আওয়ামীলীগ থেকেই প্রথম শুরু হয় বাকশালী প্রতিবাদ। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালের চেপে যাওয়া ইতিহাস।-১

আজকে যারা ৫০-৫৫ বছর বয়স তাদের একবার জিজ্ঞাস করুন তো তাদের জীবনের সব চেয়ে দূঃসময় কোনটা নির্দিধায় উত্তর পাবেন ১৯৭৪ সালের গ্রীস্ম থেকে শরৎ কালটা।

কেন আবার ওই সময় আওয়ামী দূঃশাষনের কারনে দেশে নেমে আসে ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ। আমদানী আর বিতরন প্রক্রিয়ার প্রত্যেকটি স্তরে দূর্নিতী, কালোবাজারী, স্বজনপ্রিতী, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতে চোরাচালানীর কারনে মানূষখেকো বাঘের মত সারা দেশে দূঃর্ভিক্ষ দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করল। মানূষ মারা যেতে

লাগল মশা মাছির মত।

সরকারী দূর্নিতীর মাধ্যমে দেশের খাদ্যদ্রব্য আর পাট ভারতে পাচার করন 
ভয়াবহ আকার ধারন করে। সেই সময়ের এক সরকারী হিসাবে দেখা যায় দেশ স্বাধীন হবার প্রায় সাড়ে তিন বছরে দেশের সীমান্ত দিয়ে কমপক্ষে ছয় হাজার কোটি মূল্যের পন্য সামগ্রী ভারতে পাচার হয়েছিল।

চোরাচালানীকৃত ছয় হাজার কোটি টাকার সাথে অবশ্যই বৈদেশিক মুদ্রায় কালোবাজারের মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যাওয়া বিরাট অংকের টাকা এবং চাল, চিনি, সিমেন্ট অন্যান্য দ্রব্যর বড় বড় কেনাকাটার কমিশনের টাকাও যোগ দিতে হবে। সে হিসাবে সংখ্যাটা দ্বিগুন হওয়াই স্বাভাবিক।

শেখ মুজিবের ব্যাক্তিত্বহীন চাটুকারের অভাব ছিল না। এর মধ্যে প্রধান ছিল তোফায়েল আহাম্মেদ আর শেখ মনি। তথ্য মন্ত্রনালয়ে ছিল তাহের উদ্দীন ঠাকুর। ইতিহাস সাক্ষী এই ঠাকুর কি করেছিল।

তারিখ ১৭ ই সেপ্টেম্বর ১৯৭২ সাল। স্থান ঢাকার পল্টন ময়দান

শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রী হবার মাত্র ৮ মাস। লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ।

অভিযোগঃ স্বাধীনতার পূর্বে প্রদত্ত প্রতিশ্রিতি পালনে ব্যার্থতা।

অভিযোগ কারীদের নেতাঃ ছাত্রনেতা, প্রাক্তন মুক্তিসেনা, শেখ মুজিবের সবচেয়ে বিশ্বস্ত একজন আ স ম আব্দুর রব।

জনতার উদ্দশ্যে রব বলেন,

দেশের স্বাধীনতার পর একটি লোক ও না খেয়ে মারা যাবে না ব লে শেখ মুজিব আশা দিয়েছিলেন। আজ না খেতে পেয়ে প্রচুর লোক মারা যাচ্ছে।

ঐ অভিযোগ গুলোর প্রধান প্রধান বিষয় বস্তু ছিল খাদ্যদ্রব্য সহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম জনগনের ধরা ছোয়ার বাইরে, চারদিকে কেবল ঘাটতি, বাজার সুবিধাবাদীদের হাতে, স্বজন প্রীতি, সরকারী কর্মচারীদের দূর্নীতি, বেকারত্বের পাহাড়, গুম ধরপাকড়, পুলিশের অত্যাচার, দায়িত্বহীন সরকার, সংবাদ পত্রের মুখবন্ধ ইত্যাদি।

রব আরো বলেন,

আওয়ামীলীগরা পাকিস্তানীদের থেকে অনেক বেশী জঘন্য আর দূর্নিতীগ্রস্থ

মুজিবের উদ্দেশ্যে রব বলেন, আপনি আমাদের বেপরোয়া ধরপাকড় করছেন আর উৎপীড়নের সমস্ত যন্ত্রপাতি আমাদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করছেন। আপনি আপনার বক্তৃতায় অস্ত্রের কথা বলেছেন। আপনি কি কোন দিন বন্ধুক চালিয়ে দেখেছেন? আমরা জানি সত্যিকার অস্ত্র কি ভাবে চালাতে হয়’। (এন্থনী মাসকারেনহাসঃ এ লিগ্যাসী অভ ব্লাড)

লক্ষ্যকন্ঠের সমর্থনে রব আরো বলেন, ‘সেনাবাহিনী জনগনের ওপর গুলি চালাবে না। কিন্তু আপনি যদি তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, তাহলে তারা আপনার আর আপানার শাষক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করবে।

বাস্তবতার চাকা ঘুরে গেল। যে মুজিব আঠারো মাস আগে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যে হুশিয়ারী দিয়েছিল তা তার দিকে বুমেরাং হয়ে আসল।

নিজের ওপর থেকে সকল দোষ সহচরদের ওপর ঠেলে দিলেন মুজিব। প্রথমবারের মত পার্টির ওপর চড়াও হলেন নিজের দোষ ঢাকতে। চোরাকারবার, স্বজনপ্রীতি আর দূর্নিতীর অভিযোগে ১৯ জন বরখাস্ত হল।

লোকজন হল আশান্বিত। কিন্তু এযে লোক দেখানো। মুজিব তলে তলে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠছিলো।

তিনি একের পর এক এক জনগনের মৌলিক অধিকার সমূহ খর্ব করতে শুরু করলেন। সাংবিধানিক নিয়ম কানুন, আইনের শাষন, বাকস্বাধীনতা্ মতামতের অধিকার, সুযোগের সমতা, ইত্যাদি সব বিলুপ্ত হল। কায়েম হল দূঃশাষনেরর পরাকাষ্ঠা।

শেখ মুজিব যুদ্ধের ফলশ্রুতি বলে পরিস্থিতি ধামাচাপা দিতে চাইলেন। কিন্তু ব্যাবসায়ীদের কারসাজিতে তেল, নু্ন, সাবান থেকে শুরু করে সকল নিত্য ব্যাবহার্য জিনিসপত্রের দাম কেন সাধারনের নাগালের বাইরে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে মানব দেবতা অপারাগ ছিলেন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন