খেজুর যেসব রোগের ঔষধ

রোজা-রমজান এলেই আমাদের খেজু্র খাওয়ার পরিমান কিছুটা বেড়ে যায়। খেজুর খুবি পুষ্টিকর একটি ফল। পুষ্টিমানে যেমন এটি সমৃদ্ধ তেমনি অসাধারণ এর ঔষধিগুণ। রোজা রেখে ইফতারে হয়তো অনেকেই খেজুর খাই। তারপর সারা বছর আর খেজুরের খোঁজ রাখি না। বলা যায়, খেজুর খাওয়া আমাদের শুধু একমাসের অভ্যাস। অথচ, খেজুর সারা বছরই খাওয়া যেতে পারে। খেজুর খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিই হবে। আসুন জেনে নেয়া যাক খেজুরের পুষ্টিমান ও ঔষধিগুণ।



পুষ্টিমান:
প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে পাওয়া যায় ২৭৭ কিলোক্যালরি শক্তি। এতে
শর্করা ৭৪.৯৭ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮১ গ্রাম, ফ্যাট ০.১৫ গ্রাম, কোলেস্টরল ০.০০ গ্রাম, ফাইবার ৬.৭ গ্রাম রয়েছে। খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, সোডিয়াম, কপার, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ফসফরাস, থায়ামিন, নাইয়াসিন, রিবোফ্ল্যাভিন, বিটা-ক্যারোটিন সহ নানারকম স্বাস্থ্যউপকারি উপাদান। তবে শুকনা খেজুরে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়।
ভেষজগুণ:
খেজুর একটি আশ্চর্য খাদ্য উপকরণ। শুধু খেজুরগাছের ফল নয়, ফুল, পাতা, ফলের বীজ আর মূলের রয়েছে অসাধারণ ভেষজগুণ। নিয়মিত খেজুর খেলে সেরে যেতে পারে আপনার কঠিন সব অসুখ।
ক্যান্সার প্রতিরোধ:
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি আর এটি প্রাকৃতিক আঁশে সমৃদ্ধ। গবেষণায় দেখা গেছে খেজুরে আছে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান। অন্ত্রের ক্যান্সার নিরাময়ে খেজুর খুব উপকারি। আর নিয়মিত খেজুর খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
প্রসব বেদনা কমাতে:
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুসলিম মহিয়সী মরিয়ম (আ.) যখন প্রসব বেদনায় কষ্ট পাচ্ছিলেন তখন তিনি একটি খেজুর গাছের নিচে বসেছিলেন। বাতাসে গাছ নড়ার ফলে যে খেজুর নিচে পড়েছিল তা খেয়ে তার ব্যথা উপশম হয়েছিল। বর্তমানেও সৌদি আরবের অধিবাসীরা প্রসব-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে এই উদাহরণটি অনুসরণ করে থাকেন। খেজুর জরায়ুর মাংসপেশির দ্রুত সংকোচন-প্রসারণ ঘটিয়ে তাড়াতাড়ি প্রসব হতে সাহায্য করে। এছাড়া, এ ফল প্রসব-পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।
হৃদরোগের মহৌষধ:
খেজুর হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রক্তপরিশোধনে ভূমিকা রাখে। হৃৎপিণ্ডের সংকোচন-প্রসারণ স্বাভাবিক রাখে। তাই হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য খেজুর অসাধারণ উপকারি।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: খেজুরে আছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন এ। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও খেজুর অত্যন্ত কার্যকর।
শক্তিদায়ক:
রোজায় দীর্ঘসময় খালি পেটে থাকার কারণে দেহে প্রচুর গ্লুকোজের প্রয়োজন হয়। খেজুরে অনেক গ্লুকোজ থাকায় এ ঘাটতি পূরণ হয়। এটি রক্ত উৎপাদনকারী।
হাড়কে মজবুত করে:
ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম। যা হাড়কে মজবুত করে। হাড়ক্ষয় রোগের হাত থেকে রাখে নিরাপদ।
এছাড়াও খেজুর নানারোগের ঔষধ; যেমন খেজুর হজমশক্তি বর্ধক, পাকস্থলীর ও যকৃতের শক্তি বাড়ায়, কামশক্তি বর্ধক, মুখে রুচি আনে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমায় উপকারি। পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারি। খেজুরের বিচি রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে। খেজুরবিচিচূর্ণ মাজন হিসেবে ব্যবহার করলে দাঁত পরিষ্কার হয়। খেজুর ফুলের পরাগরেণু পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করে শুক্রাণু বৃদ্ধি করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন