শাপলা চত্বরে গণহত্যা : আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নিয়ে তোলপাড় : রাতেই জুরাইনে ১৪ মুসল্লির লাশ দাফন কবর ও কবর খননকারী শনাক্ত

শাপলা চত্বরে গণহত্যা; আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নিয়ে তোলপাড় 



শাপলা চত্বরের গণহত্যা বিষয়ে কাতারভিত্তিক খ্যাতনামা টিভি স্টেশন আলজাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। 

আলজাজিরা জানিয়েছে, মতিঝিলের শাপলা চত্বরে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ সরকার। চ্যানেলটির কাছে যে নতুন ভিডিও ফুটেজ এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শেষ রাতে গাড়িতে লাশ তোলা হচ্ছে। জুরাইন কবরস্থানের কবর খননকারী আবদুল জলিল জানান, সেই রাতে তিনি ১৪ জন দাড়িওয়ালা লোককে কবর দিয়েছেন। তাদের গুলি করে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। তবে আবদুল জলিল বাকপ্রতিবন্ধী; তাই তিনি ইশারায় পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। নিহতের সংখ্যা হাতের আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেন তিনি। তাদের কোথায় দাফন করা হয়, তা-ও দেখিয়ে দেন আবদুল জলিল। 
গত মঙ্গলবার রাতে এ খবর প্রচার করে আলজাজিরা। চ্যানেলটির ওয়েবসাইটে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এখনও দেখানো হচ্ছে এ ভিডিও। 
জুরাইনে অনেক হেফাজতকর্মীকে দাফন করা হয়েছে বলে এর আগেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এর সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল না। আলজাজিরার প্রতিবেদন সোশ্যাল মিডিয়ার এসব দাবিকেই প্রতিষ্ঠিত করেছে। 
এছাড়া ঢাকার একটি বিশেষ সংরক্ষিত স্থানে হেফাজতের আরও অনেক নেতাকর্মীর লাশ দাফন করা হয়েছে বলে এখনও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর প্রচারিত হচ্ছে। 
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বলছে, ৬ মে ভোরে অপারেশন ফ্লাশ-আউটে কোনো মুসল্লি মারা যায়নি। তবে হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে ১১ জন নিহত হয়েছে। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেছেন, ঘুমন্ত ও ইবাদতরত মুসল্লিদের ওপর গুলি চালিয়ে ওই রাতে অন্তত তিন হাজার লোককে হত্যা করা হয়। এছাড়া অন্তত ১০ হাজার লোক আহত এবং বহু লোক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। 
শুধু হেফাজত নেতারাই এই দাবি করেনি; দেশ-বিদেশের একাধিক মানবাধিকার সংগঠন এবং গণমাধ্যমও প্রায় একই দাবি করেছে। 
হংকংভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ার হিউম্যান রাইটস কমিশন জানিয়েছে, শাপলা চত্বরে নিহতের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি হতে পারে।
বাংলাদেশের খ্যাতনামা মানবাধিকার সংগঠন অধিকার বলেছে, শাপলা চত্বরে শত শত লোককে হত্যা করা হয়। এরপর ট্রাক ও কভার্ডভ্যানে করে লাশ সরিয়ে ফেলা হয়। 
বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে মার্কিন টিভি স্টেশন সিএনএন জানায়, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা হয়তো কখনোই জানা যাবে না। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট বলছে, ৫ ও ৬ মে অন্তত ৫০ জন লোক নিহত হয়েছে। এটাকে ‘গণহত্যা বলেই মনে হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছে ইকোনমিস্ট। 
তবে সরকারি ভাষ্য নিয়ে বিতর্কের কথা উড়িয়ে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে তদন্ত হতেই পারে। তবে সরকার অথবা দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে না যে এ বিষয়টি নিয়ে কোনো বিতর্ক রয়েছে।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন