দুর্ধর্ষ বিকাশের রাজকীয় প্রস্থান
ড. ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ল্যাবরেটরিতে মানুষরূপী দানব বানিয়েছিলেন। পরে সেই দানবের হাতেই খুন হন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। বাংলাদেশেও অনেক ডনকে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
১৪ ডিসেম্বর, ২০১২। গাজীপুর কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভোর থেকে চারটি দামি গাড়ি পার্ক করা। ছয়-সাত জন অস্থিরভাবে পায়চারি করছেন। একটি গাড়িতে দুই নারী বসা। সকাল ৮টায় কাশিমপুর-২ কারাগার থেকে বেরিয়ে এলেন এক ব্যক্তি। জিন্সের প্যান্ট আর জ্যাকেট পরা। চোখে সানগ্লাস। দুই পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে লোকটি বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির সামনের লোকগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেল। তারা দৌড়ে লোকটির সামনে গিয়ে সালাম দিলেন। ওই স্থান দিয়ে হেঁটে যাওয়া কারারক্ষীরাও সালাম দিচ্ছিলেন তখন। তবে এসব কিছুতে কোনো ভ্রৃক্ষেপ নেই লোকটির। তিনি শুধু মাথা ঘুরিয়ে চারপাশটা দেখে নিলেন। হঠাৎ লোকটি হাঁটার গতি বাড়িয়ে একটি গাড়িতে চড়ে বসলেন। চারটি গাড়ি একসঙ্গে বেরিয়ে গেল কারাগার কম্পাউন্ড
থেকে। কারাগারের সীমানার বাইরে অপেক্ষায় ছিল আরও দুটি গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল। লোকটিকে বহন করা গাড়ির গতি কমে গেল। জানালা দিয়ে মোটরসাইকেল আরোহীর সঙ্গে কথা বললেন লোকটি। এরপরই ছয়টি গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে ছুটতে শুরু করল। লোকটি দেশের শীর্ষস্থানীয় কোনো রাজনৈতিক বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব নন। তিনি ছিলেন ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন। নাম তার বিকাশ। পুরো নাম বিকাশকুমার বিশ্বাস, যাকে লোকজন চেনে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন হিসেবে। ওই দিন জামিনে মুক্তি পেয়ে এভাবেই কাশিমপুর কারাগার থেকে বিকাশ বেরিয়ে যান। বিকাশের মুক্তির খবর মুহূর্তেই চাউর হয়ে যাওয়ার পর সারা দেশেই তোলপাড় শুরু হয়। তাকে ফের গ্রেফতারে পুলিশ প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে। কিন্তু এ তৎপরতার রেশমাত্র পড়েনি বিকাশের এই ছুটে চলায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কয়েকবার তাদের গাড়ি থামালেও তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। নির্বিঘ্নেই পৌঁছে গেছেন তারা গন্তব্যস্থলে। গাড়ির বহর নিয়ে স্ত্রীসহ বিকাশ ও তার দেহরক্ষীরা দুপুরের পরপরই নিরাপদে যশোরে পৌঁছেন। সেখানে রাতযাপন। পরদিন সকালেই বেনাপোল সীমান্ত হয়ে ভারতের হরিদাসপুর। সেখান থেকে কলকাতা। এভাবেই রাজকীয় প্রস্থান ঘটে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের এই ডনের। যিনি সিরিজ হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য মামলার আসামি। কাশিমপুর থেকে বেনাপোল- এ পর্যন্ত সড়ক নিরাপদ রাখতে বিকাশকে খরচ করতে হয়েছে ৫ কোটি টাকা। সেই বিকাশ কলকাতাও ছেড়েছেন। তিনি এখন আছেন ফ্রান্সে। ফ্রান্সে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন তারই ছোট ভাই প্রকাশ। ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তিনিও একজন অন্যতম সদস্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মামলার নথিপত্র এবং বিকাশ-প্রকাশের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ঠাণ্ডা মাথার খুনি হিসেবে পরিচিত এই বিকাশের ছোট ভাইয়ের নাম প্রকাশকুমার বিশ্বাস। তাদের বাবার নাম বিমলকুমার বিশ্বাস। বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগরে। ঢাকার মিরপুর পাইকপাড়া তাদের বাসা। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যে শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা করেছিল, তাতে বিকাশ-প্রকাশের নাম ছিল। ওই তালিকার পরই প্রকাশ ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি আইন বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করেন। বর্তমানে তিনি রয়েছেন ফ্রান্সে। প্রায়ই তাকে সেখানকার বাঙালিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়। সেখানে বেড়াতে যাওয়া পূর্বপরিচিত অনেক বাংলাদেশির আতিথেয়তা মেলে প্রকাশের বাসায়। তবে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হলেও প্রকাশের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। সূত্র জানায়, বিকাশ আর প্রকাশ বর্তমানে ফ্রান্সে থাকলেও তাদের নামে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় হচ্ছে ঢাকায়। ঢাকা থেকে পাঠানো মোটা অঙ্কের টাকায় তারা ফ্রান্সে আলিশান জীবনযাপন করছেন। আগারগাঁও পিডব্লিউডির টেন্ডার এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন বিকাশ। জেলে থাকতেও তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। ফ্রান্স থেকে টেলিফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার সহযোগীদের সঙ্গে। আদেশ-নির্দেশ দিচ্ছেন। সেভাবেই তার শিষ্যরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালের দিকে পাইকপাড়াকেন্দ্রিক মস্তানি করতেন বিকাশ। সেই সময়ে এশিয়া সিনেমা হলের টিকিট কালোবাজারির প্রধান রমজানকে হত্যা করেন। রমজানকে খুনের মধ্য দিয়েই মূলত তার আন্ডারওয়ার্ল্ডে হাতেখড়ি। রমজান খুন এবং বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার নামডাক ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তার ছোট ভাই প্রকাশ মিরপুর বাঙ্লা কলেজের তখন ছাত্র। বড় ভাইয়ের এই নামডাকের কারণে প্রকাশ বিভিন্ন স্থানে সমীহ পেতে থাকেন। ধীরে ধীরে তিনিও গ্রুপ তৈরি করেন। বড় ভাইকে সহযোগিতা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিকাশ-প্রকাশ বাহিনী হিসেবে শক্তিশালী বাহিনীর আত্মপ্রকাশ ঘটে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে।
থেকে। কারাগারের সীমানার বাইরে অপেক্ষায় ছিল আরও দুটি গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল। লোকটিকে বহন করা গাড়ির গতি কমে গেল। জানালা দিয়ে মোটরসাইকেল আরোহীর সঙ্গে কথা বললেন লোকটি। এরপরই ছয়টি গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে ছুটতে শুরু করল। লোকটি দেশের শীর্ষস্থানীয় কোনো রাজনৈতিক বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব নন। তিনি ছিলেন ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন। নাম তার বিকাশ। পুরো নাম বিকাশকুমার বিশ্বাস, যাকে লোকজন চেনে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন হিসেবে। ওই দিন জামিনে মুক্তি পেয়ে এভাবেই কাশিমপুর কারাগার থেকে বিকাশ বেরিয়ে যান। বিকাশের মুক্তির খবর মুহূর্তেই চাউর হয়ে যাওয়ার পর সারা দেশেই তোলপাড় শুরু হয়। তাকে ফের গ্রেফতারে পুলিশ প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে। কিন্তু এ তৎপরতার রেশমাত্র পড়েনি বিকাশের এই ছুটে চলায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কয়েকবার তাদের গাড়ি থামালেও তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। নির্বিঘ্নেই পৌঁছে গেছেন তারা গন্তব্যস্থলে। গাড়ির বহর নিয়ে স্ত্রীসহ বিকাশ ও তার দেহরক্ষীরা দুপুরের পরপরই নিরাপদে যশোরে পৌঁছেন। সেখানে রাতযাপন। পরদিন সকালেই বেনাপোল সীমান্ত হয়ে ভারতের হরিদাসপুর। সেখান থেকে কলকাতা। এভাবেই রাজকীয় প্রস্থান ঘটে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের এই ডনের। যিনি সিরিজ হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য মামলার আসামি। কাশিমপুর থেকে বেনাপোল- এ পর্যন্ত সড়ক নিরাপদ রাখতে বিকাশকে খরচ করতে হয়েছে ৫ কোটি টাকা। সেই বিকাশ কলকাতাও ছেড়েছেন। তিনি এখন আছেন ফ্রান্সে। ফ্রান্সে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন তারই ছোট ভাই প্রকাশ। ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তিনিও একজন অন্যতম সদস্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মামলার নথিপত্র এবং বিকাশ-প্রকাশের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ঠাণ্ডা মাথার খুনি হিসেবে পরিচিত এই বিকাশের ছোট ভাইয়ের নাম প্রকাশকুমার বিশ্বাস। তাদের বাবার নাম বিমলকুমার বিশ্বাস। বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগরে। ঢাকার মিরপুর পাইকপাড়া তাদের বাসা। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যে শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা করেছিল, তাতে বিকাশ-প্রকাশের নাম ছিল। ওই তালিকার পরই প্রকাশ ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি আইন বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করেন। বর্তমানে তিনি রয়েছেন ফ্রান্সে। প্রায়ই তাকে সেখানকার বাঙালিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়। সেখানে বেড়াতে যাওয়া পূর্বপরিচিত অনেক বাংলাদেশির আতিথেয়তা মেলে প্রকাশের বাসায়। তবে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হলেও প্রকাশের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। সূত্র জানায়, বিকাশ আর প্রকাশ বর্তমানে ফ্রান্সে থাকলেও তাদের নামে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় হচ্ছে ঢাকায়। ঢাকা থেকে পাঠানো মোটা অঙ্কের টাকায় তারা ফ্রান্সে আলিশান জীবনযাপন করছেন। আগারগাঁও পিডব্লিউডির টেন্ডার এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন বিকাশ। জেলে থাকতেও তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। ফ্রান্স থেকে টেলিফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার সহযোগীদের সঙ্গে। আদেশ-নির্দেশ দিচ্ছেন। সেভাবেই তার শিষ্যরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালের দিকে পাইকপাড়াকেন্দ্রিক মস্তানি করতেন বিকাশ। সেই সময়ে এশিয়া সিনেমা হলের টিকিট কালোবাজারির প্রধান রমজানকে হত্যা করেন। রমজানকে খুনের মধ্য দিয়েই মূলত তার আন্ডারওয়ার্ল্ডে হাতেখড়ি। রমজান খুন এবং বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার নামডাক ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তার ছোট ভাই প্রকাশ মিরপুর বাঙ্লা কলেজের তখন ছাত্র। বড় ভাইয়ের এই নামডাকের কারণে প্রকাশ বিভিন্ন স্থানে সমীহ পেতে থাকেন। ধীরে ধীরে তিনিও গ্রুপ তৈরি করেন। বড় ভাইকে সহযোগিতা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিকাশ-প্রকাশ বাহিনী হিসেবে শক্তিশালী বাহিনীর আত্মপ্রকাশ ঘটে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন