আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে , খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা মামলা। পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানে দায়ের করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা, যা তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগ নেতা ও পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছিল। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাটিকে সরকারীভাবে নামকরণ করেছিল 'রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যদের বিচার'।
এই মামলায় ৩৫জনকে আসামী করা হয়।
আসামীরা সকলেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তারা হলেন -শেখ মুজিবুর রহমান; আহমেদ ফজলুর রহমান, সিএসপি; কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন; স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান; সাবেক এলএস সুলতানউদ্দীন আহমদ; এলএসসিডিআই নূর মোহাম্মদ; ফ্লাইট সার্জেন্ট মাহফিজ উল্লাহ; কর্পোরাল আবদুস সামাদ; সাবেক হাবিল দলিল উদ্দিন; রুহুল কুদ্দুস, সিএসপি; ফ্লাইট সার্জেন্ট মোঃ ফজলুল হক; বিভূতি ভূষণ চৌধুরী (ওরফে মানিক চৌধুরী); বিধান কৃষ্ণ সেন; সুবেদার আবদুর রাজ্জাক; সাবেক কেরাণী মুজিবুর রহমান; সাবেক ফ্লাইট সার্জেন্ট মোঃ আব্দুর রাজ্জাক; সার্জেন্ট জহুরুল হক; এ. বি. খুরশীদ; খান মোহাম্মদ শামসুর রহমান, সিএসপি; একেএম শামসুল হক;হাবিলদার আজিজুল হক; মাহফুজুল বারী; সার্জেন্ট শামসুল হক; শামসুল আলম; ক্যাপ্টেন মোঃ আব্দুল মোতালেব; ক্যাপ্টেন এ. শওকত আলী; ক্যাপ্টেন খোন্দকার নাজমুল হুদা; ক্যাপ্টেন এ. এন. এম নূরুজ্জামান; সার্জেন্ট আবদুল জলিল; মাহবুবু উদ্দীন চৌধুরী; লেঃ এম রহমান; সাবেক সুবেদার তাজুল ইসলাম; আলী রেজা; ক্যাপ্টেন খুরশীদ উদ্দীন এবং ল্যাঃ আবদুর রউফ।
আসামীরা সকলেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তারা হলেন -শেখ মুজিবুর রহমান; আহমেদ ফজলুর রহমান, সিএসপি; কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন; স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান; সাবেক এলএস সুলতানউদ্দীন আহমদ; এলএসসিডিআই নূর মোহাম্মদ; ফ্লাইট সার্জেন্ট মাহফিজ উল্লাহ; কর্পোরাল আবদুস সামাদ; সাবেক হাবিল দলিল উদ্দিন; রুহুল কুদ্দুস, সিএসপি; ফ্লাইট সার্জেন্ট মোঃ ফজলুল হক; বিভূতি ভূষণ চৌধুরী (ওরফে মানিক চৌধুরী); বিধান কৃষ্ণ সেন; সুবেদার আবদুর রাজ্জাক; সাবেক কেরাণী মুজিবুর রহমান; সাবেক ফ্লাইট সার্জেন্ট মোঃ আব্দুর রাজ্জাক; সার্জেন্ট জহুরুল হক; এ. বি. খুরশীদ; খান মোহাম্মদ শামসুর রহমান, সিএসপি; একেএম শামসুল হক;হাবিলদার আজিজুল হক; মাহফুজুল বারী; সার্জেন্ট শামসুল হক; শামসুল আলম; ক্যাপ্টেন মোঃ আব্দুল মোতালেব; ক্যাপ্টেন এ. শওকত আলী; ক্যাপ্টেন খোন্দকার নাজমুল হুদা; ক্যাপ্টেন এ. এন. এম নূরুজ্জামান; সার্জেন্ট আবদুল জলিল; মাহবুবু উদ্দীন চৌধুরী; লেঃ এম রহমান; সাবেক সুবেদার তাজুল ইসলাম; আলী রেজা; ক্যাপ্টেন খুরশীদ উদ্দীন এবং ল্যাঃ আবদুর রউফ।
১৯৬৮ সালের প্রথম ভাগে দায়ের করা এই মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, শেখ মুজিব ও অন্যান্যরা ভারতের সাথে মিলে পাকিস্তানের অখন্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আগেই বলা হয়েছে এ মামলাটির পূর্ণ নাম ছিল রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবর রহমান গং মামলা। তবে এটি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসাবেই বেশি পরিচিত, কারণ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল যে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় কথিত(?!) ষড়যন্ত্রটি শুরু হয়েছিল।
'রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যদের বিচার' শিরোনামের মামলার অভিযোগনামায় উল্লেখ করা হয়েছিল যে,
অভিযুক্তরা ভারতীয় অর্থ ও অস্ত্রের সাহায্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ ঘটিয়ে কেন্দ্র থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিল।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে সাধারণ জনতা। প্রবল গণ-আন্দোলন তথা উত্তাল ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খানের সরকার পিছু হটতে শুরু করে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে একান্ত বাধ্য হয়।
কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস হচ্ছে এ মামলা সত্য ঘটনার উপরে ভিত্তি করে করা। সে সময়ের বাস্তবতার নিরিখে এ অঞ্চলের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য একক সামর্থের অভাব ছিল যা , তারা অন্যদেশের সহায়তায় অর্জন করতে চেয়েছিলেন। ইতিহাসে আমরা যদি চোখ বুলাই তা হলে এমন উদাহরন অনেক দেখতে পারবো । নেতাজি সুভাস বসু জার্মানির ও জাপানের সহায়তা নিয়েছিলেন ভারত কে মুক্ত করার জন্য। সমসাময়িক কালে নেলসন ম্যান্ডেলা কে দেখা যাবে সাদা মানুষের শাসন থেকে জনগনকে মুক্ত করতে পার্শবর্তীদেশ গুলোর সহায়তা নিয়েছেন , কমিউনিস্টদের সাথে হাত মিলিয়েছেন। কিন্তু এক অজানা কারনে এই আগরতলা মামলাকে বাংলাদেশের মানুষ জেনে আসছে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হিসাবে যা করা হয়েছিল তৎকালীন রাজনৈতিক , সামরিক ও প্রশাসনিক ব্যাক্তিদের দমন পীড়নের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
বর্তমান সময়ে এসে , এর সাথে জড়িত বর্তমানের সাংসদ, মামলার তৎকালীন আসামি ও এখনকার ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, ২৩শে ফ্রেব্রুয়ারী ২০১১ সালে সংসদে অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারের শেষে তিনি বলেন,
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রথম দিন আমাদের যে অভিযোগ পড়ে শোনান হয়- তা সম্পূর্ণ সত্য ছিলো। আমরা সশস্ত্র পন্থায় সংগ্রাম করে পাকিস্তানের ইস্টার্ন পার্টকে স্বাধীন করতে চেয়েছিলাম। আমরা এজন্য বঙ্গবন্ধুকে প্রধান করে একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছিলাম।
পয়েন্ট অব অর্ডারে আওয়ামী লীগের সাংসদ তোফায়েল আহমদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রত্যাহারের দিনটি উপলক্ষে বক্তব্য দিতে গিয়ে তৎকালীন উত্তপ্ত দিনগুলোর বর্ণনা করেন। উল্লেখ্য তিনি ৬৯ সালে গণজাগরণ ও ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন তিনি ডাকসুর ভিপি হিসেবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ডেপুটি স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
আগরতলা মামলা না হলে দেশ স্বাধীন হতো না। এটা মিথ্যা মামলা ছিলো না। আপনারা তো দেশ স্বাধীনের পরিকল্পনা করেছিলেন।
অন্য এক আসামী আবদুল মোতালেব এক স্বাক্ষাতকারে আগরতলা মামলা সম্পর্কে বলেছিলেন " এটি ২০০% সত্য ছিল " ।
এ আগরতলা ষড়যন্ত্র, বিপ্লব বা বিদ্রোহ যাই বলা হোক না কেন, শুরু হয় ১৯৫৮ এর দিকে , মূলত এ কাজে প্রাথমিক ভিত্তিটা তৈরি করে সামরিক বাহিনীতে থাকা কর্মকর্তাগন। যদিও তা প্রাথমিক আলোচনায় ভারতের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পায়নি, না পাবার কারন হিসাবে অনুমান করা যায় ১. সামরিক বাহিনিতে থাকা অধিকাংশই ছিল মিড লেভেলের ২. রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকলে তা পরবর্তীতে ভারতের জন্য ‘বেক ফায়ার’ হিসাবে পরিনত হতে পারে । পরবর্তীতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অংশ গ্রহন নিশ্চিত করলে, ভারতীয়রা সহায়তা করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। মুলত লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম ছিলেন এই কাজের প্রধান উদ্যোক্তা। পাকিস্তান নৌ-বাহিনিতে থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন ভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে তিনি ও তার সমমনা অফিসারেরা মিলে তৈরি করেন 'বাঙ্গালী ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন।' খুব গোপনীয়তার সাথে ১৯৬২ সাল থেকে তৈরি ও সংগঠিত করতে থাকেন বাঙ্গালী সামরিক বাহিনীর লোকেদের।
বিলেতে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াকালীন মনোরা দ্বীপের হিমালয়া নৌঘাটিতে বসে বাংলা স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিকল্পনা করেন লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম। তৈরি করেন রাজনৈতিক ও সামরিক রণকৌশলের নকশা। ১৯৫৮ সালে একটা সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম। প্রস্তুতি পর্বে শুধু বাঙালী সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যেই ছিলো এই পরিকল্পনা, এতে কোনো রাজনীতিবিদকে যুক্ত করেননি পরে বেসামারিক আমলা ও রাজনীতিকদের সাথেও আলাপ করেন । ১৯৬১ (মতান্তরে ১৯৬২) সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান করাচি গেলে লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম কৌশলে তার সাথে দেখা করেন । পরিকল্পনানুসারে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করে বঙ্গবন্ধুর সীমান্তপাড়ির ছাড়পত্র যোগালেন তিনি। মোয়াজ্জেমের ভাতিজা রেজা আলী গাড়ি চালিয়ে মুজিবকে নিয়ে যান তেজগাও রেল স্টেশন। সেখান থেকে সাবেক মন্ত্রী জাকির খান চৌধুরীকে (আরেক মন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা জাকারিয়া চৌধুরীর ভাই) সঙ্গী করে রওয়ানা দিলেন সিলেট। সেখানে মওলানা ভাসানীর অনুগত সমর্থক সায়উদুল হাসানের চা-বাগানে আতিথ্য নিলেন। তার স্ত্রীর দেওয়া একটা বেঢপ কোট চাপিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিলেন মুজিব। এখানে একটা ভুল বুঝোবুঝি হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু কোথায় যাচ্ছেন ও কি উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন এটা সময় মতো উচু মহলে জানাতে পারেনি ভারতীয় দূতাবাস। তাই সীমান্তপারের থানায় যখন রাষ্ট্রনায়কের অভ্যর্থনা আশা করছিলেন তিনি, উল্টো দেখলেন অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে! পুরো ব্যাপারটা দিল্লী পর্যন্ত গড়ায় এবং ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে। ১৯৬৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সাথে আরেক দফা বৈঠক হয় । '৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দাবিনামা ঘোষণা করেন এবং আন্দোলনে নামেন ।
ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা শশাঙ্ক ব্যানার্জির বইটি " A Long Journey Together - India, Pakistan and Bangladesh"।বইতে নানা প্রমাণাদি সহ আছে যে , নেহরু সরকারের কাছে প্রথমে বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য সহায়তা চেয়েও তিনি পাননি,পালিয়ে আগরতলায় গিয়ে বিএসএফ-এর হাতে গ্রেফতার হয়ে ফিরে এসে তিনি লন্ডন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার পরিকল্পনাকরেছিলেন।
মাসুদা ভাট্টির লেখা "বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ : ব্রিটিশ দলিলপত্র" বইয়ে ভাট্টি উল্লেখ করেন যে, শেখ মুজিব ছয় দফা ঘোষণার সময়একটি কথা প্রায়ই বলতেন এবং সেটা রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক এমনকি কূটনীতিকদের সামনেও, "ছয় দফা টফা কিছু নয়,আমার দফা তিনটি, কতো নেছো, কবে দেবা, কবে যাবা"।
বিডিনিউজ২৪ এর লিঙ্ক
বাংলা উইকিপিডিয়ার লিঙ্ক
ইংরেজি উইকিপিডিয়ার লিঙ্ক
আগরতলা মামলা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন
বাংলা উইকিপিডিয়ার লিঙ্ক
ইংরেজি উইকিপিডিয়ার লিঙ্ক
আগরতলা মামলা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন