২০০৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর তদানীন্তন জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব ড. কামাল সিদ্দিকী ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সাবেক শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জুডিথ শামাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামী, জেএমবি প্রসঙ্গে তার বিপরীত মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন। কামাল সিদ্দিকী সাক্ষাৎকালে জুডিথকে বলেছিলেন, বিএনপির ৫০ সাংসদ ক্ষমতাসীন জোট সরকার থেকে জামায়াতে ইসলামীকে সরিয়ে দিতে চান। তিনি (কামাল সিদ্দিকী) অভিযোগ করে বলেন, সরকার জামা'আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সন্ত্রাসী চরিত্র অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। অভিযোগে তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান র্যাবের হাতে আটক বাংলাভাইয়ের ডেপুটি কামরুলকে ছাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। কামাল সিদ্দিকীকে খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত, কিন্তু তারেক রহমান এবং জামায়াতে ইসলামীর কঠোর সমালোচক হিসেবে মার্কিন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক মন্তব্য করেছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকী সাক্ষাৎকালে বলেন, বিএনপির কতিপয় প্রভাবশালী নেতা জেএমবির জ্যেষ্ঠ নেতাদের রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। এ প্রসঙ্গে কামাল সিদ্দিকী জুডিথকে জানান, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্যদের নিয়ে জেএমবি গঠন করা হয়েছে। জেএমবির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর যোগাযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান। তবে এ ব্যাপারে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। কিছু বিদেশি জেএমবিকে সহায়তা দিচ্ছে বলে ড. সিদ্দিকী শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জুডিথ শামাসকে জানান। জেএমবির পেছনে 'বড় ভাইয়ের' হাত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন; কিন্তু এই বড় ভাই কে তা তিনি পরিষ্কার করে বলেননি।২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে কূটনৈতিক তারবার্তাটি ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়। অসংখ্য তারবার্তার সঙ্গে এ তারবার্তাটিও এ বছরের ৩০ আগস্ট প্রকাশ করা হয় চাঞ্চল্যকর ওয়েবসাইট উইকিলিকসে।
এ প্রসঙ্গে শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স কামাল সিদ্দিকীকে বলেন, জেএমবির সঙ্গে ভারত অথবা আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। জেএমবি প্রশ্নে সরকারের অবস্থান সন্ত্রাসবাদ দমনে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে খাটো করে।
জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা নিয়ে ড. সিদ্দিকী তার ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশিদের দৃষ্টিতে বিএনপির জন্য জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভীষণ অস্বস্তিকর বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন বলে তিনি জানান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতের কুখ্যাতির জন্য দলটি তার জীবনের লালিত আদর্শের বিপরীত বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তারবার্তায় জুডিথ শামাস বলেন, র্যাব জেএমবি প্রধান বাংলাভাইয়ের ডেপুটি কামরুলকে গ্রেফতার করলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে ড. সিদ্দিকী তাকে (জুডিথ) অভিযোগ করেছিলেন। বাবরের ভাষ্য অনুযায়ী, তারেক রহমান জোট সরকারের ভূমি প্রতিমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর অনুরোধে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। জুডিথ বলেন, ড. কামাল সিদ্দিকী হাওয়া ভবনকে 'উইন্ড টানেল' বলতেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, উইন্ড টানেলে তারেকের কতিপয় চিত্তবিকারগ্রস্ত বন্ধু রয়েছে। তাদের কথা তারেক গুরুত্ব দিয়ে শোনে। তার (তারেক) অনভিজ্ঞতার জন্য এমনটা ঘটছে বলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন।
পৃষ্ঠার উপরে আসুন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন