আগের দিনে মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার প্রধান উপায় ছিলো পায়ে হাঁটা। এখন জরুরী প্রয়োজনে এখন মানুষ দ্বারস্থ হচ্ছে প্রাইভেট হেলিকপ্টার এর। যেমন জরুরী মিটিং, রোগী আনা নেওয়া সহ আরও অনেক কারণে প্রাইভেট হেলিকপ্টার ব্যবহার বাড়ছে। দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা হেলিকপ্টার ভাড়া দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স নামে একটি কোম্পানি বাণিজ্যিক লাইসেন্স নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করে। সিভিল এভিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে ৯টি কোম্পানির ১৫টি হেলিকপ্টার রয়েছে।
সিভিল এভিয়েশনের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগ সূত্রে হেলিকপ্টার ব্যবহারে
সরকারের নীতিমালা ভিত্তিতে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। একটি এয়ারলাইন্স সংস্থার লাইসেন্স পেতে যা যা দরকার হেলিকপ্টারের লাইসেন্স পেতে একই নিয়ম-কানুন। এনওসি, হেলিকপ্টার ইন্সপেকশন, অফিস ইন্সপেকশন, পাইলট, ক্রু লাইসেন্স ভেরিফিকেশন, ম্যানেজমেন্টের সক্ষমতা সবকিছু যাচাই-বাছাই করার পর এয়ার ওয়ার্দিনেস সার্টিফিকেট (এওসি) দেয়া হয়।সিভিল এভিয়েশনের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগ সূত্রে হেলিকপ্টার ব্যবহারে
কোম্পানিগুলোর তালিকা:
প্রতিষ্ঠানের নাম হেলিকপ্টার সংখ্যা
সিকদার গ্রুপ ৩টি
হল বেল-৪০৪, আর-৬৬ ও আর-৪৪
সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স ৩টি
২টি আর-৪৪, ১টি আর-৬৬
স্কয়ার গ্রুপ ১টি
পিএইচপি গ্রুপ ১টি
বাংলা ইন্টারন্যাশনাল ১টি
বিআরবি ক্যাবল ১টি
মেঘনা গ্রুপ ১টি
ইয়াং ইয়াং (আরিয়ান) গ্রুপ ২টি
এমএস বাংলাদেশ ১টি
• এদের প্রায় সবারই আবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশাল হ্যাংগারও রয়েছে।
ভাড়া:
স্কয়ার এয়ার এর হেলিকপ্টারগুলো সাধারণ কাজের জন্য ভাড়া প্রতি ঘণ্টার জন্য ১ লাখ টাকা, আর ১৫ শতাংশ ট্যাক্স। কিন্তু এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য প্রতি ঘণ্টায় ৯০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়, সঙ্গে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স। এছাড়া ভূমিতে অপেক্ষমাণ চার্জ প্রতি ঘণ্টার জন্য ৬ হাজার টাকা, সঙ্গে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স।
সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স সাধারণ কাজের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া প্রতি ঘণ্টার জন্য ৫৫ হাজার টাকা। কিন্তু সিনেমার শুটিং, লিফলেট বিতরণসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক কাজের জন্য ভাড়া ৩০ শতাংশ বেশি। এছাড়া ভূমিতে অপেক্ষমাণ চার্জ প্রথম ঘণ্টার জন্য ৩ হাজার টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ৫ হাজার টাকা। তবে বিমানবন্দর ছাড়া অন্য কোন স্থানে হেলিকপ্টার অবতরণ করতে হলে হেলিকপ্টারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যিনি ভাড়া নেবেন তার। এছাড়া পুরো খরচের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। এই কোম্পানি থেকে ন্যূনতম ৩০ মিনিটের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া দেয়া হয়। জ্বালানি খরচ, ইন্স্যুরেন্সসহ বাকি সব কিছু কোম্পানিই বহন করে।
সিকদার গ্রুপের আর অ্যান্ড আর এয়ার লাইনসের সাত সিটের হেলিকপ্টার ভাড়া ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। সঙ্গে ভ্যাট ১৫ শতাংশ। তিন সিটের ভাড়া ঘণ্টায় ৭২ হাজার টাকা। এক ঘণ্টা অবস্থান করলে দিতে হবে ৭ হাজার টাকা।
সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আবেদনের সময় ফ্লাইট চার্জের ৫০ ভাগ পরিশোধ করে বাকি টাকা পরিশোধ করতে হয় হেলিকপ্টার উড্ডয়নের আগে।
ধারণক্ষমতা
১৯৯৯ সালে আমেরিকার তৈরি একটি রবিনসন (আর-৪৪) মডেলের হেলিকপ্টার নিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রা শুরু করে সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স। এখন আমেরিকার তৈরি একটি রবিনসন আর-৪৪ এবং একটি র্যাভেন-২ হেলিকপ্টার দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে । এই হেলিকপ্টারগুলো ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার বেগে টানা ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। এগুলো ৩ জন যাত্রীসহ সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৩৪ কেজি ওজন বহনে সক্ষম।
স্কয়ার এয়ার এপ্রিল ২০১০ থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু করে বর্তমানে ৫ জন যাত্রী বহনে সক্ষম একটি বেল-২০৭ হেলিকপ্টার দিয়ে মেডিকেল এবং সাধারণ দুই ধরনের যাত্রী পরিবহন করছে স্কয়ার এয়ার। শিগগিরই আরও একটি রবিনসন-৬৬ আসছে তাদের বহরে।
সাধারণ কিছু নীতিমালা:হেলিকপ্টার উড্ডয়নের ৪৮ ঘণ্টা আগে সিভিল এভিয়েশনকে জানাতে হয়। কারণ হেলিকপ্টারের নির্দিষ্ট কোন রুট নেই। এ কারণে কোন হেলিকপ্টার আকাশে উড্ডয়ন করলে টাওয়ারকে প্রস্তুত রাখতে হয় যাতে সহজে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। নির্দিষ্ট রুট না থাকায় অনেক সময় পাইলটরা ভুলে অনুমতি ছাড়া অন্য দেশের সীমানায় ঢুকে পড়ে। এটি খুবই বিপজ্জনক। টাওয়ার প্রস্তুত থাকলে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব। তবে জরুরি হলে ৫, ১০, ১৫ মিনিট এমনকি এক ঘণ্টার মধ্যেও অনুমতি দেয়া হয়।
সিভিল এভিয়েশন অথরিটির আইন অনুযায়ী প্রত্যেকটি হেলিকপ্টার নির্ধারিত রেঞ্জের ৬০০ কিলোমিটারের বেশি অতিক্রম করতে পারবে না। হেলিকপ্টারে যাত্রী বহন ক্ষমতা সর্বোচ্চ ছয়জন পর্যন্ত। পাইলট থাকেন একজন। উড্ডয়নের পর হেলিকপ্টারের সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকবে প্রতি ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার। এছাড়াও বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর হেলিকপ্টার যে স্থানে ল্যান্ড করবে, সেখানে গ্রাউন্ড ওয়েটিংয়ের (অপেক্ষমাণ এলাকা) জন্য দিতে হবে প্রতি ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। উড্ডয়নের পর জ্বালানি খরচ ও ইন্স্যুরেন্স বিল পরিশোধ করবে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি এয়ারলাইন্স।
যোগাযোগ:
সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স
http://www.southasian-airlines.com
স্কয়ার এয়ার
http://www.squareair.com.bd
বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ার
http://www.uniongroup.com/unionbial.php
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন