বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রত্যাহারকারী আবার নাগরিকত্ব ফিরে পাবেন


শপথবাক্য পাঠের মাধ্যমে কোন বাংলাদেশী বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করে ভিন দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে থাকলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ফিরে পাবেন। এ জন্য তাকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করতে হবে। প্রস্তাবিত বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন, ২০১১-তে এ বিধান করা হয়েছে।
খসড়া আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের কোন নাগরিক টানা ১০ বছর দেশের বাইরে থাকলে তিনি নাগরিকত্ব হারাবেন। কোন বাংলাদেশী বিদেশে নাগরিকত্ব পেলে নিজ দেশেও তার নাগরিকত্ব থাকবে। অর্থাৎ দ্বৈত নাগরিকত্ব বহাল থাকছে। ছিটমহলবাসীরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবেন। ভারতের দখলে থাকা ১১১ ছিটমহল ভারত সরকার কর্তৃক বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের চুক্তি হয়েছে। ছিটমহলগুলোর অধিবাসীদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। ছিটমহলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরিত হওয়ার পরই এ আইনের আওতায় তারা নাগরিকত্ব পাবেন। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে খসড়া আইনটি বিল আকারে উত্থাপন ও পাস করা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কোন বাংলাদেশী একনাগাড়ে ১০ বছর বা তার অধিককাল বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করলে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিবন্ধন সূত্রে বা দেশীয়করণ সূত্রে অর্জিত তার নাগরিকত্বের অবসান ঘটবে। কোন সাবালক, সমর্থ নাগরিক হলফনামার দ্বারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের ঘোষণা দিলে সরকার তা নিবন্ধন করবে। নিবন্ধনের পর তার নাগরিকত্বের পরিসমাপ্তি ঘটবে। দুই বছর পর্যন্ত কোন পরিত্যক্ত শিশু বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে। নাগরিকত্বের ব্যাপারে কোন ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য দিলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে।
খসড়া বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী বিদেশী নাগরিকদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। বাংলাদেশকে নিজের দেশ হিসেবে গ্রহণ করে নাগরিকত্ব লাভের জন্য নির্ধারিত ফরমে তাদের আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশে নাগরিকত্ব প্রদান, নাগরিকত্ব বাতিলসহ প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘দ্য বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ (টেম্পোরারি প্রভিশনস) অর্ডার, ১৯৭২ বলবৎ রয়েছে। এ সংক্রান্ত মূল আইন হচ্ছে ‘দ্য সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট ১৯৫১। বহিরাগমন, নাগরিকত্ব অর্জন, সংরক্ষণ, পরিত্যাগ, অবসান ইত্যাদি বিষয়ের সমাধান দেয়া এই দু’টো আইনে সম্ভব হচ্ছে না। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দু’টো আইন একীভূত করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি, যদি তার পিতা বা মাতা এই আইনের শুরুতে বা পরে অথবা ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ হতে এই আইন বলবৎ হওয়ার অব্যবহিত পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে উক্ত ব্যক্তির জন্মকালে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে তিনি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হবেন। তবে কোন ব্যক্তির পিতা বা মাতা কেবল বংশসূত্রে বাংলাদেশের হওয়ার কারণে উক্ত ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হবেন না। যদি না বাংলাদেশ কনস্যুলেট বা দূতাবাসে তার জন্মের এক বছর অথবা এই আইন বলবৎ হওয়ার এক বছরের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা না হয়। অথবা তার মাতা বা পিতা তার জন্মকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে চাকরিরত থাকেন।
খসড়া আইন অনুযায়ী কোন বাংলাদেশী প্রবাসে নাগরিকত্ব পেলে নিজ দেশে তার নাগরিকত্বের অবসান ঘটবে না। বাংলাদেশের কোন নাগরিক উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের দেশসমূহ ও সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্দিষ্ট করা অন্য যে কোন দেশের নাগরিকত্ব ইতিপূর্বে গ্রহণ করে থাকেন বা গ্রহণ করেন এবং নাগরিকত্ব গ্রহণকালে শপথ বাক্য পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশের আনুগত্য প্রত্যাহার করতে না হয়, তাহলে উক্ত ব্যক্তির বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বহাল থাকবে। এ জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে তাকে আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশের কোন নাগরিকের স্ত্রী বা স্বামী বাংলাদেশের নাগরিক না হলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবেন। তবে তাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিন বছর বাংলাদেশে বসবাস করতে হবে। তিন বছর পর নির্ধারিত পদ্ধতিতে সরকারের কাছে তিনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ছিটমহল বিনিময় চুক্তি অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য সরকারের তরফ থেকে ভারত সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। ছিটমহল বিনিময় চুক্তির বিপক্ষে ভারতে প্রবল আপত্তি উঠেছে। তিনবিঘা করিডোর বাংলাদেশীদের জন্য সার্বক্ষণিক খোলা রাখা হলেও ছিটমহল হস্তান্তর বিলম্বিত হচ্ছে। এদিকে ছিটমহলবাসীরা নাগরিকত্ব না পাওয়ায় তাদের প্রতিনিয়ত নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

সুত্রঃ মানবজমিন  http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&view=article&id=29784:2011-12-28-16-27-05&catid=48:2010-08-31-09-43-22&Itemid=82

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন