জেনে নিন কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো ফল কীভাবে চিনবেন

বাজার ছেয়ে গিয়েছে পাকা আম, লিচু ও নানান ধরণের গ্রীষ্মকালীন ফলে। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন যে তার স্বাদ নেহাতই পানসে। বলতে গেলে কোন রকম স্বাদ-গন্ধই যেন নেই। পাকা আম, কাঁঠাল, লিচুর গন্ধে মৌ মৌ করবে চারপাশ, তাই না? কিন্তু আজকাল ফলে যেন কোনো ঘ্রানই নেই। এমনকি কলা বা পেঁপের মত সস্তা ফলের ক্ষেত্রেও একই হাল। পুরুষ্টু পাকা পেঁপে। কিন্তু কাটার পরে দেখা গেল ভিতরটা বিশ্রী রকমের কাঁচা। পাকা কলার খোসা ছাড়িয়ে কামড় বসাতেই টের পাওয়া গেল কলা মোটেই পাকেনি।

এর পেছনে কারণ কী? কারণ হচ্ছে কার্বাইড! কৃত্রিম উপায়ে ফল পাকানোর কাজে ব্যবহৃত এমন একটি
ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের নাম ক্যালসিয়াম কার্বাইড। ইথ্রেল বা ইথেফোন ব্যবহার করেও কৃত্রিম উপায়ে ফল পাকানো যায়। তবে ইথ্রেল বা ইথেফোন ক্যালসিয়াম কার্বাইডের মতো ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান নয়। কারণ ক্যালসিয়াম কার্বাইডের সঙ্গে স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য বিপজ্জনক দুটো বিষাক্ত উপাদানের মিশ্রণ থাকে। উপাদানগুলো হলো- আর্সেনিক এবং ফস্ফরাস। অসাবধানতার কারণে এবং ভুল পদ্ধতিতে উচ্চমাত্রায় ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে কৃত্রিম উপায়ে ফল পাকানো হলে এই ফল আর্সেনিক এবং ফসফরাস দ্বারা দূষিত হয়ে পড়ে এবং বিষাক্ত উপাদান দুটো আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে স্বাস্থ্যহানি ছাড়াও জীবন বিপন্ন হতে পারে। আর্সেনিক ও ফসফরাস দূষণের ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে বমি হওয়া, ডায়রিয়া, পেট ও বুকে জ্বালাপোড়া করা, পিপাসা পাওয়া, সাধারণ দুর্বলতা, কথা বলতে বা কিছু গিলতে অসুবিধা হওয়া। এছাড়াও হাত-পা অবশ হওয়া, শরীরের চামড়া ঠান্ডা ও ভিজে যাওয়া এবং রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো উপসর্গগুলোও দেখা দিতে পারে। ক্যালসিয়াম কার্বাইড অত্যনত্ম ক্রিয়াশীল দ্রব্য বলে ভেজা হাতে ধরলে হাতে ফোস্কা পড়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আর্সেনিক ও ফস্ফরাস বিষাক্ততার উপসর্গগুলো আগেভাগে দৃশ্যমান হয় বলে সময়মতো চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয়। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে আর্সেনিক ও ফস্ফরাস বিষাক্ততার কারণে জীবন বিপন্ন হতে পারে।

ক্রেতা ঠকানোর ফন্দি করতে গিয়ে এক শ্রেণির ফল ব্যবসায়ী বহু বছর ধরেই হাতিয়ার করেছেন কার্বাইডকে। ইদানীং সেই প্রবণতা বেড়েছে মারাত্মকভাবে। ফল ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশই স্বীকার করেন যে, প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে এ ছাড়া পথ নেই। পাকার আগেই কার্বাইড দিয়ে দ্রুত পাকানো যায় ফলকে আর বিক্রি করা যায় চড়া দামে। কিন্তু কার্বাইডে পাকানো ফল খেলে শরীরে পুষ্টি তো যায়-ই না, উপরন্তু এর প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

ফল পাকানোর জন্য ব্যবহৃত এই রাসায়নিকের পোশাকি নাম ক্যালসিয়াম কার্বাইড। হাওয়ার সংস্পর্শে এলে কার্বাইড থেকে অ্যাসিটিলিন নামে এক ধরনের গ্যাস বেরোয়। এবং এই গ্যাসের উত্তাপেই ফল পেকে যায়। সাথে জেনে রাখুন, ওই গ্যাসই লোহার কারখানায় লোহা কাটতে ব্যবহার হয়! এবং ৫০ টন আম, পাকাতে প্রয়োজন হয় মাত্র ১০০ গ্রাম কার্বাইড।

কার্বাইডে পাকানো ফল নিয়মিত খেলে ফল হতে পারে মারাত্মক। মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া, পাকস্থলীর নানা সংক্রমণের পাশাপাশি কার্বাইড থেকে ক্যানসারও হতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসক মহলের। অন্তঃসত্ত্ব নারী কার্বাইডে পাকানো ফল খেলে সন্তানের হতে পারে নানান রকম অস্বাভাবিকতা।

কীভাবে চিনবেন কার্বাইড দিয়ে পাকানো ফল?

-ফলের চেহারা হবে উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়।

-গোটা ফলের চেহারা একই রকম হবে, রঙ একই রকম হবে। দেখে মনে হবে সমান ভাবে পেকেছে। গাছপাকা ফল কখনো সমানভাবে পাকে না।

-ফলের মাঝে স্বাভাবিক পাকা ফলের মোট মৌ মৌ গন্ধ থাকবে না।

-অনেক ফলে রসুনের মত হালকা গন্ধ থাকতে পারে।

খাবারের ব্যাপারে নিরাপত্তা ও সাবধানতা অবলম্বনের জন্য কিছু করণীয় উলেস্নখ করা হলো :
- খাওয়ার আগে খুব ভাল করে ফল পানিতে ধুয়ে নিন। চলমান পানির টেপের নিচে কয়েক মিনিটের জন্য ফল রেখে দিলে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ধৌত হয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

-ফলের মৌসুমের আগে ফল কিনবেন না। মৌসুম শুরূর আগে বাজারে প্রাপ্ত ফল কৃত্রিম উপায়ে পাকানো হয়ে থাকে

- আম ও আপেল খাওয়ার আগে কেটে টুকরো টুকরো করে খাবেন। গোটা ফল সরাসরি না খেয়ে টুকরো ফল খাওয়া ভালো।

- বাহ্যিকভাবে আকর্ষণীয় দেখালেও ফল ভালো নাও হতে পারে। যেসব ফলের গায়ের রং সর্বত্রই একই রকম তা কৃত্রিম উপায়ে পাকানো হয়েছে বলে ধরে নিতে পারেন। যেমন কলার কাঁদির কিছু কলা কাঁচা, কিছু হলুদ হলে বুঝতে হবে তা কৃত্রিম উপায়ে পাকানো হয়নি। কৃত্রিম উপায়ে পাকানো হলে সব কলার রং হলুদ এবং কলার বাটা বা কান্ড গাঢ় সবুজ থেকে যাবে। টমেটোর চামড়ার রং সর্বত্রই সমানভাবে লাল হলে, আম এবং পেপের রং কমলালেবুর মত রং হলে বুঝতে হবে এসব ফল কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়েছে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন