শেষ ইচ্ছা জেনে খুন করত মামুন
ল্যাবরেটরিতে মানুষরূপী দানব বানিয়েছিলেন ড. ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। পরে সেই দানবের হাতেই খুন হতে হয় তাকে। বাংলাদেশেও অনেক ডনকে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
ছেলেটির বয়স ২০ থেকে ২২। কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা। পরনে কালো প্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি। দুই হাত জোড় করা অবস্থায় হাঁটু গেড়ে বসা। তার উল্টো পাশে আট থেকে ১০ জন যুবক। তাদের একজন পিস্তলে গুলি লোড করছে। কালো কাপড়ে বাঁধা ছেলেটি অনুনয় বিনয় করছে। বলছে, ‘আমারে জানে মাইরেন না ভাই।’ পিস্তল হাতের যুবকটি বললেন, ঠিক আছে, তুই যেমনে কবি, ওমনেই হইবো। এইবার বল, তোর শরীরের কোন দিকে গুলি করলে কষ্ট কম হইবো। মনে কর, এইটাই তর জীবনের শেষ ইচ্ছা।’ এ কথা শুনেই হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে ছেলেটি। পা ধরে, মাফ চায়, কসম কাটে, কত কী! কিন্তু পিস্তল হাতের যুবকটির এক কথা, কোথায় গুলি করলে কষ্ট কম হবে। বার বার একই প্রশ্ন করে যাচ্ছে সে। এক সময় চোখ বাঁধা ছেলেটির পায়ে পিস্তল ঠেকিয়ে বলে, ঠিক আছে, তরে পায়ে গুলি করি। এ কথা বলেই ট্রিগারে চাপ দেয়। গুলি পায়ের এক দিকে ঢুকে আরেক দিকে বেরিয়ে যায়। ‘ওরে বাবা’ বলে চিৎকার করে ছেলেটি। সহযোগীরা ছেলেটিকে ঝাপটিয়ে ধরে রাখে। মুখের ভিতর গুঁজে দেয় কাপড়। এবার
বুকে, হাতে এবং শেষে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি চালাল। গগনবিদারি চিৎকার হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। চারদিকে নিস্তব্ধতা। খুনি এবার সহযোগীদের নির্দেশ দিয়ে বলল, ‘যা লাশটা মাটিতে পুঁইতা রাখ গা।’ ঢাকার আমিনবাজারের তুরাগ নদীর পাড়ে এভাবেই একের পর এক খুন করেছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন। যিনি বর্দির (বরদেশী গ্রামের ছোট নাম) মামুন নামেই পরিচিত। তার পুরো নাম খন্দকার মামুন। কথা বলতে বলতে মানুষ খুন করা ছিল তার নেশার মতো। তবে খুনের আগে জীবনের শেষ ইচ্ছা জেনে নিত মামুন। মামুনের কাছে শেষ ইচ্ছা বলতে শরীরের কোথায় গুলি করা হবে-তা জেনে নেওয়া। এভাবেই শেষ ইচ্ছা জেনে নিয়ে খুন করত কাছ থেকে ধীরে সুস্থে।
বুকে, হাতে এবং শেষে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি চালাল। গগনবিদারি চিৎকার হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। চারদিকে নিস্তব্ধতা। খুনি এবার সহযোগীদের নির্দেশ দিয়ে বলল, ‘যা লাশটা মাটিতে পুঁইতা রাখ গা।’ ঢাকার আমিনবাজারের তুরাগ নদীর পাড়ে এভাবেই একের পর এক খুন করেছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন। যিনি বর্দির (বরদেশী গ্রামের ছোট নাম) মামুন নামেই পরিচিত। তার পুরো নাম খন্দকার মামুন। কথা বলতে বলতে মানুষ খুন করা ছিল তার নেশার মতো। তবে খুনের আগে জীবনের শেষ ইচ্ছা জেনে নিত মামুন। মামুনের কাছে শেষ ইচ্ছা বলতে শরীরের কোথায় গুলি করা হবে-তা জেনে নেওয়া। এভাবেই শেষ ইচ্ছা জেনে নিয়ে খুন করত কাছ থেকে ধীরে সুস্থে।
মামুন এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে, আমিনবাজারে তার নাম মনে করলে এখনো মানুষ আঁতকে উঠে। এই মামুন এক সময় খুন হওয়ার পর আমিনবাজারের মানুষ যেন প্রাণ ফিরে পায়। ওই সময়ে সিরিজ গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। একসঙ্গে তিনজন, দুজন গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। অতিষ্ঠ মানুষ মামুন খুনের পর তার সহযোগীদের যেখানে পেয়েছে সেখানেই গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেছে। মামুনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এমন একটি সূত্র জানায়, হ্যাঙ্গলা পাতলা গড়নের মামুনের ভীষণ সাহস ছিল। সব সময় অস্ত্র বহন করত। ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াত। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ সাল থেকেই রাজধানীর সবচেয়ে বড় মাদকের আখড়া ছিল এই আমিনবাজার। রাজধানীর উপকণ্ঠ আমিনবাজারের এ জায়গাতেই ভিড়ত ফেনসিডিলের চালান। যার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করত বর্দির মামুন। আর এই মাদকের ডিপো নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে খুন-খারাবি থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধই করেছে মামুন। মামুন বাহিনীতে শুধু ওই এলাকার অপরাধীরাই নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকার দুর্ধর্ষ অপরাধীদের নিয়ে এসেছিল মামুন। পুলিশও মামুনের আখড়ায় হানা দিতে এক সময় ভয় করত। যে কারণে মামুন চলাফেরা করত বুক চিতিয়ে। মাদক ব্যবসায় অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান মামুন। অস্ত্রের ভাণ্ডার গড়ে তোলেন আমিনবাজারে। রাজধানীর দুর্ধর্ষ অপরাধীদের নিয়ে গড়ে তোলে তার নিজস্ব বাহিনী। যারা আমিন বাজার থেকে শুরু করে রাজধানীর শ্যামপুর পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াত। আমিনবাজারের বরদেশী গ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা তুরাগ নদীর তীর ছিল তার খুন করার জায়গা। মাদকের ব্যবসায় যারা প্রতিবাদ করত বা নতুন করে মাদক ব্যবসা শুরু করত তাদেরকেই ধরে নিয়ে যাওয়া হতো নদীর তীরে। যেখানে সন্ধ্যার পর মানুষ চলাচল করে না। সেখানেই বসত তার খুনের আসর। তার প্রতিপক্ষ গুলজারকে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়েছিল। সাভার থানার ওয়ারেন্টের আসামি মামুন এতটাই দুর্ধর্ষ ছিল যে, অস্ত্র হাতে সাভার থানায় গিয়ে পুলিশ সদস্যদের হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছে।
’৯০ সালের দিকে মামুনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাধে বিকাশ আর প্রকাশের সঙ্গে। সমঝোতার কথা বলে মিরপুর এলাকায় মামুনকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই কাটা রাইফেল ঠেকিয়ে মামুনকে হত্যার জন্য গুলি চালায় প্রকাশ। গুলিবিদ্ধ মামুনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে যায় মামুনকে গ্রেফতারের জন্য। এ খবর মামুনের কাছে পৌঁছে যায়। হাসপাতাল থেকেই ট্রলিসহ তার সহযোগীরা বের করে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায় মামুনকে। এরপর সে সুস্থ হয়ে ওঠে। বেপরোয়া হয়ে পড়ে মামুন। রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসী আসলাম, সুভ্রত বাইন, পিয়ালসহ আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। রাজধানীর এই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এক জোট হয়ে মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটে। ১৯৯৬ সালে মিরপুর এলাকায় মোল্লা মাসুদ গুলি করে হত্যা করে মামুনকে। ঈদের আগে স্ত্রীকে নিয়ে শপিং করে রিকশায় ফিরছিল মামুন। কিন্তু আগে থেকে ওতপেতে থাকা মোল্লা মাসুদের বাহিনী তাকে গুলি চালায়। মামুনও গুলি চালালেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। গুলিবিদ্ধ মামুন নিহত হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন