তার লোকজন নিশ্চিত করল যে আমাকে অনুসরণকারীরা ডিবির লোকজন। আমি নিশ্চিন্ত মনে সেখান থেকে বের হয়ে সুপ্রিমকোর্টে গেলাম।
সুপ্রিমকোর্টে আমার অনেক সহপাঠী এখন প্রথিতযশা আইনজীবী। ব্যারিস্টার শামীমের রুমে গেলাম। অনেকের সঙ্গে পরামর্শ করে জানলাম যে, শুরুতেই আমি একটি ভুল করে ফেলেছি। অতি আত্দবিশ্বাসী হয়ে আমি নিম্ন আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলাম। অথচ যদি হাইকোর্ট থেকে অগ্রিম জামিন নিতাম তাহলে তা বাতিল করা অত সহজ ছিল না। এখন আমাকে সিএমএম কোর্ট ও জজকোর্ট হয়ে তারপর হাইকোর্টে আসতে হবে। আমি হেসে বললাম, সরকার যে আমাকে প্যাঁদানি মারবে তা কি আমি স্বপ্নেও ভেবেছিলাম। সেখান থেকে বিদায় নিয়ে বসুন্ধরা এলাকায় গেলাম বাংলাদেশ প্রতিদিন অফিসে আমার ওই সময়ের অনুভূতি লিখে দেওয়ার জন্য। এই কাগজটিতে আমি নিয়মিত লিখি। বন্ধুবর সম্পাদক অভ্যর্থনা জানালেন। কাগজ-কলম দিলেন লেখার জন্য। এখানে উল্লেখ্য, চ্যানেল আইয়ের জিল্লুর রহমান এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের নঈম নিজামের মতো বন্ধু পাওয়া কোনো মানুষের জন্য বিরল সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমার শঙ্কটাপন্ন মুহূর্তগুলোতে তাদের অপার সাহায্য ও সহানুভূতি আমি এবং আমার পরিবার কোনোদিন ভুলতে পারব না।
'আমি এখন কেমন আছি', এই শিরোনামে আমি লিখছিলাম। সম্পাদক বললেন ১২০০ শব্দের মধ্যে লেখা শেষ করার জন্য। বেলা তখন ২টার মতো বাজে। খুব দ্রুত লিখতে আরম্ভ করলাম এবং প্রায় ৮০০ শব্দ লিখে ফেললাম। এর মধ্যে সম্পাদক এবং নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিব আমার লেখার টেবিলের সামনে এলেন। পীর হাবিব দুষ্টুমি করে বললেন, এই অবস্থার মধ্যে লিখছেন- আপনি তো সাংঘাতিক মানুষ! সম্পাদক বললেন, এটা এখন আর লিখতে হবে না, পরে লিখলেও হবে। আদালত আপনার জামিন বাতিল করেছে। এই অফিস থেকে বের হলেই আপনাকে গ্রেফতার করা হবে। কাজেই খুব সংক্ষেপে লেখাটি শেষ করেন। সম্পাদকের উপদেশ মতে লিখলাম 'প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ'।
বাংলাদেশ প্রতিদিন যেন আমার নিজের পত্রিকার মতো হয়ে গিয়েছিল। সেখানকার সবাই আমার আপনজন ও প্রিয়জন। সবাই আমার ঘটনায় মর্মব্যথী এবং সংক্ষুব্ধ হলো। চতুর্থ তলা থেকে সদলবলে সবাই নিচে নেমে এসে আমাকে বিদায় জানালেন। সম্পাদক পিঠ চাপড়ে ভরসা দিলেন- Don’t be worried...। আমার গাড়ি তখন বাংলাদেশ প্রতিদিন অফিস থেকে খানিক দূরে এবং ডিবির লোকেরা ঘিরে রেখেছিল। আমি বীরদর্পে সেখানে গিয়ে কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করলাম- আপনারা কি আমাকে এখনই গ্রেফতার করবেন? ওরা বলল- জি। আমি কি আমার গাড়িতে করে কোর্টে যাব নাকি আপনাদের গাড়িতে উঠব? তারা দয়া করে আমার গাড়িতে ওঠার অনুমতি দিল। কিন্তু সঙ্গে তাদের লোকজনও চড়ল। গাড়িতে ওঠার আগে উপস্থিত সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দিলাম। বেলা তখন প্রায় ৩টা। ডিবির কর্মকর্তারা জানাল যে, আমাকে সরাসরি ঢাকা সিএমএম কোর্টে নেওয়া হবে। তারপর নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার। কারাগারের নাম শুনে বেশ ভালোই লাগছিল। কিন্তু আমাদের গাড়ি মগবাজার মোড়ে পৌঁছামাত্র কর্মকর্তারা জানাল- আজ আর কোর্টে যাওয়া হবে না। রাতটা ডিবি অফিসে থাকতে হবে। আমি বেশ বিব্রত হলাম। কেন হলাম সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি।
বিকাল ৫টার দিকে আমরা মিন্টো রোডের মহানগর ডিবি অফিসে পৌঁছলাম। জীবনে এই প্রথম ডিবি অফিসে গমন। যথাসম্ভব নিজেকে সংযত রাখলাম। ড্রাইভারকে বিদায় দেওয়ার সময় আমার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী নজরুল হাউমাউ করে কান্না শুরু করল। তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে দেখি আমারও চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠল। নিজের এই কাপুরুষতা ঢাকার জন্য আমি তাড়াতাড়ি ডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দোতলায় উঠে গেলাম। আমাকে বসতে দেওয়া হলো এডিসি পদমর্যাদার এক কর্তার রুমে। কর্তা বাবু কিছুক্ষণ পর এলেন এবং অমলিন হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন। তিনি জানতে চাইলেন আমি কি ইফতার করব? এবং ইচ্ছা করলে বাসার খাবারও আনাতে পারব। আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে জানালাম যে, বাসার খাবার দরকার নেই। আপনারা যা খাওয়াবেন তাতেই চলবে। অনুরোধ জানালাম আমার স্ত্রীকে ফোন করে প্রয়োজনীয় কিছু কাপড়-চোপড়, একটি বালিশ এবং পেস্ট, ব্রাশসহ অন্যান্য সামগ্রী পোঁছে দেওয়ার জন্য।
গত কয়েক দিনের মর্মবেদনা ও পারিপাশ্বর্িক চাপের কারণে ছিলাম ভীষণ ক্লান্ত এবং রোজার কারণে ভয়ানক তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্ত। ডিবির কর্তারা তাদের সাধ্যমতো আমার জন্য ইফতারির আয়োজন করলেন। বহু বছর পর ইফতারি সামনে নিয়ে শৈশবকালের মতো আজানের ধ্বনির অপেক্ষা করছিলাম। তখনো ইফতারির জন্য ১৫ মিনিট সময় বাকি ছিল। কিন্তু আমার আর তর সইছিল না। এর মধ্যেই আমার স্ত্রী, অসুস্থ বড় ছেলেটি এবং ছোট ছেলেটি সেখানে এলো। স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আনন্দে আমি আত্দহারা হয়ে গেলাম। মনে হলো গত কয়েক ঘণ্টা ধরে সে কেবল আমার জন্যই কেঁদেছে। তার চোখ দুটি বেশ ফোলা ফোলা লাগছিল। ফলে তার চাঁদের মতো গোলাকৃতি মুখে ডাগর দুটি চোখের ফোলা ফোলা ভাব তাকে অনেকটা কিশোরী কিশোরী লাগছিল। মনে পড়ছিল ২৮ বছর আগেকার কথা। বিয়ের পর প্রথম যখন ঢাকা আসছিলাম সেই রাতে সে একটুও ঘুমায়নি। কেবল কেঁদেছিল। সকালবেলা তার চোখের যে অবস্থা হয়েছিল আজ এত বছর পর বর্তমান সরকারের বদান্যতায় আমার প্রথম যৌবনের সেই মধুর বেদনার স্মৃতি পুনঃজাগরুক হলো। গত কয়েক মাসে আমাদের মধ্যে যে দূরত্ব ছিল ডিবি অফিসের পরিবেশের কারণে তা মুহূর্তের মধ্যে দূর হয়ে গেল। মনে হলো আমরা একে অপরকে সত্যিই ভালোবাসি।
আমি যথাসম্ভব স্বাভাবিক আচরণ করলাম এবং পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য হাসি-মশকরাসহ রংতামাশার কথা বলা শুরু করলাম। উপস্থিত ডিবি কর্তারা সব হো হো করে হাসা শুরু করল। আমার স্ত্রীও অনেকটা স্বাভাবিক হলো। আমি যথাসম্ভব স্মার্টনেস দেখিয়ে এমন ভাব দেখালাম যে, এই অফিসের মোটামুটি সবাই আমার পরিচিত এবং গভীর রাতে তারা আমাকে মারধর করবে না। আমার স্ত্রীও কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলতে বলতে ইফতার করল। আমার অসুস্থ বড় ছেলেটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম- সে যেন অনেকটা ফ্রিজ হয়ে গেছে। ছোট ছেলেটি ভয়ার্তভাবে চারদিকে তাকাচ্ছে আর চুপচাপ বসে থেকে অসহায়ের মতো নিঃশ্বাস ছাড়ছে। জন্মের পর থেকেই তারা তাদের বাবাকে সম্মানজনক স্থানে দেখে আসছে। আজকের এই পরিণতিতে সবাই যেন কেমন বোবা হয়ে গেছে।
দুর্ঘটনার পর থেকেই বড় ছেলেটির কথাবার্তা এবং অনুভূতি অসংলগ্ন হয়ে পড়েছিল। ডাক্তার বলেছিল সবকিছু ঠিক হতে ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে। সেই হিসেবে আজকের ঘটনা তার বোঝার কথা নয়। আমি ধারণা করেছিলাম সে হয়তো ব্যায়াম বা বিড়াল নিয়ে কিছু একটা বলবে। কিন্তু সম্পূর্ণ চুপচাপ থেকে গভীর মনোযোগ দিয়ে আমাকে দেখছিল আর ছোট ছেলের মতো বড় বড় নিঃশ্বাস ছাড়ছিল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং মনে মনে স্ত্রীর প্রতি বিরক্ত হলাম অসুস্থ ছেলেটিকে এই বিরূপ অবস্থানে নিয়ে আসার জন্য। আমরা বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললাম। ডিবি কর্মকর্তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে অনুমান করলাম যে, তারা আশা করছে আমার পরিবারের সদস্যরা চলে যাক। আমি এই প্রথম বুদ্ধিমানের মতো উঠে দাঁড়ালাম এবং বললাম তোমরা সব বাসায় যাও কারণ আমি খুব ক্লান্ত এবং আমাকে এখন ঘুমাতে হবে। স্ত্রীর মাথায় হাত বুলালাম। সে ঈষৎ হাসার চেষ্টা করল। ছোট ছেলেটিকে খুব আদর করে চুমু দিলাম। বড়টিকে জড়িয়ে ধরলাম। সেও আমাকে জড়িয়ে ধরল পরম মমতায়। অনেকক্ষণ আলিঙ্গনরত অবস্থায় থেকে টের পেলাম যে, ছেলের চোখের পানিতে আমার কাঁধের একাংশ ভিজে গেছে। সে কানে কানে শুধু বলল, I Love you Baba. তারপর এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন