শিক্ষিতের মাপকাঠি এবং সার্টিফিকেট অব আওয়ামীটেন্সি

একজন সুহৃদ একটি ব্যানারের ছবি তুলে আমার কাছে পাঠিয়েছেন। ব্যানারটি কিছুদিন আগের হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে আলোচনার দাবি রাখে। এই ব্যানারটির প্রথম লাইনে বামদিকে জয় বাংলা, মাঝখানে আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সর্ব ডানে জয় বঙ্গবন্ধু। দ্বিতীয় লাইনে আরেকটু বড় অক্ষরে লেখা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তৃতীয় লাইনে আরো বড় অক্ষরে ও ইনভার্টেড কোমার ভেতরে লেখা, 'ইউর সান ইজ ভেরি স্মার্ট এন্ড ইনটেলিজেন্ট' । চতুর্থ লাইনে বক্তার নাম, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা। পঞ্চম লাইনে যে এই ব্যানার টানিয়েছেন তার নাম , সাইদুল করিম মিন্টু। ষষ্ঠ লাইনে তার পরিচয় , মেয়র,
ঝিনাইদহ পৌরসভা। ব্যানারটিতে তিন জনের ছবির সাথে এই মেয়র সাবের ছবিও রয়েছে।

আগন্তক অতিথিকে স্বাভাবিক সৌজন্যতার খাতিরে বলে ফেলা বারাক ওবামার এই কথাটিকে সফরসঙ্গী এক সাংবাদিক দেশে এসে সংবাদ শিরোনাম করে ফেলে। কোন সরকার প্রধান যদি তার চল্লিশ বছরের অটিসটিক সন্তান নিয়েও হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করতেন তবে বারাক ওবামা একই ধরনের শব্দ ব্যবহার করে তার প্রশংসা করতেন। এই প্রশংসার মর্মটি সেদিন যেমন ঐ সাংবাদিক ধরতে পারেন নি। তেমনি পারেন নি এই মেয়র সহ অসংখ্য আওয়ামী ভক্ত। এরা যেমন উৎকটভাবে নিজেদের কৃতিত্ব প্রকাশ করেন তেমনি নিষ্ঠুরভাবে প্রতিপক্ষকে লুক ডাউন করেন বা নিচু করে দেখেন।

সার্টিফিকেট অব কম্পিটেন্সি (Certificate of Competency) সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা রয়েছে। বিশেষ করে এরোনোটিকেল এবং মেরিটাইম সেক্টরের সনদকে সার্টিফিকেট অব কম্পিটেন্সি বলা হয়। সংক্ষেপে বলা হয় সিওসি ( COC)। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সনদের সাথে এই বিশেষ সনদের পার্থক্য হলো সাধারন সনদ কোনদিন বাতিল হয় না। কিন্তু এই বিশেষ সনদধারীর পেশাগত মারাত্মক ভুল বা কোন গাফিলতির কারনে এই সনদ বাতিল হয়ে যেতে পারে। সর্বশেষ টেকনোলজি সম্পর্কে নিজেকে অবগত রাখতে না পারলে এই সনদের কার্যকারিতা থাকে না। মানুষের অমূল্য জীবন কিংবা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের সম্পদের নিরাপত্তার জন্যেই এই কড়াকড়িটুকু করা হয়।

এখন মনে হচ্ছে দেশে একই ধরনের আরো একটি সার্টিফিকেট চালু হয়ে গেছে। এর নাম সার্টিফিকেট অব আওয়ামীটেন্সি (Certificate Of Awamitency)। সংক্ষেপে বলা যেতে পারে সিওএ (COA)।

ভ্যালিড (valid) সিওসি ( COC) ছাড়া যেমন জাহাজ বা বিমান চালানো যায় না তেমনি এই ভ্যালিড সিওএ ( COA) ছাড়া কেউ এই বঙ্গদেশ চালাতে পারবেন না। এমনকি সরকারী চাকুরি কিংবা কোন সরকারী দয়া দাক্ষিণ্য পাওয়া এই সিওএ ছাড়া সম্ভব হবে না।

বামপন্থিরা এতদিন যারা বড় বড় কথা বলতেন তারাও এই সার্টিফিকেট অব আওয়ামী টেন্সি অর্জন করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। বরং এই সিওএর বদৌলতে তারাই আজ বড় আওয়ামী লীগার হয়ে পড়েছেন।
এই সিওএ থাকলে রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যেতে পারে। আবার এই সিওএ না থাকলে সেক্টর কম্যান্ডার পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধাও রাজাকার বনে যেতে পারেন।

শুধু তাই। নয় আপনি যত বড় শিক্ষিত হোন না কেন এই সার্টিফিকেট অব আওয়ামীটেন্সি না থাকলে আপনি শিক্ষিত বলে গণ্য হবেন না। এদের দৃষ্টিতে তারেক রহমান অশিক্ষিত। এদেশের সবচেয়ে সফল সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান এদের বিবেচনায় অশিক্ষিত। তারেক রহমান ও তাঁর বাবাকে খাটো করতে গিয়ে পুরো সেনাবাহিনীর পেশাগত সনদগুলিকেও খাটো করা হয়েছে।

কিন্তু তারেক রহমান অশিক্ষিত হলে বঙ্গবন্ধুও তো তাই বিবেচিত হওয়া উচিত। এটুকু উপলব্ধির মত জ্ঞান প্রথম শ্রেণীর সিওএ প্রাপ্ত হানিফদের অবশিষ্ট রয়েছে কি না বোঝা যাচ্ছে না। কারন বঙ্গবন্ধু যতটুকু পাশ দিয়েছিলেন তাঁর তুলনায় তারেক রহমানের পাশ কোন ক্রমেই কম নয়।

যারা এই ধরনের আলোচনায় মশগুল থাকেন তাদের শিক্ষাগত মান ও মনন নিয়েই প্রশ্ন দেখা দেয়। এসব নিয়ে ত্যাক্ত বিরক্ত দেশবাসীর ক্ষোভটি প্রকাশ পেয়েছে গোলাম মাওলা রনির একটি উক্তিতে, " অযোগ্য,অপদার্থ ও অশিক্ষিত নেতৃত্বের হাতে পড়েছে আজকের আওয়ামী লীগ।"

রনির সাথে দ্বিমত পোষন করা আসলেই কঠিন। জয়কে নিয়ে ওবামার মন্তব্য প্রচারকারী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সবার দিকে তাকালে একই ভাব ও ধারনা মনে জাগ্রত হয়।

মিনার রশিদ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন