বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সফল মানুষদের নামের তালিকা করা হলে সবার অগ্রভাগে কাদের নাম থাকবে?
বিল গেটস? ওয়ারেন বাফেট? বারাক ওবামা? জাকির নায়েক?
বিল গেটস? ওয়ারেন বাফেট? বারাক ওবামা? জাকির নায়েক?
উপরের কেউই বিশ্বের সবচেয়ে সফল মানুষ নন। পৃথিবীর সবচেয়ে সফল মানুষ হচ্ছেন বাংলাদেশের ভিন্নধর্মী আন্দোলনের রুপকার ইমরান এইচ সরকার। উপরে যে চারজন মানুষের নাম উল্লেখ করেছি তারা সবাই কম-বেশী নিজ গুনে স্বস্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এঁদের জন্ম হয়েছে বিত্তের সর্বনিম্নস্তরে, বেড়ে উঠেছেন প্রতিকূলতার চরম সীমার মধ্যে। কিন্তু নিজগুনে আজ তাঁরা নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন সর্বোচ্চ স্তরে। কিন্তু ইনি নিভৃতে রাতের আঁধারে কূটচালে চড়ে এসেছেন।
কিন্তু কে এই ইমরান যিনি এঁদের সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন? চলুন দেখে আসি তার জন্ম থেকে আজব্দি।
দেশের প্রান্তসীমায় কুড়িগ্রামে মুসলিম লীগ নেতা খয়ের উদ্দিনের ঘরে জন্ম আরেক মুসলিম লীগ নেতা আব্দুল মতিন সরকার। খুনি রাজাকার খয়ের উদ্দিনকে বাংলার দামাল ছেলেরা হত্যা করলে নিজের লীগ পরিচয় অটুট রেখে কেবল লীগের আগে "আওয়ামী" শব্দটি যোগ করে তিনি ঢাকায় "শহীদ পরিবার" হিসেবে একটা ফ্ল্যাটবাড়ি সরকারের কাছ থেকে বাগিয়ে নেন। পরবর্তীতে সচেতন নাগরিকদের প্রতিবাদে ঘটনা জানাজানি হলে তিনি তার লীগার মুখোশের পেছনের "মুসলিম" শব্দটি প্রকাশ করতে বাধ্য হন এবং বরাদ্দ বাতিল হয়, যোগ দেন সিপিবি-তে। (অনুসিদ্ধান্ত-১)
আব্দুল মতিন সরকারের ছেলে আজকের ইমরান এইচ সরকার। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া মতিন সরকার এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। পিতার কাছ থেকেই সুবিধাবাদী বাংলাদেশী রাজনীতির প্রথম পাঠ নেওয়া ইমরান সরকার ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠেন, ভর্তি হন রংপুর মেডিকেল কলেজে। ৩১ তম ব্যাচের ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িতদের সাথে কথা বলে জানা যায় প্রথমাবস্থায় তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র ছাত্রসঙ্গঠন ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন। পরবর্তীতে ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে পদ না পেয়ে ক্ষুদ্ধ ইমরান কিছুটা সময় নিশ্চুপ থাকেন, অপেক্ষা করেন ক্ষমতার পালাবদলের। পরবর্তীতে সময়মত তিনি যোগ দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গসঙ্গঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগে। (চিত্র ১ এবং ২)
অনেকে এরপরও বিশ্বাস করতে চান না উনি রাজনীতির সাথে জড়িত কিনা এ প্রশ্নে। এপ্রসঙ্গে ওনার নিজের মুখ থেকেই স্পষ্টত শোনা যাক যেখানে উনি নিজে বলেছেন তিনি রাজনীতি তথা পলিটিক্সের সাথে জড়িত। (চিত্র ৫)
স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে ঘৃণিত এবং ক্ষতিকর ছাত্রসঙ্গঠনের প্রচলিত নিয়মানুসারে তৈলমর্দনকেই উন্নতির একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নেন ইমরান সরকার। শেয়ারবাজার, পদ্মাসেতু থেকে শুরু করে বহুমুখী বিপর্যয়ে যখন সরকার চূড়ান্ত রকমের ব্যর্থ তখন তিনি সবার সাথে শেয়ার করেন একটি "বিটিভি" নোট। (চিত্র ৩)
আর দশটা নিম্নমানের বাংলাদেশী রাজনীতিকের মত তিনিও বঙ্গবন্ধুকে পর্বতের উচ্চতায় ঠেলে দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিক্ষেপ করেন সদ্ববিজীত বঙ্গোপসাগরে। নিজেকেই তিনি দাবী করেন এই প্রজন্মের ধারক-বাহক হিসেবে। অথচ এই প্রজন্মের একজন হিসেবে আমি বলতে পারি, আমরা বঙ্গবন্ধু ও শহীদ জিয়ার মাঝে তফাত করি না। উভয়ই আমাদের কাছে শ্রদ্ধেয়। প্রথমজন যদি স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা হন তবে দ্বিতীয়জন স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। অথচ আর দশজন হটকারী রাজনীতিকের মত তিনিও ব্যস্ত একজনের পূজোয় এবং আরেকজনের নিন্দায়। শুধু তাই নয় এমনকি শহীদ জিয়াকে "রাজাকার" বলেও সম্বোধন করেন এই রাজাকার দৌহিত্র। (চিত্র ৪)
সুবিধাভোগী এই ধোঁয়াটে অপরাজনীতিক শাহবাগের নেতৃত্ব দিতে সরকার কর্তৃক মনোনীত হন সরকারের বিভিন্ন চিহ্নিত অপকর্মের সময়ও সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ায়। সরকারের কাছে ইমরান হলে "দুঃসময়ের বন্ধু" যদিও রাজনীতি বিষারদদের মতে ঐগুলো দুঃসময় হলেও তা সাময়িক ছিল বিধায় ইমরান সরকারকে সমর্থন করেন। তন্মোধ্যে কয়েকটি তুলে ধরা হল-
কালো বেড়ালঃ কালো বেড়াল যখন দূর্নীতির দায়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, এমনকি তখনো কালো বেড়ালকে "পরীক্ষিত সত রাজনীতিবিদ" বলে অভিহিত করেন ইমরান। যদিও কালো বেড়ালের প্রশ্নে হিন্দু-মুসলমান পরিচয় কোন ব্যাপার ছিল না তবুও ইমরান বেড়ালের হিন্দু পরিচয়কে সামনে এনে তার সাফাই গান। বাম-ডান-মধ্যম কোন মিডিয়াতেই কালো বেড়ালের দূর্নীতির বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলা না হলেও যথারীথি এখানে তিনি "সাম্প্রদায়িক" গোষ্ঠীর ইন্ধন খুঁজে পান। যদিও কেউই সামান্যতম স্বরে হিন্দু মন্ত্রী, ভারতের দালাল হিন্দু ইত্যাদি সাম্প্রদায়িক শব্দ কালো বেড়ালের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে নাই, উপরন্তু তিনি নিজেই এইসকল বিষয়বস্তুর অবতারনা করে তার সাম্প্রদায়িক পরিচয়কে বড় করে দেখিয়ে তাকে দোষ থেকে অব্যহতি দেওয়ার দাবী জানান। (চিত্র ৬)
বুয়েট আন্দোলনঃ দেশের সবচেয়ে প্রখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংগঠিত ছাত্রদের গন আন্দোলনকে "ছাগু", "হিজু" ইত্যাদি গালিগালাজ করেন এবং তাদেরকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেন। স্বভাবসূলভ প্রক্রিয়ায় নিজেই নিজেকে তরুন প্রজন্মের উদাহরন বলে দাবী করেন এবং স্বঘোষিত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আন্দোলনকারীদের গনহত্যার মাধ্যমে "নির্মূল" করতে আহ্বান জানান সরকারের প্রতি। যথারীতি সরকারের মত গনবিমুখ বেহায়াপনার ফলে বুয়েটের আমছাত্রদের তীব্র প্রতিবাদের মুখেও দাঁত কেলিয়ে হাসতে থাকেন দেশবরেন্য এ চিকিতসক (চিত্র ৭)। তার মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা সহ সর্বস্তরের বুয়েটিয়ান কেবলমাত্র বুয়েটের "কমার্স" শাখা ব্যাতীত। (চিত্র ৮)
নবপ্রজন্মে আদি কুলষিত রাজনীতিঃ সরকারের প্রতি সর্বদা আনুগত্য প্রদর্শনকারী এই অপরাজনীতিক নতুন প্রজন্মের একজন নেতা হিসেবে নিজেকে জোড় করে উপস্থাপন করে নতুন প্রজন্মকে গেলাতে চান যে বর্তমান সরকারই মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র পক্ষের শক্তি যেখানে "মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি" শ্লোগানটি এদেশে গালিতে পরিনত হয়েছে। (চিত্র ৯)
মূলত এসব কারনেই সরকার তাকে শাহবাগের নেতা হিসেবে মনস্থির করে। শাহবাগ দুর্ঘটনা শুরুর আগে অনলাইন এক্টিভিস্ট কিংবা ব্লগার- কোনটি হিসেবেই পরিচিতি ছিল না ইমরানের। তাই তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় বের করতেও বেগ পেতে হয় প্রতিপক্ষের, বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়।
ইংরেজীতে বাক্য গঠনে অক্ষম এই শাহবাগী নেতা কিভাবে মেডিকেল থেকে পাশ করলেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে একই প্রতিষ্ঠান থেকে নবম ব্যাচে এম,বি,বি,এস পাশ করা আমার পিতার। এছাড়াও ওএসডির মত অস্বচ্ছ এবং দূর্নীতির আখড়াতে তিনি কিভাবে এত সহজেই গেলেন তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে। বর্নাঢ্য ছাত্ররাজনৈতিক জীবনের পর তার সমস্ত চাওয়া-পাওয়া কিভাবে তরতর করে পূরন হচ্ছে এটাও একটা বড় প্রশ্ন। পিএইচডি করার জন্য আমার বাবার প্রয়োজন ছিল ওএসডি পদ। ২০০৫-২০০৮, পুরো তিন বছর চেষ্টা করে আমার বাবা এটা লাভ করেন। অথচ সেখানে.... (চিত্র ১০, ১১)
এই বর্নাঢ্য অপরাজনীতিকের নেতৃত্বে শুরু হয় বাংলাদেশের সর্ববৃহত অরাজনৈতিক কর্মসূচী! হলুদ আলোয় ঢেকে দেওয়া হয় সাদা চাদর। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিকৃতি ঘটানো হয় বাম-মিডিয়াগুলোর নেতৃত্বে। এর আগের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক বিকৃতি ঘটায় এরাই মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে, কাদের সিদ্দিকী, শহীদ জিয়া, সাঈদী প্রভৃতিদের রাজাকার বানিয়ে আর শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুনদের মুক্তিযোদ্ধা অভিহিত করে। (চিত্র ১২)
অনুসিদ্ধান্ত-১ একজন সুবিধাভোগী সর্বদাই সুবিধাভোগী। একসময় ব্যবসা হত ধর্মের, একারনে সে আশ্রয় নিয়েছিল "মুসলিম" লীগের। এরপর সুন্দরী গৃহিনীদের ভোগ করার সুযোগ করে দেয় রাজাকার বাহিনী। তাই সে যোগ দেয় রাজাকার বাহিনীতে। রাবন হেরে যাওয়ায় রামায়নে গুনাকীর্তন হয় রামের। এরপর তাই সূত্রানুসারে তিনি আজ আওয়ামী লীগারের। একজন সুবিধাভোগীর কোন ধর্ম নাই, দল নাই, গোত্র নাই। তার একতা পরিচয়- তিনি গিরগিটি। এবং এভাবেই একাত্তরের ধর্ষকেরা আজকেও ধর্ষন করে যাচ্ছে। তফাত কেবল তখন "রাজাকার" পরিচয়ে ধর্ষন করত আর এখন "আওয়ামী লীগ"।
চিত্র ১
চিত্র ২
চিত্র ৩
চিত্র৪
চিত্র ৫
চিত্র ৬
চিত্র ৭
চিত্র ৮
চিত্র ৯
চিত্র ১০
চিত্র ১১
চিত্র ১২
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন