ফিল্মি স্টাইলের কামাল পাশা
ল্যাবরেটরিতে মানুষরূপী দানব বানিয়েছিলেন ড. ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। পরে সেই দানবের হাতেই খুন হতে হয় তাকে। বাংলাদেশেও অনেক ডনকে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
সাত সকালে রিভেলদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ায় ২৬-২৭ বছরের এক যুবক। এলোমেলো চুল। পরনে তার জিন্সের প্যান্ট, প্রিন্টের শার্ট। চিৎকার করে রিভেলকে ডাকছিল। এত সকালে কে ডাকাডাকি করছে, তা দেখার জন্য রিভেলের মা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ান। যুবকটিকে তিনি বলেন, রিভেল ঘুমিয়ে আছে। বিনয়ের সঙ্গে যুবকটি তখন বলল, খালাম্মা রিভেলকে খুব দরকার। যুবকটি চেনাজানা বলেই মা রিভেলকে ডেকে দেন। রিভেল ঘুম থেকে উঠে বাসার বাইরে গিয়ে যুবকটির সঙ্গে দেখা করে। দুজনে কথা বলতে বলতে সামনের দিকে চলে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পর একটি নীরব স্থানে গিয়ে যুবকটি তার পকেট থেকে একটি পিস্তল বের করে। রিভেল কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি চালায়। গুলি রিভেলকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে বেরিয়ে যায়। রক্তাক্ত রিভেল নর্দমায় পড়ে থাকে। আশপাশের লোকজনের সন্দেহ হওয়ার আগেই যুবকটি ওই স্থান থেকে সরে যায়। এর আধা ঘণ্টা পর ওই যুবকটি আবারও ফিরে যায় রিভেলদের বাসায়। এবার রিভেলের বড় ভাই জুয়েলকে প্রয়োজন। একই ভাবে জুয়েলকে ডাকতে থাকে সে। জুয়েল বেরিয়ে আসে। কথা বলতে বলতে তারা দুজনে এগিয়ে যায় সামনের একটি রাস্তার ধারে। যুবকটি এবার আর কোনো নীরব স্থান খুঁজেনি। রাস্তার ওপরই জুয়েলের শরীরে পিস্তল ঠেকিয়ে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। রক্তাক্ত জুয়েল পড়ে থাকে রাস্তায়। হাতে
ধরা পিস্তল উঁচু করে এবার দৌড়ে পালায় যুবকটি। ২০০০ সালের ৫ মে’র ঘটনা এটি। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এভাবেই আধা ঘণ্টার ব্যবধানে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ওই যুবকটি ফিল্মি স্টাইলে দুই ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। একজন মাত্র খুনি ঠাণ্ডা মাথায় পরপর দুটি খুন করে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা পুলিশের কেস হিস্ট্রিতেও বিরল। আর ঠাণ্ডা মাথার এই খুনি হলেন রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী কামাল পাশা। পলাতক থাকা অবস্থায় যার মাথার মূল্য সরকার লাখ টাকা ঘোষণা করেছিল। বর্তমানে দুর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসী কারাগারে আটক রয়েছেন। একের পর এক ফিল্মি স্টাইলে খুনের ঘটনা ঘটালেও তার পরিবার প্রথম থেকেই দাবি করে আসছিল, তাদের সন্তান মানসিক প্রতিবন্ধী। মানসিক সমস্যার কারণে কামাল পাশাকে চিকিৎসাও করানো হয়েছিল। পরিবারের এই দাবির পর থেকে কামাল পাশা আন্ডারওয়ার্ল্ডে ‘পাগলা পাশা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন