বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিভিন্ন মামলায় তারেক রহমানের জামিন পাওয়ায় বিস্মিত হয়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল তাদের। তারেকের মুক্তি পাওয়ার পর ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে অনেক উদ্বিগ্ন ছিলেন সরকারের উপদেষ্টারা। মার্কিন দূতাবাসও এ নিয়ে গভীর মনোযোগ দেয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এতে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে সামান্য চাঙ্গাভাব দেখা দেয়। আর বিষয়টির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখে আওয়ামী লীগ। তারা কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির ব্যাপারে আরও সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন গোপন দলিলে তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি এরকমই মন্তব্য করেছেন। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ক বার্তাটি ওয়াশিংটনে পাঠিয়েছিলেন মরিয়ার্টি।
ওই তারবার্তায় বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত ও সহিংসতাপরায়ণ ছেলে তারেক রহমান সুপ্রিমকোর্টে জামিন পেয়েছেন। পেয়েছেন বিদেশে সুচিকিৎসার অনুমতি। তার জামিন রুখতে সরকারের শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে গেছে। খালেদা জিয়াও কিছুদিনের মধ্যে ছাড়া পেতে পারেন। এসব ঘটনায় পরিস্থিতি সামাল দিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অযোগ্যতাই প্রমাণিত হয়েছে। বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যোগাযোগ উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম কাদের রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, তারেকের মুক্তির ঘটনায় সরকার ও সংশ্লিষ্টরা বিস্মিত হয়েছেন। গোলাম কাদের জানান, তিনি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থরা তারেকের জামিন ঠেকাতে অ্যাটর্নি জেনারেলের ব্যর্থতাকেই দায়ী বলে মনে করেন।
বার্তায় আরও বলা হয়, কঠোর শর্তে প্যারোলের আলোচনার মধ্যেই তারেকের মুক্তির ঘটনাকে বিজয় হিসেবে উদযাপন করে তার পরিবার ও বিএনপি। প্যারোলের আলোচনা চলাকালেই তারেকের পক্ষে আবেদন করা তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের ভূমিকা এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি। ডা. জোবাইদা রহমানের আইনজীবীরা আদালতে এটি প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন, যে কোনো উপায়েই হোক, তারেককে কারাবন্দি রাখবে সরকার। এজন্য প্রয়োজনে সরকার তারেক রহমানের নামে নতুন আরও মামলা করবে।
বার্তায় বলা হয়, তারেকের পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য তারেক সম্ভবত যুক্তরাজ্য বা জার্মানিতে যাবেন। তবে তারেকের মুক্তি পাওয়ার এ ঘটনা কারাবন্দি খালেদা জিয়ার ‘আপসহীন নেত্রীর’ তকমাকে আরও শক্তিশালী করেছে। বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, তারেকের মুক্তির কয়েক দিন আগে বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বার্তায় রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেন, তারেকের মুক্তির ঘটনা সরকার ও সেনাবাহিনীসহ সবাইকে হতবাক করেছে। এতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অযোগ্যতা স্পষ্টতই প্রমাণিত হয়। বিএনপি এ থেকে তাদের খারাপ সময় দূর করার জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও তাদের নেতাকর্মীদের মুক্তির ব্যাপারে সরকারের বিপক্ষে আরও জোরালো ভূমিকা নেবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন