রমজান মাসে আমাদের খাবারের রুটিনে অনেক পরিবর্তনই হয়। সারা দিন না খেয়ে অনেকেই রাতে খুব বেশি খান, এটি ঠিক নয়। রোজায় খাবার রুটিনে পরিবর্তন হলেও শরীরে খাবারের চাহিদা কিন্তু ঠিকই পূরণ হয়। রোজায় খাবারের পরিমাণের ওপর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণত অন্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসে ক্যালোরিযুক্ত খাবার খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়। যারা রমজান মাসে অধিক ক্যালোরিযুক্ত খাবার খুব বেশি পরিমাণে খান তাদের ওজন বেড়ে যায়। আবার অন্যদিকে যাদের খাবারে ক্যালোরির ঘাটতি
থাকে তাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। তাই রমজান মাসে নিয়ম মেনে খাবার খাওয়ার ওপর সবারই গুরুত্ব দিতে হবে। রোজাদারদের সুস্থ থাকতে প্রয়োজন পরিমাণমতো শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, মাছ, মাংস বা ডিমসহ পরিমাণমতো শস্যজাতীয় খাবার। আসুন জেনে নেই রমজান মাসে সুস্থ থাকতে খাবার সম্পর্কিত কিছু তথ্য_
সেহরির খাবার : রমজান মাসে খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে সেহরির সময়। কারণ এ খাবার খাওয়ার পর শরীর দীর্ঘক্ষণ খাবার পাবে না। অর্থাৎ যেসব খাবার ধীরে ধীরে হজম হয় ও দীর্ঘসময় শরীরে ক্যালোরির জোগান দিতে পারে এমন খাবারের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। লাল চাল, লাল আটা, ওটস, বার্লি, নানা রকমের ডাল, শিমের বিচি ও অাঁশযুক্ত খাবার হজম হতে সাধারণত আট ঘণ্টা সময় লাগে। এছাড়াও মাছ, মাংস, ডিম, দুধ অর্থাৎ আমিষজাতীয় খাবার পর্যাপ্ত থাকতে হবে। ভিটামিন ও মিনারেলের জোগান পেতে পরিমাণমতো শাকসবজি খেতে হবে। উদাহারণস্বরূপ সেহরিতে খেতে পারেন এক থেকে দেড় প্লেট লাল চালের ভাত, মাছ বা মুরগি, মিঙ্ড সবজি, ডাল ও এক কাপ দুধ। তবে সেহরিতে তাড়াহুড়ো না করে একটু সময় নিয়ে খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। খাবার খাওয়া শেষ করার পর ১০ মিনিট পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
ইফতারের খাবার : রমজানে ইফতারের খাবারের ওপর শরীরের সুস্থতা অনেকাংশেই নির্ভরশীল। সারাদিন রোজা রেখে খালি পেটে প্রথমেই এমন খাবার খেতে হবে যা দ্রুত হজম হয়ে যায়। এজন্য শর্করাজাতীয় খাবার উত্তম। ইফতারের সময় খাওয়া প্রয়োজন শর্করা ও ক্যালোরিযুক্ত খাবার। মুড়ি, ছোলা, খেজুর, ভেজিটেবল ও যে কোনো ফল হলো ইফতারের শুরুতেই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। এসব খাওয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর হালকা ভারি খাবার যেমন খিচুড়ি, ভাত, চিঁড়া ও আমিষজাতীয় খাবার শরীরকে দেবে শক্তির জোগান। সেই সঙ্গে ইফতারে চিনি-লবণের শরবতও প্রচুর পানি খেতে হবে।
রাতের খাবার : রমজান মাসে রাতের খাবার হতে হবে যথাযথ পুষ্টিসমৃদ্ধ। রাতের খাবারে ভিটামিন, মিনারেল, আমিষ, শর্করা ও ফ্যাটের পরিমিত জোগান নিশ্চিত করতে হবে। মোটকথা রমজান মাসে রাতের খাবারে থাকতে হবে সবকিছুই।
পানি : রোজা রাখার কারণে শরীর দীর্ঘসময় পানি পায় না। এ কারণে এক সময় শরীরে ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। তাই রমজান মাসে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পানি খেতে হবে। এ সময়টিতে নূ্যনতম তিন লিটার পানি খেলে ভালো।
রমজান মাসে খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিন। খাবারের কারণে যারা বিভিন্ন রোগে ভুগে থাকেন তারা সতর্ক হোন। বিশেষ কোনো খাবারের কারণে যদি কারও গ্যাস্ট্রিক, আলসার, বদহজম, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের সমস্যা হয় তবে অবশ্যই সেই খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ক্ষুধার মূল কারণ পাকস্থলীতে ফ্যাট বা চর্বির উপস্থিতি। আমরা যা খাচ্ছি এর মধ্য থেকে পাকস্থলীতে যদি চর্বির স্তর বেশি থাকে তবেই আমাদের বেশি ক্ষুধা লাগে। অন্যদিকে পাকস্থলীর খাবারের মধ্যে চর্বি কম থাকলে ক্ষুধা কম লাগে। মোটকথা চর্বির পরিমাণের তারতম্যের ওপর ক্ষুধার অনুভূতি নিয়ন্ত্রিত হয়। কারণ পেট খালি থাকলে দেহে ফ্যাটি এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। আমরা যেসব খাবার খাই এর থেকেই ফ্যাট বা চর্বি আমাদের পাকস্থলীতে যায় ও ফ্যাটি এসিড নিঃসরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং আমাদের বেশি বেশি ক্ষুধা লাগে। তাই সেহরিতে ফ্যাটজাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন